বুধবার, ২৬ জুন, ২০১৩

বাস্তবতাই পথ দেখাবে গণতন্ত্র মুদি পণ্য নয়


বাস্তবতাই পথ দেখাবে
গণতন্ত্র মুদি পণ্য নয়

 

শাওন ॥ জোর তদ্বির সর্ব মহল থেকে বর্তমান সরকারের কাছে। সংলাপ শুরু করুন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে। কারণ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে থাকতে হবে। রাজনীতির মাঠে যারা আছেন তারা তো অবশ্যই, কাগুজে বুদ্ধিজীবী, বিশ্ল্লেষক, গবেষক সকলেরই এক কথা - দ্রুত সংলাপের ব্যবস্থা নেয়া। বিদেশী বন্ধুরাও পিছিয়ে নেই। তারাও যথারীতি পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন বৈদ্যুতিন মাধ্যমে তা বেশ জোরের সাথে প্রচারিত হচ্ছে, যাতে জনসমর্থন সংলাপের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেয়। সকলের একই কথা দ্রুত নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্রে ফিরতে হবে। সরকারী মহলেও প্রচ্ছন্ন নমনিয়তা নির্বাচনী সংলাপ আয়োজনে। সর্বদিক থেকে বিষয়টি ইতিবাচক। রাজনৈতিক দল ছাড়া যেহেতু রাজনীতি চলবে না আর রাজনীতি না থাকলে গণতন্ত্র থাকবে কোথায়? নিঃসন্দেহে এর চেয়ে যৌক্তিক বিবেচনা আর কি হতে পারে? এমন সরল সমীকরণ অস্বীকার করবে কে?

আর সংলাপ বা আলোচনা যেহেতু গণতন্ত্রের একটি ভীত, সুতরাং তাকে বাদ দিয়ে গণতন্ত্র মনষ্কতা নিশ্চয়ই সুচিন্তার নয়। কাজেই সংলাপ হোক। সকলের আলোচনায় এটি পরিষ্কার - নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে থাকতে হবে তাই সংলাপ।  আমাদের গণতন্ত্র ছিলো, একসময় আমরা হারিয়েছি, এখন আমরা আবার সেখানে অবস্থান করব। আর সে যাওয়ার পথে নেয়ার দায় বর্তমান রাজনীতিকদের। তারা হাত ধরে আমাদেরকে নির্বাচনী গণতন্ত্রে নিয়ে যাবেন। সত্যি যদি ব্যাপারটি ওরকম হতো তা হলে আজকের এই ওকালতির কিংবা তদ্বিরকারীদের সাথে ঐক্যমত পোষণে দ্বিধা থাকতো না। জোর গলায় আমরাও বলতে পারতাম, আমরা গণতন্ত্রে ছিলাম-আছি-থাকবো।

বর্তমান সরকার জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার। নির্বাচনী?গণতন্ত্রে ফিরতে চাওয়ার অর্থ দাঁড়ায় এই সরকার কর্তৃক তা হরণ হয়েছে, তাই আবার ফিরতে হবে যাদের দ্বারা তা কার্যকর ছিলো তাদেরই কাছে অর্থাৎ তাদেরই হাতে তুলে দিতে হবে দেশকে গণতান্ত্রিক শাসনে ফিরিয়ে আনতে। তাই তো সংলাপ ওকালতি এত জরুরি, দ্রুত নির্বাচন উৎকন্ঠা। কোনো সন্দেহ নেই গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচন অবশ্যই অপরিহার্য আর সে নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দল তো থাকতেই হবে। কিন্তু যে দলগুলো বিগত সাড়ে তিন দশক রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করে গণতন্ত্রের নামে যে বন্যতা, বর্বরতা উপহার দিয়েছে আমরা কি আবার তাদেরই কাছে ফিরে যাবো নির্বাচনী গণতন্ত্রের জন্য? তাহলে বর্তমান সরকারের প্রয়োজনটা ছিলো কোথায়? কোন্‌ গ্রহণযোগ্যতায় এই সরকার কর্তৃক নির্বাচন আইনগত বৈধতা পাবে? সংবিধানের আইন বলে একটি সরকার এখন সময় পার করছে? কেউ কেউ তো ইতোমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, হাসিনা-খালেদা ছাড়া সংলাপ হবে অর্থহীন। সরকারী মনোভাব স্পষ্ট না হলেও কর্মকান্ডে মোটামুটি প্রতীয়মান যে খুব বেশি হার্ডলাইনে তারাও আর অবস্থান নিতে চাচ্ছেন না। পথ খুঁজছেন দ্রুত নির্বাচন করার।

নির্বাচনী গণতন্ত্রে নয়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই ছিলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। সেখানেই জনসমর্থন পেয়ে চার বৎসর অতিক্রান্ত করে এখনও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত বর্তমান সরকার। কিন্তু সেই গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে খোলনলচে যে পাল্টাতে হবে তাকে অস্বীকার করে যারা নির্বাচনী দ্রুত পথ অতিক্রম করতে চায় তাদের কি আদৌ গণতন্ত্রে বিশ্বাস আছে? তারা কি আস্থা রাখেন রাজনীতির চরিত্র পরিবর্তনে? তারা কি বিশ্বাস করেন দেশের মালিক দেশের জনগণ? তারা কি শ্রদ্ধাশীল গণতন্ত্রের মানবিক অধিকার সমূহের সূত্রে? তাদের কি ইচ্ছা আছে গণতান্ত্রিক ন্যায়বিচারের রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি? যদি উত্তরগুলো হ্যাঁ বোধক হয়, তাহলে তারা কি করে পুরনো সেই মদের নতুন বাজারজাতকরণে এত উদগ্রীব হতে পারেন? এক কথায় যারা ছিলো দেশ ধ্বংসকারী, মানবাধিকার লংঘনকারী, দানবীয় রাজনীতির প্রবর্তনকারী, দুর্বৃত্তায়িত পরিবেষ্টিত হিংস্র শ্বাপদ আজ তারাই আবার অপরিহার্য হয়ে উঠছে দেশ পরিচালনার, নির্বাচনী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য

কেউ কেউ বলছেন সকলকে একই পাল্লায় ওজন দিলে কম্বলের অবশিষ্ট থাকবে না যে! খাঁটি কথা, কিন্তু এই কম্বল গায় জড়াবার জন্য কি এর প্রতি সমর্থন জুগিয়ে যাবে দেশবাসী ? কেউ বলছেন নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জনগণই তাদের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার পরিচালনা করবে। নেহাৎ ভদ্রলোকের কথা। তবে অতি সূক্ষ্ম প্রক্রিয়ায় গণদাবি, ন্যায়বিচারকে পাশ কাটিয়ে চলা, সেই সব দুর্বৃত্তদেরকে রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার হীনচক্রান্ত চলছে। ইঁদুর-বিড়ালের খেলা আর ?বৈদ্যুতিন মাধ্যমে নানা নাটক, রাজনৈতিক সংস্কারের মৌলিকত্বকে এখন যে চোরা গলিপথের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে, তা কি সচেতনরা অনুধাবন করতে পারছেন না? এটা সত্য, হাতে গোণা কয়েকমাসে টেবিলটা উল্টে দিতে পারে। তাই বলে শুরুর দৃঢ়তা না থাকলে লক্ষ্যের স্থিরতা থাকবে, এমন বিশ্বাসযোগ্যতা পাবে কি করে?

গণতন্ত্র কোনো পণ্য নয়, যা মুদি দোকানে বিক্রি হতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় আসলেই অমনি তা জনগণ প্রয়োজনমতো মুদি দোকান থেকে কিনতে পারবে। এর কোনো অলৌকিকত্বও নেই যা আলাদিনের প্রদীপ হয়ে আমাদেরকে গণতান্ত্রিক বানিয়ে ফেলবে কিংবা আমাদের রাজনীতিকদেরকে সত্যি সত্যিই গণতান্ত্রিক মনস্কতায় বদলে দেবে। এমন নিশ্চয়তা কি কেউ দিতে পারবেন? আজ যারা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন নির্বাচনই একমাত্র গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নিয়ামক, তাদেরকে অবশ্যই বলতে হবে দুর্বৃত্ত রাজনীতিকদের কি করবেন - কিভাবে তাদেরকে প্রতিহত করবেন আগামী নির্বাচনে? নির্বাচনী আইন তো এখন প্রযোজ্য হবে। গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা কি সে পর্যন্ত যেতে পেরেছি? যে দুই চারজন মাত্র সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে তাদের রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা বাকিদের থেকে কি ভিন্ন? ক্ষমতায় থাকাকালীন তাদের চরিত্রগুলো কি আমাদের কাছে একেবারেই অপরিচিত? এদের মধ্যে থেকে দুই শতাংশ কি বের করা যাবে যাদের মধ্যে বহমান ন্যূনতম দেশপ্রেম / মানবতাবোধ! এই সরকার যদিও এখনো দিশেহারা নয় বিশেষ করে বাজার নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ প্রায় সকল ক্ষেত্রেই আস্থাহীনতা দিন দিন বেড়েই চলছে, কিন্তু সামাল দেয়ার জন্য নির্বাচনই সমাধান এমন বক্তব্যের আসলে কি কোনো বাস্তবতা আছে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন