বুধবার, ৫ জুন, ২০১৩

শান্তির লক্ষ্যে বিরোধিতার বুদ্ধিবৃত্তিকরণ চাই


শান্তির লক্ষ্যে বিরোধিতার  বুদ্ধিবৃত্তিকরণ চাই

 
আরেফিন হক ॥ রাজনৈতিক পরিস্থিতি আপাতত শান্ত মনে হলেও সামগ্রিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। মহাজোটের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোও পূরণ হয়নি। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার অনেকটাই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে সরকারকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, গুম, হত্যা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়াবাড়িকে অভিযুক্ত করে নানা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে।

অন্য দিকে অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে, বিনিয়োগ পরিস্থিতিও ভালো নয়। উন্নয়নের চাকা ঘুরছে না। গ্যাস-বিদ্যুৎ তথা জ্বালানির অভাবে বিকাশমান শিল্পগুলো আক্রান্ত। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণহীন, সেবা খাত দুর্নীতিগ্রস্ত। এসব সমস্যা সরকার অকপটে স্বীকার করতেও চায় না। সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলো নিয়ে ভাববার যেন কেউ নেই।

আস্থাহীনতার অভাবে ঘনীভূত হচ্ছে রাজনৈতিক সঙ্কট। আকাশে জমছে কালো মেঘ। এই মেঘ কাটানোর সহজ পথও খোলা নেই। তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বিলুপ্ত করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন বিরোধীদল মেনে নেবে না। একতরফা নির্বাচনের পথে হাঁটলে প্রতিরোধ অবশ্যম্ভাবী। বিরোধী দলগুলো জোটগতভাবে সামনের দিনগুলোতে আরো শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলবে; আগের মতোই তারা লাভ করবে জনসমর্থন। ফলে যে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির জন্ম দেবে, সেটা হবে জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। একই সাথে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিপর্যয়ে পড়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে না। সরকার বা বিরোধী দলের- হার্ডলাইন যে গণতন্ত্রের জন্য কতটা বিপজ্জনক, তা নিকট ইতিহাসের দিকে তাকালেই বোঝা যায়।

রাজনীতি হচ্ছে সংঘাতের বুদ্ধিবৃত্তিকরণ। সংঘাত এড়িয়ে বা ছাড়িয়ে আরো উপরের স্তরে গিয়ে সংঘাতের কার্যকারণ নির্মূল করার প্রক্রিয়াই রাজনীতি। সমাজকে আরণ্যকতা থেকে উদ্ধারের জন্যেই রাজনীতি। সমাজ জীবনে বিবাদ-কলহকে আলোচনা-পর্যালোচনা বিবেচনার অধীন করে সমাধান বের করবার জন্যেই রাজনীতি। রাজনীতিতে আলোচনার কোন বিকল্প নেই। অথচ আমাদের দেশে রাজনীতিতে আলোচনা- পর্যালোচনার জন্য কোন ধৈর্য ও প্রজ্ঞার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমানে কেবল প্রলাপ আর বিলাপ চলছে। সংলাপ চলছে না, আলাপ চলছে না।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে, আলোচনার মাধ্যমে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এজন্য প্রথমে সরকারকে দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা উপলব্ধি করতে হবে। জাতীয় সমস্যাগুলোর সমাধানকে অগ্রাধিকার দিয়ে, বিরোধী দলকে আস্থায় নিয়ে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য পথ প্রশস্ত করতে পারলেই সরকারের দক্ষতা প্রমাণিত হবে এবং সরকারের পক্ষে জনমত তৈরি হবে। দেশের ঘণীভূত রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধান করতে হলে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রেক্ষিত গড়ে তোলাই হবে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা প্রদর্শনের পরিচায়ক। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন