রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম কিন্তু
মিথ্যা বলা-মিথ্যাচারের জন্য শাস্তির বিধান
নেই!
সংলাপ
॥ আমাদের দেশে মিথ্যা বলা বা মিথ্যাচারের জন্য কোনো শাস্তিমূলক আইন নেই তবে মিথ্যা
স্বাক্ষী দেয়ার জন্য আদালত ইচ্ছা করলে শাস্তি দিতে পারে বলে জানা যায়। অন্য কোনো দেশে
মিথ্যা বলা বা মিথ্যাচারের জন্য কোনো শাস্তির বিধান আছে কি না নির্দিষ্ট করে, তা বিশেষজ্ঞরা
বলতে পারেন।
বর্তমান
বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে মিথ্যা বলা বা মিথ্যাচারের জন্য শাস্তির বিধান থাকা যে জরুরি
হয়ে পড়েছে তা চিন্তাশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করলে বুঝা যায়। রাজনীতিকরা নির্বিবাদে
দেশবাসীর সামনে মিথ্যা বলে যাচ্ছেন। কোনো সময় যখন প্রশ্নের সম্মুখীন হন তখন তারা বলছেন
- এটা রাজনৈতিক বক্তব্য বা ভাষা। অর্থাৎ রাজনীতিতে তারা মিথ্যা জায়েজ করে ফেলছেন। এই
জায়েজ করার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে যারা ধর্মের নামে রাজনীতি করছেন এবং ধর্মবেত্তারা
যারা ধর্ম ব্যবসা করে খাচ্ছেন তারাও পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।
পরিতাপের
বিষয়, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সর্বস্তরে যারা বিভিন্ন অঙ্গনে ব্যক্তিস্বার্থে বা গোষ্ঠীস্বার্থে
মিথ্যা বলছেন বা মিথ্যাচার চালাচ্ছেন তারা কোনো না কোনো ধর্মাবলম্বী। আমাদের দেশে ইসলামকে
রাষ্ট্রধর্ম করা হয়েছে। ইসলামের নামে বহু রাজনৈতিক দলও গজিয়ে উঠেছে, যেমন উঠেছে ব্যাংক
ও ইনসিওরেন্স কোম্পানীগুলো। কিন্তু প্রশ্ন জাগে কোথাও কি সত্য আছে?
কুরআনে
বলা হচ্ছেঃ
* যারা সত্যকে মিথ্যা বলেছিলো তাদের কি পরিণাম হয়েছিলো (৬:১১)।
*
আল্লাহ্ মিথ্যাকে মুছে ফেলেন এবং সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন (৪২:২৪)।
*
তারা সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য অসার যুক্তিতর্কে মত্ত ছিলো। তাই আমি ওদের ওপর শাস্তির
আঘাত হানলাম (৪০:৫)।
*
আমি মিথ্যাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিই আর তৎক্ষণাৎ মিথ্যা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় (২১:১৮)।
*
সত্য এসেছে আর মিথ্যা অন্তর্ধান করেছে। মিথ্যাকে অন্তর্ধান করতেই হবে (১৭:৮১)।
এ
রকম আরো বহু সতর্কীকরণ আয়াত আছে যা মুসলমানদের জীবন চলার পথে দিক নির্দেশনামূলক। কিন্তু
আমরা মুসলমান হয়ে কি এগুলো মানছি? যদি না মানি তাহলে আমাদের মধ্যে মুসলমানিত্ব কতটুকু?
আমাদের মুখে ধর্মের কথা ইসলামের কথা কি মানায়? নাকি শুধু মধ্যপ্রাচ্যের পোষাক পরলে
আমার মুসলমানিত্ব থাকবে? আমাদের দেশের বেশিরভাগ রাজনীতিকরাই বলেন যে, তারা ইসলাম ধর্মে
বিশ্বাস করেন। অন্ততঃ তাদের নামের বাহার দেখে তাই মনে হয়। যদি ‘বিশ্বাস’ করেন কথাটা
শুধু মুখের কথা হয় তাহলে বলার কিছু নেই কিন্তু যদি ধারক বাহক হয়ে থাকেন তাহলে তারা
নিশ্চয়ই জানেন সত্য-মিথ্যার তফাৎ ও পরিণাম।
দেশবাসী, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী,
বিশেষ করে আইনজ্ঞদের কাছে জিজ্ঞাসা সব কিছুই জেনেও যারা মিথ্যা বলছেন এবং মিথ্যাচার
চালাচ্ছেন দেশের আপামর জনগণের কাছে, পরিবার ও সমাজের মধ্যে সর্বোপরি নিজের সঙ্গে নিজে
যারা মিথ্যাচার করছেন তাদেরকে সঠিক পথে আনার জন্য মিথ্যা বলা এবং মিথ্যাচারের জন্য
শাস্তির বিধান করে কোনো আইন প্রণয়ন করা যায় কিনা তা ভেবে দেখার সময় কি আসেনি এখনো বাংলাদেশে!
মিথ্যা বলা ও মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে অন্তত দেশ ও জাতি
কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে।