বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৩

মুসলমান-মুসলিমের সংজ্ঞা দিন


মুসলমান-মুসলিমের সংজ্ঞা দিন -

 

সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা না দেয়া পর্যন্ত

নাস্তিক-মুরতাদ ফতোয়া নিষিদ্ধ করুন

 

 

ড. এমদাদুল হক 

 

 

দেশে এখন নাস্তিক, মুরতাদ ঘোষণা দেয়ার হিড়িক চলছে। ইসলামের নামে ভূইফোঁড় একটি সংগঠন হেফাজতে ইসলামের দাবি-গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকারী নাস্তিক-মুরতাদদের মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে, সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। হেফাজতে ইসলামের ৬ এপ্রিল ঢাকাস্থ মতিঝিল সমাবেশ থেকে সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে নাস্তিকদেরবের করে দেয়ার আহ্‌বান জানানো হয়েছে। তারা বলছেন - নাস্তিকদের পক্ষ নিয়ে যারা সংসদে বক্তব্য রেখেছেন তাদের ক্ষমা চাইতে হবে”, “যারা নাস্তিকদের পক্ষে কথা বলে তারাও নাস্তিক”, “নাস্তিকদের যতদিন পর্যন্ত ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানো না হবে, ততোদিন আন্দোলন চলবে।তাদের দৃষ্টিতে দেশ নাস্তিকে ছেয়ে গেছে। তাই দেশবাসীর মনে প্রশ্ন জাগছে মুসলমান-মুসলিম কে?

 

* আমাদের জেনে রাখা দরকার যে, মুসলিম কোন পারিবারিক উপাধি নয়। বংশানুক্রমে যেভাবে খানের ছেলে খান, ভূঁইয়ার ছেলে ভূঁইয়া হয় সেভাবে মুসলমান পরিবারে জন্ম হলে, খতনা হলে আর আরবি নাম রাখলেই কেউ মুসলমান হয় না। মুসলমানিত্ব এমন কোন বিষয় নয় যে, আমি মানি বা না মানি তা আমার সাথে লেপ্টে থাকবে। মুসলমানিত্ব ধারণ ও লালন-পালনের বিষয়। জাতির স্বার্থে এখন মুসলমান-মুসলিমের সংজ্ঞা দেয়া জরুরি হয়ে উঠেছে। মুসলমান-মুসলিম সংজ্ঞা নির্ধারণ না করা পর্যন্ত নাস্তিক-মুরতাদের ফতোয়া দেয়া যাবে না, কাদিয়ানীদেরকেও অমুসলমান ঘোষণা দেয়া যাবে না বলে বাংলাদেশ তথা সমগ্র বিশ্বের ইসলামী চিন্তাবিদরা মনে করেন।

যারা আজকে নাস্তিক-মুরতাদ আর কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা দিতে চান তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, ১৯৫৩ সালে পাকিস্তানের লাহোর ও পাঞ্জাবে আবুল আলা মওদুদীর নেতৃত্বে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ও নাস্তিক ঘোষণা করার দাবি জানানো হয়েছিল। তাদের এই দাবিতে সৃষ্টি হয়েছিল ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার, দাঙ্গায় নিহত হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পাঞ্জাবে সামরিক আইন জারি করে। সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত করা হয় জেনারেল আজম খানকে। এই দাঙ্গা পরিস্থিতি তদন্ত করার জন্য পাকিস্তান সরকার বিচারপতি মুহাম্মদ মুনির ও বিচারপতি কাইয়ানিকে নিয়ে দুসদস্য বিশিষ্ট একটি কমিশন গঠন করে। সেই কমিশন মুসলমানের সংজ্ঞা কী তা জানার জন্য সতের জন বিজ্ঞ পণ্ডিতকে কমিশনের সামনে ডাকেন। তারা প্রত্যেকেই মুসলমান সম্পর্কে নিজস্ব একটা সংজ্ঞা হাজির করেন। একজন পণ্ডিত কমিশনের কাছে উত্তর দেয়ার জন্য কিছু সময় প্রার্থনা করলে জবাবে বিচারপতি কাইয়ানি বলেন, চৌদ্দশত বছরের বেশি হলো ইসলাম কায়েম হয়েছে। এই চৌদ্দশত বছরেও যদি আপনারা মুসলমানেরসংজ্ঞা দিতে না পারেন তা হলে আর কখনও তা পারবেন না। কমিশন ১৯৫৪ সালে ৩৮৭ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করেন। প্রতিবেদনে বলা হয় -  মুসলমান কে এই সম্পর্কে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সংজ্ঞা হাজির করা অসম্ভব। শিয়ারা মনে করেন সব সুন্নি কাফের আবার সুন্নিরা ঠিক তার উল্টোটা মনে করেন। আরবি জানা পণ্ডিতদের ফতোয়ার ওপর ভিত্তি করে মুসলমান খুঁজতে গেলে মুসলমান হিসেবে কাউকে পাওয়া যাবে না।

স্মর্তব্য, মওদুদীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং সামরিক আদালতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। পরে অবশ্য সৌদি বাদশাহর চাপে মৃত্যুদণ্ড রহিত করে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। কিন্তু কারাদণ্ড ভোগ করার আগেই সে মুক্তি পেয়ে যায়।

১৪০০ বছর কেটে কেছে। এ পর্যন্ত অনেককে কাফের, মুরতাদ, নাস্তিক ফতোয়া দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের জানা হলো না মুসলমান-মুসলিম কে? বাংলাদেশে ধর্ম মন্ত্রণালয় আছে। আমাদের দাবি - অবিলম্বে সকল ইসলামী দল, তরিকত পন্থী ও হক্কানী ওলামা-মাশায়েখদের নিয়ে মুসলমান-মুসলিম সংজ্ঞা দেয়া হোক এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য মুসলমান-মুসলিম সংজ্ঞা নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হোক নাস্তিক-মুরতাদ ফতোয়া দেয়া।

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন