বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭

মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য পূরণে দরকার সার্বিক অঙ্গনে সচেতনতা

মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য পূরণে দরকার সার্বিক অঙ্গনে সচেতনতা


শাহ্ ফুয়াদ ॥ জাতি গত শনিবার ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত বিজয়ের ৪৬তম বার্ষিকী পালন করলো। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে জন্ম নিয়েছিল একটি নতুন দেশ-স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সন্তানদের সংগঠন প্রজন্ম একাত্তর’ এর প্রশ্ন - ‘তোমাদের যা বলার ছিল বলছে কি তা বাংলাদেশ?’ এর সঠিক জবাব এখনো কেউ দিতে পারছে না। এর কারণ অবশ্যই জাতিকে খুঁজে বের করতে হবে। ৪৬ বছর একটি জাতির জন্য নিশ্চয়ই কম সময় নয়। 
বিজয় দিবসের দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সোহরায়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও লাখো শহীদের ত্যাগের মহিমায় নিজেদের গড়ে তুলতে তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এক মূহুর্তের জন্যও এটা ভোলা যাবে না, আমরা বিজয়ী জাতি, বীরের জাতি। আমরা মাথা নত করে চলি না। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা’।
এদিকে দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী বাংলা একাডেমির সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান সম্মিলিতভাবে স্বাধীনতাযুদ্ধের আদর্শিক লক্ষ্য পূরণ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে একাডেমির নজরুল মঞ্চে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শিক লক্ষ্য ছিল, তা এখন পর্যন্ত পূরণ করা যায়নি। তিনি বলেছেন, ‘একাত্তরের ১৬ই ডিসেম্বর আমরা যে বিজয় লাভ করেছিলাম, তা শুধু মাটি ও পতাকার জন্য ছিল না। আমাদের যে আদর্শিক লক্ষ্য ছিল, তা শুধু মাটি ও পতাকার বিজয় ছিল না। আমাদের যে আদর্শিক লক্ষ্য ছিল, তা আমরা এখন পর্যন্ত পূরণ করতে পারিনি। আমাদের কর্তব্য হবে, আগামী দিনগুলোয় মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক লক্ষ্যগুলো পূরণ করা। এটা যদি আমরা করতে পারি, তাহলে আমরা সমৃদ্ধ বাংলাদেশের যে স্বপ্ন দেখি, তা সম্পূর্ণ হবে।  
এর আগে রাজধানীতে ‘৭ই মার্চ মুক্তি ও স্বাধীনতার ডাক বাংলার ঘরে ঘরে, ৭ই মার্চ সম্পদ আজ বিশ্বমানবের তরে’ শ্লোগানে আয়োজিত সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, ‘আমরা স্বাধীন হয়েছি; কিন্তু পরাধীনতা ও সাম্প্রদায়িকতা থেকে মুক্ত হইনি। অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকেও মুক্ত হইনি। অসম্পূর্ণ যে কাজগুলো আছে, তা আমাদের পূর্ণ করতে হবে। আমাদের নতুন প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন পূরণ করবে। এটা তোমাদের দায়িত্ব। নতুন প্রজন্মকে দেশটাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলার শপথ করতে হবে।’   

এবার দেশ ও জাতি আনন্দের সঙ্গে পালন করেছে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের ৪৬ বছর। রাষ্ট্র, সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটি পালনের ধুমধামের কোন ঘাটতি হচ্ছে না। কিন্তু বিবেকবান সকলের মুখে একটি কথা এখনো ঘুরে-ফিরে আসে তা হলো, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক লক্ষ্য আজও পূরণ হয়নি। এই ব্যর্থতার দায়-দায়িত্ব এই জাতির সকলকেই নিতে হবে। শুধুমাত্র সরকার বা রাষ্ট্রকে দোষ দিলে হবে না, কারণ, এদেশের প্রতিটি নাগরিকই সরকার ও রাষ্ট্রের অংশ। প্রতিটি নাগরিক সচেতন হলে তাদের সরকারও সচেতন হতে বাধ্য। মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবে কেবল আদর্শিক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাই। যে অপার সম্ভাবনার দুয়ার আজ তৈরি হয়েছে স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর, তারই প্রেক্ষাপটে বিবেকবান জাতি সেই আদর্শিক রাজনীতিই আশা করছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শ্রেণীর রাজনৈতিক সংগঠনসমূহের কাছ থেকে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন