ব্যাংকের
লাভক্ষতি
মোঃ খলিলুর রহমান চৌধুরী ॥ আজকাল প্রায়ই
বিভিন্ন ব্যাংকের লাভ-ক্ষতির অবস্থা পত্র পত্রিকায় প্রকাশ করা হয় এবং বিভিন্নস্থানে
রিপোর্টও করা হয়। প্রকৃতপক্ষে একটি ব্যাংকের লাভ বা ক্ষতি বলতে নীট লাভ বা ক্ষতিকেই
বুঝায় এবং সকল সময়ে উক্ত নীট লাভ বা ক্ষতিকেই রিপোর্ট করা উচিৎ। উক্ত নীট লাভ বা ক্ষতি
হলো মন্দ ঋণের বিপরীতে গড়া সঞ্চিতি উত্তর লাভ বা ক্ষতি। কিন্তু তা না করে অনেকেই সঞ্চিতি
পূর্ব অপারেটিং লাভকে ঘোষনা করে থাকে যা খুবই বিভ্রান্তিকর। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে
খেলাপি ও মন্দ ঋণের ব্যাপকতার মধ্যে মন্দ ও কু-ঋণের সঞ্চিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ
ও উল্লেখযোগ্য বিষয়। হিসাববিজ্ঞানের নিয়মনীতিতে মন্দ ও সন্দেহজনক ঋণের সঞ্চিতি সৃষ্টি
করা বাধ্যতামূলক। তাই নীট লাভ বা নীট ক্ষতির কালে উক্ত মন্দ ঋণের সঞ্চিতি বাদ দিয়েই
নীট লাভ বা ক্ষতি নিরূপণ এবং তাই ঘোষনা করা উচিৎ।
০২। আজকাল এও শোনা যায় যে, একটি ব্যাংকের
কিছু ব্রাঞ্চ লাভ করেছে কিছু ব্রাঞ্চ লোকসান করেছে। তার ভিত্তিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ
বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে ঐ সমস্ত ব্রাঞ্চের নীট অপারেটিং লাভ
বা ক্ষতিকেই ঘোষনা করে থাকে। এবং সেক্ষেত্রে উক্ত লাভ বা ক্ষতি মন্দ ও কুঋণ সঞ্চিতি
উত্তর নীট লাভ বা ক্ষতি নয়। এক্ষেত্রেও জাতীয় পর্যায়ে খেলাপী ও মন্দ ঋণের ব্যাপকতার
মধ্যে শাখা পর্যায়ে মন্দ ঋণের সঞ্চিতি সৃষ্টি করার পরেই শাখা পর্যায়ে নীট লাভ বা ক্ষতি
নিরূপণ করা উচিৎ। এমনও হতে পারে যে, একটি শাখার সকল ঋণই খেলাপী এবং সকল ঋণের জন্য মন্দ
ঋণের সঞ্চিতি করার প্রয়োজনীয়তা আছে। যদি তেমন হয়, তাহলে সঞ্চিতি সৃষ্টি করে নীট লাভ
বা ক্ষতি নিরূপণ করার গুরুত্ব বলাই বাহুল্য।
০৩। খেলাপী ঋণ নিরূপণ ও তার বিপরীতে সঞ্চিতি
সৃষ্টির সুস্পষ্ট নীতিমালা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারী করা আছে। যার ভিত্তিতে প্রতিটি
শাখা অফিস উক্ত নীতিমালার প্রেক্ষিতে প্রতিটি শাখা পর্যায়ে শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমান ও
ক্যাটাগরী নিরূপণ করে তার বিপরীতে সঞ্চিতি সৃষ্টি করা কোন ব্যপার নয় এবং শাখা পর্যায়ে
এই কাজটি করেই শাখার হিসাবের খাতাপত্রে প্রয়োজনীয় মন্দ ঋণের সঞ্চিতি সৃষ্টি করে শাখার
নীট লাভ বা ক্ষতি নিরূপণপূর্বক স্টেটমেন্ট অব এ্যফেয়ারস একীভূতকরণের জন্য প্রধান কার্যালয়ে
প্রেরণ করা উচিৎ। এটাই হিসাববিজ্ঞানের নিয়ম। প্রধান কার্যালয়ের কেন্দ্রীয় হিসাব বিভাগ
কর্তৃক সকল শাখার স্টেটমেন্ট অব এ্যফেয়ারস একীভূত করে ব্যাংকের চূড়ান্ত হিসাব বিবরণী
প্রস্তুত করা উচিৎ। উক্ত বিবরণী হতেই পুরো ব্যাংকের প্রভিশনের পরিমাণ জানা সম্ভব। কিন্ত
তা না করে ব্যাংকগুলি কেন্দ্রীয়ভাবে মন্দ ঋণের সঞ্চিতি সৃষ্টি করে থাকে। যার কারণ বোধগম্য
নয়।
০৪। পরিশেষে উল্লেখ্য যে, ব্যাংকের লাভ-ক্ষতি
ঘোষনা করা, শাখা পর্যায়ের নীট লাভ-ক্ষতি নিরূপণ করা, ব্যাংকের লাভ-ক্ষতি ব্রাঞ্চ নিরূপণ
করা, ঋণের সঞ্চিতি শাখা পর্যায়ে সৃষ্টি না করে কেন্দ্রীয় ভাবে সৃষ্টি করার প্রচলিত
নিয়মগুলি হিসাববিজ্ঞানের নিয়মনীতিতে পর্যালোচনা করে দেখা আশু প্রয়োজন বলে হিসাববিজ্ঞানীদের
অভিমত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন