মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০১৩

রাজনীতিকদের মিথ্যাচারে জাতি দিশেহারা হয়ে সত্য খুঁজছে


রাজনীতিকদের মিথ্যাচারে জাতি দিশেহারা হয়ে সত্য খুঁজছে

 শয়তান মানুষকে বিপদের সময় ছেড়ে চলে যায় (২৫ঃ২৯)


সংলাপ ॥ বোমা ও ককটেল নিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেও হামলাকারীরা পবিত্র ধর্মের মুখোশে নিজেদের আসল উদ্দেশ্য ও পরিচয় আড়াল করতে চেয়েছে  । দেশবাসী তাদের উদ্দেশ্য সুস্পষ্টভাবে ধরতে পেরেছেন। ওদের উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিলম্বিত করে সরকার ও দেশের সুনাম নষ্ট করা। তাই চিন্তাবিদদের মতে দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্র ও শান্তি রক্ষার জন্য জনগণকেই সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ ও বোমাবাজদের কঠোর হাতে দমনের উদ্যোগ নিতে মাঠে নামার সময় এসেছে। এরই মধ্যে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে জনগণ মাঠে নেমে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।

বাংলাদেশে অসত্যের মেঘ ঢেকে

রেখেছে পুরো সত্যকে। ধর্মের নামে ধর্মজীবীরা নিজেদের তথাকথিত গড়া ইসলামের মুখোশে আড়াল করতে চাচ্ছে তাদের আসল উদ্দেশ্য ও পরিচয়।

অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন ভাষণেও আড়ালে থেকে গেছে বাংলাদেশের

রাজনীতিতে ধর্মের অবস্থান কোথায়।

রাজনীতিকদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে  দেখা গেছে দেশের সুনাম-ভাবমূর্তি বিনষ্টের সঙ্গে বিরোধীদলীয় রাজনীতিকরা বেশী জড়িত! দেশের সুনাম বলতে তারা তাদের দলের  সুনামকেই বুঝিয়ে থাকেন কার্যত।  পত্র-পত্রিকা-ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সচিত্র সংবাদ থেকে এদের পরিচয় ও মিথ্যাচার প্রতিদিন দেশবাসী জানতে পারছে অনেকেরই বর্তমান ও অতীত এমনকি চৌদ্দগোষ্ঠীর ঠিকুজি। গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে আওয়ামী লীগ কিংবা বর্তমানে সরকার বিরোধী অবস্থান গ্রহণকারী  বিরোধী দলেররই নেতা-কর্মী থাকলেও বর্তমানে বেশীরভাগের পরিচয় মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, মাদ্রাসার ছাত্র, মাদ্রাসার শিক্ষক, বর্ণচোরা বিভিন্ন ইসলামি(!) সংগঠনের সব জেহাদী (!) সশস্ত্র ক্যাডার। আটকাবস্থায় এরা যেমন পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাছে বুক ফুলিয়ে বলছে এরা দেশে ইসলামি হুকুমত’ (!) কায়েম করতে চায়, ক্ষমতা দখল করতে চায়, তেমনি আদালতে প্রদত্ত জবানবন্দীতেও নির্দ্ধিধায় বলছে যে তারাই বোমা বানাতে ককটেল ছুঁড়তে গিয়ে পুলিশের কাছে ধরা পড়েছিল, পরে  দালালদের বদৌলতে আবার ছাড়াও পেয়ে যাচ্ছে। প্রায় অভিন্ন কন্ঠেই এরা বলছে এদের জন্মদাতা, লালনকারী সংগঠনের। এদের প্রদত্ত স্বীকারোক্তি জবানবন্দীতে বেরিয়ে আসছে এদের প্রকাশ্যে ঘোষিত মূল হোতাদের নাম এবং একই সঙ্গে অপ্রকাশ্য নেতা ও মদদদাতাদের পরিচয়।

দেশবাসী উদ্বেগ, বিস্ময় ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছে খোদ প্রধানমন্ত্রী  এ নিয়ে দিক নির্দেশক আদর্শিক বক্তব্য দিচ্ছেন না। মিথ্যাচারে মেতে আছে ক্ষমতাসীন জোটের নেতা-মন্ত্রী-এমপিরা এবং বিরোধী জোট দেশবাসীর সামনে প্রকৃত সত্য তুলে ধরছেন না। সাংবিধানিক দায়িত্ব, নৈতিক দায়িত্ব থাকলেও সারা দেশে হরতাল, সন্ত্রাস, বোমা হামলা এবং গাড়ী পোড়ানোর পর বিরোধী জোটের শরিকদের বক্তৃতা বিবৃতি ও প্রকাশ্য মনোভাব এসবই পত্র-পত্রিকার বাড়াবাড়ি। আর যা কিছু অঘটন নাশকতামূলককাজ সবই সরকারের। সরকারের সাফল্যে ঈর্ষান্বিতহয়েই বিরোধীদল এসব করছে বলে দেশবাসী মনে করে।  আন্তর্জাতিক চাপ আর বাস্তবতায় বাধ্য হয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়  কঠোর হাতে দমনের উদ্যোগ নেয়ার ফলে যারা গ্রেফতার হচ্ছে তাদের সবই মার্কা মারা স্বঘোষিত ইসলামি জঙ্গি, মাঠ পর্যায়ের প্রাক্তন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী কিংবা বিরোধীদলীয় জোটেরই কোনো না কোনো তথাকথিত ইসলামিশরীক দলের জেহাদী সংগঠক ও ক্যাডার!

তারপরও কিছু ধর্মজীবী ও ধর্মবেত্তারা বলে চলেছেন ইসলামপন্থী কোনো সংগঠনের নেতাকর্মী এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়! বিরোধী জোটের শরিক নেতারা  বলছেন, কোনো মসজিদের ইমাম-মাদ্রাসা শিক্ষক-ছাত্র সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত নয়! প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে এরা কারা? এদের রাজনৈতিক পরিচয় কি? এরা কি তবে রাজনীতিতে এতিম? নাকি বিএনপির জামাতের তথাকথিত রাজনৈতিক ইসলাম এর ক্ষমতা যাওয়ার পথ প্রশস্ত প্রক্রিয়ায় এরা রত। জামাতের জঙ্গীদের (পা-কাটা, রগ-কাটা, গুম করা, বিভিন্ন দলের নেতাদের খুন করার ট্রাডিশন) ছত্রছায়ায় আগামী নির্বাচনে  বিএনপি জোট পুনরায় ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছে? হিসাবটি জনগণ কি ভাবে নিয়ে চিন্তাজগতে কোথায় অবস্থান করছেন তা কি বিএনপি জানে?

ক্ষমতাসীনদের মধ্যে কিছু সাংসদের মতোই মিথ্যাচারে ডুবে আছে ক্ষমতা হারানো প্রধানবিরোধীদলের সাংসদরা। ক্ষমতায় থাকার সময়, বিএনপি জঙ্গিদের নির্মূল করার পরিবর্তে তৎকারীন বিরোধীদলের ঘাড়ে দোষ চাপানোতে যেমন ব্যস্ত  ছিল তেমনি বিএনপি জোট বর্তমানে মিথ্যা প্রচার চালানোয় ব্যস্ত’ - এ কথা প্রমাণের জন্য তাদের সব কিছুতেই বারবার জনগণশব্দটা ব্যবহারই যথেষ্ট। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সুবিস্তৃত নেটওয়ার্ক থাকার পরও আওয়ামী লীগ ধর্মান্ধ শক্তির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার কোন উদ্যোগ দিতে এখনো সমর্থ হয় নি। বলার জন্য বলা, দোষারোপের একঘেয়ে ভাঙ্গা ক্যাসেটই কেবল বাজিয়ে চলছে আওয়ামী নেতারা। দেশবাসীর সামনে সত্য তুলে ধরার পরিবর্তে নির্বাচনী প্রস্তুতি ও নির্বাচনের কলা কৌশল নির্ধারণেই কাটছে দলটির সময়। আওয়ামী লীগ ও তার নেত্রী শেখ হাসিনার গোটা কর্মকা- দেখে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জাগছে শেখ হাসিনা কি আসলেই ক্ষমতায় যাওয়ার পথ পরিষ্কার করতে পেরেছেন। সংসদ অকার্যকর করতে মাসের পর মাস অধিবেশনে  যোগ না দিয়ে সংসদ সদস্যপদ তথা মন্ত্রীর পদমর্যাদার সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার পদ ধরে রাখা কি বিরোধী রাজনীতিকদের মিথ্যাচার ও সংকীর্ণ মানসিকতারই প্রতিফলন নয়?

তারপরও প্রশ্ন বিরোধী দলের নেত্রী থেকেও কি বেগম জিয়া তার দলের কমিটেডনেতাকর্মীদের রক্ষা করতে পারছেন? দূর ইতিহাসের কথা বাদ দিলেও নিকট ইতিহাস কি তাই বলে?

আত্মপ্রতারণা আর দেশের মানুষকে ধোঁকা দেয়ার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই বিরোধীদল। সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী, জোট নেতা ও এমপির নাম ধরে দূর্নীতি ও জঙ্গিদের মদদদাতা হিসাবে তাদের মন্ত্রীসভা থেকে বহিষ্কার ও গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে। কে কাকে মদদ দিচ্ছে বিষয়টি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে আসার পরও সরকার ও বিরোধী জোট মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে যেহেতু মিথ্যা বলাটাই রাজনীতির ভাষা বর্তমান বাংলাদেশে।

ক্ষমতাসীনআর ক্ষমতাহীনদের এসব মিথ্যাচার লুকোচুরি আর চোর-পুলিশখেলায় চাপা পড়ে যাচ্ছে জনগণের সত্য। পার পেয়ে যাচ্ছে ধর্মান্ধরা। ক্ষমতা নিয়ে কামড়া-কামড়ি আর খামচা-খামচিতে রক্তাক্ত হচ্ছে বাংলার মানুষ ও মাটি। এই দূষিত পরিবেশে জন্ম নিচ্ছে এবং হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠছে ধর্মান্ধ অপশক্তি।
আজও গরীব জনগণের সময়ের দাবি সত্যের উন্মোচন। দেশবাসী আজ সত্য জানতে চায়। সত্য তুলে ধরে, সত্য প্রতিষ্ঠা আজ জরুরি। জরুরি জাতির অস্তিত্বের জন্য, দেশের সম্পদ ও সার্বভৌমত্বের জন্য। সর্বোপরি, শান্তি (ইসলাম)-কে বিশ্ব মানবতার কাছে সমুন্নত রাখার জন্য প্রয়োজন একজন কান্ডারী এবং তার সৎ-স্বভাব।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন