শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

দেশের জন্য কে ?

দেশের জন্য কে ?

সংলাপ ॥ সামনে নির্বাচন, সমস্যাসঙ্কুল বিভীষিকাময় ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে দেশবাসী। এখানে মানুষের ন্যূনতম মৌলিক অধিকারও সোনার হরিণ প্রাপ্যতার মতো বস্তু। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয়নীতিক সমস্যা আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছে এ দেশের ভবিষ্যত। নানা বৈষম্যের বেড়াজালে আবদ্ধ জনগণ হা-হুতাশে দিনাতিপাত করছে। কর্ম পরিধির স্বল্পতা এখানে প্রধান সমস্যা রূপে মানুষের ঘাড়ে চেপেছে। বেকারত্বের আধিক্য মানুষের পারিবারিক জীবনকে করেছে দুর্বিষহ। আসলে কি আমরা উন্নয়নশীল দেশে বাস করি, না অনুন্নত দেশে বাস করি? মাথাপিছু আয়, জীবন যাত্রার মান, অধিক বেকারত্ব, মৌলিক চাহিদা অপূর্ণ প্রভৃতি বিবেচনায় আমরা এক দেশের নাগরিক। আসলে আমরা সাধারণ মানুষ তথাকথিত উন্নয়নের জোয়ারে  ভেসে গেছি; মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে রাজনীতিক, আমলা, ব্যবসায়ী মহল। প্রধান সমস্যা সমাধানের অন্তরায় এখানে স্পষ্ট। যারা দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, তারাই যখন কালকেউটে সাপের মতো জনগণের উপর বিষদাঁত বসান, তখন সামগ্রিক অবস্থার প্রেক্ষাপট বিপরীতমুখী হওয়া স্বাভাবিক। ক্ষমতার পালাবদলেই কি আমরা স্বাধীনতা উত্তর দেশে যোগ্য নেতৃত্ব পেয়েছি? যদি পেতাম তাহলে বর্তমান দেশের অবস্থা এমন হতে পারতো না। সরকারী দল ক্ষমতায় থাকলে লুটেপুটে খাওয়ার ব্যবস্থা করে, বিরোধী দল এর ভাগ না পেয়ে পুনর্বার ক্ষমতা প্রাপ্তির জন্য ষড়যন্ত্র ও আন্দোলন করে। এ আন্দোলন দেশের মানুষের জন্য নয়, দলের জন্য। এমনটা গণতান্ত্রিক দেশে কখনোই হতে পারে না।
ক্ষমতার দাপটে অসম্ভবকে সম্ভব করতেও এখানে সরকারী দল পিছপা হয় না। দেশের শাসন চিত্রপটে আমরা যে সহিংসতার অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছি এগুলো মঙ্গলকর নয় মোটেও। বারবার জনগণের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে এবং হচ্ছে দেশের মাটি, এ চিত্র স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশের হতে পারে না। পুলিশের ক্ষমতা বর্তমানে পরম থেকে চরমে পৌঁছালেও গুম নামক নরহত্যার বিভৎসতাই মানুষকে হিংস্র করেছে। জবাবদিহিতার বিষয় বর্তমানে অমূলক বস্তু। মার-মার, কাট্-কাট্ কি সমস্যার সমাধান? বিরোধী দলের অবস্থানও জনগণকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। আন্দোলনের নামে সহিংসতার পথ তাদেরকে পরিহার করতে হবে। রাজপথ সমস্যার সমাধান কি? সরকার একাংশ ও বিরোধী দলগুলো দেশকে নরকপুরীর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের কথা, জনগণের কথা ভুলে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের আখের গোছাতে গোছাতে এ অবস্থায় এসেছে। কিন্তু বিকল্প কোনো পথ কি আমাদের জন্য রুদ্ধ হয়েই থাকবে? সামনের ভবিষ্যৎ কেবল তার অন্ধকারকেই আমাদের সামনে মেলে ধরছে। এ অন্ধকারে দিশেহারা হয়ে সময় চক্রে তাদের হাতের ক্রীড়ানক হয়েই আমরা আছি। এ খেলা বন্ধ হবার আশু কোনো প্রকার সমাধানের পথও খোলা নেই। দুর্নীতির বেড়াজালে আবদ্ধ গোটা সমাজ ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। স্বাস্থ্যখাতে বর্তমানে ব্যয়ের পরিমাণ নামেমাত্র অত্যধিক হয়েছে তবে হাম, পোলিও, যক্ষা, ধনুষ্টংকারের মতো রোগও নিরাময় সম্ভব হয়নি। দারিদ্র্য এখানে চক্রাকারে সাধারণ মানুষের একমুঠো ভাতের অধিকারকেও প্রতিষ্ঠিত করতে দেয় না। একে বলে সরকার, একে বলে প্রশাসন। হাস্যকর লাগে রাজনীতিকদের মুখে দেশপ্রেমের কথার ঝুড়ি যখন উপচে পড়ে। রাজনৈতিক সহিংসতা এ দেশকে একশ’ বছর পিছিয়ে রেখেছে। ১৯৪৭ সালের পর থেকে বর্তমান একবিংশ শতাব্দিতে দাঁড়িয়েও আমরা নিজেদের সভ্য জাতি বলে পরিচয় দিতে পারিনি। এ ব্যর্থতা তো দেশের রাজনীতির নীতিনির্ধারকদের কাঁধেই বর্তাবে। ভন্ডামীর রাজনীতি এদেশের রাজনীতির কালচারে পরিণত হয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্রের সকল প্রয়োজনীয়তা নামেমাত্র বরং খোলসে পরিণত হয়েছে। এ অগণতান্ত্রিকতার কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।
এখন প্রশ্ন জাগে, সমস্যাসঙ্কুল দেশের ভবিষ্যৎ কি? কোথায় চলছে এ দেশ? আগামী দিনগুলোতে আমরা কোন লক্ষ্যে পৌঁছাবো? কোন দিকনির্দেশনা-কোন পরিকল্পনা দ্বারা দেশের ভবিষ্যৎ এগিয়ে যাবে? কোনো রাজনৈতিক দল কি পেরেছে পরিকল্পনার ভিত্তিতে দেশকে এগিয়ে নিতে? পারেনি। কেবল পেরেছে ক্ষুদ্র আঙুল ফুলিয়ে কলাগাছ বানাতে। পেরেছে সম্পদের পাহাড় গড়ে নিষ্পেষিত করতে সাধারণ মানুষকে। সমস্যার বিষবাষ্পে মুমূর্ষ মানুষ কেবল মৃত্যুর প্রহর গুণে। পরিত্রাণ বলতে যা বুঝায় সবই এখানে অমূলক। মেকি দেশপ্রেম, হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার মানসে যারা অশান্তির কেতন উড়ায় তাদের চর্মসার মুখোশ খুলতে হবে। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যারা ভোট নামক জুয়ার খেলায় মাতে তাদের পদদলিত করে বিকল্প পথের সন্ধানে আমাদের ব্যাপৃত হতে হবে। মুমূর্ষ মানবতাকে বাঁচাবার প্রত্যয় যার মাঝে হৃদয় থেকে উৎসারিত হয় আমরা তাদেরকে চাই। মেকি দেশপ্রেম যার মাঝে নেই, যার মাঝে উৎসারিত হয় দেশপ্রেমের বীজ আমরা তাদেরকে চাই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন