বৃহস্পতিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আমরা সবাই জানি.... ২০


কর্ত্তব্যে দ্বন্দ্ব। মানবজীবনের একটা প্রধান সমস্যা। পরস্পরবিরোধী দুটি কর্ত্তব্য উপস্থিত। এখন এর কোন্টা করতে হবে? এর নিশ্চয় ও নির্দ্ধারণ করা একরূপ অসম্ভব বলেই বোধ হয়। এক্ষেত্রে যে মানব বুদ্ধির স্থিরতা রক্ষা করে কর্ম্মক্ষেত্রে অগ্রসর হতে পারে, সেই বীর হয়। সাধারণ মানুষের পক্ষে এরকম অবস্থায় কর্ত্তব্যের মানদন্ড স্থির রাখা বা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। স্থিরচিত্ত ব্যক্তিত্ব ভিন্ন এটা নির্দ্ধারণে অন্য কেউ সমর্থ হন না। বাস্তবিকভাবে এ দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তির মূলসূত্র খুঁজে বের করতে না পারলে কর্ম্মক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়া বিশেষ বিপদ্সঙ্কুল। কর্ম্মের প্রকৃত তাৎপর্য থাকে না। যন্ত্রের মতন কর্ম্ম করায় মানুষের মনুষ্যত্ব লোপ পায়। কর্ত্তব্যের যে স্থলে দ্বন্দ্ব সেই স্থলেই সত্যমানুষ ভাব ফুটে ওঠে। দ্বন্দ্বের অতীত যারা হতে পারেন তারাই মানবের পথপ্রদর্শক সত্যমানুষ। সাধারণভাবে কর্ত্তব্য সবাই করে। 
সন্দেহাকুলচিত্ত ব্যক্তি কর্ত্তব্যের বিপদে আত্মহারা হয়ে পড়ে। আত্মহারা হলেই বুদ্ধির লোপ পায়। কর্মের ফল যে প্রকৃত শান্তি তা লাভ করতে পারে না। তেজস্বী মনস্বী ব্যক্তিত্বরাই এরূপ ক্ষেত্রে অবলীলাক্রমে নিজের আত্মভাব প্রকট করতে সমর্থ হয়। দুর্ব্বল অকর্ম্মণ্যরা ভাবের অধীনতায় অধীর হয়ে কিংকর্ত্তব্যবিমূঢ় হয়; কিন্তু সবল ব্যক্তি মানসিক বলে বলীয়ান্; তার তেজ অদম্য। সে স্থির, সে কোনও একটা পছন্দ করে বুদ্ধি ও শ্রদ্ধার সাহায্যে কর্ম্ম সম্পাদন করে। নিজেকে তৃপ্ত করে। কর্ম্মের প্রকৃত ফলে চিত্তশুদ্ধি লাভ করে। স্বাধীন ব্যক্তিত্বই প্রকৃত কর্ম্মাধিকারী। 
যাতে আন্তরিকতা থাকে না সে কর্ম্ম দ্বারা বিশেষ উপকার হয় না। আদেশ এবং উপদেশ প্রতিপালন কর্ত্তব্য, কিন্তু সে স্থলে যুক্তিতর্ক প্রতিপালনের পক্ষে হলেও, তা করেও সন্তোষ লাভ করে না, বরং ক্ষুব্ধ হয়। অবশ্যই পরস্পরবিরোধী ও বিপরীত কর্ত্তব্য একই কালে সম্পন্ন করা যায় না। এর কোনও একটা সম্পন্ন করতে হয়। কোন্টা করা উচিত এর মীমাংসার মানদন্ড করতে পারলেই কার্য্যক্রম শেষ হয়। 
যিনি সত্যমানুষ, অবতার, কর্মসাধক তাঁর জীবনেও কর্ত্তব্যের দ্বন্দ্ব সুপরিস্ফুটভাবে দেখা দেয়। তাঁরা একটা নিষ্পত্তি করেই অগ্রসর হয়েছেন। অগ্রসর হওয়াই তাঁদের বিশেষত্ব। সন্দেহ, সংশয়, সত্যমানুষের জন্য নয়। সত্যমানুষ নিজের মহিমায় অগ্রসর হয়। নিজের তেজে তেজীয়ান্, নিজের ভাবে অব্যাহত গতি। মানুষ প্রচেষ্টার ফলে, শিক্ষা-দীক্ষার ফলে শক্তি উপার্জ্জন করে। মূলশক্তি সবার আছে, কিন্তু সত্যমানুষেরা সব শক্তি স্বভাবজাত করে ফেলেন।
শ্রীগুরুর নাম-স্মরণ ভক্তের মুক্তি বিধান। নামই একমাত্র গতি। নাম-স্মরণ ধর্ম্মধারণের অঙ্গ-স্বরূপ। স্মরণ সাধনের সহায়ক, সাধনের রুচিবর্দ্ধক। জপই সাধনের মূল্যবান অঙ্গ। জপ অন্তরঙ্গ ধন। শ্বাসে-প্রশ্বাসে নামজপ করাটার ওপরেই সমস্ত জোর দেয় সাধনা জগৎ। নামে আস্থাহীন মানুষকে শ্রীগুরুর পানে টেনে আনার জন্য উপকারী নীরব সাধনা ও গোপন জপ। ভক্তমাত্রেই শ্বাস-প্রশ্বাসে নামজপ করা উত্তম। 
শ্রীগুরু অস্থির হলে ভক্তের চিন্তা ও দুর্ভাবনা বাড়ে, উৎসাহ ও সান্ত¡নাময় থাকলে ভক্তের বিশেষ শক্তিলাভ হয়, প্রফুল্লচিত্তে সব বিপদ ও ভয় অতিক্রম করতে পারে। গুরুকে ধারণ করে চলতে কষ্ট হয়, প্রত্যয় দৃঢ় হলে এবং আস্থার ওপর নির্ভর করলে দুঃখ আধিপত্য করতে পারে না। যারা শ্রীগুরুর সান্নিধ্যে থাকেন, তারা অনেকেই শ্রদ্ধাভাজন, তারা খারাপ কথা বললে, অন্যায় কথা বললে, তাদের ওপর ভক্তদের রাগ করা ঠিক নয়। তারা যা বলেন তা সবই তাদের চিন্তার স্তরের কথা, তাই ভক্তদের তা গায়ে মাখা উচিৎ নয়। শ্রীগুরু সঙ্গ বা সান্নিধ্যে ভক্ত সদা সর্বদা ভাবেন আমি আর নিজের ইচ্ছাধীন নই, শ্রীগুরু যেখানে আমাকে নিয়ে যাবেন, সেইখানে পুতুলের মতো যেতে হবে, যা করাবেন, তা পুতুলের মতো করতে হবে। এই কথার অর্থ বোঝা কঠিন, তবে শ্রীগুরুর গতি-বিধি ভক্তের আক্ষেপ ও দুঃখের কারণও হতে পারে। 
ভক্ত ভাবতে পারে সে শ্রীগুরুকে উপেক্ষা করে কাজ করেছে বা করছে। তা ভাবা ঠিক না। শ্রীগুরু ভক্তের বিরুদ্ধে অনেক দোষের কথা বলেন, ভক্ত যে তাতে অসন্তুষ্ট হয়, তা স্বাভাবিক। কিন্তু এখন ভক্তের আর কোন স্বাধীনতা নেই, এর পরে ভক্তকে বুঝতে হবে যে তার সব কাজ নিজের ইচ্ছার ওপর নির্ভর না করে শ্রীগুরুর আদেশেই হয়। ভক্ত আসবে, শ্রীগুরুর কথার তাৎপর্য হৃদয়ঙ্গম করবে। শ্রীগুরু তাঁর অপার করুণায় যে আলোক দেখছেন এবং ভক্তকেও দেখাচ্ছেন, তা তাঁরই ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। 
সাধারণ মানুষ স্বদেশকে একটা জড় পদার্থ, কতগুলো মাঠ-ক্ষেত্র বন পর্ব্বত নদী বলে জানে, শ্রীগুরু স্বদেশকে মা বলে জানেন, ভক্তি করেন, স্মরণ করেন। ভক্তরা জানেন এ পতিত জমিকে উদ্ধার করার বল শ্রীগুরুর পায়ে আছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন