শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

সময়ের সাফ কথা…. ক্ষমতার ধান্দা নয় মতাদর্শ

সময়ের সাফ কথা…. 

ক্ষমতার ধান্দা নয় মতাদর্শ


সংলাপ ॥ যে-কোনও সংসদীয় গণতন্ত্রে বিচারপতিরা, সংসদ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা, আইনপ্রণেতারা, মন্ত্রীরা এবং আমলারা জানেন যে, ক্ষমতাটি প্রকৃতপক্ষে কোথায়। আসল ক্ষমতাধর হচ্ছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা, যাঁরা তাঁদের মধ্যে থেকেই একজনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেন। এর বাইরেও থাকেন সর্ব্বোচ্চ পদে একজন নিযুক্ত কর্মকর্তা। তাঁকে রাষ্ট্রপতি বলা হয়। তিনিও তাঁর পদমর্যাদা উপভোগ করেন। তবে, মন্ত্রিসভার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা ও পরামর্শ (এইড অ্যান্ড অ্যাডভাইস) নিয়েই তাঁর যা কিছু করার করতে হয়।
একটা প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারে এই ‘এইড অ্যান্ড অ্যাডভাইস’ নামক বাগ্ধারাটা অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। এইড অ্যান্ড অ্যাডভাইস দেয়া-নেয়ার প্রশ্নে দাতারা অবশ্যই হচ্ছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি বা প্রকৃত ক্ষমতাধর ব্যক্তি এবং গ্রহীতা হলেন একজন খেতাব সর্বস্ব শীর্ষপদাধিকারী। এই নীতি গণতান্ত্রিক বিশ্বে এতটাই সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে যে যদি কোনও পদাধিকারী এর উল্টো পথে হাঁটার চেষ্টা নেন তবে ধরে নিতে হবে যে তিনি অকারণ মিথ্যে ক্ষমতা ফলাতে চাইছেন।
ধান্দার রাজনীতি নয়, এখন সময় মতাদর্শকে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়া, চলতে হবে এ পথেই। সত্য বড় সরল। কিন্তু সত্য বড় সহজ নয়। সত্য সরল, কারণ সত্যে কোনও জটিলতা নেই। কিন্তু সত্য সহজ নয়, কারণ সত্যের পথে অবিচল থাকা বেশ কঠিন। মুখে সত্যের উপাসক হলেই চলে না। যা বলছি, তাতে বিশ্বাসও রাখতে হয়। সেই বিশ্বাসকেই আজীবন যাপন করতে হয়। তা না হলে সত্য সঙ্গ ছেড়ে দেয়, ভন্ডামির মধ্যে বাঁচা শুরু হয়। অতিপরিচিত ঢাকা শহরও যেন সেই ভন্ডামিতে গা ভাসাচ্ছে।
ঢাকা শহরকে কি রাজনৈতিক তিলোত্তমা নামে ডাকা যায়? সংশয় তৈরি হয়। খুব অচেনা লাগে এই শহরকে। রাজনীতির উদার-উদাত্ত চরিত্র কি হারিয়ে ফেলছে ঢাকা? যদি হারিয়ে ফেলতে থাকে, তা হলে সে বড়ই দুর্ভাগ্যজনক হবে। তবে ঢাকাকে বদলে যেতে দেখে শুধু হা-হুতাশ করাই যথেষ্ট নয়। এর প্রতিবাদ হওয়া দরকার, প্রয়োজনে প্রতিরোধও হওয়া দরকার। চেনা শহর তথা প্রিয় শহরটাকে দেখে যাদের মনে হচ্ছে, শহর অচেনা-অপ্রিয় হয়ে উঠছে, তাদের সবার সক্রিয় হওয়া উচিত। সচেতনতার লক্ষ্যে নিজের নিজের মত করে কাজ শুরু করা উচিত।
এ শহরে বসেই কেউ এক সময় স্বপ্ন দেখতেন গোটা পৃথিবীকে নবজাতের কাছে বাসযোগ্য করে তোলার। রাজনীতিকদের প্রত্যেককে সচেতন থাকতে হবে, সেই স্বপ্নকে বুক দিয়ে আগলে রাখতে হবে। নিজেদের শহরটাই নবজাতকের কাছে বাসের অযোগ্য না হয়ে উঠে। আয়নার সামনে দাঁড়াতে হবে। স্মরণ রাখতে হবে, উদারতা, সহিষ্ণুতা, বিশ্বজনীনতার কথা। শুধু মুখে বললে চলবে না। সে সত্যে বিশ্বাস রাখতে হবে, সে সত্যকে সঙ্গী করেই বাঁচতে হবে। তবেই ঢাকা স্বকীয়তায় অমলিন থাকবে।
মানবতায় কৃতিত্ব। যখন বার বারই দেশ তথা সমগ্র বিশ্ব জুড়ে মানবতার অস্তিত্ব বিপন্ন বলে শোরগোল ওঠে, তখন কিছু ঘটনা অপ্রত্যাশিতভাবেই প্রমাণ করে দেয় অস্তিত্ব বিপন্ন হলেও তা এখনও সম্পূর্ণ মুছে যায়নি। আর মুছে যায়নি বলেই বিপদ আসলে এখনও কিছু স্বার্থগন্ধহীন হাত প্রসারিত হয়, যাদের অবলম্বন করে পরিত্রাণের পথ খুঁজে পাওয়া যায়। এটাই মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। একের প্রয়োজনে অন্যের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। এই কাজ যে সে সর্বদা স্বার্থহীনভাবে করে থাকে, তা হয়তো নয়। হয়তো স্বার্থ আছে। আত্মতৃপ্তির স্বার্থ। অন্যকে সাহায্য করবার মধ্য দিয়ে মানুষ এক ধরনের আত্মতৃপ্তির সন্ধান পায়। বোধকরি এর তাড়নাতেই সে বারবার পড়শির বিপদের দিনে নিজের ঘরের ভাত-তরকারি পাঠায়, দুর্ঘটনা ঘটলে পুলিশ-দমকল পৌঁছাবার ঢের আগে স্থানীয়রাই উদ্ধারকার্যে হাত লাগায়, পরিত্যক্ত শিশুকে আশ্রয় দিতে দ্বিধাহীন ভাবে এগিয়ে আসে। তবে এ সত্যও অনস্বীকার্য যে, ক্ষুদ্র স্বার্থ ক্রমশ সেই স্বাভাবিক প্রবৃত্তিকে নষ্ট করে ফেলছে। সামনে সমূহ বিপদের দেখা না মিললে সেই মানবতার দর্শন পাওয়া যায় না। অথচ এ প্রবৃত্তিকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে দেশের অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। অন্য দেশের মানুষ বিপন্ন হলে পড়শি দেশ হতে স্বতঃস্ফূর্ত সাহায্য আসবে, এমনই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এই স্বাভাবিক ঘটনাকেই বারবার আটকে দেয়া হয় কিছু ক্ষুদ্র ও অসার রাজনীতি এবং কূটনীতির অজুহাতে। এ বাধা অপসারিত হওয়াই কাম্য। মানবতার স্বার্থে। পৃথিবীতে শান্তির স্বার্থে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন