শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

দেশ ও দশের প্রতি দায়বদ্ধতা

সময়ের সাফ কথা…. 

দেশ ও দশের প্রতি দায়বদ্ধতা

সংলাপ ॥ দেশ ও দশের প্রতি কতোটা দায়বদ্ধ থাকার কথা রাজনীতিকদের, নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে কোন স্তরে উন্নীত করা রাজনীতিকদের কর্তব্য। সে প্রসঙ্গে বিস্তর আলোচনা, বিতর্ক এবং বিতন্ডা আছে। ইতিবাচক কোনও ফল টের পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশে  ‘দায়বদ্ধতা’ বা ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’র মতো শব্দ অধিকাংশ রাজনীতিকদের কাছেই এ যুগে এখন কেতাবি কথা। বাস্তবে ওই ‘কেতাবিআনা’র প্রয়োগকে অপ্রয়োজনীয় বা অসম্ভব বলেই হেসে উড়িয়ে দেন এখনকার সিংহভাগ রাজনীতিক।
দেশের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ব্যর্থতা এবং সে ব্যর্থতা ঢেকে রাখার নিরন্তর অপপ্রয়াস ইতোমধ্যেই শোরগোল আরম্ভ হয়েছে। সমালোচনার মুখে পড়ে প্রশাসন থমকে দাঁড়ালেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অদম্য।
মোকাবিলার পথ খোঁজা সর্বাগ্রে জরুরি। কিন্তু প্রশাসন খুঁজে চাপা দেয়ার উপায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক কারণেই জটিলতর হচ্ছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি যে একটুও উন্নীত হচ্ছে না, সে কথা শীর্ষ মহলের বোঝার সময় এসেছে। এখনও  ভুলগুলো বুঝতে না পারলে প্রশাসন, এখনও সংশোধনের কথা না ভাবলে  বিপদ আরও বাড়বে।
মানুষের বেঁচে থাকার প্রাথমিক এবং ন্যূনতম প্রয়োজনের মধ্যে স্বাস্থ্য হলো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে খাদ্য, শিক্ষা, বাসস্থান ও স্বাস্থ্য। সমাজের সব স্তরের মানুষের কাছে এই পরিষেবাটুকু পৌঁছে দেয়া যে কোনও সরকারের প্রধান কাজ। সেজন্যই মানুষ ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচন করেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এক একটি ভোট সরকার গঠনে বিরাট ভূমিকা পালন করে। যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তাদের উচিত মানুষের চাহিদাগুলোকে যথাসাধ্য মেটানো। ক্ষমতায় আসার পর সরকার প্রত্যেকটি মানুষের সুখ সুবিধার প্রতি নজর দেবে, এটাই কাম্য। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে যে এগিয়ে চলার চেষ্টা করছেন, তার কিছু কিছু প্রমাণ দেশবাসীর কাছেই অবশ্য মিলেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সমস্যার সুরাহা করার ক্ষেত্রে তাঁর আন্তরিকতা অনেকটাই নজরে পড়েছে। সবক্ষেত্রেই যে তিনি পুরোপুরি সফল হতে পেরেছেন তা নয়, তবে তাঁর শুভ ইচ্ছাটুকু সাধারণ মানুষের নজরে পড়ছে।
শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের আমলে সলতে পাকানোর কাজটুকু শুরু হয়েছিল। স্বপ্ন দেখানোর কাজ শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে খোলনলচে বদলে দিয়ে আরও উন্নততর পরিষেবা দিতে উদ্যোগী হয়েছেন। চেষ্টা করছেন চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতির পাশাপাশি সেখানকার পরিসর বৃদ্ধি, আধুনিক যন্ত্রপাতি এনে চিকিৎসা করানো, ভবন নির্মাণ, বেডের সংখ্যা বাড়ানো ইত্যাদির। আমাদের দেশে রোগীর সংখ্যা এত বেশি যে, সে তুলনায় হাসপাতালের সংখ্যা খুবই কম। যেটুকু আছে, সেখানেও সবাইকে চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ থাকে না। হাসপাতালের বাইরে কত মানুষ যে যন্ত্রণায় কাতরায়, হয়তো বা তারা ক্রমে ক্রমে মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ে। আবার দেখা যায়, হাসপাতালগুলোর একই বেডে একাধিক রোগী শুয়ে থাকেন। এই অবস্থায় রোগীর পক্ষে সুস্থ হয়ে ওঠা কতটা অনুকূল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এই উদ্যোগ সব হাসপাতালের ক্ষেত্রেই নেয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে থানার হাসপাতালগুলোর ক্ষেত্রে। রোগীর চাপ সামাল দিতে যে পরিকাঠামো দরকার, তা অবশ্য রাতারাতি গড়ে উঠবে না। কিন্তু এদিকে নজর দিলে দিনে দিনে হাল ফিরবেই। মানুষ বেঁচে থাকার লড়াই করছে। এতো আমাদের দীর্ঘদিনের লড়াই। মন্বন্তরে মরিনা আমরা, মারী নিয়ে ঘর করি। সুতরাং লড়াইটা আমাদের মজ্জাগত। তা বলে কেউ চিকিৎসা পাবে না তা তো হতে পারে না। সরকারকে দেখতে হবে বিনা চিকিৎসায় যাতে কেউ মারা না যায়। অনেক আর্থিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে বর্তমান সরকার যে পদক্ষেপটুকু নিয়েছে, তার প্রশংসা করেও আক্ষেপটুকু স্বীকার করতেই হয়। বলতেই হয়, প্রয়োজনের তুলনায় অতি অল্প হলো। এই আক্ষেপ দূর করতে পারে কেবলমাত্র সরকারই। উন্নত পরিষেবা একটি জাতিকে সুস্থ এবং পরিশ্রমী করে তুলতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন