শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

দায়বদ্ধতা স্মরণে থাকে কি?

সময়ের সাফ কথা…. 

দায়বদ্ধতা স্মরণে থাকে কি?

সংলাপ ॥ অন্ধকার পেছনে ফেলে অনেকটা বা বেশ খানিকটা দূরে চলে এসেও ফের ধাক্কা খেতে হয় অন্ধকারে। স্বস্তিদায়ক কোনও গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, এমন অনুভূতি যেই থিতু হতে চায়, তখনই ফের মাথাচাড়া দেয় অস্বস্তিটা। বাংলাদেশে বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার ছবিটা অনেকটা এই রকমই। জুলুম রোগের দাপট অস্তমিত, নিরাময়ের পথে বেসরকারি হাসপাতালের অসুখ-এই বিশ্বাস যত বার দানা বাঁধতে চাইছে, তত বারই ধাক্কা খেতে হচ্ছে। আশার সৌধটা নির্মীয়মাণ অবস্থাতেই বার বার ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।
শহরের দুঃসংবাদগুলোর মধ্যে আছে অপ্রত্যাশিত মৃত্যু রোগীর। মৃত্যুর কারণ ঘিরে ধোঁয়াশা। ভুল চিকিৎসা অথবা ক্ষমার অযোগ্য গাফিলতির ছায়া। আর প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই রোগীর মৃত্যুর পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে অসহযোগ এবং অস্বচ্ছ আচরণ।
প্রত্যাশিতভাবেই উত্তপ্ত হয় পরিস্থিতি। মৃতের পরিবার-পরিজনরা তীব্র ক্ষোভের নিশানা বানায় হাসপাতালকে। রোষ আছড়ে পড়ছে বিশৃঙ্খলাকে সঙ্গী করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোথাও মুখ বাঁচানোর চেষ্টা করছেন, কোথাও অভিযোগ অস্বীকার করার চেষ্টা করছেন, কোথাও জবাব এড়িয়ে যেতে চাচ্ছেন।
এই ক্ষমা চাওয়া বা অস্বীকার করা বা জবাবদিহি এড়ানো আসলে মুখ লুকানোর অস্থায়ী এবং তাৎক্ষণিক কৌশল। দীর্ঘ মেয়াদের সমাধান এ সব নয়। সব পক্ষই এ সত্য বুঝছে। তবু বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার ‘গভীর অসুখ’টার স্থায়ী সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রানালয় আসরে নেমেছিলেন বেসরকারি হাসপাতালের ‘রোগ’ সারাতে। কোন হাসপাতালের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ, সুনির্দিষ্ট ভাবে সে সব নিয়ে গবেষণা করেছে। স্বাস্থ্য পরিষেবার নামে চিকিৎসাপ্রার্থীকে অর্থনৈতিক হেনস্থার মুখে ঠেলে দেয়ার বিরুদ্ধে কঠোরতম স্বরে বার্তা দিয়েছে। হুঁশিয়ারির পরে নড়েচড়ে বসে বেসরকারি হাসপাতালগুলো। রোগীর পরিজনরা যাতে অভিযোগের আঙুল তুলতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে বেশ তৎপরতা দেখা যায়। দিগন্তরেখায় ইতিবাচক আলো ফুটতে শুরু করে কিন্তু কয়েক মাস কাটতে না কাটতেই যেন ফের অন্ধকারের দিকেই আবার যাত্রা শুরু হয়।
অভিযোগ থাকলে তা জানানোর নির্দিষ্ট মাধ্যম রয়েছে। বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর বিরুদ্ধে আগেও অনেকবার অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে আঙুল উঠেছে বলেই এখন যে কোনও অভিযোগ সামনে এলেই আইন হাতে তুলে নেয়ার অধিকার আমরা পেয়ে গিয়েছি এমনটা নয়। শহরের সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালগুলো থেকে যে সব দুঃসংবাদ আসে, সেগুলো নিঃসন্দেহে মর্মান্তিক। কিন্তু সুনির্দিষ্ট পথে তার প্রতিকার না চেয়ে অশান্তি, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে প্রতিবাদ কাম্য নয়।
এই সঙ্কটের দায় মূলত বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরই। প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে হুঁশিয়ারি আসার পরে সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালগুলোর আচরণে যে পরিবর্তন আসেনা, তা সকলেই দেখছেন। সময় কিছুটা অতিক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হুঁশিয়ারির প্রভাব অল্প  মলিন হতেই সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালগুলোর সতর্ক চেহারাও যে মলিন হতে শুরু করে, তাও দেশবাসীরা দেখছেন।
সমস্যা আসলে মানসিকতায়। হুঁশিয়ারির ভয়ে নয়, দায়বদ্ধতা থেকে মানবিক হওয়ার সঙ্কল্প নিতে হবে সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালগুলোকে। মৌলিক পরিবর্তন তাতেই সম্ভব।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন