বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৩

উন্নয়নের বড় প্রতিবন্ধক ধর্মান্ধতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতি


উন্নয়নের বড় প্রতিবন্ধক ধর্মান্ধতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতি

 

সংলাপ ॥

 

স্বাধীনতার ৪২ বছর পর আজও বাংলাদেশে দারিদ্র্য, অশিক্ষা-কুশিক্ষা, ধর্মের নামে ধর্মান্ধতা জনগণের নিত্য সঙ্গী। বাহ্যিক দৃষ্টিতে বাংলাদেশ আজ অনেক এগিয়ে গেছে বলেই মনে হতে পারে। কিন্তু দেশের জনসংখ্যা যা ইতোমধ্যে ১৬ কোটি ছাড়িয়ে গেছে তার সাথে মিলিয়ে দেখলে এবং দেশের সর্বত্র, একটি বিশেষ শ্রেণী বাদে, সর্বস্তরের জনগণের অবস্থার দিকে তাকিয়ে দেখলেই বোঝা যায় অধিকাংশ মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছে অর্থনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মানদণ্ডের বিচারে। গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-বাজারে, বন্দরে, রাস্তা-ঘাটে, যানবাহনে, চলার পথে, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর কাজ শরু এবং শেষ হওয়ার সময়, শহরের বস্তিসহ নিম্ন আয়ের মানুষদের আবাসস্থলে যা সচরাচর দেখা যায় তাতেই ফুঠে ওঠে দেশের প্রকৃত চিত্র। অধিকাংশ মানুষেরই হাড্ডিসার অবস্থা, চামড়া এবং মাংস যেন এক হয়ে গেছে। অধিকাংশের চিন্তা-চেতনাও নিদারুণভাবে পশ্চাদপদ।
তথ্যপ্রযুক্তির যেমন বিপুল বিকাশ, এত এত টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান, ধর্মীয় বয়ান, নামাজ, রোজার শত সহস্র ফায়দা হাসিলের কথা শোনা গেলেও গরীব মানুষের স্রোতটি দিন দিন শুধু বড়ই হতে চলেছে। এই গরীবতাকে পুঁজি করেই স্বার্থান্বেষী রাজনীতিক ও ধর্ম-ব্যবসায়ী নামের এক শ্রেণীর অমানুষ অসহায় গ্রামীণ জনতাকে ঠেলে দিচ্ছে জঙ্গীবাদ ও উগ্রপন্থার দিকে। আবহকাল ধরে গ্রামের মানুষরা যেভাবে সহজ-সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিল তা থেকে তাদেরকে দূরে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। আর এই দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও তাদের সরলতা ও অজ্ঞতাকে পুঁজি করে বিদেশ থেকে অর্থ এসে একশ্রেণীর শিক্ষিত ও মতলববাজরা অঢেল সম্পদের মালিক হচ্ছে। ধর্মপ্রাণ ও ধর্মভীরু মানুষের এই বাংলাদেশে একটু চিন্তা করলেই দেখা যায় - একদিকে ধর্ম আর অপরদিকে রাজনীতিক সার্টিফিকেট - এই দুটিই হচ্ছে বর্তমান যুগে বড় লোক হওয়ার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। আরো বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় হচ্ছে, এই দুইয়ের সাথে দুর্নীতি, সুবিধাবাদিতা, কালোবাজারি মনোবৃত্তি, ‘গডফাদারদের সাথে কৌশলগত সুসম্পর্ক বজায় রেখে এক শ্রেণীর মানুষ আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে’ - গত ১০/১৫ বছরে। এ সময়ে ধনীরা হয়েছে আরো ধনী, গরীবরা হয়েছে আরো গরীব। অথচ বিদেশে কর্মরত লাখ লাখ বাংলাদেশীর পাঠানো বিপুল অর্থ এবং পোশাক রপ্তানী করে অর্জিত বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা দেশের ও জনগণের সার্বিক কল্যাণে ব্যয় করা গেলে এমন দূর্বিষহ অবস্থায় দেশকে পড়তে হতো না। যে মানুষ নিজের মধ্যে যা ধারণ করে সেটিই যে তার ধর্ম একথা ঘুণাক্ষরেও কোন ধর্ম ব্যবসায়ীকে বলতে শোনা যায় না। ইসলাম ধর্মের মূলের কথা যে, ‘শান্তি’- এ বাণী কয়জন মানুষকে বুঝিয়েছে ধর্ম-ব্যবসায়ীরা? অপরদিকে কথিত শিক্ষিত শ্রেণীটিও যে বড় বেশি স্বার্থপর। বিশেষ করে বিভিন্ন পেশাজীবী সম্প্রদায় যেমন রাজনীতিক, আইনজীবী, শিক্ষক, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, ধর্মবেত্তা ও ধর্মজীবীরা - এদের অনেকের ব্যক্তিস্বার্থপরতার মনোবৃত্তি যেভাবে আজ জাতিকে আষ্টে-পৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে তা থেকে মুক্ত হওয়া না গেলে বাংলার মানুষের সার্বিক মুক্তি কখনো সম্ভব নয়। রাষ্ট্রের সম্পদ ও নগদ অর্থ লুটেরাদেরকে বিচারের আওতায় আনার যে ব্যবস্থা আজ সামাজিক অবস্থার মধ্যে নেয়া হচ্ছে তা আশাপ্রদ হলেও বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতিবাজদের বিচার কে করবে? সে প্রশ্ন আজ বাংলার আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে। চাঁদাবাজির অভিযোগে যাদের আটক করে আজ জেলখানায় সাধারণ কয়েদীদের মধ্যে রেখে বিচার করা হচ্ছে, তাদের আশীর্বাদক ছিলো বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতিবাজ, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীরা যাদের সংগঠন অত্যন্ত শাক্তিশালী ছিল খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রসমাজের মধ্যেই। মাদ্রাসা শিক্ষার সাথে জড়িত ধর্মজীবী ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ধর্মীয় সন্ত্রাসের সমর্থন করতো না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই এতদিন কঠিন ছিল। ধর্মের নামে ব্যবসাকারী ধর্মজীবী এবং সুবিধাভোগী বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতিবাজ বুদ্ধিজীবীদেরকে বিচারের আওতায় আনাই আজকের সময়ের দাবী। এরাই দেশ ও জাতির সবচেয়ে বড় শত্রু ।

নিজেকে না জানলে আল্লাহ্‌কে জানা যায় কি?


নিজেকে না জানলে আল্লাহ্‌কে জানা যায় কি?

 

শেখ উল্লাস ॥

 

আজ বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে লাখ লাখ প্রবাসী যাদের অধিকাংশই শ্রমিক, এদেশের পোশাক-শিল্পে নিয়োজিত লাখ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক, যাদের অধিকাংশই নারী। বিদেশের মাটিতে দিন-রাত পরিশ্রম করে প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখছে, আর গার্মেন্টস শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের খাটুনীর বিনিময়ে পোশাক-রপ্তানীর মাধ্যমে কাড়িকাড়ি টাকা আসছে এবং দেশের অর্থনীতিকে সচল করে রাখছে। আর সে কারণে, বলতে গেলে এরাই দেশের শান্তি (ইসলাম) রক্ষায় (হিফাজত) ভূমিকা রাখছে। কারণ, কর্মবিমুখ হলে জীবনে কী দুর্র্ভোগ পোহাতে হয় সে কথা কারো অজানা নয়। কর্মবিমুখদের স্থান ইসলাম ধর্মে নেই বলে বার বার কুরআন-হাদিসে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের মাদ্রাসাগুলো থেকে পাশ করে আসা অধিকাংশ লোকই শেষ পর্যন্ত কর্মবিমূখ হয়ে জীবনযাপন করতে হয়। কারণ, বর্তমান সময়ের বিশ্বে বসবাস করতে হলে যে ধরনের বিদ্যা অর্জন করতে হয় সেসব বিদ্যা মাদ্রাসাগুলোতে দেয়া হয় না বললেই চলে।

আমাদের মতো দেশে বিশ্বায়নের নানারকম ক্ষতিকর দিক থাকলেও এর সবচেয়ে বড়ো ইতিবাচক দিকটি হচ্ছে এর মাধ্যমে এদেশের পরিশ্রমী মানুষগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গিয়ে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। তারা নিজের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও দেশের উপকারে আসছে। এই দেশে পোশাক-শ্রমিকরা যদি কাজ না করতো, এই দেশের শ্রমজীবী মানুষেরা বিদেশে গিয়ে শ্রমিকের কাজ করার সুযোগ না পেত তাহলে দেশের অর্থনীতির আজ কী অবস্থা দাঁড়াতো? পবিত্র কুরআনে স্বয়ং আল্লাহপাক বলে দিয়েছেন, ‘লাইসালিন সানা ইল্লা মা সাআঅর্থাৎ, মানুষ যা করে তা ব্যতীত মানুষের জন্য কিছুই নেই। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ‘শ্রমিকের ঘাম শুকোনোর আগেই তার মজুরি দিয়ে দাও। ইসলামের নবী নিজ হাতে খেজুর বাগানে কাজ করেছেন, কুয়ো থেকে পানি তুলেছেন। এমনকি সেবা-শুশ্রুষা করার জন্য দুশমন (শত্রু)র বাড়িতে ছুটে গিয়েছেন। এদেশে আজ যে হাজার হাজার মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ নির্মিত হয়েছে সেখানে লাখ-লাখ ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছে, হাজার হাজার মানুষ শিক্ষকতা করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন সেসবের পেছনেও অনেক মানুষের শ্রম-ঘাম-মেধা-মনন ও অর্থ-প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটাতে হয়েছে। প্রকৃত অর্থে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার মধ্যে তো কোনো পার্থক্য নেই। ইংরেজিতে যাকে বলে স্কুল, আরবীতে তাকেই বলে মাদ্রাসা আর বাংলায় বলে বিদ্যালয় বা পাঠশালা। এসব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে একজন কোমলমতি ছাত্র বা ছাত্রীকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে বড় করে তোলা। যে প্রকৃত মানুষ হতে পারে না তার পক্ষে আল্লাহ-রাসুলকে চেনা আদৌ কখনো সম্ভব কি?। পবিত্র-কুরআন হাদীস নিয়ে গবেষণা করলে স্পষ্টতই দেখা যায় যে, আল্লাহ-রাসুলের সকল বাণীর মর্মকথা-যে নিজেকে চিনতে পারিয়াছে, সেই তার রব অর্থাৎ, সৃষ্টিকর্তাকে চিনিতে পারিয়াছে। নিজেকে চিনতে হলে যেখানে বর্তমান সময় ও পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কিত জ্ঞান-বিদ্যা অর্জন অতি আবশ্যকীয় কাজ, সেখানে কোনো মাদ্রাসায় এইসব বিদ্যা অর্জনের কোনো বিষয় পাঠ দান করা হয় না সে কথা সকলেরই জানা। বর্তমানে আমাদের দেশে যেসব মাদ্রাসা রয়েছে, সেখানে বর্তমান সময়ের জ্ঞান-বিজ্ঞান অর্জনের কোনো শিক্ষা যে দেয়া হয় না সে কথা কারো অজানা নয়। তাই যে নিজেকেই চিনল না, নিজের দেশকে চিনল না, পরিবেশ-পারিপার্শ্বিকতা চিনল না, তার পক্ষে আল্লাহ-রাসুলকে চেনা কখনো সম্ভব কি-না সে প্রশ্নটি আজ ধর্মান্ধ, ধর্মবেত্তা ও ধর্মব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসা করা সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। ওরা নিজেকে চিনতে পারেনি বলেই মানুষ হত্যা করে, অন্যদেরকে কাফির-নাস্তিক আখ্যা দিয়ে, পুলিশ হত্যা করে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অরাজকতা তৈরির চেষ্টায় লিপ্ত। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে কত দুর্নীতিবাজ, সুদখোর, ঘুসখোর, মুনাফাখোর, জুলুমবাজ, শোষক, নিপীড়ক নির্যাতক বিশেষ করে ৭১-এ নারী নির্যাতনকারী রাজাকার-আলবদর ও নব্য রাজাকার রয়েছে, যুদ্ধাপরাধী রয়েছে যারা  সাধারণ মানুষের জীবনকে অশান্তিময় (অনৈসলামিক) করে তুলছে তাদের বিরুদ্ধে তো এইসব মাদ্রাসা ছাত্রদেরকে কোনো কর্মসূচি নিতে দেখা যায় না।

মহানবী (সাঃ)-এর জীবনী আলোচনা করলে দেখা যায়, আরব দেশের তায়েফ নগরীতে ইসলাম (শান্তি) ধর্মের কথা প্রচার করতে গিয়ে শত্রুরা তাঁকে তাঁর দাঁত পর্যন্ত ভেঙ্গে দিয়েছেন তবু তিনি শত্রুদেরকে অভিশাপ দেননি, প্রতিশোধ নেয়া তো দূরের কথা। অথচ স্বার্থপরতা ও ভোগ-বিলাসের রাজনীতিচর্চার সময়ে যখন দেশপ্রেম, মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ে এদেশের সচেতন যুবকরা যখন জেগে উঠল, ৭১-এর যুদ্ধাপরাধের বিচার চাইল তখন তাদের ওপর প্রতিশোধ নিতে যারা উঠে-পড়ে লেগেছে তারা যে আল্লাহ-রাসুলের প্রেমিক নন, বরং তায়েফের মাঠে নবীজীর দাঁত-ভাঙ্গনকারীদের উত্তরসূরি সে কথা কোন ঈমাণদার ব্যক্তির পক্ষে বুঝতে কষ্ট হয় না।   

বর্তমান সময়ে যেখানে মোবাইল ফোন, টিভি চ্যানেল ছাড়া একজন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কথা ভাবাও যায় না, বিমান ভ্রমণে মক্কায় গিয়ে হজ্জ্বের কথা কেউ কল্পনাও করেনা সেই মোবাইল ফোন, বিমান এগুলো কিছুই কিন্তু কথিত ইসলাম হেফাজতকারীদেরকর্মের ফসল নয়। ওদের পূর্বসূরীরা এক সময় বলতো, টিভি দেখা, রেডিওর খবর শোনা, মানুষ চাঁদের দেশে পৌঁছেছে-এ কথা বিশ্বাস করা হারাম, জমিতে সার ব্যবহার করা হারাম, এখনো অনেক মসজিদে বলা হয়, অনেক কথিত শিক্ষিতরাও বিশ্বাস করেন ছবি তোলা বা ঘরে মানুষের ছবি রাখা হারাম বা ঘরে মানুষের ছবি থাকলে নামাজ হয় না, আল্লাহর ফেরেস্তা বা আল্লাহর রহমত আসে না। অন্ধকারযুগের চিন্তাজগতের এইসব মানুষকে তাই যখন মোবাইল ফোনে বা টিভি-চ্যানেলে কথা বলতে দেখা যায় তখন অত্যন্ত বেমাননই লাগে। কারণ, এইসব টিভি-চ্যানেল, মোবাইল ফোন যাঁদের পূণ্য কর্মের বদৌলতে আজ মানুষ ব্যবহার করতে পারছে তাঁদেরকেও এক সময় ওই কথিত হেফাজতকারীরা কাফের’, ‘নাস্তিকবলেছে। নিজের সম্পর্কে, নিজের যোগ্যতা ও জ্ঞান-দক্ষতা সম্পর্কে না জানতে পারলে বুঝি এমনটিই হয়। মরমী শিল্পীর ভাষায় বলতে হয়, ও যার আপন খবর আপনার হয় না, আপনারে চিনতে পারলে রে যায় অচেনারে চেনা। আর সে কারণে কাফের শব্দের অর্থ যে সত্য গোপণকারী, সে কথাটিও তারা আজও বুঝে উঠতে পারেনি।     
আজকে যারা ইসলামকে হেফাজতের নামে মহাসমাবেশ, লংমার্চ-এর মতো দুনিয়াদারি কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, সরকারকে ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য চাপ দিচ্ছে, নানা হুমকি-ধামকি দিচ্ছে  বস্তুতপক্ষে বিভ্রান্তির পথে আছে। শুধুই যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর লক্ষ্যে এবং যুদ্ধাপরাধীদের দেশি-বিদেশি মিত্রদের কোটি কোটি টাকার ভাগ নিয়ে যারা সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়, তাদের পূর্বসূরীরা যুগে যুগে  এ কাজটি করে  আসছে। কিন্তু সত্যেরই জয় হয়েছে আর মিথ্যাবাদীদের পরাজয় হয়েছে সব সময়। তাই বলতে হয়, আল্লাহ্‌ ও রাসুলকে পেতে হলে তাদেরকে অবশ্যই সত্যের পথে আসতে হবে। স্মরণ করতে হবে কুরআনের সেই বাণীটি-তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশ্রিত করো না, আর জেনে শুনে সত্য গোপন করো না। আজকের বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের গৌঁরবগাঁথা ও ৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বা তথ্য প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি ও বিকাশকে যারা অস্বীকার করে, তারা প্রকৃত পক্ষে নিজেকেই অস্বীকার করে। এই দেশ ও সমাজে তাদের বাস না করাই ভালো। আর এখানে বাস করতে হলে নিজের দোষ-ত্রুটি স্বীকার করে সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তারা এগিয়ে আসুক-এটাই চায় দেশবাসী। নিজেকে চিনতে না পারলে নিজের হেফাজত (রক্ষা), ইসলামের (শান্তি) হেফাজত কখনোই সম্ভব নয়। বরং সমাজে শান্তি (ইসলাম) বিনষ্টকারী হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে।

নিজেকে না জানলে আল্লাহ্‌কে জানা যায় কি?


নিজেকে না জানলে আল্লাহ্‌কে জানা যায় কি?

 

শেখ উল্লাস ॥

 

আজ বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে লাখ লাখ প্রবাসী যাদের অধিকাংশই শ্রমিক, এদেশের পোশাক-শিল্পে নিয়োজিত লাখ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক, যাদের অধিকাংশই নারী। বিদেশের মাটিতে দিন-রাত পরিশ্রম করে প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখছে, আর গার্মেন্টস শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের খাটুনীর বিনিময়ে পোশাক-রপ্তানীর মাধ্যমে কাড়িকাড়ি টাকা আসছে এবং দেশের অর্থনীতিকে সচল করে রাখছে। আর সে কারণে, বলতে গেলে এরাই দেশের শান্তি (ইসলাম) রক্ষায় (হিফাজত) ভূমিকা রাখছে। কারণ, কর্মবিমুখ হলে জীবনে কী দুর্র্ভোগ পোহাতে হয় সে কথা কারো অজানা নয়। কর্মবিমুখদের স্থান ইসলাম ধর্মে নেই বলে বার বার কুরআন-হাদিসে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের মাদ্রাসাগুলো থেকে পাশ করে আসা অধিকাংশ লোকই শেষ পর্যন্ত কর্মবিমূখ হয়ে জীবনযাপন করতে হয়। কারণ, বর্তমান সময়ের বিশ্বে বসবাস করতে হলে যে ধরনের বিদ্যা অর্জন করতে হয় সেসব বিদ্যা মাদ্রাসাগুলোতে দেয়া হয় না বললেই চলে।

আমাদের মতো দেশে বিশ্বায়নের নানারকম ক্ষতিকর দিক থাকলেও এর সবচেয়ে বড়ো ইতিবাচক দিকটি হচ্ছে এর মাধ্যমে এদেশের পরিশ্রমী মানুষগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গিয়ে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। তারা নিজের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও দেশের উপকারে আসছে। এই দেশে পোশাক-শ্রমিকরা যদি কাজ না করতো, এই দেশের শ্রমজীবী মানুষেরা বিদেশে গিয়ে শ্রমিকের কাজ করার সুযোগ না পেত তাহলে দেশের অর্থনীতির আজ কী অবস্থা দাঁড়াতো? পবিত্র কুরআনে স্বয়ং আল্লাহপাক বলে দিয়েছেন, ‘লাইসালিন সানা ইল্লা মা সাআঅর্থাৎ, মানুষ যা করে তা ব্যতীত মানুষের জন্য কিছুই নেই। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ‘শ্রমিকের ঘাম শুকোনোর আগেই তার মজুরি দিয়ে দাও। ইসলামের নবী নিজ হাতে খেজুর বাগানে কাজ করেছেন, কুয়ো থেকে পানি তুলেছেন। এমনকি সেবা-শুশ্রুষা করার জন্য দুশমন (শত্রু)র বাড়িতে ছুটে গিয়েছেন। এদেশে আজ যে হাজার হাজার মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ নির্মিত হয়েছে সেখানে লাখ-লাখ ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছে, হাজার হাজার মানুষ শিক্ষকতা করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন সেসবের পেছনেও অনেক মানুষের শ্রম-ঘাম-মেধা-মনন ও অর্থ-প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটাতে হয়েছে। প্রকৃত অর্থে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার মধ্যে তো কোনো পার্থক্য নেই। ইংরেজিতে যাকে বলে স্কুল, আরবীতে তাকেই বলে মাদ্রাসা আর বাংলায় বলে বিদ্যালয় বা পাঠশালা। এসব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে একজন কোমলমতি ছাত্র বা ছাত্রীকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে বড় করে তোলা। যে প্রকৃত মানুষ হতে পারে না তার পক্ষে আল্লাহ-রাসুলকে চেনা আদৌ কখনো সম্ভব কি?। পবিত্র-কুরআন হাদীস নিয়ে গবেষণা করলে স্পষ্টতই দেখা যায় যে, আল্লাহ-রাসুলের সকল বাণীর মর্মকথা-যে নিজেকে চিনতে পারিয়াছে, সেই তার রব অর্থাৎ, সৃষ্টিকর্তাকে চিনিতে পারিয়াছে। নিজেকে চিনতে হলে যেখানে বর্তমান সময় ও পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কিত জ্ঞান-বিদ্যা অর্জন অতি আবশ্যকীয় কাজ, সেখানে কোনো মাদ্রাসায় এইসব বিদ্যা অর্জনের কোনো বিষয় পাঠ দান করা হয় না সে কথা সকলেরই জানা। বর্তমানে আমাদের দেশে যেসব মাদ্রাসা রয়েছে, সেখানে বর্তমান সময়ের জ্ঞান-বিজ্ঞান অর্জনের কোনো শিক্ষা যে দেয়া হয় না সে কথা কারো অজানা নয়। তাই যে নিজেকেই চিনল না, নিজের দেশকে চিনল না, পরিবেশ-পারিপার্শ্বিকতা চিনল না, তার পক্ষে আল্লাহ-রাসুলকে চেনা কখনো সম্ভব কি-না সে প্রশ্নটি আজ ধর্মান্ধ, ধর্মবেত্তা ও ধর্মব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসা করা সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। ওরা নিজেকে চিনতে পারেনি বলেই মানুষ হত্যা করে, অন্যদেরকে কাফির-নাস্তিক আখ্যা দিয়ে, পুলিশ হত্যা করে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অরাজকতা তৈরির চেষ্টায় লিপ্ত। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে কত দুর্নীতিবাজ, সুদখোর, ঘুসখোর, মুনাফাখোর, জুলুমবাজ, শোষক, নিপীড়ক নির্যাতক বিশেষ করে ৭১-এ নারী নির্যাতনকারী রাজাকার-আলবদর ও নব্য রাজাকার রয়েছে, যুদ্ধাপরাধী রয়েছে যারা  সাধারণ মানুষের জীবনকে অশান্তিময় (অনৈসলামিক) করে তুলছে তাদের বিরুদ্ধে তো এইসব মাদ্রাসা ছাত্রদেরকে কোনো কর্মসূচি নিতে দেখা যায় না।

মহানবী (সাঃ)-এর জীবনী আলোচনা করলে দেখা যায়, আরব দেশের তায়েফ নগরীতে ইসলাম (শান্তি) ধর্মের কথা প্রচার করতে গিয়ে শত্রুরা তাঁকে তাঁর দাঁত পর্যন্ত ভেঙ্গে দিয়েছেন তবু তিনি শত্রুদেরকে অভিশাপ দেননি, প্রতিশোধ নেয়া তো দূরের কথা। অথচ স্বার্থপরতা ও ভোগ-বিলাসের রাজনীতিচর্চার সময়ে যখন দেশপ্রেম, মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ে এদেশের সচেতন যুবকরা যখন জেগে উঠল, ৭১-এর যুদ্ধাপরাধের বিচার চাইল তখন তাদের ওপর প্রতিশোধ নিতে যারা উঠে-পড়ে লেগেছে তারা যে আল্লাহ-রাসুলের প্রেমিক নন, বরং তায়েফের মাঠে নবীজীর দাঁত-ভাঙ্গনকারীদের উত্তরসূরি সে কথা কোন ঈমাণদার ব্যক্তির পক্ষে বুঝতে কষ্ট হয় না।   

বর্তমান সময়ে যেখানে মোবাইল ফোন, টিভি চ্যানেল ছাড়া একজন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কথা ভাবাও যায় না, বিমান ভ্রমণে মক্কায় গিয়ে হজ্জ্বের কথা কেউ কল্পনাও করেনা সেই মোবাইল ফোন, বিমান এগুলো কিছুই কিন্তু কথিত ইসলাম হেফাজতকারীদেরকর্মের ফসল নয়। ওদের পূর্বসূরীরা এক সময় বলতো, টিভি দেখা, রেডিওর খবর শোনা, মানুষ চাঁদের দেশে পৌঁছেছে-এ কথা বিশ্বাস করা হারাম, জমিতে সার ব্যবহার করা হারাম, এখনো অনেক মসজিদে বলা হয়, অনেক কথিত শিক্ষিতরাও বিশ্বাস করেন ছবি তোলা বা ঘরে মানুষের ছবি রাখা হারাম বা ঘরে মানুষের ছবি থাকলে নামাজ হয় না, আল্লাহর ফেরেস্তা বা আল্লাহর রহমত আসে না। অন্ধকারযুগের চিন্তাজগতের এইসব মানুষকে তাই যখন মোবাইল ফোনে বা টিভি-চ্যানেলে কথা বলতে দেখা যায় তখন অত্যন্ত বেমাননই লাগে। কারণ, এইসব টিভি-চ্যানেল, মোবাইল ফোন যাঁদের পূণ্য কর্মের বদৌলতে আজ মানুষ ব্যবহার করতে পারছে তাঁদেরকেও এক সময় ওই কথিত হেফাজতকারীরা কাফের’, ‘নাস্তিকবলেছে। নিজের সম্পর্কে, নিজের যোগ্যতা ও জ্ঞান-দক্ষতা সম্পর্কে না জানতে পারলে বুঝি এমনটিই হয়। মরমী শিল্পীর ভাষায় বলতে হয়, ও যার আপন খবর আপনার হয় না, আপনারে চিনতে পারলে রে যায় অচেনারে চেনা। আর সে কারণে কাফের শব্দের অর্থ যে সত্য গোপণকারী, সে কথাটিও তারা আজও বুঝে উঠতে পারেনি।     
আজকে যারা ইসলামকে হেফাজতের নামে মহাসমাবেশ, লংমার্চ-এর মতো দুনিয়াদারি কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, সরকারকে ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য চাপ দিচ্ছে, নানা হুমকি-ধামকি দিচ্ছে  বস্তুতপক্ষে বিভ্রান্তির পথে আছে। শুধুই যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর লক্ষ্যে এবং যুদ্ধাপরাধীদের দেশি-বিদেশি মিত্রদের কোটি কোটি টাকার ভাগ নিয়ে যারা সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়, তাদের পূর্বসূরীরা যুগে যুগে  এ কাজটি করে  আসছে। কিন্তু সত্যেরই জয় হয়েছে আর মিথ্যাবাদীদের পরাজয় হয়েছে সব সময়। তাই বলতে হয়, আল্লাহ্‌ ও রাসুলকে পেতে হলে তাদেরকে অবশ্যই সত্যের পথে আসতে হবে। স্মরণ করতে হবে কুরআনের সেই বাণীটি-তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশ্রিত করো না, আর জেনে শুনে সত্য গোপন করো না। আজকের বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের গৌঁরবগাঁথা ও ৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বা তথ্য প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি ও বিকাশকে যারা অস্বীকার করে, তারা প্রকৃত পক্ষে নিজেকেই অস্বীকার করে। এই দেশ ও সমাজে তাদের বাস না করাই ভালো। আর এখানে বাস করতে হলে নিজের দোষ-ত্রুটি স্বীকার করে সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তারা এগিয়ে আসুক-এটাই চায় দেশবাসী। নিজেকে চিনতে না পারলে নিজের হেফাজত (রক্ষা), ইসলামের (শান্তি) হেফাজত কখনোই সম্ভব নয়। বরং সমাজে শান্তি (ইসলাম) বিনষ্টকারী হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে।

ধর্মান্ধরা নবী-রাসুলদের চরম


ধর্মান্ধরা নবী-রাসুলদের চরম

অপমান করেছে এখনও করছে

 

সংলাপ ॥

 

গত ৬ এপ্রিল স্বঘোষিত  হেফাজতিদের লংমার্চ-পরবর্তী মতিঝিলের জনসমাবেশে সংগঠনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন- আল্লাহ যুগে যুগে কাফের-বেঈমানদের শাস্তি দানের জন্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। নমরুদকে শিক্ষা দেবার জন্য ইব্রাহিম (আ.)-কে প্রেরণ করেন, ফেরাউনকে শায়েস্তা করার জন্য পাঠান হজরত মূসা (আ.)-কে, মক্কার কাফের-বেঈমানদেরকে শিক্ষা দেবার জন্য রাসূল (সা.)-কে পাঠিয়েছেন; ঠিক অনুরূপভাবে বর্তমানে বাংলাদেশের নাস্তিক ব্লগার আর ইসলামের দুশমনদেরকে শাস্তি দেবার জন্য আল্লাহ পাক আল্লামা আহমেদ শফীকে পাঠিয়েছেন।’ (নাউজুবিল্লাহ)    হেফাজতি স্বঘোষিত নেতার এ বক্তব্য মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম মহাপুরুষ হিসেবে স্বীকৃত ও নবী-রাসূলগণের কাফেলার অগ্রদূত হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও হজরত মূসা (আ.)-এঁর সুউচ্চ মর্যাদা ও অতুলনীয় শানের প্রতি চরম অবমাননা। বিশেষ করে রাহমাতুল্লিল আলামিন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এঁর শানের প্রতি অমার্জনীয় ধৃষ্টতা প্রদর্শন। তার এ বক্তব্যে দেশের সাধারণ মানুষের ধর্মবেত্তা ও ধর্মব্যবসায়ীদের  প্রতি ক্ষোভ ও ঘৃণার সৃষ্টি হয়েছে।

নবী-রাসূলগণ পৃথিবীর অধঃপতিত, দুর্দশাগ্রস্ত, দিশেহারা মানবজাতিকে শান্তি ও মঙ্গলের পথ প্রদর্শন করতে আবির্ভূত হয়েছেন। কাউকে শাস্তি দেয়ার জন্য, কাউকে শায়েস্তা করার জন্য তারা আসেননি। 

তথাকথিত হেফাজতি নেতা নবুয়ত ও রেসালতের মহান দায়িত্ব পালনকারী নবী-রাসূলগণের সঙ্গে আল্লামা আহমেদ শফীকে সমান্তরাল করে দিয়েছেন যা শিরিকের অন্তর্ভুক্তি বলে?ইসলামী চিন্তাবিদরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মানুষ যত বড় হোক না কেন তাকে কখনো নবী-রাসুলদের সাথে তুলনা করা যায় না। অথচ ওই বক্তা প্রকাশ্য দিবালোকে, স্বজ্ঞানে এবং সুস্থ মস্তিষ্কে তাই করলেন। ওই বক্তব্যের সময় আল্লামা আহমেদ শফী মঞ্চেই ছিলেন কিন্তু তাকে কোনো প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ হেফাজতি স্বঘোষিত নেতাদের ভাষায় কাফের-বেঈমান ইসলামের দুশমন অধ্যুষিত কোনো জনপদ নয়। এটি অজস্র অলি-আউলিয়া, সুফি-সাধক ও গাউস-কুতুবের দেশ। এদেশের শতকরা নব্বই ভাগ মানুষ মুসলমান। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির হাজার বছরের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রয়েছে এদেশের। এই দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমানুষের আক্বিদা-বিশ্বাসের পরিপন্থী বক্তব্য দিয়ে হেফাজতি বক্তা শুধু ইসলামের বিরুদ্ধেই যে অবস্থান নিলেন তাই নয়; তার এ অপরাধ রাষ্ট্রদ্রোহিতার পর্যায়েও পড়ে। ধর্মীয় উসকানি দিয়ে মুসলমানদের মাঝে উন্মাদনা সৃষ্টি এবং সন্ত্রাসের মাধ্যমে একটি মুসলিম রাষ্ট্রের শান্তি বিনষ্টের অপচেষ্টায় মেতে ওঠা সমাজের স্থীতিশীলতা নষ্ট করা- কোনোমতেই ইসলাম সম্মত নয় বলেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আর যেহেতু তা ধর্মের মোড়কে, ইসলামের নামে বা ইসলাম রক্ষার নামে করা হয়েছে সেহেতু তা অমার্জনীয় অপরাধ। নবী-রাসূলগণের অবমাননাকারী ও ইসলামকে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত স্বার্থে ব্যবহারকারী এসব চিহ্নিত ব্যক্তিকে অবিলম্বে দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।