শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

দেশের সময়টা ভালো যাচ্ছে না

সময়ের সাফ কথা…. 

দেশের সময়টা ভালো যাচ্ছে না

সংলাপ ॥  সব মিলিয়ে দেশের সময়টা ভাল যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর পদটা  বাঙালির জন্য অত্যন্ত দুর্বল একটা জায়গা। বাঙালি উন্নতির স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন অনেক আগেই শেখ হাসিনাকেই নিয়ে। কিন্তু অগুনতি ক্ষুদ্র সঙ্কীর্ণ অতৃপ্ত দলের জোট-রাজনীতি প্রায়শ যে শিষ্টাচারের সীমালঙ্ঘন করে, রাজনৈতিক মূল্যবোধের সামান্য মূল্যও স্বীকার করে না, সেসব আমরা বোধহয় স্মরণে রাখতে চাই না। তাহলে কথায় কথায় আকাশ কুসুম কল্পনা করায় খ্যামা দিতাম। বাস্তবের মাটিতে দাঁড়ালে আরও একটি জিনিস মানতেই হবে, দেশে শুধু বাঙালি বাঙালি করে কিছু হবে না। আগে নেতৃত্বগুণ অর্জন করতে হবে। ওই উচ্চতায় পৌঁছে কোন রাজনীতিক বাঙালির বহুকালের হতাশাটা দূর করতে পারলে সকলেই আরো উল্লসিত হবে। শুধু আবেগে ভেসে যাওয়ার সময় নেই, প্রকৃত অর্থে শেখ হাসিনাকে সারা বাংলাদেশের ঘরে ঘরে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতেই হবে। জোট-রাজনীতির ফাঁকফোকর গলে দু-চারদিনের জন্য কোন মাওকায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সামান্য মানুষও মস্করা করতে ছাড়ে না। এমন কোনও উপহাসের পাত্র হওয়ার সাধনা কি শেখ হাসিনা বা কোন নিবেদিত প্রাণ বাঙালি করে?
কুলোর বাতাস দিয়েই ক্ষমতা হতে শেখ হাসিনাকে তাড়াবেন বলে যে ভাবখানা কেউ কেউ দেখাচ্ছেন তাদেরও কয়েকটি কথা ভাবতে হবে। আওয়ামী লীগ নামক দলটির বদনাম যত তার গ্রাফ ততো উন্নত। দল পরিচালকরা ওই ইতিহাস থেকেই আরো শক্ত হয়ে দাঁড়াবার শক্তিসঞ্চয়ে মনযোগ দেবেন বইকি। আশঙ্কা এই যে, শুধু বদনামে কাজ হাসিল হবে না ধরে নিয়ে বিরোধী দলগুলো ‘বিপন্ন ইসলাম’-এর জিগির তুলতে পারে। সংখ্যাগুরুর ভোট ব্যাপকভাবে সংহত করার জন্য বিরোধী রাজনীতিকদের সামনে সবচেয়ে লাভজনক কৌশল এটাই। ধর্ম অঙ্গনটা কোনওকালেই ঠুনকো ব্যাপার নয়, তার প্রমাণ বাংলাদেশে এখনও তথাকথিত কট্টর ইসলামি মৌলবাদ ঠেকানো যায়নি। শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে আমূল বদল এনেও এখনও তার আপোষকামী অবস্থা বিদ্যমান। সৌজন্যে কট্টর ইসলামি মৌলবাদীদের ক্রমবর্ধমান দাপট। অতএব, নানাদিক থেকে এদেশে আওয়ামীলীগ যত চাপে পড়বে তারা ততো বেশি করে তথাকথিত আনুষ্ঠানিকতার ধর্ম আঁকড়ে ধরতে পারে। কারণ পরীক্ষিত সত্যটি হলো, উন্নয়ন, সংস্কার করে বিদেশে হাততালি জোটে বটে কিন্তু দেশে সত্য প্রতিষ্ঠায় দলীয়ভাবে ব্রত না নিলে দেশ ও জাতির কান্ডারি হওয়া দুরূহ হয়ে উঠতে পারে!
সাধারণ মানুষই নির্বাচনের ‘প্রাণ ভোমরা’। সেই মানুষকে রক্ষা করাই প্রথম ও প্রধান কাজ। মানুষের কাছে রাজনীতিকদের আরও বেশি করে যেতে হবে। শুনতে হবে তাদের কথা। সমস্যার সমাধান করতে হবে অঙ্কুরেই। দল ও প্রশাসনকে কড়া বার্তা দিতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে।
পুলিশ-প্রশাসনকে নিরপেক্ষ হতে হবে। চলতে হবে সত্য নিয়ে, সবাইকে নিয়ে। সাধারণ মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের চোখ-কান খুলে চলতে হবে। গাড়িতে ঘুরছেন চোখ খোলা রাখুন। কোথায় কী সমস্যা, নজরে এলেই ব্যবস্থা নিন। গাড়িতে কখনও ঘুমাবেন না। চোখ-কান খোলা রাখবেন। সমস্যা নজরে এলেই দ্রুত ব্যবস্থা নিন। আদর্শিক রাজনীতিকদের এগুলো করতে হবে। সামনে নির্বাচন। আন্তরিকতায় মানুষের সেবা করবেন। স্মরণ রাখতে হবে সরকারের চালিকাশক্তি সাধারণ মানুষ।
নির্বাচনের আগে উন্নয়নমূলক যাবতীয় কাজের হালহকিকত খতিয়ে দেখার জন্যই সরকারি রাজনীতিকদের  যে বারবার জনতার বৈঠকে অংশ নেয়া জরুরি, তা স্পষ্ট। আর তাই কাজের খতিয়ান দেখে কোথাও সন্তোষ প্রকাশ করতে হবে। প্রয়োজনে কোথাও আবার  মৃদু ভৎসনা। সর্বত্রই আরও বেশি করে মানবতার কাজে মনোনিবেশ করতে কর্মী ও কর্মকর্তাদের উৎসাহিত করতে হবে। সরকারের অভিমুখ নির্ধারিত হয় জনতা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মাধ্যমেই। তাই প্রশাসনিক বৈঠকে তৃণমূলস্তরের মানুষকে যুক্ত করতে হবে এবং বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে ছোটখাট সব সমস্যা মেটাতে হবে। অঙ্কুরেই বিনাশ করতে হবে সমস্যা।
নির্বাচনে সামাজিক সুরক্ষাপ্রাপ্ত উপভোক্তারা দেশকে অনেক দিতে পারে, এ উপলব্ধি রয়েছে আদর্শিক রাজনীতিকদের ও প্রধানমন্ত্রীর। নিজেদের সেই উপলব্ধি রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে ভাগ করে তার নির্দেশ, অসংগঠিত ক্ষেত্রে যেখানে রয়েছেন রিকশাচালক, ছোট দোকানদার, পরিচারিকা, নির্মাণকর্মী, খেতমজুর, ভূমিহীন কৃষকদের মতো মানুষ তাদেরকে আরও বেশি করে যুক্ত করতে হবে। জোরদার করতে হবে সংযোগের মাধ্যমে সম্পর্ক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন