শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

সময়ের সাফ কথা…. দেশের ভাবমূর্তি জোটতন্ত্র!

সময়ের সাফ কথা…. 

দেশের ভাবমূর্তি জোটতন্ত্র!

সংলাপ ॥ জাতীয় শোক দিবস মানে কি দেশের স্বাধীনতার জন্য, বিদেশি শাসকের হাত থেকে দেশমাতৃকার শৃঙ্খল উন্মোচনের জন্য, যে দেশনায়ক জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করে হাসিমুখে জীবনোৎসর্গ করেছিলেন, সেই বীর সেনানীর সমাধিতে মাল্যদান শুধু? এই কি তাঁর প্রতি, তাঁর অভীপ্সার প্রতি, তাঁর আত্মত্যাগের প্রতি এবং সর্বোপরি, আমাদের অর্জিত স্বাধীনতার প্রতি প্রকৃত ও যথার্থ ন্যায়বিচার? না; জাতীয় শোক দিবস মানে, আরও বেশি কিছু।
শুধু কি নির্বাচনই  গণতন্ত্রের একমাত্র শর্ত? নির্বাচন করলেই কি একজন গণতান্ত্রিক হয়? আবার তারা মিলে একটা সরকার গঠন করলেই কি ওই সরকার গণতান্ত্রিক এমনটা মেনে নেয়া যায়? তাদের গণঅঙ্গীকারের প্রতি সামান্যতম শ্রদ্ধাবোধ না থাকলে, যখন তা একতন্ত্র থেকে দলীয়তন্ত্রের দানবীয় আগ্রাসন হয়ে গণমানুষের বুকের উপর চেপে বসে, তখন কি তাকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলে মানা যায়?
বর্তমান জোট সরকারের এখন শেষ পর্ব চলছে, মাত্র হাতে গোনা কয়টি মাস বাকি। এ সরকারের সময়ে অনেক আন্দোলন অঙ্কুরেই ঠিকই দমন হয়েছে, বৈদ্যুতিন মাধ্যমে চমৎকারভাবে উপস্থাপিতও হয়েছে। ভবিষ্যতের জন্য রাজনীতিকরা সেসব দেখে হয়তো নতুন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচী নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত।
বাঙালি জাতির কাছে আগষ্ট মাস উপলব্ধির মাস, আগষ্ট মাস সচেতনতার মাস, আগষ্ট মাস শপথের মাস, আগষ্ট মাস জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের মাস। আগষ্ট মাস বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ‘সোনার বাংলা’ অর্জনের জন্য ‘জয় বাংলা’ হাতিয়ার ধারণ-লালন-পালন করার বজ্র শপথের মাস। আশ্চর্য হয়েছি এবং হই যখন দেখলাম, আমাদের ধৃষ্টতা বুঝে বা না বুঝে জাতির পিতার জন্য ‘মাগফেরাত’ চাওয়ানো হচ্ছে তথাকথিত ওহাবী ইসলামের ধর্মজীবীদের দ্বারা বিশেষ করে ১৫ আগষ্টের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে! বর্তমান ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশ তথা বাঙালি জাতির পিতা ছিলেন-আছেন-থাকবেন বাঙালির অন্তরে। তাঁর ‘মাগফেরাত’ চাওয়া ধৃষ্টতা নয়কি? কোন শাস্ত্রীয় ধর্ম কি এটা অনুমোদন দেয়? যতদূর জানা যায় মুহাম্মদী ইসলাম অনুমোদন দেয়না। জাতির পিতার আদর্শিক পথে চলার ক্ষমতা অর্জনে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতাই তো রাজনীতিকদের জীবন চলার পথের পাথেয়। ভুলে গেলে চলবে না আমাদের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং সেই রাষ্ট্র তথা বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। ধর্ম মন্ত্রণালয় একটু মুহাম্মদী ইসলাম নেড়েচেড়ে সত্যটা কি, তা কিভাবে জাতির কাছে তুলে ধরা যায় সেটার চেষ্টা করবেন এটাই জাতির প্রত্যাশা।
দলীয়তন্ত্রের মোড়কে গণতন্ত্রে এখন সরকারের উন্নয়নে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে, গণমানুষের অর্থের বিনিময়ে ক্ষমতার লোভে রাজনৈতিক দলগুলোকে বিদেশী দালাল নিয়োগ করতে হচ্ছে। গণতন্ত্রের যে দানবীয় চেহারাটা রাজনীতিকরা ইতোমধ্যেই বিশ্ব দরবারে হাজির করে দিয়েছেন ৪৭ বছরে, তাকে একটু ঘষে মেজে পালিশ করবে এই ভাড়া করা দালালরা। দলগুলোর এসব সিদ্ধান্তে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হবে তার জন্য কাউকে কোথাও জবাবদিহি করতে হয় না। অনেক আগেই বিশ্বব্যাংক তাদের নিয়মিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থা পর্যালোচনায় পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তায়িত জবাবদিহিতাহীন রাজনৈতিক প্রশাসনের কারণেই ধর্মান্ধ সন্ত্রাসীদের উত্থান। যার কারণে বিরোধী রাজনীতির সাথে সংঘাতময়তা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েই চলছে, যার কারণে নির্বাচন প্রক্রিয়া অচল হতে পারে বলে হুমকি আসছে এবং আগামী নির্বাচনও কালো টাকার অবাধ প্রসারে অবধারিত নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ হলেও হতে পারে। দেশের মানুষের কাছে অবশ্য এ সংবাদ নতুন নয়, এমনকি ক্ষমতাসীন জোট সরকারও এ ব্যাপারে মোটেও অজ্ঞ নয়; কারণ ধর্মান্ধ আর ধর্মব্যবসায়ী রাজনীতির সাথে তাদের সম্পর্কও বিদ্যমান। আজ, বোতলের দৈত্য দাঁত বের করে তাদেরকে দাঁতাল হাসি উপহার দিচ্ছে। ধর্মান্ধ আর ধর্মব্যবসায়ীরা সব জোটের মধ্যেই কঠিন ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে। যাদের দুর্নীতি আর ষড়যন্ত্রের ফলে জাতিকে অনেক জানমালের ক্ষতি নীরবেই মেনে নিতে হয়েছে এবং হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্র আর উন্নয়নের কথা বলছেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। তিনি ছুটছেন, বিরামহীন প্রায় প্রতিদিন। সর্বত্রই তার জনসভা। জনতা উপচে পড়ছে। গ্রাম বাংলার মানুষেরা তাতে কতখানি আশ্বস্ত হতে পারছেন তার বিবেচনা তখনই করা সম্ভব হবে যখন নির্বাচন হবে এবং মানুষ তার ভোট প্রয়োগ করতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী যে তার নির্বাচনী প্রচার ইতোমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন, দেশের কোনায় কোনায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁর দলকে আবার নির্বাচিত করার জন্য বার বার আবেদন রাখছেন – গণতন্ত্রের ধারক বাহক প্রমাণ করতে চাচ্ছেন, তাঁর কি একবারও স্মরণে আসছে বাংলাদেশের রাজনীতিকরা কতখানি গণতন্ত্রে বিশ্বাস রাখেন? দেশের প্রত্যেকটি অঙ্গনে জবাবদিহিতা আছে বলে তো দেশবাসী কখনো প্রত্যক্ষ করেননি। বরং উল্টোটাই তো প্রমাণিত হয়েছে। সব সরকারের উন্নয়ন বাজেটের ষাট শতাংশ লুটে নিয়ে রাজনীতিকরা তাদের দলীয় সাইনবোর্ড লাগানো নেতাকর্মীরাই রাজকীয় সংবর্ধনা দিয়ে চলছে তাদের নেতাদের। তারা দেশের প্রতিটি এলাকায়ই আছে এবং তারা প্রত্যেকেই নব্য জমিদার। তারাই আবার গণতন্ত্রের প্রত্যক্ষ রক্ষক। এ বাস্তবতা দেশবাসী ভালো জানেন, কিন্তু তারা বুঝতে পারেন না কেন প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রতিটি সভায় বক্তৃতায় বলে আসছে – গণতন্ত্র, উন্নয়নের ধারা, বিরোধী রাজনীতিকরা ক্ষমতার লোভে দেশ ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছে সুতরাং যোগ্য রাজনীতিকদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত।
তিনি এখনও পরিপূর্ণ পারেননি জাতীয় গণশত্রু স্বাধীনতা বিরোধীদেরকে ত্যাগ করে ধর্ম ব্যবসার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে গণমানুষের গণতন্ত্রের সত্যিকার জননীতির প্রতি আনুগত্য রাখতে। তিনিতো ভাল করেই জানেন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে অনেক আগেই আকাশ ছুঁয়েছে – গণজীবনের ত্রাহী রবও তিনি শুনতে পান, তাহলে বাস্তবতার নিরীখে তিনি জাতির পিতার সত্য ও আদর্শের পতাকাবহনকারী কান্ডারি হোন এটাইতো জাতির প্রত্যাশা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন