বৃহস্পতিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আমরা সবাই জানি....২৭-২৮


যার জীবনে শ্রীগুরু ধরা দেবে-অপরূপের দিব্য মহিমা-সে যে পথ দিয়ে চলবে সবাই সুখী হবে তার সেবায়। সবকিছু উজ্জ্বল হবে শ্রীগুরুর জ্যোতিতে - শ্রীগুরুর আদেশ-উপদেশ-নিষেধে উজ্জীবিত হয় সত্তা - সবাইকে দিতে পারে আনন্দ-সংবাদ।
লোভ, মোহ, আসুক নব নব ছলনা-সেদিকে লক্ষ্য না রেখে আপন চিন্তায় চিহ্নিত পথ ধরে এগিয়ে চললে, একদিন না একদিন গন্তব্য স্থানে গিয়ে পৌঁছানো যায়-এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কল্যাণকর্মে জীবন কখনো ব্যর্থ, বিফল হয় না।
শ্রীগুরুকে ডাকলে জীবনের সকল অভাব, অপূর্ণতা দূর হয়। এটা শুধুমাত্র কথার কথা বা কল্পনা নয়। সাধককুল সত্যমানুষকুল তার উজ্জ্বল প্রমাণ।
সম্পর্ক করার জন্যই মানুষের সাধনা। যেদিন মানুষ শ্রীগুরুর সাথে সম্পর্ক করে নিষ্পাপ নিষ্কলঙ্ক হয়, সেদিন সে নিজের অন্তরের মুকুরে দেখে হৃদয়-দেবতা শ্রীগুরুর মুখ। সে লাভ করে এক অপূর্ব আনন্দঘন দিব্যজীবন।
শ্রীগুরু তাঁর কাঁধ বাড়িয়ে আছেন বোঝা নেবার জন্য। বিশ্বাস করে মানুষ তাঁর কাঁধে জীবন বোঝা দিতে পারেন না। তাই মানুষের দুরবস্থা-জীবন বোঝা তাঁর কাঁধে বোঝা দিতে পারলে জীবনের সব কাজই সুসম্পন্ন হয়।
মহাপুরুষরা ইচ্ছানুযায়ী বারবার জন্মগ্রহণ করেন-জীবের কল্যাণের জন্য। আমিত্বের আবরণগুলো হতে একেবারে মুক্ত হতে হলে নিয়ম নিষ্ঠা লালন-পালন করতে হয়। শ্রীগুরু কাউকে কিছু দেন না, তিনি সম্পূর্ণ নিস্পৃহ দ্রষ্টা-কিন্তু তাঁর উপদেশ, সান্নিধ্য আর নাম স্মরণ থেকে সব কিছু পাওয়া যায়।
শ্রীগুরুর আশীর্বাদ প্রসাদ ছাড়া মানুষ উর্দ্ধমুখী হন না। শ্রীগুরু সর্বত্র থাকলেও এক এক দেশে এক এক অবস্থানে শ্রীগুরুর এক এক বিশেষত্ব, দেখা যায় উপলব্ধির মাধ্যমে, বুঝতে হয় এবং চিনতে হয় তাঁর মধ্যের ভাব এবং বহমান বিশেষ করুণার ঝর্ণাধারা।
শ্বাসে প্রশ্বাসে নাম অভ্যস্ত হয়ে গেলে অপ্রাপ্য কিছুই থাকে না। শ্বাসে প্রশ্বাসে নাম স্মরণ সাধনার প্রথম দেশ এবং সিদ্ধি-সিঁড়ির প্রথম ধাপ। শ্রীগুরুর প্রিয় অপ্রিয় ভেদ নেই। ভক্তিতে ভজনা করলে শ্রীগুরুর সঙ্গে একাত্ম হওয়া যায়। অন্তরে শ্রীগুরুর স্থিতি উপলব্ধি হয়। শ্বাসে-প্রশ্বাসে নাম করার অর্থ তাঁর সঙ্গে যুক্ত থাকা। সমস্ত চিন্তা-জগৎ নামে এবং শ্রীগুরুর কর্মে মগ্ন থাকলে সুখ-দুঃখ তাকে স্পর্শ করতে পারে না। আঘাতে কোন যন্ত্রণাবোধ থাকেনা কারণ তার বর্তমান তখন নামে মগ্ন।
যে কোন একটা প্রজাতির সদস্যকে নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসতে পারলে শ্রীগুরুদর্শন হয়। তিনি সর্বত্র। নিজকে নিয়ন্ত্রণ না করলে, ত্যাগ ও তপস্যার দ্বারা অন্তর শুদ্ধ ও পবিত্র না হলে শ্রীগুরুর আনন্দ-লোকে প্রবেশ করা যায় না।
সারাদিন আহার সুখ, নিদ্রা সুখ, বিষয় সুখ-এগুলো নিয়ে থাকলেও অগ্রাধিকার দিয়ে কিছু সময়ের জন্য শ্রীগুরু স্মরণে থাকা যায়। সুখ যত বাড়ে তত বাড়ে দুঃখের দহন-পরিত্রাণের উপায়-শরণাগতি। একান্ত চিত্তে শ্রীগুরুর উপর নির্ভর করে থাকা যায়। শ্রীগুরু প্রয়োজন মত সব ব্যবস্থা দিয়ে থাকেন। একটা অস্ফুট ব্যথাও তাঁর অগোচর নয়।
অন্তরে অন্তর্নিহিত আধ্যাত্মিক ভাবগুলো, যথা-শক্তি, জ্ঞান, প্রেমস্তর, পবিত্রতা, অন্তরের জ্যোতির্ময়তা এবং জীবন চলার পথে এমন কিছু কর্ম যার মধ্যে দিব্য জীবন-স্রোতে প্রবাহমান, তাতে একনিষ্ঠতা যোগে ধারণ করাই উত্তম। চৈতন্যসত্তা যখন শ্রীগুরুর ভাবগুলো দ্বারা পরিপূর্ণ হতে থাকে, তখন অপবিত্রতার কোন স্থানই সেখানে থাকে না। এ প্রকার সাধনা অব্যাহত থাকলে ধীরে ধীরে চিত্ত শুদ্ধ হয়। নিমগ্ন থাকলে সত্যমানুষে বিবর্তিত হয়, সত্য-শক্তি ও জ্যোতিতে পরিপূর্ণ হওয়ার পথ ধরে উর্দ্ধমুখী হওয়া যায়।
অশান্তির মূল হচ্ছে দ্বৈতভাব এবং দ্বিচারিতা। চতুর্দিকে সুন্দর পুষ্পরাশি থাকতে পারে; পবিত্র ভাবোদ্দীপক চিত্র -পটাদি থাকতে পারে, সুরভিত ধূপ থাকতে পারে, কিন্তু চিন্তায় অপবিত্রতা থাকলে; অর্থাৎ একাগ্রতা না থাকলে, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি স্থির না থাকলে-পবিত্রতা বস্তুটা অজ্ঞাতই থেকে যায়। অবিচলিত একাগ্রতার শক্তি দ্বারা যে কোন বাহ্য অবস্থা অতিক্রম করা যায়। সংযত চিন্তা শক্তিশালী হয় এবং যা কিছু দ্বারা বিক্ষিপ্ততা আসে, তা হতে নিজকে বিযুক্ত করার ক্ষমতা তার আয়ত্তে আসে। সাধনা, প্রেমজগতের পবিত্রতায় দৃঢ়ভাবে স্থিতিশীল হয়, কোন কিছুই আর তখন চিত্তকে উদ্বিগ্ন করতে পারে না। বিক্ষিপ্ত এক একটা চিন্তা এক একটা সুতোর মতো, তাকে সহজেই ছেঁড়া যায়। কিন্তু একাগ্রতা সুতোর এক গুচ্ছ, তাকে ছেঁড়া কঠিন। চিন্তারাশি সংযত করে লক্ষ্য-বিষয়ে দৃঢ়ভাবে সংযোগে থাকতে হয়। একাগ্র হলে কিছু শ্রুতিগোচর হয় না, কিছু দৃষ্টিগোচর হয় না-সব সমর্পিত হয়ে যায়। বাহ্য শব্দ, বাহ্য দৃষ্টি প্রভৃতি সকল বাহ্যিক ক্রিয়াসমূহ একাগ্রতা দ্বারা জয় করা যায়। সম্পর্কের সর্বোচ্চ রূপ একাগ্রতার তীব্রতায় নিকটে আসে। সংযোগে থাকা সহজ নয়। সংযোগে থাকার অর্থ অন্তরে শ্রীগুরুর অস্তিত্ব অনুভব করা। যোগ এবং সংযোগ শিল্প সৃষ্টির একমাত্র সত্য পথ বলে উপলব্ধ। তার অর্থ এই নয় যে, প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ ব্যাপারটা উপেক্ষা বা অবহেলা করা। শ্রীগুরুকে অন্য কোন কিছুর সঙ্গে তুলনা করা যায় না। শ্রীগুরু চিন্তায় ভাবের অভিব্যক্তি ঘটায়।
প্রেমজগতের ভালবাসায় শ্রীগুরুকে ভালবাসলে কামনা কমে যায়, ক্রোধ থেমে যায়, লোভ দমিত হয়, - এর জন্য আলাদা করে আর কোনও চেষ্টা করতে হয় না। পন্ডিতেরা মানুষের সব আচরণে, সব দৃষ্টিভঙ্গীতে, সব চিন্তা-ধারায় কামনার অপ্রতিহত মূর্ত্তি আবিষ্কার করে শঙ্কিত হয়েছেন। তাঁরা অর্দ্ধোপভুক্ত ও অনুপভুক্ত কামনার কুফল কেমন করে সমাজের প্রতি স্তরে অকল্পনীয় অশান্তি আনছে, তা দেখে কামনাকে অধিকতর নিশ্চয়তার সাথে উপভোগ করে স্ব-বিকার প্রশমিত করার জন্য সকলকে শান্তি ও নিরুদ্বেগ জীবনের পথপ্রদর্শন করবার জন্য ব্যস্ত হয়েছেন এবং আছেন।
সাধককুল তথা সত্যমানুষকুল কামনার পৃথক অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। প্রাণ আর প্রেমজগৎ অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। নিখিল ভুবন প্রাণ-প্রেমজগৎ-প্রেমময়-প্রেমসম্পর্ক হতে সৃষ্ট, তাই সব-কিছুই প্রেমময়। সেখানে মিথ্যা বলে কিছু নেই। প্রেমজগতে লক্ষ্যচ্যূত হলে বা লক্ষ্য না থাকলে বিক্ষিপ্ত চিন্তার মাঝে আত্মসুখ লিপ্সায় কামনার সৃষ্টি। আবার অনন্ত অসীম শ্রীগুরুর সাথে একাত্মতায়, স্বরূপে প্রকাশিত হয়ে হয় প্রেমময়। কামনা প্রেমজগতেরই একটা পরিবর্তনশীল অবস্থা। আত্মসুখ লিপ্সার সাথে মিশ্রিত হয়ে কামনা হয় বহমান; শ্রীগুরুর সাথে একাত্মতায়-পরমসত্যের সাথে একাত্মতায়-পরম চেতনার মাঝে নিমজ্জিত অবস্থায় প্রেমজগৎ শুধু প্রেমে ভরপুর থাকে। প্রাণ আর প্রেমজগৎ শ্রীগুরুতে লীন হয়ে যায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন