শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর
যুবশক্তির একাত্মের মেলা
যুবশক্তি
কখনও কি বদনাম বা আঘাতের সম্ভাবনায়
নিজেদের আবেগকে হিসেবের আওতায় রাখতে পারে সত্যের পথে বেহিসাব
তো তাদেরই ধর্ম। অপরদিকে শাহবাগের প্রতিপক্ষ বীভৎসভাবে সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছে সুতরাংবাংলার
ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা। ঈশান কোণে মেঘ। বিপদ
আসবেই এবং তা জাতিকে মোকাবেলা করতেই হবে।
যু্ব সম্প্রদায় দলীয় মতামতের উর্দ্ধে উঠে শাহবাগের
একটা স্লোগানের সঙ্গে একশোভাগ একাত্মতায় আছেন সমগ্র বাঙালি জাতি। আর সেটা হলো 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচার' এবং 'সাম্প্রদায়িকতা'। অসাম্প্রদায়িকতা পরম্পরাগত কথার কথা নয়। শুধুমাত্র পারস্পরিক
ধর্মীয় সহনশীলতা নয়। একটা সর্বাঙ্গীন সভ্য, সুসঙ্গত সেই অসাম্প্রদায়িকতা,
যা মানুষকে একটা পরিচয়েই পরিচিত করে যে সে মানুষ। রাজনীতি,
অর্থনীতির ঘোরপ্যাঁচ বুঝে না, দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক
নেই, আবার রাজনীতির সম্পূর্ণ বাইরে অবস্থান করে - এমন অসম্ভব কথাও কেউ বলে না। বাংলাদেশের
সমাজজীবনের সঙ্গে যুব সমাজ ওতপ্রোতভাবে কান্ডারী হয়ে জড়িত,
তাকে অস্বীকার করার ক্ষমতা কারো নেই।
শাহবাগ এবং তার কাছাকাছি কাঁটাবন ইত্যাদি কয়েকটি স্থানে,
বর্তমান প্রজন্মের অগণিত তরুণ-তরুণী লেখক-বন্ধুদের সঙ্গে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে
পর্যবেক্ষণ, মেলামেশা করে, আড্ডা দিয়ে,
অনেকের সঙ্গেই হয় ভাব বিনিময়, ভালবাসা এবং পরিচয়। তাদের সৃজনশীল
কার্যকলাপে জাতি মুগ্ধ এবং গৌরবান্বিতও। বাংলাদেশের সামগ্রিক ক্রমোন্নতি দেশবাসীকে
উৎফুল্ল করে। বিগত কয়েক বছর হলো, এরা ধর্মজীবী,
ধর্মবেত্তা ও তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে বিবেককে ছিনতাই করে নিয়েছে। 'জয় বাংলা'
আর 'সাম্প্রদায়িক শক্তি নিপাত যাক'
এই আওয়াজ বাংলাদেশে আজও ঘরে ঘরে পৌঁছায়নি। আজকের কোনও প্রতিবাদী আন্দোলনই তো একটার
থেকে অন্যটা ভিন্ন নয় এবং সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী স্লোগান তো গোটা উপমহাদেশেরই সর্বজনীন
সামাজিক সমস্যার স্লোগান। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় ভিন্নতা বা দলীয় রাজনীতির কথা আসবেই বা
কেন, আর কেউ তা নিয়ে জলঘোলা করলেই বা জাতি তা মানবে কেন?
একাত্মতাটা শুধুমাত্র আবেগের উপর না হয়ে ধীরে ধীরে সংগ্রামে সৃজনশীল হচ্ছে এবং
সেই সংগ্রামটা শুধু শাহবাগের নয়, পরিপূরক হয়ে তা সঠিকভাবে বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ছে।
পরিপূরকটা কীভাবে হবে বা হচ্ছে সেটা নির্ধারণ করার এখনই সময়। ঠিকমতো হয় না বলেই অঘটন ঘটছে। ব্যাপারটাকে আবেগমুক্ত রাখা অবশ্যই প্রয়োজন।
শাহবাগ চত্বর অসাধারণ স্লোগান তুলেছে। একটা চূড়ান্ত
অসাম্প্রদায়িকতার আকাঙ্খায়। কিন্তু বাংলাদেশের ধর্মভীরু ইসলামি জনগণ কি সার্বিকভাবে
এই অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতিকে ধারণ করার শিক্ষায় আছে? তারা এই অসাম্প্রদায়িক
শিক্ষাকে গ্রামীণ স্তরে আত্মস্থ করেছে? কোন সরকার কি তাদের
এই বোধ গ্রামীণ ক্ষেত্রে প্রসারিত করতে পেরেছে? তারা কি মোহম্মদী
ইসলামকে প্রাতিষ্ঠানিক ইসলামের কবল থেকে মুক্ত করার কোনও কর্মসূচী পালন করেছে? ইসলামের যে ধারাটিকে তাদের অসাম্প্রদায়িক আন্দোলনে
অঙ্গীভূত করার প্রয়োজন ছিল, সেই কষ্টসাধ্য তৎপরতায় কি তারা আদৌ প্রচেষ্টা চালিয়েছে?
চালালে ধর্মভীরু সাধারণ মানুষ সেই দিক থেকে শিক্ষিত
হতো, অবশ্যই জামাতি, হেফাজতিরা তাদের সাম্প্রতিক প্রত্যাঘাতের সূচনা করতে
পারত না। এখন শঙ্কা হচ্ছে, অবস্থা বোধ হয় বীভৎসতার দিকে যাচ্ছে এবং লড়াইটা কঠিন
থেকে কঠিনতর হতে পারে বাংলাদেশে !
শাহবাগ আন্দোলনের স্লোগানগুলোর মধ্যে কোনটা সঠিক কোনটা
বেঠিক তা নিয়ে ধর্মপ্রাণ বাঙালি জাতির কোনও বক্তব্য থাকা ঠিক নয়। অসাম্প্রদায়িকতার
ব্যাপারটা শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা উপমহাদেশের জন্যই জরুরি
এবং সেটাই আজকের এই তমসাচ্ছন্নতার সময়ে আলোর দিক। তাকে অবশ্যই সমর্থন করতে হবে এবং তা স্ব স্ব পরিমন্ডলে
দাঁড়িয়ে। সংগ্রাম - আন্দোলন ভন্ডামি বিবর্জিত
হলে একদিন তা একই স্থানে অবশ্যই মিলিত হবে। শাহবাগের আন্দোলনকারীরা এবং সমগ্র যুবশক্তিকে
অসাম্প্রদায়িকতার চেতনাটা গ্রামের গভীরে ছড়িয়ে দেওয়ার কথাটা ভাববার সময় এসেছে। মা-বোনেদেরকে
এগিয়ে আসতে।? ধর্মীয় উগ্রবাদীরা কিন্তু নিরলসভাবে গ্রামগুলোকে নিজেদেরদুর্গ
বানিয়ে চলেছে। শাহবাগ সাম্প্রদায়িকতা - যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং অসাম্প্রদায়িকতাকে
আজ মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এবারের এই আন্দোলন আগের দিনের মতো আদৌ ফাঁপা নয়। সুতরাং
লড়াইটা প্রকৃতই কঠোর। অনেক কথাই শাহবাগ নিয়ে বলা যায়। বিশেষ করে মানসিক এবং সাংস্কৃতিক
যে নৈকট্যের আকাঙ্খা ইদানীং যুবশক্তি তথা দেশবাসীর প্রচেষ্টা,
এবং প্রাণের দাবী তা শুধু রাষ্ট্রশক্তির আন্তরিক অনুমোদনের বিষয় নয়। ভৌগলিক মানচিত্রের
ভিন্নতা যে আলাদা বন্দোবস্ত করে দিয়েছে তার সীমা পেরিয়ে?সমগ্র উপমহাদেশে?ছড়িয়ে পড়ছে?তথা সমগ্র বিশ্বে।
সংস্কৃতি কর্মীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশ ভাগ ব্যাপারটাকে সাংস্কৃতিক ঐক্য দিয়ে প্রতিহত
করা যায়। ক্ষমতা তথা আর্থক্ষমতার যারা কাঙ্খী তা তাদেরই থাক,
দেশবাসী শুধু সাংস্কৃতিক সাম্যে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলেই যুবশক্তি খুশি এবং সেজন্য
একটা সার্বিক অসাম্প্রদায়িক বাতাবরণ চাই। উপমহাদেশের সব দেশেই ধর্মধ্বজাধারী,
ধর্মজীবী ও ধর্মান্ধ এবং রাজনৈতিক ইসলামপন্থিরা প্রতিবন্ধক হয়ে তা দিতে রাজি নয়।
শাহবাগ চত্বরের চেতনা ধর্মজীবী ও ধর্মবেত্তাদের মনে ভীতির সঞ্চার করেছে। যদিও তার
প্রতিক্রিয়া ভিন্ন, কিন্তু খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে কারণটা এক,
সেটা যুবশক্তির উত্থান। ছাত্র-যুবদের কণ্ঠরোধ করতে হবে। সেটা কখনও ছাত্র-রাজনীতিকে
একতরফাভাবে?নৈরাজ্যের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে,
কখনও ইসলামকে অবমাননা, পয়গম্বরকে অবমাননা ইত্যাদির জিগির তুলে। যেখানে যেটা
সুবিধেজনকভাবে কাজে লাগানো যায়।
সময় এসেছে বাংলাদেশকে এখন তীব্র সঙ্ঘাতের মধ্য দিয়ে
যেতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কোনওভাবেই সাধারণ ধর্মভীরু মানুষ নিরপেক্ষ দর্শক হয়ে,
যুবশক্তির সাথে একাত্মতা পরিহার করে থাকতে পারে না। সমগ্র উপমহাদেশে যুবসমাজকেই
এই সংগ্রামের অংশীদার হতেই হবে এবং সহযোগীতার
হাত বাড়িয়ে দিতে হবে তা দেশ ও উপমাদেশের স্বার্থেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন