দেশবাসীকে
শান্ত ও সত্য চর্যা করা সময়ের দাবী
যে ব্যক্তি
অনুতপ্ত হয়, বিশ্বাস আনে, সৎকার্য করে এবং হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়, আমি নিশ্চয় তাহার জন্য
পরম ক্ষমাশীল।
- আল কুরআন
২০ঃ৮২
নিশ্চয়
যাহারা অস্বীকার করিয়াছে তাহাদের বিশ্বাস আনার পর, অতঃপর অস্বীকার আরো বাড়িয়া গিয়াছে,
তাহাদের অনুশোচনা আদৌ কবুল করা হবে না; বস্তুতঃ তাহারাই পথভ্রষ্ট।
- আল কুরআন
৩ঃ৯০
সংলাপ ॥ আল-কুরআনের এই দুই আয়াতের দিক নির্দেশনা থেকে আমরা
আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং পরবর্তীকালের সামাজিক অবস্থান ভালো করেই উপলব্ধি করতে পারি।
বাঙালি স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলো স্বতঃস্ফূর্তভাবেই বাঙালিত্বকে বরণ করে নিয়ে।
গর্ব ছিলো আমরা বাঙালি। কিন্তু ক্ষমতার লোভে বাঙালি আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে তথাকথিত
মিথ্যা ধর্মীয় নামাবলী গায়ে জড়িয়ে রাজনীতিকরা আজ বাঙালি জাতিকে আদর্শচ্যূত করার প্রচেষ্টায়
রত।
ধর্মান্ধ স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিকে আল-কুরআনের উল্লিখিত
দুই আয়াতের আলোকে বলা যায়, ওরা জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে অনুশোচনা করেনি, নিজে বাঙালি
হয়ে বাঙালিত্বকে বিশ্বাস করেনি, ব্যক্তি-গোষ্ঠীর স্বার্থ ছাড়া সৎকাজ করে না তাই দেশপ্রেম
ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়নি বরং ষড়যন্ত্র করে চলেছে এবং জাতির
কাছে ইসলাম বিশ্বাসীর ভান করে দেশবাসীকে বিভ্রান্তির
মধ্যে ফেলে দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত, তাই ওরা পথভ্রষ্ট। ওদের থেকে সাবধান থাকতে হবে ধর্মপ্রাণ
ধর্মভীরু দেশবাসীকে।
বাংলাদেশ আজ এক আগ্নেয়গিরির ওপর অবস্থান করছে। আদর্শহীনতা
সমস্ত সমাজকে গ্রাস করতে উদ্যত। সংকীর্ণতা,
আদর্শহীনতা, অপরিণামদর্শিতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনকে হিংস্র করে তুলেছে। বাংলার
মাটি-পানি-বাতাস আজ হিংসার দাবানলে জ্বলা আরম্ভ করেছে। ধর্মান্ধরা বাংলা মায়ের সন্তানদেরকে জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে মানুষ
ভাবে না বরং ধর্মের আনুষ্ঠানিকতার মোড়কে সামপ্রদায়িকতার হিংস্রত্বরূপ অগ্নিময় করে প্রচার
চালাচ্ছে যেহেতু তারা কোনো ধর্মেরই মর্মে প্রবেশ করতে পারেনি। তাই সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে
আজ নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত অনাচারকে নিয়ে উগ্র ধর্মান্ধতার খোলসে উলঙ্গ নৃত্য করছে রাজনৈতিক
ইসলামপন্থীরা আর পুড়ে মরছে গন্ধ বিধুর ধূপের মতো নবী (সাঃ)-এঁর ইসলাম প্রেমিকরা।
সময় এসেছে পারিপার্শ্বিক পরিমন্ডলকে বাঁচাবার জন্য, জীবন
ও অস্তিত্বের জন্য, সর্বোপরি বাঙালি জাতির উন্নত আদর্শিক মানবিকতা বিকশিত করার জন্য
শিকড়ের সন্ধানে লিপ্ত হবার। একমাত্র মহানুভবতাই রাজনীতিকদের পথ দেখাতে পারে এবং দিকদর্শন
হয়ে জাতির কাছে উপস্থাপিত হতে পারে বাঁচার মন্ত্র হিসাবে।
আদর্শহীনতা এবং উগ্র ধর্মান্ধতা বাংলাদেশের সমাজ সংস্কৃতিকে
গ্রাস করতে উদ্যত। তাই বাঙালি জাতিকে এক উন্নত মানব সমপ্রদায় হিসাবে গড়ে তোলার আদর্শই
দেশ ও জাতিকে বিশ্ব মানব সমপ্রদায়ের কাছে উন্নত মর্যাদার আসনে বসাতে পারে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে বুদ্ধিজীবী সেজে যারা নিজেদেরকে নিয়োজিত
রেখেছেন তাদের এবং বিশেষ করে রাজনীতিকদের উপলব্ধি করার সময় এসেছে - হিংসা হিংসার জন্ম
দেয়, নীচতা ও গোঁড়ামি মানুষকে হত্যাকারী বানায়, ধর্ম নিয়ে মিথ্যাচার জবরদস্তি-রাজনীতি-ব্যবসা
এক ধরনের আধিপত্যবাদী চর্চা। বিবেকের চর্চাই আলো-অন্ধকারের তফাৎকে পরিষ্কার করে দেয়।
দেশ ও জাতির স্বার্থে আজ সকলের জন্য প্রয়োজন মানবিক ধর্মে সমাসীন হয়ে সঠিক মানুষ হওয়ার
চর্চা ও চর্যা করা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন