বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৫

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম কিন্তু মিথ্যা বলা-মিথ্যাচারের জন্য শাস্তির বিধান নেই!

রাষ্ট্রধর্মইসলাম কিন্তু
মিথ্যা বলা-মিথ্যাচারের জন্যশাস্তির বিধান নেই!

সংলাপ ॥ আমাদের দেশে মিথ্যা বলা বা মিথ্যাচারের জন্য কোনো শাস্তিমূলক আইন নেই তবে মিথ্যা স্বাক্ষী দেয়ার জন্য আদালত ইচ্ছা করলে শাস্তি দিতে পারে বলে জানা যায়। অন্য কোনো দেশে মিথ্যা বলা বা মিথ্যাচারের জন্য কোনো শাস্তির বিধান আছে কি না নির্দিষ্ট করে, তা বিশেষজ্ঞরা বলতে পারেন।
বর্তমান বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে মিথ্যা বলা বা মিথ্যাচারের জন্য শাস্তির বিধান থাকা যে জরুরি হয়ে পড়েছে তা চিন্তাশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করলে বুঝা যায়। রাজনীতিকরা নির্বিবাদে দেশবাসীর সামনে মিথ্যা বলে যাচ্ছেন। কোনো সময় যখন প্রশ্নের সম্মুখীন হন তখন তারা বলছেন - এটা রাজনৈতিক বক্তব্য বা ভাষা। অর্থাৎ রাজনীতিতে তারা মিথ্যা জায়েজ করে ফেলছেন। এই জায়েজ করার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে যারা ধর্মের নামে রাজনীতি করছেন এবং ধর্মবেত্তারা যারা ধর্ম ব্যবসা করে খাচ্ছেন তারাও পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।
পরিতাপের বিষয়, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সর্বস্তরে যারা বিভিন্ন অঙ্গনে ব্যক্তিস্বার্থে বা গোষ্ঠীস্বার্থে মিথ্যা বলছেন বা মিথ্যাচার চালাচ্ছেন তারা কোনো না কোনো ধর্মাবলম্বী। আমাদের দেশে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা হয়েছে। ইসলামের নামে বহু রাজনৈতিক দলও গজিয়ে উঠেছে, যেমন উঠেছে ব্যাংক ও ইনসিওরেন্স কোম্পানীগুলো। কিন্তু প্রশ্ন জাগে কোথাও কি সত্য আছে?
কুরআনে বলা হচ্ছেঃ
*  যারা সত্যকে মিথ্যা বলেছিলো তাদের কি পরিণাম  হয়েছিলো (৬:১১)।
* আল্লাহ্‌ মিথ্যাকে মুছে ফেলেন এবং সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন (৪২:২৪)।
* তারা সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য অসার যুক্তিতর্কে মত্ত ছিলো। তাই আমি ওদের ওপর শাস্তির আঘাত হানলাম (৪০:৫)।
* আমি মিথ্যাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিই আর তৎক্ষণাৎ মিথ্যা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় (২১:১৮)।
* সত্য এসেছে আর মিথ্যা অন্তর্ধান করেছে। মিথ্যাকে অন্তর্ধান করতেই হবে (১৭:৮১)।
এ রকম আরো বহু সতর্কীকরণ আয়াত আছে যা মুসলমানদের জীবন চলার পথে দিক নির্দেশনামূলক। কিন্তু আমরা মুসলমান হয়ে কি এগুলো মানছি? যদি না মানি তাহলে আমাদের মধ্যে মুসলমানিত্ব কতটুকু? আমাদের মুখে ধর্মের কথা ইসলামের কথা কি মানায়? নাকি শুধু মধ্যপ্রাচ্যের পোষাক পরলে আমার মুসলমানিত্ব থাকবে? আমাদের দেশের বেশিরভাগ রাজনীতিকরাই বলেন যে, তারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করেন। অন্ততঃ তাদের নামের বাহার দেখে তাই মনে হয়। যদি ‘বিশ্বাস’ করেন কথাটা শুধু মুখের কথা হয় তাহলে বলার কিছু নেই কিন্তু যদি ধারক বাহক হয়ে থাকেন তাহলে তারা নিশ্চয়ই জানেন সত্য-মিথ্যার তফাৎ ও পরিণাম।
দেশবাসী, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, বিশেষ করে আইনজ্ঞদের কাছে জিজ্ঞাসা সব কিছুই জেনেও যারা মিথ্যা বলছেন এবং মিথ্যাচার চালাচ্ছেন দেশের আপামর জনগণের কাছে, পরিবার ও সমাজের মধ্যে সর্বোপরি নিজের সঙ্গে নিজে যারা মিথ্যাচার করছেন তাদেরকে সঠিক পথে আনার জন্য মিথ্যা বলা এবং মিথ্যাচারের জন্য শাস্তির বিধান করে কোনো আইন প্রণয়ন করা যায় কিনা তা ভেবে দেখার সময় কি আসেনি এখনো বাংলাদেশে! মিথ্যা বলা ও মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে অন্তত দেশ ও জাতি কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে।

বুধবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৫

সত্য বলতে মানা....

সত্য বলতে মানা....

নজরুল ইশতিয়াক ॥ আওয়ামীলীগ দলীয় কর্মী সমর্থকদের কয়েকটি মন্তব্য বেশ জোরে সোরে শোনা যায়। আন্দোলন সংগ্রামে সফল হলেও প্রতিবারই দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের ইমেজ সংকট সৃষ্টি হয়। অতি কথন, অহংকার, দাম্ভিকতা মানুষকে তুচ্ছ করা, বোকা বানানো, যা ইচ্ছা তাই ব্যবহার করা, মিথ্যাচার, গায়ের জোরে কথা বলা, অভদ্র আচরণের হাজারো অভিযোগ দলীয় সমর্থক কর্মীদের। টিভি টকশো বক্তব্য বিবৃতিতে স্ববিরোধী, অতি অপকৌশলী, অতি অদ্ভুত, অতি কাল্পনিক অতিশয় অবার্চীন মন্তব্য করে দল ও সরকারের ক্ষতি করে এবং দেশের মানুষকে অসহায় অবস্থায় নিয়ে যায়। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কথা বলা, এক এক মন্ত্রীর এক এক কথা, যার যা বলার কথা নয় তা বলার অভিযোগে অভিযুক্ত ঐতিহ্যবাহী দলটি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আওয়াজ, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অস্বাস্থ্যকর বাকোয়াজ, যোগাযোগ মন্ত্রীর হাওয়াই বার্তা, অর্থমন্ত্রীর অনার্থালাপ, দলীয় কোন কোন নেতার কান্ডজ্ঞানহীন বিকৃত বাক্যালাপ বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।
কর্মীদের অভিযোগ ক্ষমতায় আসার পর আমলা, ব্যবসায়ীসহ মোসাহেব আনকোরা এমন সব লোকজন ক্ষমতার চতুর্দিকে ঘুর ঘুর করতে থাকেন এবং প্রিয়ও হয়ে উঠেন যাদেরকে দলের কোন কর্মকান্ডে দেখা যায় না, সব জায়গায় এদের জয় জয়কার। এদের প্রাধান্য বাড়ে আর দলীয় কর্মীদের কমে। এমপি মন্ত্রীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী নেতা কর্মীদের সংঘাত, অভ্যন্তরীণ কোন্দল বাড়ে। আওয়ামী লীগের শত্রু  যে আওয়ামী লীগরা নিজেই এটিই সত্যে পরিণত হয়ে আসছে স্বাধীনতার পর থেকে।
দলীয় সমর্থক কর্মীদের এসব অভিযোগ যে অমূলক নয় তা সচেতন ব্যক্তি মাত্রই জানেন। এতে করে সহজেই প্রমাণ হয় দলের অভ্যন্তরে ও সরকার পরিচালনায় ত্রুটি রয়েছে। পরিস্কারভাবে বললে নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে জবাবদিহীতা, দায়বদ্ধতা ও দেশপ্রেমের অভাব রয়েছে। নেতৃত্ব যাচাই বাছাইয়ে ভুল রয়েছে। দলের বাইরে চিন্তাবিদদের সরল মন্তব্য হচ্ছে আওয়ামী লীগ আমাদের সর্মথন প্রত্যাশা করে পরামর্শ নয়। কোন বিকল্প না থাকায় পাহাড় সমান দোষের পরও আওয়ামী লীগকেই সর্মথন করি দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে।
প্রশ্ন হচ্ছে এসব অভিযোগ কি মূল নেতৃত্ব জানেন? জানলে দ্রুত সমাধান না করার কি কোন কারণ থাকতে পারে? না কি একদল মাকড়সার জালে আটকা পড়ছে দলটি?
গাছের উঁচু ডালে বসে চাটুকারিতার মিথস্ক্রিয়ায় কেবলই বন্দনা গীত গাইলেই চলবে আর নিচে নামা লাগবে না, কেউ ধরতেও পারবে না এমনটি ভাবলে দলের দ্বারা দেশ পরিচালনা হবে কিভাবে? সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন শান্তি স্থাপন কোনটাই হয় না।
অনুসন্ধানে ষ্পষ্টতই ধরা পড়ছে কর্মীদের এসব অভিযোগ অমূলক নয়। দেশ পরিচালনায় দলটির কাছে মানুষের সত্য প্রত্যাশার বিপরীতে কোথাও কোথাও আঘাত প্রাপ্তি হতাশজনক। সবচেয়ে জনসম্মুখে বড় হয়ে দেখা যাচ্ছে নেতাদের মিথ্যাচারিতা, যার ফলে দলীয় বাড়ছে ব্যর্থতা এবং কেটে যাচ্ছে গণমানুষের সাথে সংযোগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দলে নেতৃত্বের  মান উদ্বেগজনক। কর্মী সর্মথক সাধারণ জনতার কাছে দারুণ হাস্য রসাত্মক হয়ে উঠছেন অধিকাংশ নেতা! টেবিলচারিতায় ফেসবুকে অনেক নেতা মন্ত্রীদের নিয়ে রীতিমত কৌতুক করে খোদ নিজ দলীয় কর্মী সমর্থকগণ। টিভি টকশো, মাঠে ময়দানের বক্তব্য প্রমান করে দারুণ খরায় কাঙাল নেতাদের চিন্তা জগত।
আওয়ামী লীগ এখনও চরম অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে রাজনীতিকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে। সবাই ছুটছে কেবলই ছুটছে, ছুটতে ছুটতে পালাতে পালাতে, অঙ্গহানি সৌন্দর্যহানি হতে হতে তারা ভুলে বসে আছেন রাজনীতি দেহটা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতি দেহটা শক্তিশালী না হলে কার লাভ হবে, কারা রাজনীতি দেহটাকে ধ্বংস করতে মরিয়া এটা এখনও আওয়ামী রাজনীতিকরা অনুধাবন করতে পারছেন না। স্রোতে গা ভাসিয়ে চলছেন অন্যদের মতই; যাদেরকে তারাই অবৈধ উগ্র নষ্ট ভ্রষ্ট বিশেষণে বিশেষায়িত করেন। রাজনীতিতে সহিষ্ণুতা, নিজের এবং দলের মধ্যে সত্য প্রতিষ্ঠায় আদর্শিক পথ চলা এবং গণমানুষের মধ্যে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া বলতে যা বোঝায়, যা বাংলার মানুষ জানে এবং জেনে এসেছে তা থেকে বহু দূরের পথে হাঁটছেন আওয়ামী রাজনীতিকরা আত্ম অহংকারের ফানুশ উড়ায়ে।
রাজনীতি যে আগের স্থানে নাই তার প্রমাণ পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক অফিস, ছাত্র রাজনীতির সুতীকাগার মধুর ক্যান্টিন কর্মী শূন্য হয়ে পড়ছে। দু-একজন নেতা এবং তাদের পক্ষের কিছু কর্মীর দেখা মিললেও রাজনীতি নেই। মুড়ি চানাচুর চা খেতে যতক্ষন সময় লাগে ততক্ষন হাজিরা দিয়ে চলে যায়। মন্ত্রী পাড়ায়, সচিবালয়ে দিবসের প্রথম প্রহরে সাধারণ দর্শনার্থীর চিত্র হতাশজনক। খোঁজ নিয়ে জানা যায় হতাশ হয়েই দলীয় কর্মী সমর্থকরা আসেন না। অধিকাংশ মন্ত্রী এবং মন্ত্রীর এপিএসের উপর ভীষণ ক্ষুব্ধ ত্যাগী নেতা কর্মীরা। মন্ত্রী পাড়ায় খুব সকালে মফস্বল থেকে যারা মন্ত্রী মহোদয়ের সাক্ষাৎ লাভের আশায় আসেন তারা দীর্ঘক্ষন অপেক্ষার পর মন্ত্রী মহোদয়ের সাক্ষাত পেলেও সহযোগিতার আশ্বাস তেমন একটা পান না। আওয়ামী লীগের কর্মীদের সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ দলীয় কর্মীদের কাছ থেকে পয়সা খেতে পারবেন না বলে রাজাকার পূণর্বাসনেও আপত্তি দেখান না তারা। 
সাধারণ মানুষ বরং আরো এক ধাপ এগিয়ে। সাধারণ মানুষ মনে করেন গাধাকে স্বচ্ছ জল দিলেও সে জল ঘোলা করেই খাবে। উট মনে করে বালুতে মুখ লুকিয়ে রাখলে তাকে দেখা যাবে না, আর আওয়ামী মন্ত্রী-এমপিরা ভাবে গদ গদ যে তারা ছাড়া দেশ চলবে না! তাদের বোধোদয়ের সময় এসেছে যে আওয়ামী লীগ কেবল একটি রাজনৈতিক দল নয় এটি একটি সংস্কৃতির উৎস থেকে জন্ম নেয়া সংগঠন। যেখানে দেশ ও দশের আত্মপরিচয় জড়িয়ে রয়েছে। বৃহত্তর স্বার্থেই দেশপ্রেমিক গণমানুষ তাদের প্রতি সহমর্মিতা সহযোগিতার হস্ত প্রসারিত করে থাকেন। যা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হলে মহাকাল তার জবাব দেবে।

জিহ্বা শাসন জরুরি



জিহ্বা শাসন জরুরি


  সংস্কৃতিতে একটি কথা আছে, অনেকটা এরকম - ‘অপর্ণা মাংস হরিণা বৈরি’। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায়, আপন মাংসই হরিণের শত্রু । কথাটির ব্যাখ্যা হচ্ছে, হরিণের মাংস সুস্বাদু তাই সিংহ, বাঘ থেকে শুরু করে মানুষ পর্যন্ত মুখিয়ে থাকে হরিণের মাংস খেতে। বাঘ তো রীতিমত হরিণখেকো। পুরনো দিনের রাজা বাদশাহদের একটা বড় শখই ছিল হরিণ শিকার করা। শিয়াল কিন্তু কেউ শিকার করতো না, করেও না! বাঘ কিংবা সিংহ পর্যন্ত শিয়াল শিকার করে এমন কথা শোনা যায় না। সহজেই অনুমান করা যায়, হরিণের মাংসের উল্টো স্বাদ মনে হয় শেয়ালের মাংসের। সুতরাং অংকটা সহজেই মিলে যায়। হরিণের মাংসই তার সবচেয়ে বড় শত্রু!
রাজনৈতিক নেতাদের বড় গুণ তাদের বাগ্মীতা। নেতা হওয়ার প্রাথমিক ও বড় গুণই হয়ে ওঠে বাকপটুতা। যার অগ্রসর ধারা হচ্ছে বাগ্মীতা। যা হয়ে উঠে বড় নেতা হওয়ার সহজ কিন্তু বেশ প্রয়োজনীয় শর্ত। জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠার ক্ষেত্রে তুখোড় বক্তা হিসেবে পরিচিতিটাই, ব্যতিক্রম ছাড়া, প্রায় সবার ক্ষেত্রেই প্রধান সিঁড়ি হয়ে থাকে। ‘মুজিবের ভাষণ’ বলে খ্যাত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৭ মার্চের জ্বালাময়ী বক্তৃতাই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছিল পাকিস্তান নামক ফাঁকিস্তান রাষ্ট্রটিকে। ১৯৭১’ এর মুক্তিযুদ্ধ সেটিকে কবরেই পাঠিয়েছিল শুধু।
রাজনৈতিক নেতাদের এই বক্তৃতা তথা বাগ্মীতা তথা বাকপটুতা যেমন তাদের রাজনৈতিক জীবন চলার পথে উত্তরণ ঘটায়, ঠিক বিপরীতে তাদের মিথ্যা ভাষণ পতন-এর কারণও হয়ে থাকে। বেফাঁস কথা, অসতর্ক উচ্চারণ, লাগামহীন বক্তৃতা কেবল ব্যক্তি রাজনৈতিক নেতাকেই বিতর্কিত, দলচ্যুত এমনকি ক্ষমতাচ্যুত করে না, কোন কোন ক্ষেত্রে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তার দল বা ক্ষমতাসীন অবস্থায় তার সরকারকেও অস্বস্তিতে ফেলে দেয়, সংকটগ্রস্ত করে তোলে, ঠেলে দেয় ক্রমশ শূন্যতার দিকে।
বিরোধীদলের ক্ষেত্রে বিষয়টি, অন্তত আমাদের মত দেশগুলোতে, তত একটা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। বিরোধী দলের নেতা, পাতি নেতারা লাগামহীন কথা বলে তিলকে তাল বলবেন, ঘোলকে জল বলবেন এ যেন ধরেই নেয়া হয়। ক্ষমতায় নেই তারা, ক্ষমতাহারা! তাদের মাথা তো খারাপ হতেই পারে! তাল-বেতাল ঠিক না হতেই পারে। কিন্তু সরকারি দলের ক্ষেত্রে বিষয়টি ঠিক উল্টো। মন্ত্রী-নেতা, সে কি বড় নেতাই হোক, কি মাঝারি বা পাতি নেতাই হোক, তাদের কাছ থেকে দায়িত্বশীল কথাবার্তা আশা করেন দেশের জনগণ। সরকার বা দল বেকায়দায় পড়ে, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত বা বিতর্কিত হয় এমন কোন কথা মন্ত্রী-নেতারা বলা থেকে বিরত থাকবেন তা দলীয় কর্মী-সমর্থকদের রীতিমত দাবিও বটে।
সীমালঙ্ঘন সর্বক্ষেত্রে সকল সময়েই ক্ষতি ডেকে আনে! এর নজির ইতিহাসে ভুরি ভুরি। মন্ত্রীদের নেতাদের অসংযত জিহ্বা নিকট অতীতের সরকারগুলোর মত বর্তমান সরকারের জন্যও যে মাঝে মাঝে বিব্রতকর, অস্বস্তিকর এবং এমনকি জনপ্রিয়তা হানিকর হয়ে উঠছে তার জ্বলন্ত সাক্ষী সংবাদপত্রের পাতা আর জীবন্ত সাক্ষী টেলিভিশনের পর্দা। দেশ শাসনের চেয়ে জিহ্বা শাসন যে কম গুরুত্বপূর্ণ না এই সতর্কতাটা অন্তত প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দলীয় মন্ত্রীদের-নেতাদের দিয়ে দেয়াটা কেবল দরকারি না, জরুরিও বটে।

চিকিৎসা সেবা না মানবিকতা-বধ



চিকিৎসা সেবা না মানবিকতা-বধ

সাগর সগীর ॥ বাবা-মা। ভাই-বোন। ছেলে-মেয়ে। বাড়ী-ঘর। আবার, ছাত্র-ছাত্রী। কিংবা, স্বামী-স্ত্রী। দাদা-দাদী। নানা-নানী। এসবই যুগল শব্দ। একটি উচ্চারণ করতে গেলেই পেছনে জোড়া দশার মত যেমন আরও একটি শব্দটি এসে পড়ে, ঠিক তেমনি চিকিৎসা শব্দটি উচ্চারণ করতে গেলেই এর জোড়া শব্দ হিসেবে যে শব্দটি এসে পড়ে সেটি হচ্ছে ‘সেবা’। সেবা শব্দটির সঙ্গে মানবিক অধিকার, মানবিক সাড়া, মানবিক দায়বদ্ধতার প্রশ্নটি যেন সরাসরি জড়িত। মানুষ তথা মানব হলে মানবিকতা থাকতেই হবে। তেমনি মানবিকতা যেখানে থাকবে না, সেখানে মানুষও থাকবে না, থাকবে অমানুষ।
রোগগ্রস্থ মানুষটির মানবিক অধিকার চিকিৎসা পাওয়ার। ঠিক একইভাবে চিকিৎসা প্রদানে সক্ষম মানুষটির মানুষদের মানবিক দায়বদ্ধতা হল রোগগ্রস্থদের সর্বাগ্রে চিকিৎসা দেয়া। তাই চিকিৎসা সবচাইতে জরুরী সেবা, শ্রেষ্ঠ মানবিক সেবার তালিকায় শীর্ষে। কিন্তু এ দেশবাসীর, কার্যত আজকের পৃথিবীতে মানব জাতির চরম দুর্ভাগ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে যে চিকিৎসা ‘সেবা’র পরিবর্তে চিকিৎসা ‘বাণিজ্য’ হয়ে দাঁড়িয়েছে! আর তা করায়ত্ব করে নিয়েছে ‘আইনী অধিকার’, হয়ে পড়েছে ‘যৌক্তিক কারবার’!
এই আইনীর ‘আইন’টি নিয়ে প্রশ্ন করবার কিংম্বা যৌক্তিকতার ‘যুক্তি’টির অযৌক্তিকতা নিয়ে ভাববার কথাটি শোনা যায় না। যখন অর্থ আর শর্ত সামনে থাকে তখন কি ‘মানবিক সেবা’র প্রশ্নটি সামনে আসার সুযোগ পায়? অর্থ আর শর্ত ছাড়া কি বাণিজ্য চলতে পারে? যুক্তি-তর্ক আর আইনী বৈধতাকে প্রশ্নাতীত ধরে নিয়েই দেখা যাক বাস্তবতাকে। হাতের কাছে এই বাংলাদেশের চেনা চিকিৎসা পরিস্থিতির দিকে নজর দেয়া যাক। অন্তত আজকের বাংলাদেশে স্বাস্থ্য-বাস্তবতা হল, ‘দেহে-দেহে রোগ, ঘরে-ঘরে রোগী’। বাস্তবতা হল, হাসপাতাল ক্লিনিক ডায়োগনস্টিক সেন্টারের ছড়াছড়ি।
শহর-বন্দর, পাড়া-মহল্লা, গ্রাম-গঞ্জে সয়লাব। রমরমা বাণিজ্য। কেনই বা হবে না? পরিবার আছে রোগী নাই, ব্যক্তি আছে ব্যাধি নাই এ যে দুর্লভ! গোটা সমাজটাই যে ব্যধিগ্রস্থ! গোটা দেশটাই যে রোগগ্রস্থ!
বাণিজ্যিক উদ্যোগে গড়ে উঠা সারা দেশে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার আর ডাক্তারের চেম্বার কত তার পরিসংখ্যান সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে চাইলে তার হিসাব আদৌ পাওয়া যাবে কি না, কিংম্বা কতটুকু পাওয়া যাবে সে প্রসঙ্গ এখন থাক। কেবল একটি ছোট চিত্র থেকেই চিকিৎসা বাণিজ্যের ‘মানবিকতা-বধ’ আখ্যানের আপাতত উপসংহার টানা যেতে পারে। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে দেশে সরকারী মেডিকেল কলেজের সংখ্যা যেখানে ৩০টি সেখানে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারী মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৬৫টি। ডেন্টাল কলেজের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা যথাক্রমে ৯ ও ৩৩!
আসন সংখ্যার দিক থেকে সরকারী মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ৩৬৯৪টি, বিপরীতে বেসরকারী পর্যায়ে মোট আসন ৭৩৫৫টি। বেসরকারী এইসব কলেজে ভর্তির জন্য গড়ে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেয়া হচ্ছে। কোন কোন গুলোতে নামে বেনামে আরও বেশি। থাকা খাওয়াসহ অন্যান্য শিক্ষা ব্যয় মিলিয়ে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা লেগে যায় একজন শিক্ষার্থী ডাক্তারী সনদ নিয়ে বের হতে!
প্রশ্ন হচ্ছে, এই পাস করা একজন ডাক্তার চিকিৎসায় নেমে তার মাথায় কি রোগীকে সেবা দেয়ার কথা আগে আসবে, না তার অভিভাবকের বিনিয়োগকৃত টাকা তুলে আনার চিন্তা আসবে আগে? অভিযোগ রয়েছে, বাস্তবতাও তাই বলে, এই সব বাণিজ্যিক উদ্যোক্তারা ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মেধাকে বিবেচনায় নেন না, ভর্তির টাকা দেয়ার ক্ষমতা বা সামর্থকেই বিবেচনা নিয়ে থাকেন। কারণটা তো দিনের আলোর মত পরিষ্কার। তাদের উদ্যোগটি সেবাব্রতী না! রীতিমত কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ! যার চালকের আসনে বসা ‘মুনাফা-মহাশয়’।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই অনস্বীকার্য বাস্তবতাটি কি সরাসরি দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়? কেননা সংবিধান অনুযায়ী চিকিৎসা নাগরিকদের একটি মৌলিক অধিকার।
আরও জরুরী প্রশ্ন হচ্ছে দেশের এই বিদ্যমান চিকিৎসা বাস্তবতা কি ধর্মের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক নয়? যে দেশটির রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম! নবী মোহাম্মদ (স.) তাঁর পথে কাঁটা ফেলে রাখতো যে বুড়ি, তিনি যখন অসুস্থ হয়ে অসহায় শয্যাশায়ী, তখন রাসূল (স.) কি অর্থ বা শর্তের বিনিময়ে তাকে সুস্থ করেছিলেন? রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম এর অনুসারী দেশের মুসলমানরা বিষয়টি কি ভেবে দেখবেন?

কৃতজ্ঞতা স্বীকার ধর্মীয় উপদেশ

কৃতজ্ঞতা স্বীকার ধর্মীয় উপদেশ

শেখ উল্লাস ॥ ইসলাম ধর্মের উপদেশ অনুসারে দেশ ও জাতির  প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন প্রতিটি মুসলমানের জন্য যেমন অবশ্যই করনীয় তেমনি জীবন চলার পথে সত্যের সৈনিক হয়ে সর্বস্তরে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করার স্বভাব গড়ে তোলা নৈতিকতার উত্তম বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশের সুবিধাভোগী মানুষরা কি দেশের প্রতি কৃতজ্ঞ, সর্বোপরি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ? শিক্ষিত মানুষরা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়টা নিজের ব্যক্তিগত সুখ-সুবিধার নেশায় সরকারি চাকুরি করেন। বৈধ-অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিপত্তি লাভ করে অথবা এনজিও’র নামে দেশি-বিদেশি অর্থ কামিয়ে অবসর জীবনটা বিভিন্ন সভা-সমিতি এবং হাল-আমলের ‘টক-শো’তে অংশ নেন। অথবা বিভিন্ন ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় নানান প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বিষয়ে মতামত রাখতে পারছেন যারা তারাই নিজেদেরকে তথাকথিত সুশীল সমাজের অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি করছেন। এরা শহরবাসী, রাজধানীবাসী। আজকের দিনে পেশাগতভাবে যারা রাজনীতিজীবী, তাদের কারো কারো সঙ্গে এই তথাকথিত সুশীল সমাজের পার্থক্য তেমন নেই। তারা হুট করেই জনগণের সাথে মিশে যেতে পারেন না, কারণ, দেশ ও জনগণের সঙ্গে উঠা-বসা করার অভ্যাস তাদের তেমন নেই, যেমনটা তারা কথায় পারদর্শী। এক্ষেত্রে রাজনীতিকদের সুবিধা অনেক বেশি; দেশ, জাতি ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হয়ে কাজ করার সুযোগের সদ্ব্যবহার করলে তারা নিজেদেরকে আরও ধন্য করতে পারতেন যেমনটি করে গেছেন পূর্ব-প্রজন্মের অনেক রাজনীতিবিদ। সেই ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ ও পাকিস্তানী আমলে দেশ-জাতি ও সমজের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ রাজনীতিকরা আজও সে কারণে মানুষের শ্রদ্ধার পাত্র, চিরস্মরণীয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে কী যে হলো, যারা রাষ্ট্রের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী, তারাই যেন সবচেয়ে বেশি অতৃপ্ত। বোধোদয়  তাদের নেই। ফলে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে জানেন না, পারেন না, বরং তাদের চাওয়া-পাওয়ার তলে পিষ্ট হয়ে যায় সাধারণ মানুষের সাধারণ চাওয়া-পাওয়াগুলো। পরিণামে সর্বস্তরে আজও প্রতিষ্ঠা পায়নি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, আছে ঔপনিবেশিক আমলের শাসন-শোষণের নানা বেড়াজাল, আর এ সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে ধর্মজীবী ও ধর্মান্ধ গোষ্ঠী।   
এদেশের প্রতিষ্ঠাতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ বেঁচে থাকলে কী বলতেন জানা নেই। তবে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৪  জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি তোমাদের তিন বছর কিছুই দিতে পারবো না। আরো তিন বছর যুদ্ধ চললে, তোমরা যুদ্ধ করতে না?’ (উত্তর, ‘করতাম, করতাম’), তাহলে মনে কর যুদ্ধ চলছে, তিন বছর যুদ্ধ চলবে। সেই যুদ্ধ দেশ গড়ার যুদ্ধ। অস্ত্র হবে লাঙ্গল আর কোদাল’।
বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক নির্দেশনার আলোকে সরকারি কর্মচারিদেরকে জনগণের সেবায় নিয়োজিত হতে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি পুনরায় গ্রহণ এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। নতুন বেতন স্কেল বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বর্তমানে সরকারি কর্মচারিরা আরও অনেক দূর এগিয়ে গেলেন। উচ্চ পদস্থ কর্মচারিদের সুযোগ-সুবিধা তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় তাদের ক্ষেত্রে এই উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি বেশি জরুরি। দেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত গত সপ্তাহে সচিবালয়ে বেতন বৈষম্য নিরসন সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর এক ব্রিফিং-এ জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিজীবীরা বর্তমানে যে সব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, অষ্টম বেতন কাঠামোতে তার কিছুই কমানো হবে না। বরং তা আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, সে চিন্তা করা হচ্ছে। সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকেও এই নির্দেশনা এসেছে যে, কারও সুযোগ-সুবিধা কমানো যাবে না। বরং সুবিধা আরও বাড়ানো যায় কি-না সে চিন্তা করতে বলা হয়েছে’।
একটি দেশের গণমুখী সরকার তার কর্মচারিদেরকে সুযোগ-সুবিধা দেবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই সরকারি কর্মচারিরা কতটুকু গণমুখী, তারা সরকার, জনমানুষ ও দেশের প্রতি কতটুকু কৃতজ্ঞ ও নিবেদিতপ্রাণ সে বিষয়টিও দেখার দায়িত্ব সরকার তথা রাষ্ট্রেরই। চরম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশের সংবিধানের ২১ নং অনুচ্ছেদের ২ নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রে কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য’। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারিদের সকলকে মহান সংবিধানের এই চেতনায় এখনও পরিপূর্ণ উদ্বুদ্ধ করা যায়নি, যার খেসারত দিতে হচ্ছে দেশ ও জাতিকে। দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুটপাটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত হয়ে চাকুরি জীবন শেষ করে এরাই আবার তথাকথিত সুশীল সমাজের সদস্য সাজেন। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়টুকু জনগণের সেবার চেষ্টা না করে ধর্মীয় প্রাতিষ্ঠানিকতায় নিজেকে সম্পৃক্ত করে হজ্বে যাচ্ছেন এবং স্বয়ং নিজের সঙ্গে নিজে দ্বিচারিতা করে নিজ নিজ কামনায় ধরা পড়ছেন দেশ ও জাতির কাছে। দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য আজ তাই প্রয়োজন সরকারি কর্মচারিদেরকে দেশ সেবায় উদ্বুদ্ধকরণ, জবাবদিহীতা প্রতিষ্ঠাকরণ এবং এই চেতনায় যারা উদ্বুদ্ধ হবেন না তাদেরকে অকৃতজ্ঞদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে তাদের চাকুরির যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা কেটে নেয়ার। এটাই আজ সময়ের দাবি। দেশে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা তথা সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এই উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি এখন জরুরি হয়ে উঠেছে। এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারি কর্মচারিরা দেশ ও জাতির প্রতি কৃতজ্ঞ হবেন - প্রতিষ্ঠিত হবে একটি কৃতজ্ঞ সমাজ-এটাই আজ জাতির প্রত্যাশা।