মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০১৩

আল্লাহ্‌ কেন এক উম্মত বানাননি?


আল্লাহ্‌ কেন
এক উম্মত বানাননি?
 
দিগন্ত ॥ আর তোমার প্রভু-প্রতিপালক যদি চাইতেন অবশ্যই তিনি সব মানুষকে এক উম্মত বানিয়ে দিতেন। কিন্তু তারা সব সময় মতভেদ করতেই থাকবে’ (সুরা হূদ : ১১৮)।

আর আল্লাহ চাইলে তিনি তাদের এক উম্মত বানিয়ে দিতেন, কিন্তু তিনি যাকে চান নিজ কৃপার অন্তর্ভুক্ত করেন। (সুরা আশ শুরা : ৮)।

আর আল্লাহ যদি চাইতেন তিনি অবশ্যই তোমাদের সবাইকে একই উম্মতে পরিণত করে দিতেন। কিন্তু যে পথভ্রষ্ট হতে চায় তিনি তাকে পথভ্রষ্ট হতে দেন এবং যে সঠিক পথ পেতে চায় তিনি তাকে সঠিক পথ দেখান। আর তোমরা যা-ই করতে সে সম্পর্কে তোমাদের অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে’ (সুরা আন নাহল : ৯৩)।

আর আল্লাহ যদি চাইতেন তোমাদের সবাইকে তিনি একই উম্মত করে দিতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের যা দিয়েছেন তা দিয়ে তোমাদের পরীক্ষা করতে চান। অতএব তোমরা সৎকাজে পরস্পর প্রতিযোগিতা কর’ (সূরা আল মায়েদা : ৪৮)।

এইভাবে কুরআনে বারবার সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে, ল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে সব মানুষকে একই দ্বীনের অনুসারী বানাতে পারতেন। আল্লাহ্‌ তায়ালা ইচ্ছা করলে মানুষকে শুরু থেকেই এমনভাবে সৃষ্টি করতে পারতেন যে, সে সৎ পথ ও সততা ছাড়া আর কিছু চিনতোই না, কিংবা সততার দিকে যেতে বাধ্য হতো কিংবা অন্তরে যদি কেবল সততার চেতনাই ঢুকিয়ে দেয়া হতো, ফলে কোনো চাপ প্রয়োগ ছাড়াই সত্য ও ন্যায়ের পথে চালিত হতো। কিন্তু আল্লাহ্‌ তায়ালা তা করেননি। আল্লাহ্‌ তায়ালার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এটাই ছিলো যে, তিনি মানুষকে সৎকাজ ও অসৎকাজ উভয়টাই করার ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করবেন এবং দুটোর মধ্যে যে কোনোটা বেছে নেয়ার স্বাধীনতা তাকে দেবেন এবং তারপর তাকে বিবেক ও বুদ্ধি দান করবেন, যা দ্বারা সে ভালো ও মন্দের যে কোনো একটাকে অগ্রাধিকার দেবে।

আল্লাহ পাক মানুষকে স্বাধীনভাবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টি এবং দুনিয়ায় মানুষকে পাঠানোর মূল উদ্দেশ্য হলো তাদের পরীক্ষার মুখোমুখি করা। তিনি ভালো তথা আল্লাহর পথ এবং মন্দ তথা শয়তানের পথ সম্পর্কেও বিস্তারিত জানিয়ে দিয়েছেন যেন মানুষ এই দুইয়ের কোনো একটি অনুসরণ করতে পারে। কে কোন্‌ পথ বেছে নিলো এর মাধ্যমেই পরীক্ষা হয়ে যায়। আল্লহর পথের অনুসরণ করতে চাইলে মানুষ শান্ত হয় এবং শান্তিতে থাকে আর শয়তানের পথ অনুসরণ করলে অশান্তির অন্ধকার গর্তে পতিত হয়।

কুরআনের সামগ্রিক বিশ্লেষণে প্রতিয়মান হয় যে, ল্লাহ হচ্ছেন জগতের কেন্দ্র। পরিধির যে কোন বিন্দু থেকে মানুষ কেন্দ্রর দিকে যাত্রা করতে পারে এবং একনিষ্ঠতার সাথে যাত্রা অব্যাহত রাখলে যে কোন বিন্দু থেকেই কেন্দ্রে পৌঁছতে পারে। তাই মানুষ যে ধর্মের অনুসারীই হোক না কেন আল্লাহই তাকে সে ধর্মের অনুসারী করেছেন। আল্লাহতায়ালা ইচ্ছা করলে সবাইকে একই ধর্মের অনুসারী বানাতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি নিজেই যেহেতু মানুষকে বিভিন্ন ধর্ম ও দল-উপদলে বিভক্ত করেছেন সেহেতু এক ধর্মের অনুসারী আরেক ধর্মের অনুসারীকে অসম্মান করা আল্লাহদ্রোহীতা। আমরা যদি শান্তিতে থাকতে চাই তাহলে সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

ল্লাহ বলেন, ‘আর তোমার প্রভু-প্রতিপালক যদি চাইতেন তাহলে পৃথিবীতে যারা আছে তারা সবাই অবশ্যই একসঙ্গে ঈমান নিয়ে আসত। তুমি কি তবে বল প্রয়োগে লোকদের মোমেন হতে বাধ্য করতে পার?’ (সুরা ইউনুস : ৯৯)। আল্লাহতায়ালা ধর্মের ব্যাপারে কারও উপর কোনও ধরনের বল প্রয়োগের অনুমতি দেননি। ধর্মের ব্যাপারে সবার স্বাধীনতা রয়েছে। এদেশের ৯০ভাগ মুসলমান যদি কুরআনের শিক্ষার উপর আমল করে তাহলে আমাদের সমাজে ইসলামের নামে কোন ধরনের অরাজকতা থাকবে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন