বুধবার, ২৬ জুন, ২০১৩

ছায়ার সাথে কায়ার লুকোচুরি - প্রতিকার

ছায়ার সাথে কায়ার লুকোচুরি - প্রতিকার

সংলাপ ॥ বাংলা বর্ষপঞ্জি নিজ দেশেই পরবাসী। এর কোনো ব্যবহার প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই পরিত্যাজ্য। পত্র-পত্রিকাগুলোতে হিজরী ও খৃষ্টীয় সন-তারিখের পাশাপাশি বাংলা মাস ও তারিখের নাম লেখা না থাকলে শহরের মানুষজন হয়তো ভুলেও এর অস্তিত্ব স্মরণ করতে পারতো না। অথচ ইংরেজ আমলে তাদের শাসন-শোষণের মধ্যে থেকেও বাঙালি তাদের স্বকীয় অস্তিত্ব বিস্মৃত হয়নি। ইংরেজি সনের নামে প্রচলিত খৃষ্টীয় সন বা রোমান বর্ষপঞ্জি বাঙালি সমাজ গ্রহণ করেনি। অথচ তখনও মঘী, হিজরী, শকাব্দ এবং খৃষ্টীয় সনের প্রচলন ছিল।
শকাব্দ প্রচলন কে করেন সে সম্পর্কে কোনো স্থির সিদ্ধান্ত নেই। অনেকের মতে শকরাজা শালিবাহনের মৃত্যুর পর থেকে শকাব্দের সূচনা হয়।
সন গণনার মধ্যে ধর্মীয় ভাবাবেগ, গোঁড়ামি, কুসংস্কার অথবা সামপ্রদায়িকতার চিহ্ন থাকতে পারে না। সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে মানুষ তাদের নিজেদের প্রয়োজনেই দিন, ক্ষণ, মাস, গণনার প্রচলন ঘটায়। বর্ষ গণনার তথ্যপঞ্জির নির্দিষ্ট তারিখ বলা দুরূহ হলেও বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় যে, প্রাচীন রোম, মিশরীয় সভ্যতা, সুমেরু সভ্যতা এবং ব্যাবিলিয়ন সভ্যতাই প্রথম এর উদ্ভব এবং ব্যবহার শুরু করে। সেই শুরু চিন্তা ও গবেষণার বিভিন্ন ধাপ ও পর্যায় অতিক্রম করে আজকের আধুনিক পঞ্জিকা ও ক্যালেন্ডারের উজ্জ্বল অস্তিত্ব। লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো, প্রাচীনকাল থেকেই এই গণনা দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে। একটি সূর্য অপরটি চন্দ্র। সৌরবর্ষ এবং চান্দ্রবর্ষ।
সৌর গণনাই আধুনিক এবং বিজ্ঞান সম্মত। প্রকৃতির সাথেও এর অপূর্ব মিল রয়েছে। সৌর গণনার এই হিসাবটি প্রথম চালু করে মিশরীয়রা। পরবর্তীতে রোম সম্রাট জুলিয়াস সিজার মিশরীয় পঞ্জিকার সংস্কার সাধন করে রোমে চালু করেন। তিনি সবগুলো মাসের দৈর্ঘ্য পরিবর্তন করেন এবং প্রতি চার বছর অন্তর একদিন যুক্ত করার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন অর্থাৎ লিপ-ইয়ার চালু করেন। তার নাম অনুসারে একটি মাসের নামকরণ হয় জুলাই। জুলিয়াস সিজার কর্তৃক প্রবর্তিত পঞ্জিকার নামকরণ হয় জুলিয়াস পঞ্জিকা। মিশরীয়রা  ৩৬৫ দিনে বছর ধরতো আর জুলিয়াস পঞ্জিকার বছর ছিল সাড়ে ৩৬৫ দিনে।
আজকের প্রচলিত ইংরেজি সন আসলে খৃস্টীয় সনও নয় এবং ইংরেজি সনও নয়। এটা ইংরেজ জাতির প্রবর্তিত অথবা তাদের স্বকীয়তার প্রতীক নয় কিছুতেই। অপরদিকে নবী হযরত ঈসা (আঃ) এর জন্মের বহু পূর্ব থেকে সন গণনা শুরু হয় এবং তিনি কোন সনের প্রবর্তকও নন। এমনকি তিনি খৃষ্টান সম্প্রদায়েরও জনক নন যে, তাঁকে খৃষ্টানদের নবী বলা হবে। যারা এ ধরনের প্রচারনায় অংশ নেয়, তারা নিঃসন্দেহে ভ্রান্তির মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে অথবা প্রতারণায় নিমজ্জিত হয়ে ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থের আশ্রয় নিচ্ছে।
হযতর ঈসা (আঃ) এর মৃত্যুর ৫৩২ বছর পর ডাইওনিসিয়াম এক্সিওয়াম নামক এক পাদ্রী ঈশা নবীর জন্ম বছরের হিসেবে বর্ষ গণনা পদ্ধতি সংস্কার করেন। তখন থেকেই এটা খৃষ্টীয় সন নামে সাম্প্রদায়িক পরিচিত লাভ করে যেমন পরিচিত খৃষ্টান সম্প্রদায়। অনুরূপভাবে হযতর মুহাম্মদ (সঃ)ও কোন সনের প্রবর্তক নন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর জীবনের হিজরতনামক অধ্যায়টিকে সুযোগ-সন্ধানী স্বার্থানেষী সাহাবারা রাজনৈতিক ইসলাম স্মরণীয় করে রাখতে কুরাইশ বংশের অভিশপ্ত কুরাইশদের মদদে হযরত ওমরের (রাঃ) মাধ্যমে এবং তাঁর পরামর্শক্রমে চান্দ্র গণনার সংস্কার করে হিজরী সনের উদ্ভব ঘটায়। এটাই এখন সাম্প্রদায়িক মুসলমানী সন হিসেবে হিজরী সনের পরিচিতি নিয়ে মুসলমান সম্প্রদায়কে চাঁদের ফাঁদে আটকিয়ে রেখেছে।
৬টি ঘটনাকে স্মরণ করে ৬টি প্রস্তাব এসেছিল মুসলমানদের নিজস্ব একটি সাল এবং বর্ষপঞ্জিকা তৈরি করতে -
১। মুহাম্মদ (সঃ)-এর ওফাত দিবস
২। মুহাম্মদ (সঃ)-এর জন্ম দিবস
৩। নবুওত প্রকাশ বা এলানে নবুওতএর দিন
৪। বদর যুদ্ধের বিজয় দিবস
৫। মক্কা বিজয় দিবস এবং
৬। হিজরত অর্থাৎ মক্কা হতে ইসলাম প্রচারে তৎকালীন মদিনাতে গমন। এদিনের স্মৃতি অভিশপ্ত কুরাইশদের কাছে বিজয়ের প্রতীক হিসেবে সদা হাস্যোজ্জ্বল আনন্দঘন একটি ঘটনা।
উপরের ৫টি প্রস্তাব একে একে নাকচ করে ৬ নম্বর প্রস্তাবটি গ্রহণ করে হযরত ওমর (রাঃ) হিজরতের দিনটিকে স্মরণে রাখার জন্য হিজরী সনের প্রবর্তন করেন।
অথচ সময়ের নিখুঁত ও সুঠাম ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টার অন্ত নেই। ১৫৮২ খৃষ্টাব্দে রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী জ্যোতির্বিদদের পরামর্শ এবং এক্সিওয়ামের সংস্কার সমান্তরালে দাঁড় করিয়ে বর্ষপঞ্জির সংস্কার করেন। তারা ১৫৮২ খৃষ্টাব্দের অক্টোবর মাস থেকে দশ দিন বাদ দিবার নির্দেশ দেন। ফলে ঐ বছর অক্টোবরের ৫ তারিখকে ১৫ তারিখ ধরা হয়। রোমের পোপ গ্রেগরী ঘোষণা দেন যে সব শতবর্ষীয় সন ৪০০ দ্বারা বিভাজ্য হবে সে সব শতবর্ষই লিপইয়ার বলে গণ্য হবে। গ্রেগরীয়ান সংস্কারকৃত বর্ষপঞ্জিই অদ্যাবধি সারা পৃথিবীতে সর্বাধিক প্রচলিত। বিভিন্ন দেশ এই পঞ্জিকাকে কেন্দ্র করেই দিন, ক্ষণ, মাস, ঋতু গণনা করে থাকে তাদের দেশের আবহাওয়া-জলবায়ু অনুসারে। এই সৌর পঞ্জিকাটি অত্যন্ত সহজসাধ্য, মোটামুটি নির্ভুল এবং প্রকৃতির সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বঙ্গাব্দ গণনা করা হয় সৌরবর্ষ অনুসারে। সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খৃষ্টাব্দে ১০ মার্চ বাংলা সন প্রবর্তন করেন। তখন ভারত উপমহাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন সন প্রচলিত ছিল। যার অধিকাংশ ছিল চন্দ্র বর্ষ অনুসারে। শাহী লেনদেন এবং প্রজা সাধারণের সুবিধার্থে তিনি সৌর সন প্রবর্তনের প্রয়োজনেই এই নতুন অব্দের ফরমান জারি করেন। মোগল সমাজের আর্যাবর্তে ও দাক্ষিণাত্যে নতুন সনটি ফসলী সননামে পরিচিত হয়। পরবর্তীতে এটি বঙ্গাব্দ রূপে প্রতিষ্ঠা পায়।
ন্যায় বিচারের প্রবক্তা মহান সাধক সম্রাট আকবর মানবতার কল্যাণের জন্য এ উপমহাদেশে সার্বজনীন ধর্ম দ্বীন-ই-ইলাহী প্রবর্তনকালে ইলাহী সনও চালু করেছিলেন। নতুন ধান ওঠার সময়কাল অগ্রহায়ণ মাস থেকেই এ সনের গণনারীতি চালু ছিল। গ্রাম বাংলার প্রতিটি মানুষই জাতি-ধর্ম এবং ধনী-গরীব নির্বিশেষে নবান্নের উৎসব পালন করতো ঘরে ঘরে। এই সার্বজনীন সংস্কৃতি কম-বেশি আজও চালু আছে বাংলার আনাচে-কানাচে নতুন ধান কাটার লগ্নে, যা আজ বিস্মৃত প্রায়।
ধর্মান্ধ উগ্রবাদীদের দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও ফতোয়াবাজির কালো ছায়ায় দ্বীন-ই-ইলাহীর আলোক ছটা ঝাপসা হয়ে গেলেও আকবরের প্রবর্তিত সৌর গণনার রীতি মেনে খাজনা তোলা ও হিসাব-নিকাশ ঠিক রাখতে বাংলা সন কিন্তু বাঙালি জাতির স্বাতন্ত্র অস্তিত্বের প্রতীক ছিল এবং এখনো আছে যদিও তা আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত হতে চলেছে আরো অনেক কিছুর মতোই। হিন্দু সমপ্র্রদায় তাদের ধর্মীয় পর্বগুলো বাংলা সনের নিরিখে পালন করে থাকে। মুসলমান সমপ্র্রদায়ের সূফী মতবাদের বিশ্বাসীরাও তাদের ধর্মানুষ্ঠান বাংলা সন অনুসারে করে থাকে। সামপ্রদায়িক উগ্রবাদীরা একে হিন্দু কালচার বলে উপেক্ষা করেছে এতদিন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র ও সমাজের কোথাও এর সামান্যতম প্রভাব চোখে পড়ে না। সাম্প্রদায়িক বাগাড়াম্বর এবং ছায়ার সাথে কায়ার যুদ্ধ শেষ হলেই সবকিছু আগের মতই। কোন পরিবর্তন নেই।

এভাবে সমাজ ও জাতির মগজ পচনের প্রতিকার কি? কে দিবে এর সমাধান? সবই কি এভাবে অনুষ্ঠান সর্বস্বতায় পর্যবসিত হতে থাকবে?

মানুষের ধর্ম - মানবতার জন্য হোক -১

মানুষের ধর্ম - মানবতার জন্য হোক -১

শাহ্‌ আনোয়ারা বেগম ॥ ধর্ম সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকেই প্রভাবিত করে, তাই ধর্ম একটা কঠিন গবেষণার বিষয়। জন্ম, মৃত্যু বা ভালোবাসার মতো বিশ্বজনীন এবং সর্বজনগ্রাহ্য বিষয় হিসেবেই ধর্মকে দেখার প্রয়াস চলছে বিশ্বব্যাপী।
আমরা প্রায়শই দেখি ধর্মবিষয়ক আলোচনা হয় গবেষণামূলক, কিছুটা উপদেশমূলক। ভাষাও হয় সাধারণের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এই দুর্বোধ্যতায় ধর্মতত্ত্ব সাধারণের চোখে রহস্যময় হয়ে ওঠে। ধর্মবেত্তাদের করে দেয় অতিমানব। ধর্মপুস্তক হতে অংশবিশেষ পড়ার মাধ্যমে আলো-আঁধারি যে ধর্মীয় বাতাবরণ তৈরি করে, তাতে সাধারণ মানুষের মনে যে ভয়-ভক্তির সঞ্চার হয়, তার অনেকটাই না বুঝার কারণে। সাধারণ মানুষ একটা বিষয়কে ভালো করে জানে না, বুঝে না বলেই সেটাতে আকৃষ্ট হয়। এই কারণে আকৃষ্ট হওয়াটাতেই যুক্তিবাদী আধুনিক মানুষের আপত্তি। এখানেই বিরোধ। একেকটা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে প্রচলিত আরবী যদি সোজা বাংলায় অনুবাদ করে পড়ে যাওয়া যায় - তাহলেই তার সব রহস্যময়তা ঘুচে যেতো। তখন তার মধ্যে মিথ্যার প্রতি আকর্ষণ কমে যেতো। অনেক সময় কিছুটা হাস্যকর ও অপ্রাসঙ্গিকও মনে হতে পারে। আবার তার মধ্যে কিছু চিরন্তন সত্যও পাওয়া যায়। আর সেটা জেনে বেছে নেয়ার জন্যেই দরকার আগে বুঝে নেয়া। প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের অপ্রয়োজনীয় বাহ্যিক রীতিনীতিকে বাদ দিতে হলে তাই প্রথমে ধর্ম কি ও কেন এটা সহজভাবে বুঝতে হবে। সাধারণ মানুষ বর্তমান সামাজিক অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের যে ভূমিকা তাতে যে খুব খুশি  তা তো নয়-ই বরং অবশ্যই সত্যটা কি তা জানার জন্য কিছু পরিবর্তন ও যুগোপযোগী ব্যবস্থা চাইছে, চাইছে যুক্তিবোধ ও ন্যায়বিচার।
ধর্ম কথাটার অর্থ কি? বাংলা অভিধানে এর মানে করা হয়েছে সৎকর্ম, সদাচার, পূণ্যকর্ম, কর্তব্যকর্ম, সমাজহিতকর বিধি। আরেকটি অর্থ হলো - পরম্পরাগত সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান, প্রার্থনা পদ্ধতি, সংস্কার রীতিনীতি এবং পরকাল ইত্যাদি বিষয়ক মতামত। তৃতীয় অর্থে বস্তু বা ব্যক্তি নির্বিশেষে - স্বভাব, গুণ বা শক্তি।
এই শেষ সংজ্ঞাটি বস্তুর উপর যেভাবে প্রযোজ্য অর্থাৎ পদার্থের ধর্ম, আগুনের ধর্ম, তরল বা মৌলিক পদার্থের ধর্ম, সেই অর্থে মানুষের উপর প্রয়োগ করলে পাওয়া যায় মানুষের বিশেষ স্বভাব বা গুণ। যদিও আমরা জানি মানুষের গুণের সঙ্গে মেলা দোষও থাকতে পারে - আমরা তাকে ধর্ম বলবো না। ধর্ম বলবো সেই সব বিশেষত্বকে যা আদর্শ মানুষের গুণাবলী, যা মানুষকে সভ্যতার পথে এতদূর এগিয়ে নিয়ে এসেছে - মানুষকে মানুষ করেছে শান্তির লক্ষ্যে। প্রথম সংজ্ঞানুযায়ী সৎকর্ম, সদাচার, কর্তব্যকর্ম সমাজহিতকারিতা ইত্যাদি।
ধর্মের এই বিস্তৃত সংজ্ঞা থেকে এসেছে দ্বিতীয় সংজ্ঞা। এটা স্থান কাল ভেদে পাল্টেছে, পাল্টাচ্ছে। বিভিন্ন ধর্মের উপাসনা পদ্ধতি আচার অনুষ্ঠান কতটা আলাদা তা তো আমরা জানি, ঈশ্বর, ভগবান ও আল্লাহ্‌ সম্পর্কে মতও হরেকরকম। বৌদ্ধধর্মে ঈশ্বর নেই। আমরা পাচ্ছি বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের রূপগুলো। অথচ সমাজহিতকর পূণ্যকর্ম বা কর্তব্যকর্মসংজ্ঞাটি কিন্তু বিশ্বজনীন রূপ নিতে পারতো - হতে পারতো সকলের জন্য এক ধর্ম। কিন্তু তা তো হয়নি। স্থান কাল ভেদে আচার অনুষ্ঠান, পরম্পরাগত বিশ্বাস পাল্টে গেছে। প্রতিটি আলাদা গোষ্ঠীপতি বা রাষ্ট্র যেমন তার নিজের মতো করে নিয়মাবলী তৈরি করে, ধর্মের প্রবর্তকরাও তাই করেছে। প্রতিষ্ঠাতার রচনায় ও প্রচারে তাই পৃথক পৃথক রূপ নিলো প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলো। নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে সচেষ্ট হলো প্রচারকরা ও তাদের অনুসরণকারীরা তাদের  অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে। প্রতিটি ধর্মবেত্তা তাই আজও সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা ও উদার প্রগতিবাদী কথার ফাঁকে ফাঁকে নিজের ধর্মমতটির শ্রেষ্ঠত্বের কথা মনে করিয়ে দিতে ভোলেন না। অনুগামীরা ক্রমশই ভুলে যেতে থাকলো ধর্মের আসল সমাজহিতকর উদ্দেশ্য। প্রকট হতে থাকলো আচার বিচার প্রকরণ পদ্ধতি। মাঝে মাঝে প্রতীকী সমাজ সেবা করে পূণ্যার্জন করার মধ্যে আবদ্ধ রইলো তাদের সদাচার। বাড়তে লাগলো বিভেদ। শুরু হলো ধর্মীয় উগ্রবাদীদের তান্ডব বিশ্বজুড়ে। উগ্রবাদীরা প্রমাণ করতে চাইছে তারা ধার্মিক। অতিমাত্রায় ধার্মিক।
এখন পৃথিবী পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন ছোট ছোট গোষ্ঠীতে বিভক্ত নয়। তাই আলাদা আলাদা নিয়মকানুনগুলো সমন্বয়ের চেয়ে বিভিন্ন রকমের সংঘর্ষের কারণ হয়ে উঠেছে স্বাভাবিকভাবেই।
সব ধর্মেই ভালোবাসার কথা, সহনশীলতার কথা বলা হয়েছে - তাহলে ধর্ম কি দোষ করলো? থাকছে না প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলো মিলেমিশে। তারপর একটু গভীরে গেলেই উদারতার মুখোশ ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে আসল চেহারা। তখন দেখা যায় প্রতিটি ধর্মভীরু মানুষই কি মমতায় আঁকড়ে থাকে বাপ দাদার ধর্মটিকে, কি সযত্নে এড়িয়ে যায় বা ভুলে যায় জন্মসূত্রে পাওয়া ধর্মটির দোষত্রুটিগুলোকে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বিশ্ল্লেষণ করে পরধর্মের ত্রুটি বা ভ্রান্তবিশ্বাসকে। ভুলে যায় তার ধর্মটি সে নেহায়তই উত্তারাধিকারসূত্রে পেয়েছে - দেখেশুনে বেছে নেয়নি।
বিরোধ যত তা সবই মূলত আচার-অনুষ্ঠান, উপাসনা পদ্ধতি, ঈশ্বর, ভগবান বা আল্লাহ্‌ সম্পর্কিত মতামতের মধ্যে সীমাবদ্ধ। মিল যেখানে তা হলো ন্যায়বোধ, কর্তব্যকর্ম, সৎগুণ, সমাজকল্যাণ ইত্যাদি বিষয়ে। তাহলে আজ এই বিজ্ঞানের যুগে দাঁড়িয়ে আমরা কেন ভুলে যাবো ধর্মের আসল উদ্দেশ্য? কেন আচার-অনুষ্ঠান, বাহ্যিক পদ্ধতি প্রকরণকে ছেঁটে ফেলতে পারবো না? কেন মেনে নেবো না মানবিক গুণকেই ধর্ম বলে?
ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মগুরুদের আদেশকে অভ্রান্ত বলে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে মেনে নিলে এবং সমাজবিজ্ঞান, প্রকৃতিবিজ্ঞানে যা পরীক্ষিত সত্য তা নিয়ে খোলা মনে পড়াশোনা করে নিলেই পারা যাবে ন্যায়-অন্যায়ের, ঠিক ভুলের বিচার করতে। বেরিয়ে আসতে পারা যাবে ভয় ও অজ্ঞতাজনিত ধর্মীয় ভীতির গন্ডি থেকে। সত্যকে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে জানার চেষ্টাই সঠিক ধর্মাচরণ। এই জানার চেষ্টাই মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি।

১৯৮১ সালের জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে জাতিসংঘ ঘোষণা করেছে - প্রতিটি মানুষের স্বাধীনতা আছে ব্যক্তিগতভাবে বা  সংঘবদ্ধ ভাবে নিজের পছন্দ মতো বিশ্বাস বা ধর্মকে অনুসরণ করার।’  অর্থাৎ একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তার নিজের পছন্দ মতো ধর্মমত বা বিশ্বাস গ্রহণ করতেই পারেন। (চলবে)

মুক্তির যুদ্ধ আজ বাঙালির দুয়ারে


মুক্তির যুদ্ধ আজ বাঙালির দুয়ারে

 সংলাপ ॥ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন, আলোচনা সভা আর সংবাদ মাধ্যমে এবং?সাধারণ মানুষের কাছে সবচাইতে আলোচিত বিষয় এখন দ্রব্যমূল্য, নির্বাচন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। দেশের প্রতিটি মানুষ জীবনধারণ করে থাকে প্রতিদিন যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী-খাদ্যসামগ্রীর উপর সেসবের অগ্নিমূল্য। সাংবিধানিকভাবে পাঁচ বছর মেয়াদী সরকার চার বছর পার করে দিলো, কবে বিদায় নেবে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে, এটাও রোজকার আলোচনার বিষয়।  কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের শাস্তির প্রশ্নটি। দেশে বসবাসরত - অবস্থানরত বিদেশীদের কাছে তো বটেই, শিশু-কিশোর এমনকি বাংলার আকাশে বাতাসের সাথে একাত্ম হয়ে নতুন প্রজন্ম যুবশক্তি গণজাগরণকে সত্যের পথ ধরে অহিংসা নীতি অনুসরণ করে ঝড় তুললো সেই তরুণ প্রজন্মের কাছেও হয়ে উঠছে তা এক বিরাট জিজ্ঞাসা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের শাস্তির প্রশ্নটি কেবল একক প্রশ্ন নয় - এই প্রশ্নটি বয়ে আনছে আরো কয়েকটি সরল জিজ্ঞাসা। একটি স্বাধীন দেশে ৪২ বছর ধরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নটি অমীমাংসিত থাকলো কি করে, থাকে কি করে, এটা কোনো সুস্থ বোধশক্তি সম্পন্ন মানুষের মাথায় ঢুকার কথা নয়।  প্রশ্ন জাগে, স্বাধীনতা লাভের পর দেশটিতে ক্ষমতায় কারা ছিলো, স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি না বিজয়ী শক্তি? স্বাধীনতার স্বপক্ষের নেতৃত্বের দাবিদার শক্তি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ক্ষমতায় গিয়ে, ক্ষমতায় থেকে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের শাস্তির উদ্যোগকে প্রাধান্য দিচ্ছে না কেন? তারা যুদ্ধপরাধী বিচারের শাস্তির প্রশ্নে উচ্চকিত হয়ে উঠেও কেন শেষ করতে পারছে না - বিচার ও শাস্তি!

প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, যুদ্ধে অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তির ভোগ দখলে কি আজও দিশেহারা হয়ে আছে স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনৈতিক নীতি নির্ধারকরা? তাই বুঝি ৭ মার্চ স্বাধীনতার সুস্পষ্ট ঐতিহাসিক ঘোষণা সত্ত্বেও বারবার চলে স্বাধীনতার ইতিহাস লেখা-সংশোধন-পাল্টা সংশোধনের প্রহসন? নাকি মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এক সুপরিকল্পিত সুদূরপ্রসারী গভীর চক্রান্তের প্রকাশ এসব? নইলে সফল স্বাধীনতা সংগ্রামের দারুন বিজয়ের পরও আজও কেন শেষ হচ্ছে না যুদ্ধাপরাধীদের বিচার? কেন নেই যুদ্ধাপরাধীদের কোনো তালিকা? জানা যায়, ১৯৮৮ সালে মুক্তিযুদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে করা রাজাকারদের একটি প্রাথমিক তালিকা প্রণীত হলেও রহস্যজনক কারণে সেই তালিকা পরে ভস্মীভূত হয়ে যায়। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৫৫ হাজার রাজাকার সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছিলো। লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১ লাখ। ট্রাস্টের কাছে ৫০ হাজার রাজাকারের তালিকা ছিলো। ট্রাস্টেরই একজন মাঝারী পর্যায়ের কর্মকর্তার নেতৃত্বে ওই তালিকাটি ভস্মীভূত করা হয় বলে ট্রাস্টের একটি সূত্রে জানা যায়। (সূত্র - দৈনিক সংবাদ, ৫ ডিসেম্বর ১৯৯২)

গত ৪২ বছরের পূর্বাপর ঘটনাবলী সাদামাটা পর্যবেক্ষণ ও বিশ্ল্লেষণ থেকেও প্রশ্ন জাগে এই চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের শিকড় কি কেবল ’৭১-এ দৃশ্যত পরাজিত শক্তির মাঝেই? নাকি তা আরো বিস্তৃত - আরো গভীরে? এই চক্রান্তের শিকার এ দেশের সাধারণ জনগণ - এমনকি গোটা জাতিসত্তা। এর কারণ খুঁজতে চাইলে ১৯৭১ সালে সংঘটিত সশস্ত্র যুদ্ধ ও প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রকৃতিটা দেখতে হয়।

ইতিহাসে স্বাধীনতা যুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ এক জিনিস নয়। মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তির যুদ্ধ, সে শোষণ-নির্যাতন দেশী অথবা বিদেশী যে শক্তি দ্বারা হোক। আর স্বাধীনতা যুদ্ধ হচ্ছে বিদেশী শোষক-নির্যাতকদের শাসন থেকে মুক্তি। এই যুদ্ধের লক্ষ্য হচ্ছে বাইরের শাসক উচ্ছেদ করে দেশীয় রাজনীতিক প্রজ্ঞাবান ও দূরদর্শীদের শাসন স্থাপন। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে এটাই ঘটেছিলো।

১৯৭১ এবং এর আগের রাজনৈতিক ঘটনা ধারা সাক্ষ্য দেয় পাকস্তানী শাসকগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেয়া আকস্মিক এক সশস্ত্র যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছিলো নিরস্ত্র অপ্রস্তুত বাংলার মানুষ। ঘটনা ও দলের তরুণ নেতৃত্বের চাপে আর প্রাণ বাঁচাতে সে যুদ্ধে সামিল হয় ১৯৭০-এর সাধারণ মানুষ এবং?নির্বাচনে বিজয়ী দলটি। সে যুদ্ধের দ্রুত পরিণতি ঘটে মাত্র ৯ মাসে পাওয়া রাজনৈতিক স্বাধীনতায়। দু’শ বছরের ইংরেজ শাসন-লুন্ঠনের পর ২৫ বছরের পাকিস্তানী শোষণ-বৈষম্যে অতিষ্ট দিশেহারা মানুষ দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় এক অসম লড়াইয়ে নেমেছিলো ’৭১-এ। যুদ্ধে অংশ নেয়া সাধারণ ঘর থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে সকল শোষণ-বৈষম্য থেকে মুক্তির আকাঙ্খা জেগে ওঠাও ছিলো খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু গণমানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির সে লড়াইটা দানা বেঁধে উঠতে পারেনি অথবা উঠতে দেয়াই হয়নি আজও। অপরদিকে, বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ স্বাধীন দেশের মর্যাদা পেলেও স্বাধীনতার সুফল আসেনি সাধারণ মানুষের জীবনে। সুফল গিয়ে উঠেছে সমাজ, প্রশাসনের আমলা ও স্বার্থপর রাজনীতিক স্তরে অবস্থানকারী এবং যুদ্ধোত্তর দেশে শাসন ক্ষমতায় আসীন সুবিধাভোগী শ্রেণীটির হাতে। শ্রেণীগত এবং স্বার্থগত কারণেই যুদ্ধের পরাজিত গোষ্ঠীটি ছিলো ওই শাসকগোষ্ঠীরই রক্তিয়, অর্থিয় এবং আত্মীয়ভুক্ত। ফলে স্বাধীন বাংলাদেশে দ্বন্দ্বটা আর যুদ্ধে বিজয়ী ও পরাজিতদের মধ্যে থাকলো না - দ্বন্দ্বে গিয়ে ঠেকলো যুদ্ধের ফসল ভোগ দখল আর লুন্ঠনকে ঘিরে। ’৭১ পরবর্তী গত ৪২ বছরের ইতিহাস কেবল তারই প্রতিফলন মাত্র। জাতিকে পরিষ্কার জানতে হবে কেন যুদ্ধোত্তর সরকার যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষেত্রে গণক্ষমার পথে গেলো, কেন মুক্তিযোদ্ধা জিয়া মদদ দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসিত করলো, কেন আওয়ামী লীগ যুগপৎ আন্দোলন করে জামাতিদের জাতে উঠার পথ সুগম করে দিলো, কেন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরাও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভের সুযোগ পেলো, কেন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার দল বিএনপি’র ঘাড়ে ভর করে জামাতিরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসার সুযোগ পেলো এবং কেন মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি হয়ে উঠলো রমরমা বাণিজ্যিক উপাদান!

’৭১-এর বিজয় ছিলো কি কেবলই রাজনীতিকদের বিজয়? জনতার বিজয় কি পরাজিত - প্রবঞ্চিত - প্রতারিত হয়েই যাবে ধারাবাহিকভাবে? দেশের মানুষের ‘বাঙালি’ জাতীয়তাটুকু কেড়ে নেয়া হয়েছিলো সেই পঁচাত্তরেই। বাকি ছিলো জাতিসত্তা। মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধী-বাণিজ্যে ডুবে থাকা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিগুলোর, মধ্যে রাজনীতিক ও রাজনীতিজীবীদের মেরুদন্ডহীনতার সুযোগে ধর্মব্যবসায়ী আর ধর্মান্ধ অপশক্তির দল আজ খোদ জাতিসত্তাকেই চাইছে গিলে খেতে। ভিনদেশীর খোলস ছিঁড়ে বাঙালির দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ডাকে জেগে উঠার আজ এখনই সময়। এখনই সময় নতুন প্রজন্মের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গণ জাগরণ মঞ্চ হতে আবার ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে গণ মানুষের মাঠে নামা এবং বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধটা দ্বিতীয় মুক্তির যুদ্ধের মাধ্যমে শেষ করা। বিজয় হাতছানি দিচ্ছে, নিয়ে আনতে হবে বাঙালির।

ধর্ম মন্ত্রণালয় ঘুমাচ্ছে যুগোপযোগী খোতবা কবে হবে?


ধর্ম মন্ত্রণালয় ঘুমাচ্ছে
যুগোপযোগী খোতবা কবে হবে?

 
সংলাপ ॥ ইসলামী পরিভাষায় খোতবার প্রচলিত অর্থ আল্লাহ্‌ প্রশংসা, রাসুলের প্রশংসা ও বক্তৃতা বুঝিয়ে থাকে। খোতবার উদ্দেশ্য আল্লাহ্‌র জিকির বা স্মরণ এবং বক্তৃতা উপদেশ প্রদান করা। আর এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের নৈতিকতার সংশোধন ও সমাজ সংস্কার।

খোতবার এসব উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য ইসলাম কর্তৃক নির্বাচিত ও নির্ধারিত ক্ষেত্রগুলো পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, জুম্মার নামাজের পূর্বে মসজিদে কিংবা ঈদগাহে, দুই ঈদের নামাজের পরে, আরাফাতের ময়দানে হাজীদের উদ্দেশ্যে, বিবাহ অনুষ্ঠানে আক্‌তের সময় এবং জানাজার দোয়া ইত্যাদি কোনো না কোনোভাবে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশে ইমাম প্রশিক্ষণ একটি পদক্ষেপ। সরকারীভাবে এই প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে দুই লক্ষাধিক মসজিদের কয়েক লাখ ইমামের পর্যায়ক্রমিক প্রশিক্ষণের ফলে সকলকে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হলে প্রচুর সময়ের প্রয়োজন। এযাবৎ কয়েক হাজার ইমাম প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলেও তাদের জীবনমান কতটুকু উন্নত হয়েছে এবং তারা সমাজের কতটুকু উন্নতি করেছেন কিংবা আত্মপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন অথবা সরকারী সুযোগ সুবিধা লাভ করেছেন - এ ধরনের অনেক প্রশ্নই রয়েছে। ইমাম প্রশিক্ষণের সাথে খোতবা প্রশিক্ষণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও খোতবা সংস্কারের বিষয়টি উপেক্ষণীয় নয়। কেননা, আমাদের সমাজে ইমামগণের মর্যাদা সম্মান আগে যেমন ছিল, বর্তমানেও তা অক্ষুন্ন আছে। তারা সমাজের ধর্মীয় দর্পণ হিসেবে ধর্মভীরু সকলের কাছে সম্মানের পাত্র। প্রতি জুম্মার ঈদাইন (দুই ঈদ) উপলক্ষ্য ছাড়াও মসজিদ হতে তারা তবলীগ হেদায়েতের মূল্যবান বাণী প্রচার করে ইসলামের মহান সেবায় নিয়োজিত কিন্তু একটি বিষয় সকলকে ভাবিয়ে তুলছে যে, ইমাম প্রশিক্ষণের ধারা অক্ষুন্ন থাকলেও তাদের জন্য খোতবা সংস্কারের কোনো ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে কিংবা এ ব্যাপারে সমোপযোগী বাস্তব কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিনা-এসব প্রশ্ন থেকে যায়। উল্লেখ্য, বিগত ১৯৬০ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকা সরকারী আলিয়া মাদ্রাসায় যখন ইমাম প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল তখন সংস্কারকৃত খোতবার বিষয়ও এসেছিলো।

সমাজ উন্নয়নের প্রক্রিয়ার সাথে সাথে ইমামদেরকে আরো বিভিন্নমুখী কল্যাণমুলক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত করার চিন্তাভাবনা চলছে। সমাজে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধিসহ সুপ্রতিষ্ঠিত করার দাবিও নতুন নয়। জনসাধারণের মধ্যে তাদের মসজিদ ভিত্তিক ধর্মীয় প্রভাবের কারণে তাদেরকে অবহেলা করার এবং তাদেরকে ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত করার কোনো অবকাশ নেই। দেশব্যাপী ইমাম প্রশিক্ষণের পরিধি সমপ্রসারিত করার সাথে সাথে মসজিদভিত্তিক ইসলাম (শান্তি) শিক্ষা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন কারণে বর্তমানে এখন অনেক বেশী। এ কারণে ইমাম প্রশিক্ষণের সাথে খোতবা সংস্কারের কথাও নতুনভাবে চিন্তা করার সময় এসেছে। দেশে এক শ্রেণীর রাজনৈতিক ইসলামপন্থী যেখানে সাধারণ মানুষকে এবং এক শ্রেণীর অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত এবং তথাকথিত মাদ্রাসায় পড়া শিক্ষিত লোকদেরকে অর্থের লোভ দেখিয়ে সন্ত্রাসী বানানোর অপতৎপরতায় লিপ্ত সেখানে মসজিদের দেশ বাংলাদেশের ইমাম-উলামা সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে সত্য  মুহাম্মদী ইসলাম নিয়ে অপপ্রচার অপতৎপরতার বিরুদ্ধে। যারা নীরবে বিভিন্ন রাজনৈতিক ইসলামের কথা বলে বাঙালিকে ধর্মচ্যুত করে চলছে উন্নয়ন কল্যাণের মুখরোচক শ্লোগানউচ্চারণ করে বিভিন্ন ছদ্মাবরণে অপতৎপরতা চালাচ্ছে তাদের রোধে বিশেষভাবে মসজিদের ইমাম সমাজই সবচেয়ে বলিষ্ঠ ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন। উত্তরাঞ্চলে লাগামহীন ধর্মীয় সন্ত্রাসের তৎপরতায় হাজার হাজার কর্মী গড়ে উঠছে। এই খবর হতে সহজেই অনুমান করা যায়, রাজনৈতিক ইসলামপন্থীরা বাংলাদেশে বসে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য ও জঘন্য অপতৎপরতা অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমাদের উলামা-ইমাম সমাজকে আরো সজাগ-সচেতন হওয়ার সময় এসেছে, তাদের দায়িত্ব ও ভূমিকা কিভাবে জোরদার করা যায় তা পুনর্বিবেচনা করতে হবে এবং এজন্য প্রয়োজন তাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিকে সমপ্রসারিত ও সুবিন্যস্ত করা এবং খোতবা সংস্কারের মাধ্যমে তাদেরকে মিশনারী তৎপরতার এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সক্রিয় করে তোলা। খোতবার মূল চরিত্র তথা ইসলামি রীতিনীতি অক্ষুন্ন রেখে নতুন সংযোজন, পরিবর্ধন, সংশোধন ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করা অর্থাৎ যুগোপযোগী করা। সারা দেশে একক খোতবা চালু করার বিষয়টি নতুনভাবে এবং গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা একান্ত আবশ্যক হয়ে পড়ছে। নব-নব পরিস্থিতিতে খোতবা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়া একটি স্বাধীন দেশে খুবই স্বাভাবিক।

১৯৬০ সালে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রথমবারের মতো ইমাম প্রশিক্ষণ প্রবর্তনের কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। সে সময় খোতবা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল এবং তৎকালীন বিশিষ্ট উলামা এবং বিশেষজ্ঞগণ বাংলা অনুবাদসহ নতুন খোতবাও রচিত হয়েছিল বলে জানা যায়। একযোগে তা অনেক মসজিদে পঠিতও হতে থাকে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, স্বাধীন বাংলাদেশ আমলে নব্বই-এর দশকে বাংলাদেশে খোতবা সংস্কারের প্রথম উদ্যোগ গৃহীত হয়েছিল এবং এ ব্যাপারে কিছুটা বাস্তব পদক্ষেপও নেয়া হয়েছিল।

প্রসঙ্গতঃ আরো উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সালের ১৪ জানুয়ারী ইকবাল রোডে ইমাম প্রশিক্ষণ প্রকল্প আয়োজিত ১৯৮তম দলের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমামদের সনদ বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণদানকালে তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী একটি খোতবা প্রণয়ন কমিটি গঠন করার তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দেশে প্রচলিত পুরাতন খোতবার অংশ বিশেষ পরিবর্তন করে মুসল্লীদের মধ্যে প্রচার উপযোগী বলিষ্ঠ ও প্রাঞ্জল ভাষায় মুদ্রিত একটি নতুন খোতবা শীঘ্রই প্রণয়ন করা হবে।

তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী ঘোষিত খোতবা সংস্কার কমিটি কিছুদিন কাজও করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পট পরিবর্তনের ফলে সেই খোতবা সংস্কার কমিটির আর কোনো ভূমিকা পরিলক্ষিত না হলেও স্বাধীন বাংলাদেশে খোতবা সংস্কারের  সেটি ছিল প্রথম পদক্ষেপ। এরপর এক যুগেরও অধিক সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে ইমাম প্রশিক্ষণ অব্যাহত থাকলেও খোতবার সংস্কারের আর কোনো উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে বলে জানা যায় না। বর্ণিত পটভূমিকার আলোকে বলা যায় যে, খোতবা সংস্কারের মহৎ উদ্দেশ্যে অতীতে যেসব উদ্যোগ পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছিল তার বিশদ বিবরণ সরকারী রেকর্ড-পত্রে সংরক্ষিত থাকার কথা। নতুন পরিস্থিতিতে খোতবা সংস্কারের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার দাবি রাখে। যেহেতু এ সম্পর্কে অতীতে যথেষ্ট কাজ হয়েছে এবং বেশ অগ্রগতিও সাধিত হয়েছিল। তাই ধর্ম মন্ত্রণালয় বিষয়টি বিবেচনায় এনে সংরক্ষিত কাগজপত্র/রেকর্ড পত্রের আলোকে অথবা বিজ্ঞ ধর্মীয়-চিন্তাবিদ সমাজের পরামর্শক্রমে পুনরায় খোতবা সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। পূর্বের গৃহীত উদ্যোগগুলোর সাথে যেসব বিজ্ঞ পন্ডিত সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন, তাদের মধ্যে এখনো কিছু কিছু ব্যক্তিত্ব জীবিত আছেন, তাদের মূল্যবান পরামর্শ খোতবা সংস্কারে বিশেষ উপকারে আসতে পারে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

মসজিদের ইমাম-খতীবগণকে প্রশিক্ষণ দানের প্রশংসনীয় কর্মসূচির সাথে যুগোপযোগী খোতবার সংশ্লিষ্টতাকেও একীভূত করে প্রচলিত সব খোতবার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। খোতবায় বাড়তি কি কি বিষয় স্থান পাবে তা নির্ধারণ করে দেয়া এ কারণেই প্রয়োজন যে, অধিকাংশ ইমাম মুদ্রিত খোতবা পাঠে অভ্যস্ত, আরবীতে নিজ থেকে কিছু বানিয়ে পড়তে হয়তো পারবেন না। তবে খোতবার আলোচ্য বিষয়গুলো আরবীতে থাকলেও খোতবা পাঠের প্রথমে তা বাংলায় বলে দেয়ার নিয়ম সকল মসজিদে এখনো চালু হয়নি, এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে উন্নতি সাধন করতে হবে। খোতবা সংস্কার করে সারা দেশের মসজিদসমূহে এক ও অভিন্ন তথা সমন্বিত খোতবা সরবরাহ চালু করা হলে খোতবা নিয়ে নতুন বিতর্ক বা ফেৎনা সৃষ্টিরও অবকাশ থাকবে না। খোতবার ইসলামি ঐতিহ্য-চরিত্র বজায় রেখে যুগের চাহিদা অনুযায়ী খোতবা সংস্কারের প্রয়োজন নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। খোতবাকে কেন্দ্র করে কেউ যেন বিতর্ক সৃষ্টির সুযোগ না নিতে পারে সেদিকেও সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।

সর্বশেষে বলতে চাই যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে মসজিদের ইমাম-খতীবগণ সমাজের তৃণমূল থেকে ইসলামের প্রচার-প্রসার, ইসলামি আদর্শ শিক্ষার বিস্তার, বাস্তবায়ন, সামাজিক অপরাধ-কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অভিযান রাজনৈতিক ইসলামের অপপ্রচার বিভ্রান্তির অবসানে কার্যকর ও বাস্তবমুখী বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। রাজনৈতিক ইসলাম ও  বিভ্রান্তদের প্রতারণা প্রচারণা এবং অপতৎপরতা রোধে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অপরিসীম। কাজেই ইমাম প্রশিক্ষণসূচীকে জোরদার, গতিশীল ও সমপ্রসারিত করার লক্ষ্যে খোতবা সংস্কারের মাধ্যমে তাদের যুগ চাহিদা পূরণে প্রস্তুত ও অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন করে তুলতে হবে। প্রণীত খোতবাই যেন সমাজের অভ্রান্ত দিশারী হিসেবে, আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে তা নির্ণীত ও নিশ্চিত করতে হবে। কেননা একমাত্র ইমাম-খতীবরাই হচ্ছেন ধর্মভীরু মুসলমান সমাজের ধর্ম প্রচারক ও ধর্মভীরু হিসাবে সবার মধ্যে খোতবার আবেদন সৃষ্টি করতে পারেন।

গণমুখী রাজনীতি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা


গণমুখী রাজনীতি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা

 
বর্ষা ॥ ‘দেশ এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে’- কথাটা এদেশে বেশ পুরোনো হলেও স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে আজকের দিনেও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। দেশ এখন বাস্তবিক অর্থেই স্তরে স্তরে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে করে চলছে। পারিপার্শ্বিকতা ও পরিস্থিতির  পরিবর্তন ঘটছে। হাজারো সংকট মোকাবেলা করেই দেশ ও  দেশের মানুষ এগিয়ে চলছে সামনের দিকে। রাজনীতি ও ধর্মের নামে দেশে শত মিথ্যাচার, সহিংসতা, হানাহানির মধ্যেও সময় বসে নেই। গত ২০ জুন বৃহষ্পতিবার রাজধানীতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের উপস্থিতিতে বিশ্বব্যাংকের দারিদ্র্য মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দারিদ্র্য হ্রাসে জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) নির্ধারিত সময়ের দুই বছর আগেই অর্জন করবে বাংলাদেশ। ২০১৫  সালের মধ্যে এমডিজি অর্জনের কথা ছিল।

সেই সাফল্য দেখাবে বাংলাদেশ ২০১৩ সালের মধ্যেই। বাংলাদেশের এ অর্জনকে ‘বিরল’ ও উল্লেখযোগ্য’ বলে আখ্যা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে দারিদ্র্য ও বৈষম্য দুই-ই কমেছে। বিশ্বব্যাংক গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সময় ধরে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক দশকে দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে দেশের এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ। তবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিবেদনে এ কথাটিও স্মরণ করে দিয়েছে যে, এখনো বাংলাদেশের চার কোটি ৭০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে যার মধ্যে চরম দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দুই কোটি ৬০ লাখ এবং এ চরম দরিদ্র মানুষগুলো বাস করে গ্রামাঞ্চলে। বিগত ১০ বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সত্ত্বেও দেশে দারিদ্র্য কমেছে ২৬ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে প্রকাশিত এসব তথ্যে স্বাধীনতার ৪২ বছর পর আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার একটি চিত্রই ফুটে উঠেছে যা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। যদিও এদেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নে বিশ্ব ব্যাংকের ভূমিকা অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্নবিদ্ধ। কিন্তু যে প্রশ্নটা এখন আবারও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হলো কোন্‌ পথে এগোবে বাংলাদেশ?  ধর্মের নামে ধর্মান্ধতা ও সন্ত্রাস, পশ্চাদপদতা ও গোঁড়ামীর অন্ধকার গলিতে বাংলাদেশ কি পথ চলবে? যেখানে দারিদ্র্য আর দুর্নীতিকে পুঁজি করে কায়েম হওয়ার আশঙ্কা থাকছে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর রাজত্ব? সবচেয়ে বেশি ব্যথিত চোখে দেখতে হয়-  বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার সময়ও এদেশের সর্বত্র শত শত মাদ্রাসা গড়ে উঠে যেখান থেকে পড়াশোনা করে আধুনিক সমাজের একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না কোনো  ধর্মান্ধ জঙ্গী হওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় থাকে না। এমনকি এ দলটির অনেক নেতাকর্মী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে এই ধারণা পোষণ করে যে, মাদ্রাসা করা মানেই  আল্লাহ-রাসুলের কাজ করা। মাতৃভাষা বাংলার চর্চা এখানে নেই বললেই চলে। এই সব মাদ্রাসা থেকে পাশ করে কেউ দেশের শান্তি (ইসলাম) প্রতিষ্ঠায় কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না, এ কথাটি তারা জেনেও ভোটের লোভে করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, বিগত বছরগুলোতে জামাত ও বিএনপি নেতাদের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় ভুমিকা রেখে চলেছেন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। এভাবে দেশের একদিকে চলছে ধর্মের নামে মাদ্রাসাগুলোতে অবৈজ্ঞানিক ও আরবী শিক্ষা, অন্যদিকে ইংরেজি শিক্ষার নামেও চলছে দেশের নতুন প্রজন্মকে শেকড়চ্যুত করার এক লাগামহীন তৎপরতা। আর এসব শিক্ষার ফলে দেশে উদার, অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তচিন্তার মানুষদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে এবং অসাম্প্রদায়িক মানুষ যারা আছেন তাঁরাও হয়ে পড়ছেন হতাশাগ্রস্ত। এ থেকে বর্তমান সরকারের অনেক শিক্ষা নেয়ার এবং সাবধান হওয়ার দরকার আছে।

এদেশের মানুষ হাজার বছর ধরে শান্তি (ইসলাম)তে বসবাস করে আসছে। অসংখ্য সূফীসাধক, দরবেশ, আউলিয়া, গাউস-কুতুবের সংস্পর্শে এদেশের মানুষ একদিন ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিল। সেই ইসলাম কোনো রাজনৈতিক ইসলাম ছিল না। আমেরিকা, ব্রিটিশ ও পাকিস্তানী শাসকবর্গের মদদে জামাতে ইসলাম, নেজামী ইসলাম, মুসলিম লীগ এদেশে যে নিজেদের গড়া বিভিন্ন পদ্ধতির  ইসলাম চালু করতে চেয়েছিল তা সম্পূর্ণ অর্থে রাজনৈতিক ছিল বলেই দেশে সৃষ্টি হয়েছিল এত সংঘাত, হানাহানি এবং আজও তা অব্যাহত রয়েছে। এই ধর্মকে ব্যবহার করে দেশের মোট জনসংখ্যার কিছু কিছু লোক ও গোষ্ঠী অঢেল অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছে ঠিক, কিন্তু সমাজে বৈষম্য ও বঞ্চনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পবিত্র ধর্ম ইসলামের এমন ভিন্ন পথে রাজনীতিকীকরণের কারণে দেশ ও সমাজ যে পিছিয়ে রয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ধর্মের এই অপব্যবহার আছে বলেই সমাজের একটি অংশ দুর্নীতি ও দেশের সম্পদ লুপটপাট করে অর্থবিত্তের মালিক হয়, মক্কায় গিয়ে হজ্জ্ব করে নিজের নামের সাথে আলহাজ্জ্ব লাগিয়ে আরও বেশি বেশি ভোগলিপ্সায় জড়িত হয়, হালআমলে এরাই আবার রাজনৈতিক অঙ্গনেও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ত্যাগের মহিমা তাদের মধ্যে থাকে না। জনগণের কাছ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আর শেষ পর্যন্ত জনগণের শত দুঃখ-কষ্টও তাদের চিন্তার মধ্যে কোনো রেখাপাত করে না। মানুষও হয়ে উঠছে ভীতু, রাজনীতিবিমুখ ও অসচেতন। এ সুযোগের ব্যবহার করছে ধর্মজীবী রাজনৈতিক তথাকথিত ইসলামপন্থীরা।  

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ খোঁজা এখন সময়ের দাবি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানীর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চকে  কেন্দ্র করে বহু বছর পর সাধারণ মানুষ সচেতনভাবে রাজনীতিমুখী হয়ে উঠেছে। গণজাগরণ মঞ্চকে কেন্দ্র করে এই আন্দোলনটি গণমুখী ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির একটি বড় উদাহরণ। দেশের সর্বস্তরের মানুষ এই আন্দোলনটিকে গণমানুষের স্বার্থে ব্যবহার করতে এগিয়ে এলে কল্যাণ হবে জাতির। গণজাগরণ মঞ্চের চেতনা সারা দেশের পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে এবং সব শ্রেণীর মানুষকে বাঙালি চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে পারলে ধর্মান্ধ, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা  তথা কায়েমী স্বার্থবাদীরা চোখে অন্ধকার দেখবে। দেশ এখন যে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে তা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে এখানে  শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে জনগণের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ নতুন প্রজন্মের জাগরণে এবং সার্বিক সহযোগিতা আরও বেশি বেশি দরকার বলেই বিশ্বাস সচেতন দেশবাসীর।

বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর দায়গ্রস্থতা কমাতে জাতিকে জাগ্রত চিত্ত হতে হবে


বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর দায়গ্রস্থতা কমাতে জাতিকে জাগ্রত চিত্ত হতে হবে

 

শেখ উল্লাস ॥ আওয়ামী লীগের  সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘পিএইচডি ডিগ্রীধারী ডক্টরেট এবং বিশ্বব্যাংকের কেরানীদের দিয়ে দেশ চলতে পারে না। তাদের শাসনামলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটবে না, দ্রব্যমূল্য কমবে না। মানুষের নিরাপত্তা থাকবে না। তাই অনতিবিলম্বে নির্বাচন দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো বিকল্প নেই।’ ১২ এপ্রিল ২০০৮ দলের জরুরি প্রেসিডিয়াম সভার পর গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। (তথ্যসূত্র ঃ ১৩ এপ্রিলের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক)

প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে কারা দেশ চালাবে? দেশটি কার? লাখো বাঙালির আত্মত্যাগ, আত্মদান এবং বিশ্বের সকল প্রগতিশীল ও মানবতাবাদী জনগণের অকুন্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতার ফসল আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র। এ রাষ্ট্রের জন্মের সাথে প্রত্যক্ষভাবে যারা জড়িত ছিলেন সেই অগণিত রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সংগঠন, বাঙালি সৈনিক, কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক সবাই ছিলেন দেশপ্রেমিক। বাংলা ও বাঙালির স্বার্থ, এক কথায় শত শত বছরের পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়ে বাঙালি জাতি একটি রাষ্ট্র গঠন করবে - এ দেশের মানুষ অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক মুক্তি পাবে - এই ছিলো সেদিনের সকলের চিন্তা-চেতনার অগ্রাধিকার। বিশ্ব পুঁজিবাদের মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের সেবাদাস কথিত ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর সরকার স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা চায়নি। কেননা, বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে এবং এই ভূখন্ডের নিপীড়িত, নির্যাতিত, শোষিত-বঞ্চিত মানুষদের উন্নতির পথ খুলে গেলে তাদেরকে ধর্মসহ নানা জুঁজুবুড়ির ভয় দেখিয়ে পিছনে ফেলে রাখার পথ যে রুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা ছিলো। কিন্তু পাকিস্তান-আমেরিকা-সৌদি সাম্রাজ্যবাদী আঁতাতের সকল ষড়যন্ত্র ও কৌশলকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েই বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পেয়েছিলো রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। কবি সুকান্তের ভাষা, ‘শাবাস বাংলাদেশ, পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়, সব জ্বলেপুড়ে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়’ - সত্যে পরিণত হয়েছিলো।

বাংলাদেশের জন্মলগ্নের চেতনা কী ছিলো? সে চেতনাটি নিশ্চয়ই ছিলো একটি অসামপ্রদায়িক, উদার মনোভাবাপন্ন, বৈষম্যহীন, শোষণ ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ, যেখানে বিদেশী শক্তির কোনো প্রভাব থাকার কথা তখন কেউ চিন্তাও করেনি। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ আমলে বাংলা ও বাঙালির দুর্দশা দেখে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি।’ আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফিরে বলেছিলেন, ‘বাঙালি আজ স্বাধীন হয়েছে। আমার বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে। কবিগুরুর কথা আজ থেকে মিথ্যা হয়ে গেছে।’ কিন্তু রাজনৈতিকভাবে একটি ভূখন্ডের মালিক হলেই যে একটি জাতি সত্যিকারের স্বাধীনতা পায় না তা বুঝতে বেশিদিন লাগেনি। বিদেশী কিছু রাষ্ট্রের প্রভাবে ও দলীয় কিছু নেতার প্ররোচনায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের জন্মশত্রু পাকিস্তানে গেলেন, ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিলেন। ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে যাওয়ার কিছুদিন পরেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভূট্টো বাংলাদেশে এলেন। ’৭১-এর পরাজিত শক্তি আমেরিকা, পাকিস্তান ও সৌদি-ওয়াহাবী আদর্শের লোকেরা সেইদিন ভূট্টোকে সম্বর্ধনা দিয়ে আবার নতুন প্রাণ পেলো। সংগঠিত ও সংঘবদ্ধ হতে থাকলো বঙ্গবন্ধু সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও আমলার নিকৃষ্ট ষড়যন্ত্রমূলক সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায়। ১৯৭৫-এর ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য প্রায় সকল সদস্যকে এবং ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতা নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো পরাজিত শক্তি আর তাদের দোসরদেরকে বিশ্বাস করা, তাদের সাথে সম্পর্ক করাটাই কত বড় ভুল ছিলো। ’৭১-এ যে রাজাকার ছিলো তারা এবং তাদের দোসররা কখনো বাংলা ও বাঙালির আদর্শিক বন্ধু হতে পারে না - যদিও তারা বাংলায় কথা বলে। বাঙালিত্ব ভুলে গিয়ে কেউ যতই মুসলমান সাজুক না কেন তাকে    পাকিস্তান-মার্কিন-সৌদি-ইহুদি চক্র বিশ্বাসঘাতক হিসাবে কাজে লাগাবে কিন্তু কোনোদিনও আপন করে নিতে পারে না। বাঙালি তার আপন সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক সেটি কখনোই চায় না সৌদি-এজিদী আদর্শের পাকি-মার্কিনী চক্র। তারা বাঙালিকে তাদের সাদ্দাদ-নমরুদের আদর্শের নতুন সভ্যতা নির্মাণের শ্রমিক (ক্রীতদাস!) বানিয়ে রাখার মধ্যেই তৃপ্ত রাখতে চায়। যে কারণে দেখা যাচ্ছে বছরের পর বছর সৌদি নগর-সভ্যতা বিনির্মাণে অক্লান্ত পরিশ্রম করলেও কোনো বাঙালি সৌদি নাগরিকত্ব অর্জন করতে পারে না। আর সৌদি নাগরিকত্বের মধ্যে কোনো বাঙালি কোনোদিন তার বাঙালি সংস্কৃতি (যা তার হাজার বছরের পরিচয়) ধারণ করতে পারবে না। বড় জোর তাদের সেবাদাস হিসেবেই জীবন কাটাতে পারবে।

স্বাধীনতার ৪২ বছর পর আজও বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক মুক্তি আসেনি - এ কথা আজ দিবালোকের মতোই স্পষ্ট। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে এ দেশে মার্কিনীসহ বিদেশী অন্যান্য রাষ্ট্রের প্রভাব ব্যাপকভাবে বিসতৃত হয়েছে। দেশটির জন্মলগ্নের চেতনা থেকে মোড় ঘুরিয়ে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সামরিক আর স্বৈরাচারী অপশাসনের কুপ্রভাবে সর্বস্তরে যে অব্যবস্থা, দূরাবস্থা, দুর্নীতি মাথাচাড়া দিয়েছিলো তথাকথিত গণতান্ত্রিক শাসনামলেও তার অবসান হয়নি। বরং গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে একটি গণবিরোধী শক্তি দেশের জন্য আরো ভয়াবহ সমস্যা তৈরি করে যাচ্ছে। ’৯৬-এর ১২ জুনের নির্বাচনের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধের অংশগ্রহণকারী আওয়ামী লীগ দলটি ক্ষমতায় গিয়ে দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে শুভ ও সুন্দর অনেক কিছু দৃষ্টান্ত দেখাতে পারলেও শেষ পর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি আদর্শহীনতা ও স্বার্থান্ধ কিছু নেতার অতি লোভের কারণে। ২০০১ সালের অক্টোবরে আর এক প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলটি দেশের ভাগ্যে ঘটিয়ে গেছে চরম সর্বনাশ। এসব সর্বনাশের পরিণতিতে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার  বিস্তার ঘটেই চলেছে। মাতৃভূমি বাংলাকে আজও সাধারণ  শোষিত মানুষ মায়ের মতো ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে নীরবে নিভৃতে বসে ঠিকই বুঝতে পারে কারা এ দেশের শত্রু, কাদের কারণে বাংলা ও বাঙালির সুখ-শান্তি বিনষ্ট হয়েছে বা হচ্ছে।

সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যার অভাবে একটি জাতি ও রাষ্ট্রের অবস্থা পঙ্গুত্ব ও প্রতিবন্ধি হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে যে জাতি-গোষ্ঠীর রাষ্ট্র সে জাতি-গোষ্ঠী থেকে সরিয়ে অন্য কোনো ধর্মীয় আমদানীকৃত পরিবেশে ফেলে দেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখলে তার সঠিক বিকাশ ব্যাহত হবেই। বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটিকেও সব মানুষের জন্য সুখ-শান্তিময় করে তুলতে এর জন্মকালের চেতনার ভিত্তিতেই সম্ভব, আর তার জন্য প্রয়োজন সবার উপরে দেশপ্রেম, নিজস্ব সংস্কৃতিকে ধারণ-লালন- পালন করা। শুধু বিদেশী সাহায্য ও সমর্থন নিয়ে নয়। স্বাধীনতার পর বিদেশী সাহায্য যত আনা হয়েছে বা এসেছে তার প্রায়  সমস্তই ব্যয় হয়েছে একটি ক্ষুদ্র পরিসরের সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর স্বার্থে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে করা হয়েছে দায়গ্রস্ত।

দারিদ্র্য-মানবাধিকার-মুক্তিযুদ্ধ বাণিজ্য!


দারিদ্র্য-মানবাধিকার-মুক্তিযুদ্ধ বাণিজ্য!

 
সংলাপ ॥ দারিদ্র্য বিমোচনের শ্ল্লোগান নিয়ে দেশের প্রতিটি উপজেলায় - ইউনিয়নে সক্রিয় রয়েছে শত শত, হাজারো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা - যাদের পরিচয় এনজিও হিসাবে। গত ৪২ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, এখনও হচ্ছে এ খাতে। তারপরও বাস্তবতা হচ্ছে দেশের সিংহভাগ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে অথবা দারিদ্র্যের সঙ্গে নিত্য বসবাস করছে। কেন? এ প্রশ্ন বহুল উচ্চারিত। উত্তরও জানা। আসলে দারিদ্র্য বিমোচনের নামে চলে এনজিও সংগঠকদের (ব্যতিক্রম আছে, কিন্তু ব্যতিক্রম তো ব্যতিক্রমই!) বিলাস আর ভোগ-লালসা পূরণ। ফলে দারিদ্র্য বিমোচন হয়ে ওঠে না, যা হয় - হচ্ছে তা হলো দারিদ্র্য বিমোচনের নামে বাণিজ্য। ঠিক তেমনি মানবাধিকারের নামেও এ দেশে একইভাবে চলে মানবাধিকার-বাণিজ্য। ৪২ বছর বয়সী স্বাধীন দেশে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের কথা শোনা যায়, তখন স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে, তবে কি এটি মুক্তিযুদ্ধ-বাণিজ্য? এ প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে তাকাতে হবে মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গজিয়ে ওঠা সংগঠনসমূহের পরিসংখ্যানের দিকে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অবাধ বাণিজ্যে রাশ টানার জন্যই হোক কিংবা একচেটিয়া বাণিজ্যের রাস্তা পরিষ্কার করে দিতেই হোক, বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট সংগঠন-প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিবন্ধনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়। এতে দেখা যায়, নিবন্ধন ফরম সংগ্রহ করে ২৯০টি সংগঠন। পরে অবশ্য নিবন্ধন শর্তের চাপের ফলে ফরম জমা দিতে দেখা যায় তাও ২৭টি সংগঠনকে (সূত্র - দৈনিক প্রথম আলো, ১৭ অক্টোবর ২০০২)! একইভাবে প্রশ্ন জাগে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামেও কি এখনো চলছে যুদ্ধাপরাধী বিচার-বাণিজ্য? এর উত্তর খুঁজে পেতে চাইলে আগে জেনে নিতে হবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে যারা সোচ্চার হয়ে উঠছেন, তারা কারা? মুক্তিযুদ্ধের ভুলুন্ঠিত চেতনার জন্য যারা কথা বলছেন এবং চিৎকার করেছেন - এদের অতীত কি? এবং গত ৪২ বছরে এরা কোথায় ছিলেন? মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ফেলে আসা বছরগুলোতে সরকারের এদের অবদান!

‘বস্তুত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জনগণ এবং মুক্তিযোদ্ধারা আজ যে পরিণতির মুখোমুখি হয়েছে এটা সূত্রগতভাবেই অবধারিত এবং ইতিহাস সম্মত। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক পটভূমি অর্থাৎ যে চেতনা ও সংকল্প একটা মুক্তিযুদ্ধকে সম্ভাবিত করে তোলে তার অভাব ছিলো স্বাধীনতার গোড়া থেকেই। যুদ্ধের জন্য আমরা মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। যুদ্ধটা ছিলো আমাদের উপর আরোপিত। ’৭১-এর ২৫ মার্চে পাক আক্রমণের পূর্ব পর্যন্ত বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো ছিলো একটা রাজনৈতিক সমাধানেরই পক্ষপাতি। ..... যে নেতার নেতৃত্বে সংগ্রাম, তিনি শুরুতেই ধরা পড়েন শত্রুর হাতে, আর তার সহযোগীরা নিরস্ত্র জাতিকে প্রথমে অনিশ্চয়তায় রেখে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন প্রতিবেশী রাষ্ট্রে। ..... আকস্মিকতার এই মহান যুদ্ধে অংশগ্রহণের পক্ষে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক আদর্শ গড়ে ওঠার সুযোগ  হয়নি। তার উপর যুদ্ধের নেতৃত্ব যাদের হাতে ছিলো তাদেরও মধ্যে ছিলো কয়েকজন বিশ্বাসঘাতক।

নেতৃত্ব অপ্রস্তুত হলে কি হবে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর লেলিয়ে দেয়া হানাদাররা কিন্তু সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো নিরস্ত্র বাঙালির উপর। ওদের চোখ ছিলো সোনা-ফলা বাংলার মাটির উপর আর বন্দুকের নল ছিলো বাঙালির বুকে। এ অবস্থায় প্রতিরোধে নামে বাঙালি -  যারা স্বতপ্রণোদিতভাবে শ্লোগান তুলেছিলো ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো - বাংলাদেশ স্বাধীন করো’। এই অকুতোভয় প্রতিরোধ লড়াইটা যুদ্ধের মাঠে কারা করেছিলো? মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে যারা লড়াই করেন তাদের বিপুল অংশই ছিলেন অরাজনৈতিক ব্যক্তি। স্বদেশপ্রেম, দেশের ও জনগণের লাঞ্ছনার বিরুদ্ধে প্রতিশোধের আকাঙ্খা এমনকি আত্মরক্ষার তাগিদেও অনেকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বেচ্ছাসেবকের মনোভাব নিয়েই তারা এগিয়ে আসেন। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হাজার হাজার কিশোর যুবক বিচ্ছিন্নভাবে ভারতে গিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। .....প্রকৃতপক্ষে নয় মাসে আগাগোড়া যারা যুদ্ধ করেছে তাদের অধিকাংশই ছিলো সাধারণ স্তরের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষহীন সন্তান’।

স্বাধীনতা উত্তরকালে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস পরিচালিত জরিপেও দেখা যায় যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিবাহিনীর মধ্যে শতকরা ৫০ জন কৃষক, শতকরা ৩০ জন ছাত্র এবং শতকরা ২০ জন বুদ্ধিজীবী ও অন্যান্য।

এটাই সত্য যে ১৯৭১ সালে মাঠে-ময়দানে, জলে-জঙ্গলে যারা যুদ্ধটা করলো তারা এর সুফলটা পেলো না। ‘যুদ্ধ করেছি’ - একথা বলে মঞ্চে উঠে বড়াই করার সুযোগটাও জুটলো না সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের। যেহেতু মুক্তিযোদ্ধাদের এক বিরাট অংশই স্বেচ্ছাসেবী ছিলো, সেহেতু যুদ্ধের পরই তারা অবাঞ্ছিত হয়ে পড়ে। এদের শক্তি ছিলো কিন্তু কোনো সংগঠন ছিলো না। বাংলার বিশাল জনসমুদ্র থেকে এসে তারা আবার জনসমুদ্রেই মিশে যায়।’

জনসমুদ্রে মিশে গিয়ে জীবনযুদ্ধে ডুবে যাওয়া এই সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা যখন অনাহার, অর্ধাহার আর অনিশ্চয়তার সঙ্গে অন্তহীন লড়াই-এ রত, তখন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বড়াইটা করলো কারা? ‘বাংলাদেশে প্রথম থেকে এই মুহূর্ত পর্যন্ত যাদের মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা শোনা যায় তাদের মধ্যে গ্রামের গরীবদের   সন্তান ও কারখানার শ্রমিকদের মুক্তিযুদ্ধের কথা যে কোথাও ঠাঁই পাবে না, এটাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। এটাই স্বাভাবিক। যুদ্ধের রক্তঝরা ফসলের একচ্ছত্র ভোগদখল আর ভাগিদারশূন্য বড়াই নিশ্চিত করার প্রয়োজনে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বিস্মৃতির অতলে ঠেলে দেয়ার ঘটনাটাও বুঝি তাই ছিলো খুবই স্বাভাবিক! এখন সময় এসেছে নিজেদের ভাগ্য নিজেদের গড়ার। পেশাজীবীরা এক্ষেত্রে মাঠে নামুক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করুক এটাই সময়ের দাবী। মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তির জন্য আবার গর্জে উঠে নেতৃত্ব দিক এটাই জনগণের প্রত্যাশা। ‘সত্যের জয় হোক আর মিথ্যা নিপাত যাক’ এটাই বাংলার আপামর মানুষের স্বপ্ন বর্তমান সময়ে। যোগ্য নেতৃত্ব দিতে পারবে কি রাজনীতিক সমাজ !

বাস্তবতাই পথ দেখাবে গণতন্ত্র মুদি পণ্য নয়


বাস্তবতাই পথ দেখাবে
গণতন্ত্র মুদি পণ্য নয়

 

শাওন ॥ জোর তদ্বির সর্ব মহল থেকে বর্তমান সরকারের কাছে। সংলাপ শুরু করুন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে। কারণ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে থাকতে হবে। রাজনীতির মাঠে যারা আছেন তারা তো অবশ্যই, কাগুজে বুদ্ধিজীবী, বিশ্ল্লেষক, গবেষক সকলেরই এক কথা - দ্রুত সংলাপের ব্যবস্থা নেয়া। বিদেশী বন্ধুরাও পিছিয়ে নেই। তারাও যথারীতি পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন বৈদ্যুতিন মাধ্যমে তা বেশ জোরের সাথে প্রচারিত হচ্ছে, যাতে জনসমর্থন সংলাপের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেয়। সকলের একই কথা দ্রুত নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্রে ফিরতে হবে। সরকারী মহলেও প্রচ্ছন্ন নমনিয়তা নির্বাচনী সংলাপ আয়োজনে। সর্বদিক থেকে বিষয়টি ইতিবাচক। রাজনৈতিক দল ছাড়া যেহেতু রাজনীতি চলবে না আর রাজনীতি না থাকলে গণতন্ত্র থাকবে কোথায়? নিঃসন্দেহে এর চেয়ে যৌক্তিক বিবেচনা আর কি হতে পারে? এমন সরল সমীকরণ অস্বীকার করবে কে?

আর সংলাপ বা আলোচনা যেহেতু গণতন্ত্রের একটি ভীত, সুতরাং তাকে বাদ দিয়ে গণতন্ত্র মনষ্কতা নিশ্চয়ই সুচিন্তার নয়। কাজেই সংলাপ হোক। সকলের আলোচনায় এটি পরিষ্কার - নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে থাকতে হবে তাই সংলাপ।  আমাদের গণতন্ত্র ছিলো, একসময় আমরা হারিয়েছি, এখন আমরা আবার সেখানে অবস্থান করব। আর সে যাওয়ার পথে নেয়ার দায় বর্তমান রাজনীতিকদের। তারা হাত ধরে আমাদেরকে নির্বাচনী গণতন্ত্রে নিয়ে যাবেন। সত্যি যদি ব্যাপারটি ওরকম হতো তা হলে আজকের এই ওকালতির কিংবা তদ্বিরকারীদের সাথে ঐক্যমত পোষণে দ্বিধা থাকতো না। জোর গলায় আমরাও বলতে পারতাম, আমরা গণতন্ত্রে ছিলাম-আছি-থাকবো।

বর্তমান সরকার জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার। নির্বাচনী?গণতন্ত্রে ফিরতে চাওয়ার অর্থ দাঁড়ায় এই সরকার কর্তৃক তা হরণ হয়েছে, তাই আবার ফিরতে হবে যাদের দ্বারা তা কার্যকর ছিলো তাদেরই কাছে অর্থাৎ তাদেরই হাতে তুলে দিতে হবে দেশকে গণতান্ত্রিক শাসনে ফিরিয়ে আনতে। তাই তো সংলাপ ওকালতি এত জরুরি, দ্রুত নির্বাচন উৎকন্ঠা। কোনো সন্দেহ নেই গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচন অবশ্যই অপরিহার্য আর সে নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দল তো থাকতেই হবে। কিন্তু যে দলগুলো বিগত সাড়ে তিন দশক রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করে গণতন্ত্রের নামে যে বন্যতা, বর্বরতা উপহার দিয়েছে আমরা কি আবার তাদেরই কাছে ফিরে যাবো নির্বাচনী গণতন্ত্রের জন্য? তাহলে বর্তমান সরকারের প্রয়োজনটা ছিলো কোথায়? কোন্‌ গ্রহণযোগ্যতায় এই সরকার কর্তৃক নির্বাচন আইনগত বৈধতা পাবে? সংবিধানের আইন বলে একটি সরকার এখন সময় পার করছে? কেউ কেউ তো ইতোমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, হাসিনা-খালেদা ছাড়া সংলাপ হবে অর্থহীন। সরকারী মনোভাব স্পষ্ট না হলেও কর্মকান্ডে মোটামুটি প্রতীয়মান যে খুব বেশি হার্ডলাইনে তারাও আর অবস্থান নিতে চাচ্ছেন না। পথ খুঁজছেন দ্রুত নির্বাচন করার।

নির্বাচনী গণতন্ত্রে নয়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই ছিলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। সেখানেই জনসমর্থন পেয়ে চার বৎসর অতিক্রান্ত করে এখনও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত বর্তমান সরকার। কিন্তু সেই গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে খোলনলচে যে পাল্টাতে হবে তাকে অস্বীকার করে যারা নির্বাচনী দ্রুত পথ অতিক্রম করতে চায় তাদের কি আদৌ গণতন্ত্রে বিশ্বাস আছে? তারা কি আস্থা রাখেন রাজনীতির চরিত্র পরিবর্তনে? তারা কি বিশ্বাস করেন দেশের মালিক দেশের জনগণ? তারা কি শ্রদ্ধাশীল গণতন্ত্রের মানবিক অধিকার সমূহের সূত্রে? তাদের কি ইচ্ছা আছে গণতান্ত্রিক ন্যায়বিচারের রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি? যদি উত্তরগুলো হ্যাঁ বোধক হয়, তাহলে তারা কি করে পুরনো সেই মদের নতুন বাজারজাতকরণে এত উদগ্রীব হতে পারেন? এক কথায় যারা ছিলো দেশ ধ্বংসকারী, মানবাধিকার লংঘনকারী, দানবীয় রাজনীতির প্রবর্তনকারী, দুর্বৃত্তায়িত পরিবেষ্টিত হিংস্র শ্বাপদ আজ তারাই আবার অপরিহার্য হয়ে উঠছে দেশ পরিচালনার, নির্বাচনী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য

কেউ কেউ বলছেন সকলকে একই পাল্লায় ওজন দিলে কম্বলের অবশিষ্ট থাকবে না যে! খাঁটি কথা, কিন্তু এই কম্বল গায় জড়াবার জন্য কি এর প্রতি সমর্থন জুগিয়ে যাবে দেশবাসী ? কেউ বলছেন নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জনগণই তাদের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার পরিচালনা করবে। নেহাৎ ভদ্রলোকের কথা। তবে অতি সূক্ষ্ম প্রক্রিয়ায় গণদাবি, ন্যায়বিচারকে পাশ কাটিয়ে চলা, সেই সব দুর্বৃত্তদেরকে রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার হীনচক্রান্ত চলছে। ইঁদুর-বিড়ালের খেলা আর ?বৈদ্যুতিন মাধ্যমে নানা নাটক, রাজনৈতিক সংস্কারের মৌলিকত্বকে এখন যে চোরা গলিপথের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে, তা কি সচেতনরা অনুধাবন করতে পারছেন না? এটা সত্য, হাতে গোণা কয়েকমাসে টেবিলটা উল্টে দিতে পারে। তাই বলে শুরুর দৃঢ়তা না থাকলে লক্ষ্যের স্থিরতা থাকবে, এমন বিশ্বাসযোগ্যতা পাবে কি করে?

গণতন্ত্র কোনো পণ্য নয়, যা মুদি দোকানে বিক্রি হতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় আসলেই অমনি তা জনগণ প্রয়োজনমতো মুদি দোকান থেকে কিনতে পারবে। এর কোনো অলৌকিকত্বও নেই যা আলাদিনের প্রদীপ হয়ে আমাদেরকে গণতান্ত্রিক বানিয়ে ফেলবে কিংবা আমাদের রাজনীতিকদেরকে সত্যি সত্যিই গণতান্ত্রিক মনস্কতায় বদলে দেবে। এমন নিশ্চয়তা কি কেউ দিতে পারবেন? আজ যারা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন নির্বাচনই একমাত্র গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নিয়ামক, তাদেরকে অবশ্যই বলতে হবে দুর্বৃত্ত রাজনীতিকদের কি করবেন - কিভাবে তাদেরকে প্রতিহত করবেন আগামী নির্বাচনে? নির্বাচনী আইন তো এখন প্রযোজ্য হবে। গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা কি সে পর্যন্ত যেতে পেরেছি? যে দুই চারজন মাত্র সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে তাদের রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা বাকিদের থেকে কি ভিন্ন? ক্ষমতায় থাকাকালীন তাদের চরিত্রগুলো কি আমাদের কাছে একেবারেই অপরিচিত? এদের মধ্যে থেকে দুই শতাংশ কি বের করা যাবে যাদের মধ্যে বহমান ন্যূনতম দেশপ্রেম / মানবতাবোধ! এই সরকার যদিও এখনো দিশেহারা নয় বিশেষ করে বাজার নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ প্রায় সকল ক্ষেত্রেই আস্থাহীনতা দিন দিন বেড়েই চলছে, কিন্তু সামাল দেয়ার জন্য নির্বাচনই সমাধান এমন বক্তব্যের আসলে কি কোনো বাস্তবতা আছে?

মঙ্গলবার, ১৮ জুন, ২০১৩

ক্ষমতা না জনতা - সরকার কার সাথে - কোন পথে


ক্ষমতা না জনতা -
সরকার কার সাথে - কোন পথে

পবিত্র মক্কা-মদিনা বার বার জিয়ারত করে, বিদেশীদের সাহায্য নিয়ে, মিথ্যাচার-দুর্নীতি চলতে দিয়ে, প্রশাসন কাঠামো নিজেদের মতো করে পরিবর্তন করে, রাজনৈতিক ইসলাম ও ধর্মান্ধদের সাহায্য নিয়ে ক্ষমতায় আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকা যায় কিন্তু সর্বস্তরে সত্য প্রতিষ্ঠায় বজ্র কঠোর না হলে জাতির আশীর্বাদ পাওয়া কঠিন। জাতির আশীর্বাদ না পেলে আল্ল্লাহ্‌র রহমত পাওয়া দুরূহ হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ ওলী-আল্লাহ্‌দের দেশ। সহস্রাধিক সাধক এই মাটিতে শুয়ে আছেন। তাঁরাও দেশ ও জাতির কল্যাণে সত্য প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত প্রাণ ছিলেন ও আছেন। তাই দেশের ৭০ ভাগ মানুষ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তাঁদেরকে অন্তরের অন্তঃস্থলে ধরে রেখেছেন। আল্লাহ্‌ও তাঁদের সহায় আছেন। সবকিছুর উর্দ্ধে উঠে সার্বিক অঙ্গনে সত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশ ও জাতির কল্যাণে যিনি কান্ডারি হবেন - তিনি অবশ্যই জাতি ও ওলী-আল্লাহ্‌দের আশীর্বাদ এবং সর্বোপরি আল্লাহ্‌র রহমত হতে বঞ্চিত হতে পারেন না। ইতিহাসই তার প্রমাণ।।


আবু নাঈম ॥ অভিধান খুঁজে দেখা যায়, ‘সংস্কার’ (যা বর্তমান বাংলাদেশের সব মানুষের জন্য জরুরী) অর্থ প্রতিযত্ন, মেরামত, শুদ্ধি, পরিস্করণ, ধারণা, বিশ্বাস, পরিপাটিকরণ ইত্যাদি ২৭টি অর্থবোধক শব্দ। সংস্কার একটা পথ বা পদ্ধতি যা সময়, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর ভর করে কোনো দেশ ও জাতি উন্নতির দিকে যায় এবং পরীক্ষিত ফলাফলের ওপর নির্ভর করে আবারও সংস্কারের পথে এগিয়ে যায়। এ পথে চলার শেষ নেই। এটা ব্যক্তি জীবন, সমাজ জীবন, রাষ্ট্র জীবনে অবশ্যই ঘটতে হবে এবং ঘটে চলেছে বলেই আমরা ব্যক্তি জীবনে প্রতিদিন প্রতিটি কর্মের মধ্যে পরিবর্তন আনতে পারছি সময় ও পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে। পরিবর্তনের ধারায় যারা যে বিষয়ে পাথেয় কুড়িয়ে চলেছেন তারাই হচ্ছেন সে বিষয়ে জ্ঞানবান > পরবর্তীতে দূরদর্শী > পরবর্তীতে দিব্যজ্ঞানী। অন্ততঃপক্ষে যারা একটা বিষয়ে জ্ঞানবানের পর্যায়ে যেতে পারেন তারাই সে বিষয়ে পৃথিবীর, রাষ্ট্রের, সমাজের বা ব্যক্তি জীবনের দিক নির্দেশনা দিতে পারেন। তাই দেখা যায়, জ্ঞানবান হওয়ার জন্য?যুগে যুগে স্ব-শিক্ষার ওপর জোর দেয়া হয়েছে শিক্ষাই উন্নতির বাহন বলে। যে জাতি যত স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত সে জাতির মধ্যে ততো জ্ঞানবান, দূরদর্শী ও দিব্যজ্ঞানী আছেন। তারা যখন দেশ ও জাতিকে নেতৃত্ব দেন সেই দেশ ও জাতি তখন উন্নতির চরম শিখরে ওঠার পথে অগ্রসর হয়। আর যারা ওই পথ ধরে হাঁটতে পারেননি তারা ব্যক্তি জীবনে, সমাজ জীবনে এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে দিকনির্দেশনা দিতে থাকলে যে কোনো পরিস্থিতিতে ক্ষমতা হাতে পেয়ে, তাহলে দেশ ও জাতির উন্নতি ব্যাহত হবেই এবং জাতির মধ্যে হতাশা প্রকটভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, রাহাজানি, খুন ইত্যাদি বেড়ে যাবে। এর মধ্যেই অগ্রসররা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সংস্কার চাইবে এবং প্রয়োজনে  জাতিকে সেই পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে যে পথে সংস্কারের ধারা স্থবির না হয়ে চলমান থাকে (যদিও তার মধ্যে ক্ষমতাসীন হওয়ার চূড়ান্ত লক্ষ্য বিদ্যমান থাকে)।
অপ্রিয় হলেও সত্য বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো আদর্শিক শ্রেণীর ঐকতানে দেশ ও জাতির উন্নতির জন্য একরৈখিক পথের পথিক হয়ে আমরা এগিয়ে যেতে পারিনি ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থের দ্বন্দ্বের জন্য। ফলে বারবার দ্রুত সংস্কার ঘটবে বা ঘটাতে হবে এটা সুনিশ্চিত।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের সর্বস্তরের পেশাজীবী মানুষ যখন সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আহ্‌বান জানাচ্ছে তখন বর্তমান রাজনীতিকরাই একমাত্র শক্তি যারা ওই পথে নিজেদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেন নাই।? প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের সংস্কার করে নয়, জাতীয় জীবনে সর্বক্ষেত্রে উন্নতির লক্ষ্যে একরৈখিক সংস্কার কার্যক্রম এনে বর্তমান সরকারই পারে অবিলম্বে বাংলাদেশ বিরোধী ও ধর্মীয় উগ্রবাদীদের কবল হতে নিজেদের মুক্ত করে নিজের শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে দেশ ও জাতির স্বার্থে রাজনৈতিক ইসলামওয়ালাদের এবং উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করে জাতির সামনে তাদের মুখোশ খুলে তাদের প্রতিষ্ঠানসমূহ বাজেয়াপ্ত করে জনগণের সঙ্গে একাত্ম হয়ে জনকল্যাণ করতে। সরকারই পারে যোগ্য ব্যক্তিত্ব যোগ্যস্থানে বসিয়ে দেশ ও জাতির সেবা করার সুযোগ সৃষ্টি, কঠোর হস্তে স্বাধীন প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে সার্বিক মিথ্যাচার বন্ধ করে জাতির আস্থা ফিরিয়ে আনতে। নচেৎ চক্রান্তকারীদের  খপ্পরে পড়ে রাজনৈতিক ইসলামধারীদের সাহচর্যে থেকে যত কথা আর কার্যক্রম বর্তমান সরকার নিক না কেন তা বিফলে যাবে এবং আগের অন্যান্য সরকারকে যেমন জাতি (?) চিহ্নিত করেছে তেমনি বিশ্বাসঘাতকতার মানদন্ডে বর্তমান সরকারকে চিহ্নিত করতে পারে কারণ বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি।
এখনো হাতে যথেষ্ট সময় আছে। বর্তমান সরকার কোনদিকে যাবেন এটা সরকারের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এ দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই - ক্ষমতার চেয়ে জনতা বড়, দলের চেয়ে দেশ।

দেশবাসীকে শান্ত ও সত্য চর্যা করা সময়ের দাবী


দেশবাসীকে শান্ত ও সত্য চর্যা করা সময়ের দাবী

যে ব্যক্তি অনুতপ্ত হয়, বিশ্বাস আনে, সৎকার্য করে এবং হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়, আমি নিশ্চয় তাহার জন্য পরম ক্ষমাশীল।
- আল কুরআন ২০ঃ৮২
নিশ্চয় যাহারা অস্বীকার করিয়াছে তাহাদের বিশ্বাস আনার পর, অতঃপর অস্বীকার আরো বাড়িয়া গিয়াছে, তাহাদের অনুশোচনা আদৌ কবুল করা হবে না; বস্তুতঃ তাহারাই পথভ্রষ্ট।
- আল কুরআন ৩ঃ৯০


সংলাপ ॥ আল-কুরআনের এই দুই আয়াতের দিক নির্দেশনা থেকে আমরা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং পরবর্তীকালের সামাজিক অবস্থান ভালো করেই উপলব্ধি করতে পারি। বাঙালি স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলো স্বতঃস্ফূর্তভাবেই বাঙালিত্বকে বরণ করে নিয়ে। গর্ব ছিলো আমরা বাঙালি। কিন্তু ক্ষমতার লোভে বাঙালি আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে তথাকথিত মিথ্যা ধর্মীয় নামাবলী গায়ে জড়িয়ে রাজনীতিকরা আজ বাঙালি জাতিকে আদর্শচ্যূত করার প্রচেষ্টায় রত।
ধর্মান্ধ স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিকে আল-কুরআনের উল্লিখিত দুই আয়াতের আলোকে বলা যায়, ওরা জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে অনুশোচনা করেনি, নিজে বাঙালি হয়ে বাঙালিত্বকে বিশ্বাস করেনি, ব্যক্তি-গোষ্ঠীর স্বার্থ ছাড়া সৎকাজ করে না তাই দেশপ্রেম ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়নি বরং ষড়যন্ত্র করে চলেছে এবং জাতির কাছে ইসলাম বিশ্বাসীর ভান করে দেশবাসীকে  বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত, তাই ওরা পথভ্রষ্ট। ওদের থেকে সাবধান থাকতে হবে ধর্মপ্রাণ ধর্মভীরু দেশবাসীকে।
বাংলাদেশ আজ এক আগ্নেয়গিরির ওপর অবস্থান করছে। আদর্শহীনতা সমস্ত সমাজকে গ্রাস করতে  উদ্যত। সংকীর্ণতা, আদর্শহীনতা, অপরিণামদর্শিতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনকে হিংস্র করে তুলেছে। বাংলার মাটি-পানি-বাতাস আজ হিংসার দাবানলে জ্বলা আরম্ভ করেছে। ধর্মান্ধরা বাংলা মায়ের         সন্তানদেরকে জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে মানুষ ভাবে না বরং ধর্মের আনুষ্ঠানিকতার মোড়কে সামপ্রদায়িকতার হিংস্রত্বরূপ অগ্নিময় করে প্রচার চালাচ্ছে যেহেতু তারা কোনো ধর্মেরই মর্মে প্রবেশ করতে পারেনি। তাই সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে আজ নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত অনাচারকে নিয়ে উগ্র ধর্মান্ধতার খোলসে উলঙ্গ নৃত্য করছে রাজনৈতিক ইসলামপন্থীরা আর পুড়ে মরছে গন্ধ বিধুর ধূপের মতো নবী (সাঃ)-এঁর ইসলাম প্রেমিকরা।
সময় এসেছে পারিপার্শ্বিক পরিমন্ডলকে বাঁচাবার জন্য, জীবন ও অস্তিত্বের জন্য, সর্বোপরি বাঙালি জাতির উন্নত আদর্শিক মানবিকতা বিকশিত করার জন্য শিকড়ের সন্ধানে লিপ্ত হবার। একমাত্র মহানুভবতাই রাজনীতিকদের পথ দেখাতে পারে এবং দিকদর্শন হয়ে জাতির কাছে উপস্থাপিত হতে পারে বাঁচার মন্ত্র হিসাবে।
আদর্শহীনতা এবং উগ্র ধর্মান্ধতা বাংলাদেশের সমাজ সংস্কৃতিকে গ্রাস করতে উদ্যত। তাই বাঙালি জাতিকে এক উন্নত মানব সমপ্রদায় হিসাবে গড়ে তোলার আদর্শই দেশ ও জাতিকে বিশ্ব মানব সমপ্রদায়ের কাছে উন্নত মর্যাদার আসনে বসাতে পারে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে বুদ্ধিজীবী সেজে যারা নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছেন তাদের এবং বিশেষ করে রাজনীতিকদের উপলব্ধি করার সময় এসেছে - হিংসা হিংসার জন্ম দেয়, নীচতা ও গোঁড়ামি মানুষকে হত্যাকারী বানায়, ধর্ম নিয়ে মিথ্যাচার জবরদস্তি-রাজনীতি-ব্যবসা এক ধরনের আধিপত্যবাদী চর্চা। বিবেকের চর্চাই আলো-অন্ধকারের তফাৎকে পরিষ্কার করে দেয়। দেশ ও জাতির স্বার্থে আজ সকলের জন্য প্রয়োজন মানবিক ধর্মে সমাসীন হয়ে সঠিক মানুষ হওয়ার চর্চা ও চর্যা করা।

সরকারের মধ্যে দুষ্ট চক্র!

সরকারের মধ্যে দুষ্ট চক্র!

শেখ উল্লাস ॥ স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার ও স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে শাহাদাৎ বরণকারী দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক কর্মী-নেতা-সংস্কৃতিকর্মী-ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-শিক্ষক-সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষের সংখ্যাটিও লাখের কোঠা হয়তো পেরিয়ে গেছে অনেক আগে। অবশ্য এই শাহাদাৎ বরণকারীদেরও মধ্যে একটা বিশেষ সংখ্যা হবে সেইসব ছাত্র-যুবক যাদের বিভ্রান্ত করা হয়েছিলো। সব মিলিয়ে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর বাঙালির ইতিহাস তথা ওই সময়ের বাংলাদেশকে নিয়ে আত্মতৃপ্তি পাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। লাখো লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বরে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের যে বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করার পরিকল্পনা তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি - একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। সমাজের অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি অংশ স্বাধীনতার বদৌলতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায়, সরকারী-বেসরকারী চাকরিতে, ব্যবসা-বাণিজ্য অথবা বিদেশে পাড়ি ঢাউস ঢাউস উন্নত অগ্রগতি সাধন করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কিন্তু অমানবিক অবস্থাতেই দিন কাটাচ্ছে। দিন যতই যাচ্ছে তাদের অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। তাদের এই অমানবিক বা মানবেতর অবস্থার মাপকাঠি অর্থনৈতিক অবস্থাই শুধু নয়, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয় চিন্তাচেতনার ক্ষেত্রেও এই দুর্বিষহ অবস্থা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সংগঠক বলতে স্বাধীনতার আগে পর্যন্ত প্রগতিশীল, সমাজসেবী, দেশ ও জনগণের জন্য নিবেদিতপ্রাণ এক একটি বিশেষ ব্যক্তিত্বকে বুঝাতো। অথচ আজ রাজনীতি, রাজনৈতিক দল ও নেতা-নেত্রী বলতেই আওয়ামী-বিএনপি- শেখ হাসিনা - খালেদা জিয়া ছাড়া  রাজনীতিক ও কর্মীরা যেন অন্য কিছু বুঝে না, বুঝতেও চায় না। বুঝার মতো মেধা শ্রম-সময় খরচ করার প্রয়োজনও তাদের নেই। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই দেখা যাবে, ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এ দেশে চালু হওয়া অদুরদর্শী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ফাঁক ফোকর দিয়ে বিশেষ একটি সুবিধাবাদী ও সুবিধাভোগী চক্র রাষ্ট্রীয় ও সরকারী সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সর্বত্র আসন গেড়ে বসেছে। আর এই সময়ে বিশ্বায়নের প্রভাব, তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার এবং রাজনীতি-সরকার ও প্রশাসনে প্রভাবশালী কর্তাব্যক্তিরা একজোট হয়ে দেশে নগদ কালো টাকার যে অবাধ প্রবাহ তৈরি করে দিয়েছেন তাতে ভেসে যাচ্ছে আবহমান বাঙালির এযাবৎ কালের যাবতীয় মূল্যবোধ ও জীবনবোধ এবং সুস্থ-সুন্দর চিন্তাচেতনার ধারা।
সবকিছুর উপরে স্থান করে নিয়েছে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও নগদ অর্থ-ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়ানোর প্রাণপণ দৌঁড়ঝাপ। আর এই দৌঁড়ঝাপে পদপিষ্ঠ হয়ে সাধারণ মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ হয়ে পড়েছে নিঃস্ব, অসহায়।
বিদেশী সাহায্যের নামে, সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের নামে যেসব নগদ অর্থ আসে তাও নিয়ে যায় বা চলে যায় সেই সুবিধাভোগী চক্রের হাতে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা দিন যতই যাচ্ছে ততই হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমান সরকারের সময়ে এই ক্রয়ক্ষমতার মান ধরে রাখতে পারছে না বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। যে দেশের রাজনীতি, রাষ্ট্র ও সরকারী প্রশাসনযন্ত্র আওয়ামীলীগ-বিএনপি-জামাতের মতো প্রচলিত দলগুলোর মদদপুষ্ট কর্তাব্যক্তিদের ইঙ্গিতে পরিচালিত, সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের স্বার্থ বড় করে দেখা হবে এ কথা বিশ্বাস করার কোনো যুক্তি পাওয়া যায় না। 
এসব দলের নেতারাও জোর গলায় একথা বলতে পারবে না, তারা জনগণের পক্ষে, মুখে মুখে মাঠে-ময়দানে যতই বলুক। বঙ্গবন্ধু কন্যা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় সহায় ও আপনজন এই বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তিনি ও তার সরকার জনগণের কল্যাণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রেখে, কৃষিখাতে ভর্তুকি দিয়ে, তা বাংলার ইতিহাসে লেখা থাকবে। কিন্তু সে তো ছিলো সাময়িক। ক্ষমতার বছর তিনেকের মধ্যেই তার কাছের মানুষদের অনেকে, যারা প্রভাবশালীওর্ ছিলেন, তাদের ব্যক্তিস্বার্থ, গোষ্ঠীস্বার্থ ও উচ্চাভিলাষের কাছে আবারও কপাল পুড়তে শুরু করে বাংলার মানুষের। ষড়যন্ত্র তো ছিলোই, যে ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত ফল ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচন। বিএনপি জামাত জোটের সরকারের শাসনে পরবর্তী ৫টি বছর বাংলার জনগণের ওপর যে শাসন-শোষণ চালিয়ে দেয়া হলো, তার সাথে কোন ‘শাসন’ ব্যবস্থার তুলনা করা যায় না। সেই শাসন বাংলার জনগণের জীবনে দুঃসহ পরিস্থিতি সৃষ্টি আজও বিদ্যমান।
বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দিকে তাকালে আজ নির্মম পরিহাসের অনেক চিত্রই শুধু চোখে পড়ে। এই সংখ্যাগরিষ্ঠদের পক্ষে সত্য কথা বলার মাধ্যম-উপায়ও আজ তেমন কিছু নেই। বিচারের বাণী যেখানে নিরবে নিভৃতে কাঁদে, সেখানে কথা বলার দায়িত্ব যার সেই গণমাধ্যম যার আজ প্রায় সবটুকুই অজানা উৎস থেকে আসা অর্থ-সম্পদের মালিক ও তাদের তল্পিবাহদেও দখলে এক একটা সিন্ডিকেট।
আওয়ামী লীগের মতো রাজনৈতিক দলটির আমলেও এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দুর্ভাগ্য হলো আন্দোলন-সংগ্রামের ফল তারা ভোগ করতে পারেনি। এর সবচেয়ে বড় কারণ হিসাবে বলা যায়, স্বধীনতার পর থেকে জাতীয় জীবনে বিভিন্ন সঙ্কট ও সম্ভাবনার চোরাবালিতে দলটির ভেতর আস্তানা গেড়েছে ভয়াবহ দুষ্ট চক্র; যারা দলের ইতিহাস-ঐতিহ্য, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার নামকে ব্যবহার করে নিজেদের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ চরিতার্থ করছে। এর ফলে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতা এবং এমনকি প্রধান বিরোধী দলে থেকেও দুষ্টচক্র ক্ষমতাসীনদের সাথে হাত মিলিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়েছে।
শেখ হাসিনা ওই দুষ্টচক্রের খপ্পর থেকে বের হতে না পারলে ওদের কাছ থেকে দেশ ও জারি সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ আশা করা যায় না। সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মানুষ আজ চিন্তিত। দুই নেত্রীর কতটুকু সুযোগ ও সময় আছে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দুঃখ, শোক, সুখ, শান্তির খবর নেয়ার? তাদের এবং তাদের আশপাশে যারা সবসময় থাকেন তাদের সবার লক্ষ্য ইউরোপ-আমেরিকা ও কানাডা বা মালয়েশিয়া। অবস্থাদৃষ্টে তো তাই মনে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ও ব্যাক্তি জীবনের দিকে তাকালে দেখা যায় তার দায়বদ্ধতা ছিলো এই দেশ ও এই দেশের জনগণের প্রতি। বিএনপি ও খালেদা জিয়া থেকে তা মানুষ আশাও করে না। কেননা দলটির জন্মই একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে। রাজনীতিতে জিয়া বা খালেদার আগমনের পিছনেও এমন কোনো মহৎ উদ্দেশ্য ছিলো না; কিন্তু আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার রাজনীতিতে আগমন ছিলো একটা আদর্শ ও মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। আজ কেন শেখ হাসিনা ব্যর্থ হবেন? জনগণের প্রত্যাশা কেন অপূরণ থেকে যাবে? বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার অতি কাছের যেসব ব্যক্তি ও  নেতা আখের গুছানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বা দেশ থেকে পালিয়ে বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করছেন দলের বিরুদ্ধে নিঃসন্দেহে তারা দল ও দেশের কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সদস্য হিসাবে বিবেচিত হবে রাজনৈতিক ইতিহাসে, বাংলার মানুষ দীর্ঘ পঞ্চাশটি বছরেরও বেশি সময় ধরে অনেক শ্রম-ঘাম দিয়ে, ভোট দিয়ে দলটিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা এই বিষয়েটি অনুধাবন করতে না পারলে দেশে মুঢ়, মূক ও ভগ্নবুকের মানুষদের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। নিজেকে শুদ্ধ করতে না পারলে অশুদ্ধতার জন্য অন্যকে দায়ী করে লাভ হবে না। মানুষের দুর্ভোগ তাতে শুধু বাড়তেই থাকবে। ভেস্তে যাবে উন্নতির ক্রমবিকাশ এবং বাঙালির সকল অর্জন।

সরকারের মধ্যে দুষ্ট চক্র!

সরকারের মধ্যে দুষ্ট চক্র!

শেখ উল্লাস ॥ স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার ও স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে শাহাদাৎ বরণকারী দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক কর্মী-নেতা-সংস্কৃতিকর্মী-ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-শিক্ষক-সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষের সংখ্যাটিও লাখের কোঠা হয়তো পেরিয়ে গেছে অনেক আগে। অবশ্য এই শাহাদাৎ বরণকারীদেরও মধ্যে একটা বিশেষ সংখ্যা হবে সেইসব ছাত্র-যুবক যাদের বিভ্রান্ত করা হয়েছিলো। সব মিলিয়ে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর বাঙালির ইতিহাস তথা ওই সময়ের বাংলাদেশকে নিয়ে আত্মতৃপ্তি পাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। লাখো লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বরে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের যে বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করার পরিকল্পনা তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি - একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। সমাজের অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি অংশ স্বাধীনতার বদৌলতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায়, সরকারী-বেসরকারী চাকরিতে, ব্যবসা-বাণিজ্য অথবা বিদেশে পাড়ি ঢাউস ঢাউস উন্নত অগ্রগতি সাধন করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কিন্তু অমানবিক অবস্থাতেই দিন কাটাচ্ছে। দিন যতই যাচ্ছে তাদের অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। তাদের এই অমানবিক বা মানবেতর অবস্থার মাপকাঠি অর্থনৈতিক অবস্থাই শুধু নয়, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয় চিন্তাচেতনার ক্ষেত্রেও এই দুর্বিষহ অবস্থা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সংগঠক বলতে স্বাধীনতার আগে পর্যন্ত প্রগতিশীল, সমাজসেবী, দেশ ও জনগণের জন্য নিবেদিতপ্রাণ এক একটি বিশেষ ব্যক্তিত্বকে বুঝাতো। অথচ আজ রাজনীতি, রাজনৈতিক দল ও নেতা-নেত্রী বলতেই আওয়ামী-বিএনপি- শেখ হাসিনা - খালেদা জিয়া ছাড়া  রাজনীতিক ও কর্মীরা যেন অন্য কিছু বুঝে না, বুঝতেও চায় না। বুঝার মতো মেধা শ্রম-সময় খরচ করার প্রয়োজনও তাদের নেই। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই দেখা যাবে, ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এ দেশে চালু হওয়া অদুরদর্শী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ফাঁক ফোকর দিয়ে বিশেষ একটি সুবিধাবাদী ও সুবিধাভোগী চক্র রাষ্ট্রীয় ও সরকারী সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সর্বত্র আসন গেড়ে বসেছে। আর এই সময়ে বিশ্বায়নের প্রভাব, তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার এবং রাজনীতি-সরকার ও প্রশাসনে প্রভাবশালী কর্তাব্যক্তিরা একজোট হয়ে দেশে নগদ কালো টাকার যে অবাধ প্রবাহ তৈরি করে দিয়েছেন তাতে ভেসে যাচ্ছে আবহমান বাঙালির এযাবৎ কালের যাবতীয় মূল্যবোধ ও জীবনবোধ এবং সুস্থ-সুন্দর চিন্তাচেতনার ধারা।
সবকিছুর উপরে স্থান করে নিয়েছে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও নগদ অর্থ-ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়ানোর প্রাণপণ দৌঁড়ঝাপ। আর এই দৌঁড়ঝাপে পদপিষ্ঠ হয়ে সাধারণ মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ হয়ে পড়েছে নিঃস্ব, অসহায়।
বিদেশী সাহায্যের নামে, সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের নামে যেসব নগদ অর্থ আসে তাও নিয়ে যায় বা চলে যায় সেই সুবিধাভোগী চক্রের হাতে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা দিন যতই যাচ্ছে ততই হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমান সরকারের সময়ে এই ক্রয়ক্ষমতার মান ধরে রাখতে পারছে না বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। যে দেশের রাজনীতি, রাষ্ট্র ও সরকারী প্রশাসনযন্ত্র আওয়ামীলীগ-বিএনপি-জামাতের মতো প্রচলিত দলগুলোর মদদপুষ্ট কর্তাব্যক্তিদের ইঙ্গিতে পরিচালিত, সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের স্বার্থ বড় করে দেখা হবে এ কথা বিশ্বাস করার কোনো যুক্তি পাওয়া যায় না। 
এসব দলের নেতারাও জোর গলায় একথা বলতে পারবে না, তারা জনগণের পক্ষে, মুখে মুখে মাঠে-ময়দানে যতই বলুক। বঙ্গবন্ধু কন্যা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় সহায় ও আপনজন এই বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তিনি ও তার সরকার জনগণের কল্যাণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রেখে, কৃষিখাতে ভর্তুকি দিয়ে, তা বাংলার ইতিহাসে লেখা থাকবে। কিন্তু সে তো ছিলো সাময়িক। ক্ষমতার বছর তিনেকের মধ্যেই তার কাছের মানুষদের অনেকে, যারা প্রভাবশালীওর্ ছিলেন, তাদের ব্যক্তিস্বার্থ, গোষ্ঠীস্বার্থ ও উচ্চাভিলাষের কাছে আবারও কপাল পুড়তে শুরু করে বাংলার মানুষের। ষড়যন্ত্র তো ছিলোই, যে ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত ফল ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচন। বিএনপি জামাত জোটের সরকারের শাসনে পরবর্তী ৫টি বছর বাংলার জনগণের ওপর যে শাসন-শোষণ চালিয়ে দেয়া হলো, তার সাথে কোন ‘শাসন’ ব্যবস্থার তুলনা করা যায় না। সেই শাসন বাংলার জনগণের জীবনে দুঃসহ পরিস্থিতি সৃষ্টি আজও বিদ্যমান।
বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দিকে তাকালে আজ নির্মম পরিহাসের অনেক চিত্রই শুধু চোখে পড়ে। এই সংখ্যাগরিষ্ঠদের পক্ষে সত্য কথা বলার মাধ্যম-উপায়ও আজ তেমন কিছু নেই। বিচারের বাণী যেখানে নিরবে নিভৃতে কাঁদে, সেখানে কথা বলার দায়িত্ব যার সেই গণমাধ্যম যার আজ প্রায় সবটুকুই অজানা উৎস থেকে আসা অর্থ-সম্পদের মালিক ও তাদের তল্পিবাহদেও দখলে এক একটা সিন্ডিকেট।
আওয়ামী লীগের মতো রাজনৈতিক দলটির আমলেও এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দুর্ভাগ্য হলো আন্দোলন-সংগ্রামের ফল তারা ভোগ করতে পারেনি। এর সবচেয়ে বড় কারণ হিসাবে বলা যায়, স্বধীনতার পর থেকে জাতীয় জীবনে বিভিন্ন সঙ্কট ও সম্ভাবনার চোরাবালিতে দলটির ভেতর আস্তানা গেড়েছে ভয়াবহ দুষ্ট চক্র; যারা দলের ইতিহাস-ঐতিহ্য, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার নামকে ব্যবহার করে নিজেদের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ চরিতার্থ করছে। এর ফলে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতা এবং এমনকি প্রধান বিরোধী দলে থেকেও দুষ্টচক্র ক্ষমতাসীনদের সাথে হাত মিলিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়েছে।
শেখ হাসিনা ওই দুষ্টচক্রের খপ্পর থেকে বের হতে না পারলে ওদের কাছ থেকে দেশ ও জারি সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ আশা করা যায় না। সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মানুষ আজ চিন্তিত। দুই নেত্রীর কতটুকু সুযোগ ও সময় আছে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দুঃখ, শোক, সুখ, শান্তির খবর নেয়ার? তাদের এবং তাদের আশপাশে যারা সবসময় থাকেন তাদের সবার লক্ষ্য ইউরোপ-আমেরিকা ও কানাডা বা মালয়েশিয়া। অবস্থাদৃষ্টে তো তাই মনে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ও ব্যাক্তি জীবনের দিকে তাকালে দেখা যায় তার দায়বদ্ধতা ছিলো এই দেশ ও এই দেশের জনগণের প্রতি। বিএনপি ও খালেদা জিয়া থেকে তা মানুষ আশাও করে না। কেননা দলটির জন্মই একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে। রাজনীতিতে জিয়া বা খালেদার আগমনের পিছনেও এমন কোনো মহৎ উদ্দেশ্য ছিলো না; কিন্তু আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার রাজনীতিতে আগমন ছিলো একটা আদর্শ ও মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। আজ কেন শেখ হাসিনা ব্যর্থ হবেন? জনগণের প্রত্যাশা কেন অপূরণ থেকে যাবে? বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার অতি কাছের যেসব ব্যক্তি ও  নেতা আখের গুছানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বা দেশ থেকে পালিয়ে বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করছেন দলের বিরুদ্ধে নিঃসন্দেহে তারা দল ও দেশের কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সদস্য হিসাবে বিবেচিত হবে রাজনৈতিক ইতিহাসে, বাংলার মানুষ দীর্ঘ পঞ্চাশটি বছরেরও বেশি সময় ধরে অনেক শ্রম-ঘাম দিয়ে, ভোট দিয়ে দলটিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা এই বিষয়েটি অনুধাবন করতে না পারলে দেশে মুঢ়, মূক ও ভগ্নবুকের মানুষদের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। নিজেকে শুদ্ধ করতে না পারলে অশুদ্ধতার জন্য অন্যকে দায়ী করে লাভ হবে না। মানুষের দুর্ভোগ তাতে শুধু বাড়তেই থাকবে। ভেস্তে যাবে উন্নতির ক্রমবিকাশ এবং বাঙালির সকল অর্জন।

জাতির প্রত্যাশা হতে জিজ্ঞাসা


জাতির প্রত্যাশা হতে জিজ্ঞাসা

সংলাপ ॥ বাংলাদেশ অতি গরীব দেশ। এখানে রাজতন্ত্রের বিধান নেই। গণতন্ত্রই এ দেশের প্রধান এবং মূল তন্ত্র। এ তন্ত্রকে একমাত্র তান্ত্রিক ব্যক্তিরাই পোষণ, শোধন ও পরিচালন করে থাকেন। তান্ত্রিক জানা বিদগ্ধ জনেরাই এর যোগ্য ধারক-বাহক। তাঁরা দেশপ্রেমিক ও দিকপাল। একমাত্র রাজনীতিই তাঁদের সার্বক্ষণিক চেতনার বিষয়। জীবন এবং জীবনের সকল সাধ, আহ্‌লাদ, সুখ-শান্তি বিসর্জন করে দেশ ও জাতির কল্যাণে সদা ব্রত তাঁরা। এতেই তাঁরা সুখী হন, ধন্য এবং সার্থক মনে করেন নিজেকে। তাঁরা দেশ, মাটি ও মানুষের সফল অগ্রগতিতে আনন্দ পান। নিজের পরিবার, পরিজন, গোষ্ঠী, মহল ও দলকে দেশ ও জাতির সার্বিক সেবাকর্মে নিয়োজিত রাখতে ভালবাসেন। নিজেকে ভাবেন জাতির গোলাম। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা তাঁদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। অন্যায়-অত্যাচার, অবিচার, ব্যভিচারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণাও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ তাঁদের। দেশ রক্ষায় দেশ নীতি অনুসরণ ও অনুকরণই তাঁদের মূল শ্লোগান। তাঁরা দেশপ্রেমিক। জোর করে ক্ষমতায় যাওয়া ও টিকে থাকা তাঁদের ধর্ম নয়। ব্যবসা-বাণিজ্য, উন্নয়ন, উৎপাদনে আইনগত পবিত্র ধারাবাহিকতা বজায় রাখা তাঁদের ব্যক্তিগত ও সাংবিধানিক অঙ্গীকার।  জীবনের সমুদয় জীবন-কাল জনস্বার্থে ব্যয় করা পরম ধর্ম তাঁদের। তাঁদের স্রষ্টায়-সৃষ্টিতে আছে পরিপূর্ণ আস্থা। দেশ ও জাতি শাসনে তাঁরাই যোগ্য ব্যক্তি, অন্যেরা নয়।
সাধারণ মানুষের এই প্রত্যাশা হতে জিজ্ঞাসা দেশ-জাতির দায়িত্ব ও শাসনভার এমন গুণধর যোগ্যতম ব্যক্তির হাতে কোনো সময়ে, কোনো কালে ছিলো কিনা? বর্তমানে আছে কিনা? ভবিষ্যতে থাকবে কিনা? থাকলে কারা এবং কতজন?
জিজ্ঞাসার উত্তর সাধারণ?মানুষের কাছে ‘না’ হয়েই বিদ্যমান। তাই বাংলাদেশের বর্তমান এবং নিকট অতীত হুমকির সম্মুখীন। কথিত গণতন্ত্রে, ঘোমটা পরা রাজতন্ত্র কৌশলগতভাবে সংগোপনে জোরদার। ক্ষমতাসীনদের ঘরের লোকই ক্ষমতার স্টিয়ারিং চালনা করে আসছে স্বাধীনতার পর হতে পর্যায়ক্রমে। যার পরিবর্তন ঘটাবার  শিক্ষা ও ব্যাখ্যা সর্বাধিক সাধারণ জনগোষ্ঠীর জানা নেই। এটাও ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক চতুরতা ও অপকৌশল হিসাবে বিবেচিত। কৃত্রিম আভিজাত্যিক চাল-চলনে রাজনীতিকরা বর্তমানে সাধারণ গণমানুষের আতঙ্ক। বাংলাদেশে এ যাবৎ কোনো দলই ক্ষমতায় যাবার আগে কথা দিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে ন্যূনতম কথা রক্ষা করতে পারেনি। রক্ষা করেছে শুধু আত্মীয় পোষা এবং ক্ষমতা প্রাপ্তি ও অর্থ সম্পদ, বাড়ি-গাড়ি করার মতো গোপন অঙ্গীকার। দেশবাসীর অসহনীয় বিদ্বেষ ও প্রতিকার-প্রতিশোধ নেবার স্পৃহা চিন্তায় জাগলেও এবং রক্তে প্রবাহিত হলেও পারছে না। ক্রমান্বয়ে স্বার্থান্বেষী মহলের কাছে আবদ্ধ ক্ষমতা, দেশ ও সাধারণ মানুষকে এমনিভাবেই পিষে মারছে।
এ ধরনের রাজনীতিকরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বারবার ভোগ করার লক্ষ্যে অরাজনৈতিকদের দলে টেনে আনা শুরু করেছে বহু আগে থেকে। সরকারী আমলা নামে চিহ্নিত অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সংক্ষেপে অবঃ গং)-দের দলে টেনে আনা হয়েছে এবং হচ্ছে। এই অবঃরা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের খুঁটিনাটি সমস্ত তথ্য সম্পর্কে জ্ঞাত। কারণে-অকারণে এসব তথ্যের প্রয়োগ ঘটিয়ে চাকুরি জীবনে প্রচুর অর্থ কামিয়েছে তারা। দলে ভিড়ানোর পর কামানো অর্থে নির্বাচনী চাহিদা মিটাচ্ছে এবং ক্ষমতায় যাবার পর তাদের অর্জিত দাপ্তরিক তথ্যের আগাম স্বাধীন ব্যবহার করা সহজ হচ্ছে। অবঃদের দলে ভিড়ানোর ধারাবাহিকতা আজও অব্যাহত এবং আগের চেয়ে জোরদার ও জমজমাট। স্বাধীনতার সূচনালগ্নে অবঃ গংদের অবশ্য রাজনীতিতে অনাগ্রহই ছিলো। অবসরে নির্ঝঞ্জাট শান্তিপ্রিয় জীবনই ছিলো তাদের কাম্য। কিন্তু রাজীনীতিকরা দলভারীর মানসে তাদেরকে অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত করেছে। ধীরে ধীরে তারাও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে প্রচলিত অবসর জীবনকে পরিহার করে বেছে নিয়েছে রাজনীতির সুগম পথকে। পাশাপাশি আরো কয়েক স্তর থেকে নতুন করে যারা রাজনীতিতে আসছে বা রাজনীতিকরা টেনে আনছে তাদের মধ্যে ব্যবসায়ী মহল আজ সোচ্চার - আমরাই দেশের মূল চালিকা শক্তি।
তারা বলছে রাজনীতিতে তাদের অংশগ্রহণ অত্যাবশ্যক। বলা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের এই অত্যাবশ্যক দাবির কথা একেবারেই ফেলে দেয়া যাচ্ছে না। কারণ ব্যবসায়ীদের হাতে রাজনীতিকরা চাঁদা গ্রহণের দায়ে আগেই আটকা পড়ে আছে। এ দাবিকে উপেক্ষা করবে কি করে? যদিও অনেক ব্যবসায়ীই কোটি কোটি টাকার ঋণ খেলাপী। চাঁদার দায়ে রাজনীতিকরা ক্ষমতায় গিয়ে ব্যবসায়ীদের ইচ্ছা মাফিক ঋণ দিয়েছে। ঋণ পরিশোধ সুদূর পরাহত। এতে অবশ্য রাষ্ট্র এবং জনগণের ব্যাপক ক্ষতি হলেও তাদের কিছু যায় আসে না। কারণ খাজনার দুয়ার তো বন্ধ নয়। ভোগ বিলাস ঠিকই চলছে।
উভয় পক্ষের এমনতর সমন্বয়, রাজনীতি ও অর্থ-সম্পদ ভাগাভাগির মধ্য দিয়েই বয়ে চলেছে। তাই দেশের বর্তমান অবস্থা দেশ ও জাতির ভবিষ্যত একেবারে অন্ধকার করে দেয়ার পূর্বাবস্থা বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। চাঁদা দেয়া-নেয়ার সম্পর্কযুক্ত মেলামেশায় ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিকদের মধ্যে যেমন নতুন চুক্তির উন্মেষ ঘটেছে তেমনিভাবে রাজনীতিকদের সন্তানেরা, দেহরক্ষী, তল্পীবাহক, আজ্ঞা বাহকরাও বসে নেই। তারাও নেতৃত্ব এবং ক্ষমতার অংশীদার হতে চায়। নেতার নেতৃত্ব ও ক্ষমতার পাহারা দিয়ে যাচ্ছে ইতোমধ্যেই? পাহারার মধ্য দিয়ে তারা নেতৃত্বের চতুরতা এবং মিথ্যাচারের কলা-কৌশল শিখেই ফেলেছে। নেতাও বুদ্ধিবৃত্তিক দূর্নীতির কারণে?তাদের কাছে?দায়গ্রস্ত। কাজেই এ ক্ষেত্রেও নতুন শক্তির পরিচয় ঘটেছে। সুযোগ তাদের দিতেই হচ্ছে।
তাই বাঙালি জাতির সাথে একজন আদর্শ নেতার পরিচয় ঘটবে কিনা বলা মুশকিল। অবসরপ্রাপ্ত সরকারী অরাজনৈতিক আমলা, ঋণ খেলাপী, মজুদদার, কালোবাজারী ব্যবসায়ী এবং আজ্ঞা ও তল্পিবাহক নেতার পাহারাদাররা আজ রাজনৈতিক মাঠের সক্রিয় সদস্য।
বোমাবাজী, সন্ত্রাস, দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া আর সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে আগামী অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। প্রতিটি দলেই যোগদানের পাইপলাইনে রয়েছে অবঃদের দল আর উচ্চাভিলাষী ব্যবসায়ী নেতারা। দেশের স্বার্থে নয়, মানুষের কল্যাণে নয়, স্রেফ নিজেদের আখের গোছানের মতলবেই এসব মৌসুমী রাজনীতিকদের আনাগোনা চলছে রাজনীতির মাঠে।
জাতির আগামী ভবিষ্যতকে তারাই হয়তো নেতৃত্ব দেবে, যারা অতীত এবং বর্তমানেও ক্ষমতার দাপট কিংবা অপব্যবহার করে অগাধ সম্পদের মালিক হয়েছে। জাতীয় জীবনে সৃষ্টি করেছে অসংখ্য সমস্যাসহ সঠিক নেতৃত্বের শূন্যতা। যে কারণে দেশের সিংহভাগ দরিদ্র মানুষ আরো দারিদ্র্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আর এক শ্রেণী হচ্ছে ধনী থেকে ধনীতর। সঙ্গতিহীন বিরাট ব্যবধান যখন আরো ব্যবধানে পরিণত হবে তখন এই স্বাধীন দেশ ও জাতির নিরাপত্তা বিধান কতটুকু নিরাপদ থাকবে এখনই তা ভেবে দেখার বিষয়। ভেজাল রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, আমলা ও নেতারক্ষীদের এক নাটকে সমন্বিত মহড়া দেখে কোনো লাভ নেই। ওদের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হলে ওদের বাইরে সবাইকে ভবিষ্যত    চিন্তায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দায়িত্ব নিতে হবে পেশাজীবীদের। তাই দেশের স্বনামধন্য খ্যাতিমান আদর্শ পেশাজীবীরা সর্বাগ্রে এগিয়ে আসুক দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এটাই দেশ ও জাতির কাম্য।