শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

রাজনীতিতে প্রয়োজন সততা ও শুদ্ধতা

 সময়ের সাফ কথা…. 

রাজনীতিতে প্রয়োজন সততা ও শুদ্ধতা

সংলাপ ॥ আমরা সব সময় আমাদের সমাজের বিভিন্ন অবক্ষয়, অন্যায়, অত্যাচার নিয়ে ভ্রুকুটি তুলি আর দায়ী করি সমাজ ব্যবস্থা অথবা অপরাধীদেরকে। তবে আমাদের সমাজে যারা এইসব অপরাধকর্মে লিপ্ত তাদের সংখ্যা বেশি নয়। হাতে গোনা কিছু অপরাধীই এইসব অপরাধযজ্ঞ সংগঠনের জন্য দায়ী। তার মূল কারণ যারা নিজেদের কথিত ভালো মানুষ হিসেবে দাবি করি তাদের নিষ্ক্রিয়তা। আমরা যদি আমাদের স্ব-স্থান থেকে অন্যায় ও অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে সচেষ্ট হই, তাহলে সামাজিক অবক্ষয় থেকে মুক্তি পাবো আর আমাদের আগামী প্রজন্ম পাবে একটি সুশৃঙ্খল সমাজ। আমরা আমাদের নৈতিক মূল্যবোধ কিংবা সামাজিক দায়িত্ববোধের প্রকাশভঙ্গিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করি। এতে আমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধের অবলোপন হচ্ছে দিনে দিনে। একে অন্যের প্রতি হয়ে যাচ্ছি বিদ্বেষী, আর লিপ্ত হচ্ছি নানান সংঘাতে। তাই এই মুহুর্তে আমাদের দরকার দল-মত নির্বিশেষে একটি সমাজবদ্ধ রাজনীতির সূচনা করা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সমাজবদ্ধ রাজনীতিই একমাত্র উপায় যা প্রতিষ্ঠা করবে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ এবং ত্বরান্বিত করবে সামাজিক উন্নয়ন।
একটু ভালো করে খেয়াল করলেই দেখা যায়, একমাত্র সমাজবদ্ধ রাজনীতিই পারে মানবিক মূল্যবোধের জন্ম দিতে। আজকের সমাজের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর লোকের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ। যা পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধকে নষ্ট করে জন্ম দিচ্ছে সংঘাতময় সমাজ। শুধুমাত্র রাজনৈতিক অস্থিশীলতার কারণেই নষ্ট হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ, আর ব্যাহত হচ্ছে মানব সম্পদের সুষ্ঠু এবং সর্বোচ্চ ব্যবহার।
বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলে রাজনৈতিক বিভক্তি ছিল, পাশাপাশি সংযম ও সহনশীলতাও ছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, রাজনীতি থেকে শিষ্টাচার নির্বাসিত হয়েছে। ভিন্ন মত অসহনীয় হয়ে উঠছে সবক্ষেত্রে। রাজনীতির ময়দানে এখন দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ দখলদারিত্ব বজায় রাখার জন্য দলীয় কর্মী রাখা হয় যথাসময়ে যেন দখলদারিত্ব কায়েমে তাদের ব্যবহার করা যায়।
বর্তমানে দেশে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইনের শাসন, ইনসাফ, সংযম, সহনশীলতা এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এই শব্দগুলো ক্রমেই অপরিচিত হয়ে উঠছে। অনেকেরই দেশপ্রেম এখন প্রশ্নের মুখোমুখি।
গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সুবিচার, সুশাসন ও আধিপত্যবাদের অবসান প্রভৃতি ছিল আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের চালিকাশক্তি। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর এসব ক্ষেত্রে আমরা ব্যর্থতার যে পাহাড় সৃষ্টি করেছি তার পাশাপাশি নতুন সমস্যারও জন্ম দেয়া হচ্ছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতির সাফল্য নির্ভর করে সুশিক্ষিত, সৎ, নিষ্ঠাবান রাজনীতি সচেতনকর্মী বাহিনীর ওপর। বাংলাদেশের বিদ্যমান অবস্থা দু-একটি রাজনৈতিক দল ছাড়া সকল দলের সাফল্যের অনুকূল নয়। রাজনীতিকদের জীবনে ত্যাগের স্থান দখল করেছে খাই-খাই প্রবণতা।
স্বাধীনতার পূর্বে এবং স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে রাজনীতির চেহারাটা ঠিক এমনটা ছিল না। অনেকের জন্যই রাজনীনৈতিক পরিবেশ শুধু কঠিনই নয়, কলুষিত হওয়া শুরু হয়েছে। পাল্লা দিয়ে রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছে অদক্ষতা, অসততা, পেশীশক্তি আর দস্যুতা। ত্যাগে-মহিমায় বলীয়ান ছিল যে সকল রাজনীতিবিদ, এক সময় কালের আঘাতে তারা ঝরে পড়তে থাকে একের পর এক। শূন্যস্থান পূরণ হয়ে যায় অতিলোভী, অদক্ষ, অসৎ, দুর্নীতিবাজ আর দুর্বৃত্তদের দ্বারা। সমাজের দস্যু, ডাকাত, দুর্নীতিবাজ আর দুর্বৃত্ত বলে পরিচিত মুখগুলো ধীরে-ধীরে রাজনীতির ছত্রচ্ছায়ায় এসে রাজনৈতিক পরিচয়ে আরও ব্যাপক হয়ে উঠে।
রাজনীতিতে সততা না থাকলে একটি দেশের উন্নয়ন গতিধারা এগিয়ে নেয়া যায় না। বাংলাদেশ সামাজিকভাবে এবং অর্থনৈতিকভাবে আজ এমন এক স্থানে পৌঁছে গিয়েছে যে, শুধু রাজনীতিটি যদি সঠিক রাস্তায় হাঁটতে পারে তবে বাংলাদেশের উন্নয়ন গতিরোধ করার আর কোন উপায় থাকবে না। বাংলাদেশের কৃষি খাত, পোশাকশিল্প খাত এবং প্রবাসী আয় খাত বিশ্ব বাজারে বিশেষ একটি জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে এবং বাংলাদেশকেও সমৃদ্ধির একটি স্থানে পৌঁছে দিয়েছে। এই উন্নয়নকে ধরে রাখার জন্য শুধু আমাদের প্রয়োজন সৎ জনপ্রতিনিধি, শুদ্ধ রাষ্ট্রীয় কাঠামো, সুশাসন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নীতি-আদর্শের সাথে চলার মতো দলীয় কর্মীবাহিনী। আর এসবই দিতে পারে দক্ষ, মেধাসম্পন্ন এবং সৎ রাজনীতি। রাজনীতি শুদ্ধ করার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে দেশরত্ন শেখ হাসিনার কঠিন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। দুর্নীতি নিমজ্জিত রাজনীতিকে শুদ্ধ পথে নিয়ে আসার কাজটি সহজ নয়। তবে এই কঠিন কাজটি বাংলাদেশে একমাত্র বঙ্গবন্ধুর কন্যার কাছ থেকেই আমরা আশা করতে পারি। ঘণ্টাটা তিনি একবার বেঁধে দিলেই হবে। পরের কাজটি করবে আগত পদ্ধতি। অদক্ষ, অসৎ, দুর্নীতিবাজ লোকজন নিয়ে একদিন যে রাজনৈতিক পদ্ধতির সূচনা হয়েছিল, ধীরে ধীরে যে পদ্ধতি গ্রাস করেছিল আমাদের সুস্থ রাজনৈতিক জীবনধারা-দেশরতœ শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ হাতে দুর্নীতিবাজ নেতৃত্বের প্রতি ‘না’ আচরণ দিয়ে শুরু হওয়া রাজনীতির সৎ নেতৃত্ব তেমনিভাবে ধীরে ধীরে শুদ্ধ রাজনীতি ফিরিয়ে দেয়ার পদ্ধতির জন্ম দিক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন