শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্রতম
উৎসব।
বৈশাখের পূর্ণিমা তিথিতে
এই পুণ্যোৎসবে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা স্নান করেন, শুচিবস্ত্র পরিধান করে মন্দিরে মন্দিরে বুদ্ধের বন্দনায় রত থাকেন। অর্চনার পাশাপাশি
তারা পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ, সমবেদ প্রার্থনা করেন।
বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ থেকে জানা
যায়, গৌতম বুদ্ধ খৃস্ট-পূর্ব
৫৬৩ সালে নেপালের শাক্যরাজ শুদ্ধোধন ও রাণী মহামায়ার সংসারে জন্ম গ্রহণ করেন। শৈশবে
তার নাম ছিল সিদ্ধার্থ। বড় হয়ে রাজ্যপাট,
রাজপ্রাসাদ, সংসার, ভোগ-বিলাস ত্যাগ করে মানব মুক্তির পথ খুঁজতে তিনি
গ্রহণ করেন সন্ন্যাস ধর্ম। ঘুরে বেড়ান বনে-বাদাড়ে। তপোবনের সন্ন্যাসীদের কাছে রপ্ত
করেন ধ্যানের নানা কৌশল। করেন ৬ বছর কঠোর সাধনা। অন্বেষণ করেন মানবমুক্তির পথের।
জগতে দুঃখ আছে, দুঃখের কারণ আছে, দুঃখের বিনাশ আছে এবং দুঃখ বিনাশের উপায়ও আছে।
দুঃখ বিনাশের উপায় বের করেন সিদ্ধার্থ। পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় বোধি বৃক্ষতলে জগতলোকিত
করে মানবমুক্তির পথ বের করেন মহামতি গৌতম। লাভ করেন বুদ্ধত্ব। কপিলাবস্তু থেকে শ্রাবস্তী, বৈশালী,
চুনার, কৌশাম্বী, কনৌজ,
মথুরা, আলবী (বর্তমান
নেপাল, ভারত, ভুটান,
পাকিস্তান, আফগানিস্তান)
প্রভৃতি বহু জায়গায় তিনি ৪৫ বছর ধর্মপ্রচার করেন। জীবনের শেষ অধ্যায়ে তিনি রাজগৃহ থেকে
কুশীনগর গমন করেন। কুশীনগরের কাছে পাবা নগরে উপস্থিত হয়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
তিনি মল্লদের শালবনে শালগাছের নিচে শয়ন করেন।
তখন আকাশে বৈশাখী পূর্ণিমার
চাঁদ উঠেছে। আলোয় চারদিক উদ্ভাসিত। অনন্ত আকাশের নিচে যুগ শালবৃক্ষের নিচে সমবেত শিষ্যগণ।
তিনি উচ্চারণ করেন মহাবাণী, 'উন্নত দ্রব্য
মাত্রেরই বিনাশ অবশ্যম্ভাবী, অপ্রমত্ত হয়ে
কর্তব্য সম্পাদন কর'। বৈশাখি পূর্ণিমাতেই
৮০ বছর বয়সে বুদ্ধ লাভ করেন মহাপরিনির্বাণ। বুদ্ধের মূলমন্ত্র 'সব্বে সত্তা সুখিতা ভবন্তু/জগতের সকল প্রাণী সুখী
হোক'। বুদ্ধ বলেছেন, জগতে কর্মই সব। মানুষ তার কর্ম অনুসারে ফল ভোগ
করবে। ভাল কাজ করলে ভাল ফল এবং খারাপ কাজের জন্য খারাপ ফল পাবে। কর্মানুসারে মানুষ
অল আয়ু, দীর্ঘ আয়ু, জটিল ব্যাধিগ্রস্ত, নিরোগ,
বিশ্রী-সুশ্রী, সুখী-দুঃখী, উঁচু-নিচু,
জ্ঞান-মূর্খতা ইত্যাদি প্রাপ্ত হয়। মানুষ কর্মের অধীন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন