সবই
যেন কানার হাট বাজার!
নজরুল ইশতিয়াক ॥ কোন্ বাস্তবতা - কোন্
অলংঘনীয় বিধান ও কোন্ সক্ষমতার জায়গা থেকে স্বাধীনতার চার দশক পরে এসে একাত্তরে মানবতা
বিরোধী ঘাতকদের বিচার হচ্ছে। দায় মোচনের অনিবার্যতা কেন দেখা দেয় এবং ক্ষমতাধরেরাও
শেষ পর্যন্ত কেন বিচারের মুখোমুখি হয়। এ সবই গভীর পর্যবেক্ষণের দাবি রাখে। ঘাতক খুনিরা
যতই ডালপালা শেকড় বাকড় গেড়ে বসুক না কেন যতই কলা কৌশল অপকৌশল রপ্ত করুক না কেন প্রতিফল
ভোগ করতেই হয়। পবিত্র কুরআন বিকৃত করে স্বরচিত মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে আপন বাসনা থেকে
জাতি বিনাশী মানবতা বিরোধী কোন অপকর্ম যারা করেন এবং করবেন তাদেরকে জীবদ্দশায় তার প্রতিফল
ফিরিয়ে দেখানো হয়। মহান করুনাময় স্রষ্টার এই বিধান লংঘিত হয় না। প্রকৃতপক্ষে সব অপরাধের
বিচার হয় এবং অপরাধীরা বিচারের মুখোমুখি হবেই। সব অপরাধীর সব ঘাতকদের সব নষ্ট ভ্রষ্ট
খুনি লুটেরা চক্রের শেকড় কাটা পড়ে। বস্তুত এদের শেকড় উপড়ে ফেলার এই ঘোষনা পবিত্র কুরআনের।
পবিত্র কুরআন ঘোষনা করছে এদের শেকড় কাটা। বাইরে থেকে এদের শেকড় ডালাপালা যত বিস্তৃই
দেখাক না কেন এরা বড়ই পরগাছা এদের শেকড় মাটির গভীরে পৌঁছায় না। মাটি, পানি, বাতাস
এদেরকে স্থান দেয় না। এরা খড়কুটো পরগাছা। যতটুকু ফুলে ফেঁপে বড় হয়েছে তা কেবলই কোন
মহাজনের দয়া-দাক্ষিন্যে আর তথাকথিত দেশপ্রেমিক ঈমানদারদের ধরি মাছ না ছুঁই পানি-র অবস্থানের
কারণে। প্লাষ্টিকের বৃক্ষের মত এসব বৃক্ষের কোন শেকড় নেই, কোন সুগন্ধি বিলায় না। সৌন্দর্যহীন।
পবিত্র কুরআন আরো ঘোষণা করেছে এরা মোনাফিক। এরা সরলের সাথে গরল মিশিয়ে দেয়। সত্যের
সাথে মিথ্যা জড়িয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে। এরা সুষ্পষ্টভাবে বিভাজন সৃষ্টিকারী
বিভেদ ও অশান্তির উদগাতা। এরা কাফির। মূক, অন্ধ, বধির। এদেরকে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে,
এরা দেখতে পায় না স্রষ্টার সৌন্দর্য। এদের সব অনুসরণকারী অনুকরণকারীরাও একই পথে চলছে।
এদেরকেও একদিন বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। সেই বিচার হবে দেশ ও জাতি হত্যার দায়ে, সেই
বিচার হবে মানবিক মর্যাদাকে ভুলুন্ঠিত করার অভিযোগে, সেই বিচার হবে পবিত্র ইসলামের
শান্তির আহ্বান আবেদনকে ভুল ব্যাখ্যা করার দায়ে। ধর্মকে পুঁজি করে ধান্দাবাজী করা,
লুটপাট করা সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা সহজ সরল মানুষকে প্রতারণা আর সব শুভ কল্যাণ প্রচেষ্টাকে
বাধা দেয়ার জন্য বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিছুদিনের জন্য এদেরকে
যা ইচ্ছা তাই করার সুযোগ দেয়া হয়েছে মাত্র।
ক্ষমতার জন্য পবিত্র ইসলাম কে ইচ্ছানুযায়ী
ব্যবহারকারী যেমন চরম অপমানিত হচ্ছে এবং হবে তেমনি যারা লুটপাটতন্ত্র কায়েম করে মানুষে
মানুষে দূরত্ব সৃষ্টি করছে তারাও একদিন চরম অপমানিত হবে। যারা একই দেশে প্রবল বৈষম্য
জিইয়ে রেখেছে তাদেরও বিচার হবে বাংলার মাটিতে। বাংলার এই পবিত্র ভূমি লুটেরা ঘাতক খুনি
ধর্মজীবি, ধর্ম ব্যবসায়ী কাউকেই যা ইচ্ছা তাই করার অনুমতি দেয় নি। যারা সাধারণ মানুষকে
সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখেছে নানান কৌশলে তাদেরও চরম পরিনতির মুখোমুখি
হতে হবেই। পালিয়ে বাঁচা যায় না। জনগণের টাকা লুট করে যারা অ্যামেরিকা কানাডা লন্ডন
ম্যালেয়েশিয়ায় বিত্ত-বৈভবের জীবন যাপন করছে তারা কোনদিন বাংলার মাটিতে ঠাঁই পাবে না।
বাংলা তাদের শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এরা শরণার্থী জীবন বেছে নিয়েছে। ইতিহাস
সাক্ষী, প্রবল বৈষম্য জোর-জবরদস্তির শাসন-শোষণ কিছুদিন করা যায় অঞ্চল ও গণমনস্তাত্বিক
অবস্থা ভেদে। কিন্তু তা টেকসই হয় না। বাঙালির এই ভূখন্ডে সাধারণ মানুষ রক্ত দিতে জানে,
বিপুল বিস্ফোরণে দখলে নিতে পারে রাজপথ, দূর্গসমেত প্রাসাদ তার প্রমাণ রয়েছে। কাউকে
ফাঁকি দিয়ে পিছনে ফেলে জোরজবরদস্তি করে যারা পার পেতে চায় তাদের জন্য প্রতিঘাত চরম
হয়। দেশপ্রেম- মানবাধিকার, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যারা মিথ্যা চিৎকার করছে তাদের
প্রত্যেককেই নিজের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। যতটুকু সময়ক্ষেপণ তা কেবল বাঙালির অস্পৃশ্যতা
মাত্র। কল্পনা বিলাস বাঙালির প্রধান অন্তরায়। গায়ের উপর এসে না পড়লে ঘুরে দাঁড়াতে চায়
না। ৪৪ বছরেও কেন এত নৈরাজ্য, কেন একটি জনগণতান্ত্রিক
সরকার পদ্ধতি করা গেল না সে দায় নিতে হবে রাজনীতিকদের। পার পাবার কোন সুযোগই নেই, কোন
যুক্তি কোন জারিজুরি কোন ফাঁকিঝুকির সুযোগ নেই। চোখের সামনে এদেশের হাজারো তথাকথিত দেশপ্রেমিকের গলায় কলঙ্কের তিলক
অতীতে জুটেছে আরো জুটবে এতে কোন সন্দেহ নেই। দেখার চোখ থাকলে তথাকথিত এসব দেশপ্রেমিকের
বিপর্যয় দৃশ্য দেখা যায়। প্রভাবশালী কত মন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, সন্ত্রাসী মাফিয়াদের করুন
কাহিনী অনুসন্ধানে ধরা পড়বে। জোর করে যারা নিজেকে নেতার চেয়ারে বসিয়েছেন, যারা ব্যালট
বাক্স ছিনতাই করে এমপি- চেয়ারম্যান হয়েছেন, মন্ত্রী হয়ে জাতীয় পতাকা সম্বলিত গাড়ী হাঁকিয়েছেন
আজ তারা কোথায়?
ষড়যন্ত্রের সাথে হাত মিলিয়ে যারা বারবার
চেয়ারে থেকেছেন তাদের দেহে-চিন্তায় কত অসুখ যে বাসা বেধেছে তা তারাই জানেন। মিথ্যাচারের
রেকর্ড বাজিয়ে আজ যারা জনগণকে প্রতারিত করছেন তাদেরকে-ও একই ফল ভোগ করতে হবে। যেমন
কর্ম তেমন ফল। বিশ্বাস ঘাতকেরা নিজ নিজ কামনায় ধরা পড়ার দৃশ্যায়ন প্রতিদিনই মঞ্চস্থ
হয় আর পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে তা ধরা পড়ে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী
আওয়ামীলীগ ও বামপন্থি দলগুলো। যদিও বহু বামপন্থিরা আগেই বেচাবিক্রির পাল্লায় দেদারসে
নিজেদের বিকিয়ে দিয়েছে। আর বাকিরা বক্তব্য বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে নিজেদের। তাদের
জটিল মনস্তত্ব কতই না অনুৎপাদনশীল। যে দেশে বসে তারা সাম্য সমতার কথা বলে, যে দেশের
জল, মাটি, বাতাস খেয়ে তারা বুলি আওড়ায়, তত্ত্ব দেয় সেই দেশকেই প্রকারান্তরে তারা অবজ্ঞা
করে, অশ্রদ্ধা করে। এর পরিনাম তারা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে, পাবে। বামপন্থি এবং দেশজ
সংস্কৃতি অস্বীকারকারী জামায়াতী ও ওহাবী দর্শন মূলত একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। উভয়েই শেকড়হীন
বৃক্ষ। রাজনীতিকদের স্মরণে রাখা উচিত সুরম্য প্রাসাদে বসে সাধারণ মানুষের ভালবাসা পাওয়া
যায় না। স্বজন প্রীতির গহ্বর থেকে বের হতে না পারলে বেড়ায় ক্ষেত খায়। জনপ্রতিনিধি হবার
পর জনগণের প্রতিনিধিই হতে হয়। ক্ষমতায় যেয়ে দলতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র আর সিদ্ধান্ত গ্রহণের
ক্ষেত্রে কঠিন না হতে পারলে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নেয়। লক্ষ্য পূরনে দৃঢ়তা দেখাতে না পারলে
প্রত্যাঘাত পেতে হয়। লক্ষ্য পূরনের পথে যারা সাথী-সহযোগী বন্ধু তাদেরকে চিহ্নিত করা
না গেলে, মূল্যায়ণ করতে ব্যর্থ হলে পরিণাম ভয়াবহ হয়। দলকানা বলেই অপরিহার্য-অনিবার্য
নয় এটিই স্মরণে রাখতে হবে। বিশ্বাস ঘাতকেরা নিজ নিজ কামনায় ধরা পড়েন। জীবনের অবসান
হয়, দারুন এক দুঃস্বপ্নের যবানিকাতপাত ঘটে তবু কেন যেন অনুসন্ধান আগ্রহ সৃষ্টি হয় না।
প্রত্যেক শোষকের জানা থাকা ভাল যাদের জন্য সম্পদের পাহাড় গড়ছেন তারাই মুখ ফিরিয়ে নেয়।
যে সমাজ যে পরিবার লালন পালন বেড়ে উঠার সুযোগ দেয় সেই সমাজকে শোষন নিপীড়ন করার ফল চরম
অসম্মান।
প্রকাশ্যে সবার সামনে লুটপাটের মহাকর্মযজ্ঞে
সিদ্ধহস্ত লোকেরা যখন জনগণের ভাগ্য পরির্তনের গল্প বলে তখনও কতটা নিরীহ হলে সহনশীল
হলে সব জেনে বুঝে চুপচাপ থাকে বাঙালি। সহনশীল উদার বাঙালি যে কত ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ন
তা সচেতন মাত্রই অনুধাবন করতে পারেন।