শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

সময়ের সাফ কথা…. গুজব ছড়ানো বন্ধের দাবী রাখে

সময়ের সাফ কথা…. 
গুজব ছড়ানো বন্ধের দাবী রাখে
সংলাপ ॥ মিথ্যাচার ক্ষেত্রবিশেষে সত্যের চেয়ে ক্ষমতাধর। আর গুজব? ক্ষতিকর অথবা ভয়ংকর পরিণতি ঘটানোর ক্ষেত্রে সে তো কোনও সীমানাই মানে না। সত্য সরল। ডালপালাহীন। তীরের মতো সোজাপথে ধাবিত হয়। গুজবের সহগ্র ডানা গজাতে সময় নেয় না। গুজবের জেরে নানা সময়ে দেশে তথা সমগ্র বিশ্বের নানা জায়গায় বহু ভয়ংকর ঘটনা ঘটে গেছে এবং যাচ্ছে। গুজবের জেরে বহু নিরপরাধ মানুষকে অতীতে কঠিন মূল্য দিতে হয়েছে। কাউকে প্রাণের বিনিময়ে, কাউকে-বা সম্পদ-সম্পত্তি অথবা মানমর্যাদা খুইয়ে। গুজবের জেরে সুখের সংসার পর্যন্ত ভেসে যেতে পারে।
দেশে জ্বলে উঠতে পারে অশান্তির আগুন। সামাজিক মাধ্যমে রমরমা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একশ্রেণীর লোকজন এর অপব্যবহারে উঠেপড়ে লেগেছে। তার ফলও ফলতে শুরু করেছে। এই শ্রেণীর লোকজন কখনও অসৎ উদ্দেশ্যে, আবার নেহাত উত্তেজনা সৃষ্টির লক্ষ্যেই সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরনের গুজব ছড়ানো ক্রমশ বাড়িয়ে চলেছে। আপাতত এই ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার তেমন জোরদার আইন কার্যকর না থাকায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। গত কয়েক মাস যাবৎ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে পরিবেশিত হরেকরকম ‘তথ্যে’র উপর নজর দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। ইদানীং একশ্রেণীর সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীর ভূমিকা দেখে মনে হয় তারা দেশে অশান্তি আমদানি করার ব্রত নিয়েছে। এই উদ্দেশ্যে এমন অনেক গুজবকে ‘তথ্যের মোড়কে’ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে যাতে হাজার হাজার মানুষ অকারণে উত্তেজিত হয়ে ভয়ংকর কান্ডকারখানা ঘটিয়ে ফেলতে পারে। আশঙ্কা প্রবল। এই আশঙ্কা যে অমূলক নয় তার প্রমাণও মিলল গত কয়েকমাসে।
নির্বাচনের কয়েকদিন আগে একটি সামাজিক মাধ্যমে কে বা কারা গাজীপুর জেলার কিছু এলাকায় জঙ্গি ঢুকে পড়ার গুজবও রটিয়ে দেয়। ওই গুজব পল্লবিত হয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বহু মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ফল ফলতেও দেরি হয় না। এলাকায় বেশ কয়েকজন নিরীহ সাধারণ মানুষ এবং ভবঘুরে অকারণে ব্যাপক মারধরের শিকার হন। ব্যাপারটা আর ভয়াবহ আকার নেয়নি। গুজবের এই অবাধ গতিতে অবিলম্বে লাগাম টানতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে গোটা সমাজকেই কঠিন মূল্য দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। গুজব এক অর্থে আগুনের মতোই সর্বগ্রাসী। গুজবের আগুন ছড়িয়ে আজ অন্যের ঘর পোড়ানোর আনন্দে কেউ মশগুল হয়ে থাকলে একদিন নিজের ঘরটুকুও অক্ষত থাকবে না। আগুন যেমন শত্রু-মিত্র বাছবিচার করে না, নাগালে যা পায় তাকেই গ্রাস করে, গুজবও তাই। কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। আজ না হোক কাল – একদিন তা মালুম হবেই।
সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের সিংহভাগই তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ। কথায় বলে, একটা নিরক্ষর মানুষের হাতের তলোয়ার যত মানুষকে হত্যা করতে পারে, একজন শিক্ষিত ও ক্ষমতাধর মানুষের অশুভ প্রয়াস অনেক কম সময়ে শতগুণ মানুষের জীবনের আলো নিভিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। তাই, নৈতিকতা, সততা, সামাজিক দায়বদ্ধতার মতো মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে শিকেয় তুলে কেবল বিশেষ স্বার্থপূরণ অথবা মজা পাওয়ার লক্ষ্যে গুজব ছড়ানো ক্ষমাহীন অপরাধ। এই অপরাধ রোখার প্রধান দায়িত্বও জ্ঞানবান শিক্ষিত সমাজকেই নিতে হবে। সজাগ থাকতে হবে প্রশাসনকেও। এক্ষেত্রে যে কোনও রকম বেয়াদপি দেখলেই যাতে কড়া হাতে দমন যায় তার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্তরকম উদ্যোগ নিতে হবে। নইলে ভবিষ্যৎ ক্ষমা করবে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন