শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

চেতনায় হালচাল

সময়ের সাফ কথা…. 

চেতনায় হালচাল

সংলাপ ॥ লক্ষ্য হাসিল হোক বা না হোক, লক্ষ্যের দিকে নিরন্তর ছুটে যেতে যেতে ক্ষমতা, যশ, ঐশ্বর্য, ভোগ এবং লোভ মানুষকে প্রলুজব্ধ করতে পারে। সবাই প্রলুব্ধ হন, এমন অবশ্য নয়। যতই সামনে ছুটে যাওয়া, লক্ষ্যও ততই পিছিয়ে যাওয়া এই উপলব্ধি এলে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দৌঁড়ানো অনেকেই থামিয়ে দেন। কারণ কিছু মানুষকে চিরকাল এবং সব মানুষকে কিছুকাল বিভ্রান্তির মধ্যে রাখা সম্ভব, কিন্তু সবাই মিলে চিরকাল ভ্রান্তিবিলাসে মজে থাকবেন, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই, এটা সত্য। যুগে যুগে, দেশে দেশে, পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে বার বার প্রতিধ্বনিত হয়েছে এ সত্য। আমাদের দেশেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে বলে প্রতীত হয়।
সন্ত্রাসবাদ কোনও ধর্মের নয়। এটা একটা মানসিকতা, যার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভুল পথে চালিত হচ্ছে যুব সমাজ। এর বিরুদ্ধে লড়াই মানে কোনও ধর্মের বিরুদ্ধে লড়াই নয়। সব ধর্মই মানবিকতায় বিশ্বাসী। বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের সেই মানবিক দিকটি বেশি করে নজরে আনা প্রয়োজন। বহু ধর্মের দেশে আরও বেশি করে মানবিক হতে হবে সকলকে। যুব সমাজকে সেদিকে নজর রাখতে হবে। যুব সমাজকে আরও বেশি করে আধুনিক হওয়ার এবং প্রযুক্তিগত শিক্ষাও অত্যন্ত জরুরি। স্বরচিত ধর্মের নামে জিহাদ কখনওই কাম্য নয়। যারা ধর্মের নামে হিংসা ছড়াচ্ছে তাদের চিনতে হবে। তাদের অভিসন্ধির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। যারা হিংসা ছড়াতে চাইছে তাদের প্রতিহত করতে হবে আর এই কাজে সব সম্প্রদায়কেই এগিয়ে আসার এখনই সময়।
সুরক্ষিত এবং গঠনমূলক পরিবর্তনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার দায়বদ্ধ। আর তার জন্য শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। যে যাত্রা শুরু হয়েছে, তাতে সঙ্গী হিসেবে ভারতের যোগ্য নেতৃত্বকে স্বাগতম। অস্থিরতা, বিতর্ক এবং আগ্রাসী অর্থনীতি নয়। আমাদের লক্ষ্য, উপমহাদেশকে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। ঠিক এই কারণেই প্রয়োজন সঠিক বন্ধুর। দ্বিপাক্ষিক বা বহু দেশের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলার জন্য যাদের ভাবনাচিন্তা হবে একইরকম। যারা উন্নয়নের পথেই এগোবে। হিংসার পথে নয়। সন্ত্রাসেরও নয়। দেশের রাজনৈতিক অংশীদারিত্বের অন্যতম মজবুত স্তম্ভ হলো সন্ত্রাস দমন। এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম উদ্বেগজনক সমস্যা হলো সন্ত্রাস।  পৃথিবী জুড়ে আজ যে অস্থির পরিবেশ তৈরি হয়ে রয়েছে, সেই আবহে আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। দুই দেশেরই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। আর এটাই হোক আমাদের শক্তি। তাই দুই দেশ যদি একে অপরের পরিপূরক হয়ে গোটা বিশ্বে একটা ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে, তা কিন্তু দিনের শেষে আমাদের দেশবাসীকেই আরও বেশি সুরক্ষিত করবে। আর মানুষের উন্নতি হলেই হবে দেশের উন্নতির  বিকাশ।
জনরোষের অসংগত প্রকাশ তথা আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা তথা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি এ পরিস্থিতি দু’টো কারণে জন্ম নিতে পারে। প্রথম কারণ, প্রশাসনের ওপর আস্থা না থাকা। দ্বিতীয় কারণ, পুলিশ-প্রশাসনকে সমীহ না করা।
প্রশাসনের উপর থেকে আস্থা সম্পূর্ণ উঠে গিয়েছে, এমনটা বলা সংগত হবে না। অভাব-অভিযোগ নিয়ে এ দেশে এখনও প্রশাসনেরই দ্বারস্থ হন মানুষ, প্রশাসনের দরজায় গেলে সুবিচার পাওয়া যাবে বলে অধিকাংশ মানুষই আশা রাখেন, সুনির্দিষ্ট প্রশাসনিক কাঠামোও এ দেশে স্বমহিমায় অস্তিত্বশীল এবং ক্রিয়াশীল। জনসাধারণের আস্থা পুরোপুরি উঠে গেলে এই ছবিটা সম্ভবত থাকবে না। দ্বিতীয় কারণটা পুলিশ-প্রশাসনের প্রতি সমীহ কমছে জনসাধারণের। সমীহ যে কমছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। ছোট-বড়-মাঝারি নানা ঘটনায় যেভাবে জনতা আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে, যেভাবে নির্দ্বিধায় আইন হাতে তুলে নিচ্ছে, তাতে স্পষ্ট বোঝা যায়, আইনের রক্ষকদের কেউ আর খুব একটা ভয় পাচ্ছেন না।
কোথাও জনরোষ আছড়ে পড়া মানেই পুলিশ-প্রশাসনের প্রতি নাগরিকের সমীহ সম্পূর্ণ উবে গেল, এমনটা নয়। কোনও ঘটনার আকস্মিকতা বা বীভৎসতা জনরোষের জন্ম দিতেই পারে। কিন্তু সেই ধরনের আকস্মিক ক্ষোভ বিচ্ছিন্ন ভাবে জন্ম নেয়, মাঝে মধ্যেই দেখা যায় বা আছড়ে পড়ে এমনটা নয়। কিন্তু পর পর প্রায় প্রতিটি অবকাশে জনরোষকে লাগামহীন হয়ে আছড়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন নয়। ঘটনাগুলো একটা নির্দিষ্ট প্রবণতার অঙ্গ।
পুলিশ-প্রশাসনকে সমীহ না করার এই প্রবণতা কেন? অপরাধ করলে বা আইন হাতে নিলে পার পেয়ে যাওয়া যায়, প্রশাসন ঈষৎ ক্ষমাশীল অবস্থান নেয়, সে ক্ষমাশীলতার মধ্যে ঈষৎ প্রশ্রয়ের বার্তা থাকে, প্রশাসনিক শৈথিল্যের ইঙ্গিত থাকে এই রকম একটা ধারণা চারিয়ে গিয়েছে বলেই, সমীহটা উবে গিয়েছে। অপরাধ বা আইন হাতে তুলে নেয়ার ঘটনাকে প্রশাসন একটুও শিথিলভাবে দেখবে না, এ বার্তাটা যখন জনমানসে থাকবে, তখন কথায় কথায় জনরোষ লাগামহীন হওয়ার প্রশ্ন উঠে না। যে কোনও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার প্রেক্ষিতে জনসাধারণের বল্গাহীন প্রতিক্রিয়া যে সুখকর হচ্ছে না, পরিস্থিতি যে দিন দিন হাতের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে, প্রশাসন নিশ্চয়ই তা বুঝতে পারছে। সে ক্ষেত্রে শৈথিল্য কাটাতে হবে অবিলম্বে। আইন হাতে তুলে নেয়ার যে কোনও ঘটনাতেই প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, সেই বার্তা সর্বস্তরে পৌঁছে দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। না হলে ভবিষ্যৎটা আরও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন