শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

সততার প্রতীক হলে ভয় নেই

সততার প্রতীক হলে ভয় নেই

সংলাপ ॥ জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে যেভাবে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপোষণের অভিযোগের পাহাড় জমছে তাতে দুর্নীতি দমন যদি সক্রিয় হয় এবং নিরপেক্ষ ভূমিকা নেয় তাহলে যেকোনও সময় জেলযাত্রা অনিবার্য হতে পারে।
জনপ্রতিনিধিরা ধোয়া তুলসীপাতা হয়ে যাননি। তেমনি যারা মন্ত্রী হয়েছেন তারা সকলেই নিষ্পাপ, নিষ্কলঙ্ক, সততার প্রতীক এমনটা ভাবার কারণ নেই। যে যে পদেই থাকুননা বা যত ক্ষমতাশালীই হোন না কেন তাদের অভিযোগমুক্ত রাখা গণতন্ত্রের বিধান হতে পারে না। জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করার অধিকার নাগরিকদের আছে এবং সেই অধিকার বলেই নাগরিকরা অভিযোগ পেশ করতে পারেন দুর্নীতি দমনের কাছে। দুর্নীতি দমন তদন্ত করে সেই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করবে। গণতন্ত্রে মন্ত্রীদের সঙ্গে সাধারণ নাগরিকের কোনও পার্থক্য নেই। এমনটা ভাবা অপরাধ যে জনপ্রতিনিধি বা মন্ত্রী হলে যে কেউ সৎ, নির্দোষ, দুর্নীতিমুক্ত হয়ে যান। তাই তাদের দিকে আঙুল তোলা যাবে না। জনপ্রতিনিধি, মন্ত্রীদেরই এগিয়ে এসে বলা উচিত সততা প্রমাণ দিতে তারা প্রতি মুহুর্তে প্রস্তুত। দুর্নীতি দমনকে তাদেরই সর্বাগ্রে স্বাগত জানানো উচিত। যিনি সত্যিকারের সৎ, কোনও দুর্নীতির সঙ্গে যার কোনও সম্পর্ক নেই তিনি গলা উঁচিয়ে বলতে পারেন হোক আমার বিরুদ্ধে তদন্ত। কিন্তু যাদের ভয় আছে তারা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন দুর্নীতি দমনকে ।
সংসদের বিপুল সংখ্যাধিক্য এবং অনেকগুলো নির্বাচনী সাফল্যের গর্বেই হোক বা অন্য কোনও কারণে, বর্তমান সরকার গত ১০ বছর ধরে বিরোধীদের যাবতীয় মতামতকে নস্যাৎ করার নীতি নিয়েই এগিয়েছে মোটের উপর। বিরোধীতার পরিসরকে ঠেসে ধরার প্রবণতা ধরা দিয়েছে সরকারের চলনে-বলনে বারবার, তা গোটা বিরোধী পক্ষকেই জাতীয় রাজনীতিতে অস্তিত্বের সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে। অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে বিরোধী ঐক্য ত্বরান্বিত হতে পারে। পারস্পরিক ফারাক এবং স্বার্থের সংঘাত সরিয়ে রেখে প্রায় গোটা বিরোধী শিবিরকে এলোমেলো হতে সাহায্য করেছে এবং অভ্যন্তরীণ গ্রন্থিগুলোকে ক্রমেই শিথিল এবং ছিন্নভিন্ন করেছে। বিরোধী শিবির থেকে সার্বিক ঐক্যের কথা তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে। সে ঐক্য কতটা সংঘটিত হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এর পাল্টা বার্তা হওয়ার প্রয়োজন, বারবার সরকারের সব নীতি ও পদক্ষেপের পক্ষে গ্রামে-গঞ্জে এবং মাঠে জোরদার সওয়াল করা যা বিরোধীদের দ্বারা সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছে। আরো উচিত, বারবার শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা জ্ঞাপনের কথা জোর দিয়ে বলা।
সাম্প্রদায়িকতা, অসহিষ্ণুতা, গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের চেষ্টা, ভ্রান্ত অর্থনৈতিক পদক্ষেপ, প্রশাসনিক ব্যর্থতা, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়া এমন অজস্র অভিযোগে সব বিরোধী দল তীব্র স্বরে বিঁধবে সরকারকে। তার পরে শেখ হাসিনা নিজেই হয়তো সে সবের জবাব দেয়ার চেষ্টা করবেন। সংসদের বাইরে অর্থাৎ গোটা দেশের জনপরিসরে শেখ হাসিনার সেই জবাবী বার্তার জন্য পটভূমি তৈরি করা উচিত বহমান সময়ের সাথে তালমিলিয়ে।
সঙ্কটের সময়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ নেতা উঠে আসার ঐতিহ্য রয়েছে এই মহান দেশের। কারও কোনও বিকল্প নেই, এই ধারণা সঠিক নয়। দেশের জনগণ সন্ত্রস্ত। গণতন্ত্রের জায়গা নিচ্ছে জনতাতন্ত্র (মবোক্র্যাসি)। শিল্প-সংস্কৃতির স্বাধীনতাও খর্ব করা হচ্ছে। এসব নিয়ে অর্থবহ উন্নয়ন হয় না। তবে সঙ্কট পার হওয়ার অভিজ্ঞতা এ দেশের মানুষের রয়েছে। মানুষই সঠিক পথ খুঁজে নেবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন