বৃহস্পতিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আমরা সবাই জানি....৩০


সার্বিক একাত্মতা ও মিলন, একের সর্বোত্তম গুণ বহমান উপদেশের মাধ্যমে অন্য এক-কে দেয়ার মাধ্যমে ধারণ-লালন-পালন। একাত্মতা ও এক সত্য সমন্বয় সাধনের জন্যই পৃথিবী জুড়ে ‘চিন্তনপীঠ’ ছিল - আছে - থাকবে সব রকমের বিদ্যাভাসের জন্য। সত্যব্রত চিন্তনপীঠ যুগে যুগে নেতৃত্বে থাকে সেইসব চিন্তনপীঠগুলোর কেন্দ্র বিন্দু হিসেবে। সাধক-ভাষা শিক্ষাদানের মাধ্যম। সে ভাষা সমগ্র পৃথিবীর সত্যমানুষকুলের অর্থাৎ সাধককুলের সাংস্কৃতিক ভাষা। লক্ষ্য অর্জনের জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ী চিন্তাবিদরাই সেই ভাষা শিখতে পেরেছেন এবং পারবেন। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে চিন্তনপীঠগুলোর ভাষার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হলে চিন্তাজগতের স্বাভাবিক প্রবণতা হবে পুরানো সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ধর্মকে উপলব্ধি করা। সত্যব্রত চিন্তনপীঠ বাঙালি জাতির অতীতের সব কিছুর মূল্য সম্যক হৃদয়ঙ্গম করে নতুন কিছু সৃষ্টি করছে, এমন কিছুর অবতরণ ঘটাতে চাচ্ছে যা হবে পৃথিবীর পক্ষে নতুন। এই প্রচেষ্টায় চিন্তাজগৎ যাতে অতীতের সব কিছুর দ্বারা শৃঙ্খলিত না হয়, তারজন্য নিজকে সার্বিক নিয়ন্ত্রণ করেই এগিয়ে যেতে হয়। অতীত সম্বন্ধে জ্ঞানলাভের প্রয়োজনীয়তা আছে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কাজের বিঘ্ন না ঘটাতে।
সর্বপ্রকারের বিদ্যাভাস অথবা যে কোন অবস্থাতেই বিদ্যাভাসের বেশীরভাগ অংশ অতীত সম্পর্কে জানবারই প্রচেষ্টা এই আশায় যে এই জ্ঞান বর্তমান সম্বন্ধে ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। অতীতকে আঁকড়ে নয় বা ভবিষ্যতের দিকে তাকানো নয় এই বিপদকে এড়াতে চাইলে নিজকে বোঝবার এবং জানবার জন্য বিশেষ যত্ন নিতে হবে। অতীতে যা কিছু ঘটেছিল, আজকে যা ঘটছে তারই প্রস্তুতির জন্য আর এখন যা কিছু ঘটছে তা ভবিষ্যতের পথ প্রস্তুত করার জন্য ছাড়া আর কিছু নয় এই হল সর্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয় দৃঢ় প্রত্যয় যার জন্য নিজকে অবশ্যই তৈরী করতে হয়।
উপলব্ধি বোধের অনুশীলনের দ্বারাই বর্তমান ও ভাবীকালে লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিজকে তৈরী করা যায়। মানব আধারের আর সব অংশের মত চিত্তেরও বিশ্রাম চাই, আর এ বিশ্রাম সে পাবে না যতক্ষণ না জানে কি রকমে তা দিতে হয়। চিত্তকে কি করে বিশ্রাম দিতে হয় তা অনুশীলনের জিনিস। এক উপায় হল, এক লক্ষ্য অর্জনের জন্য চিন্তাজগতের কাজ বদলান, কিন্তু সবচেয়ে ভাল বিশ্রাম হতে পারে এক লক্ষ্য ছাড়া সব ব্যাপারে নীরবতায়।
যখন ইচ্ছামত চিত্তকে নীরব করতে পারা যায়, গ্রহণোম্মুখ নীরবতার মধ্যে তাকে একাগ্র করে ধরে রাখা যায়, তখনি সমস্যার সমাধান হয়, সঙ্কট দূর করা যায়। শ্রীগুরু, আমি আমার উপলব্ধি ও বাস্তবতার সাহায্যে কাজ করতে চেষ্টা করব, আমার এই প্রয়াসে তুমি সাহায্য কর, প্রাণশক্তিকে শান্ত কর, চিন্তাজগতকে নীরব ও অচঞ্চল রাখ এমনভাবে যেন একাত্মতার ক্ষেত্র ঊর্দ্ধের দিকে উন্মুক্ত ও গতিসম্পন্ন হয় এই প্রার্থনাই উত্তম। আধুনিক পদ্ধতিতে শিক্ষাপ্রাপ্ত হচ্ছি কিন্তু নিজ-এর মধ্যে স্বজ্ঞার গুণ ও সমত্ববোধের সাহায্যে জ্ঞান লাভের ক্ষমতা বিকাশেরও চেষ্টাও করিনি, তাই এখুনিই শুরু করি। 
প্রত্যক্ষ দর্শন, উপলব্ধি ও জ্ঞান - তা অন্তরের গোপন দিনলিপিতে লিখে রাখতে হয়। আত্মসূর্যই শ্রীগুরুর রূপ। এই আত্মসূর্যের রূপ এবং আমি রূপ একই এবং অভিন্ন। জিহ্বার দ্বারা সকল স্বাদ বোঝা যায়। লালসাযুক্ত জিহ্বা দ্বারা লালসা উৎপন্ন হয়। এই লালসার জন্যই আমিত্ব আবদ্ধ হয়। লোভ চরিতার্থ না হলে ক্রোধ উৎপন্ন হয়। এগুলো সবই সত্যমানুষ হওয়ার অর্থাৎ সাধনার অন্তরায়। অতএব, লোভ ক্রোধ ইত্যাদি এগুলোকে সর্বাগ্রে নিয়ন্ত্রণ করা একান্ত প্রয়োজন। এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আত্মরাজ্যে প্রবেশ করা যায় । 
কোন বস্তু লাভের জন্য লোভ হয়। সেই লোভ বাইরের থেকে আমি-র মধ্যে প্রবেশ করে না। লোভ আমি-র ভেতরেই আছে। কোন বস্তু লাভের ইচ্ছা জাগ্রত হওয়াই দেহাভ্যন্তরস্থ লোভরূপী অবস্থার প্রকাশ। লোভ বর্তমান। এই লোভ কে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বাহ্যিক উপায়ে বা বাহ্যিক ত্যাগে সম্ভব নয়। যেমন যে বস্তুর প্রাপ্তির জন্য লোভ হল, সেই বস্তুকে যখন গ্রহণ না করা হয় তখন বাহ্যিক ত্যাগ হল বটে কিন্তু চিন্তাজগতের অন্তরে সেই বস্তু লাভের লোভ রয়ে গেল। অতএব এ ভাবে লালসা বা লোভ চরিতার্থতা হল না ঠিকই, কিন্তু এ উপায়ে সঠিক ত্যাগ সম্ভব নয়। ত্যাগ, শ্রীগুরুর আদেশ-উপদেশ-নিষেধের মধ্যের নির্যাস নিয়ে সংস্পর্শ-সান্নিধ্য-স্মরণে লক্ষ্য অর্জনে মগ্নতা। 
চরণ দেখা নাকি যার দ্বারা বিচরণ করা যায়। মানুষ দুই পায়ের দ্বারা বিচরণ করে। পা হাড় মাংস দ্বারা গঠিত। প্রকৃতপক্ষে পায়ের কি নিজস্ব ক্ষমতা আছে? যদি থাকত মৃত মানুষের পাও চলত। তা যখন চলে না, তখন এই দুই পায়ের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই। অতএব প্রকৃতপক্ষে এই দুই পা সহ সারা শরীরটাকে যিনি চালাচ্ছেন তিনি হলেন শ্বাস। এই শ্বাসের গতি থাকায় জীব জীবিত থাকে।
নিজ অন্তরকে সম্পূর্ণ রিক্ত কর, মুক্ত কর, উজাড় করে নিঃশেষে শ্রীগুরুর চরণে ঢেলে দাও, তাঁর সাথে নিরবচ্ছিন্নভাবে যুক্ত হও, অন্তরকে সর্ব্বদা পূর্ণরূপে তাঁর প্রতি উন্মুখ করে রাখ, তবেই নিমেষের মধ্যে তাঁর কৃপার বৈদ্যুতিক স্পর্শে হতাশা বিপর্য্যস্ত আমি-প্রাণ সরল সতেজ হয়ে থাকবে, তাঁর করুণাধারায় অভিসিঞ্চিত হয়ে জীবন চলার পথে সমগ্র জীবন-জনম ধন্য ও কৃতার্থ করে এবং কৃতজ্ঞ হয়ে আনন্দলোকে থাকা যায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন