মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৩

বাঙালির বাংলা





বাঙালির বাংলা



‘এই পবিত্র বাংলাদেশ
বাঙালির - আমাদের।
দিয়া ‘প্রহারেণ ধনঞ্জয়'
তাড়াব আমরা, করি না ভয়
যত পরদেশী দস্যু ডাকাত
‘রামা'দের ‘গামা'দের ॥'

 বাঙালি যেদিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে বলতে পারবে - ‘বাঙালির বাঙলা' সেদিন তারা অসাধ্য সাধন করবে। সেদিন একা বাঙালিই ভারতকে স্বাধীন করতে পারবে। বাঙালির মতো জ্ঞান-শক্তি ও প্রেম-শক্তি (ব্রেন সেন্টার ও হার্ট সেন্টার) এশিয়ায় কেন, বুঝি পৃথিবীতে আর কোন জাতির নেই। কিন্তু কর্ম-শক্তি একেবারে নেই বলেই তাদের এই দিব্যশক্তি তমসাচ্ছন্ন হয়ে আছে। তাদের কর্মবিমুখতা, জড়ত্ব, মৃত্যুভয়, আলস্য, তন্দ্রা, নিদ্রা, ব্যবসা-বাণিজ্যে অনিচ্ছার কারণ। তারা তামসিকতায় আচ্ছন্ন হয়ে চেতনা-শক্তিকে হারিয়ে ফেলেছে। এই তম, এই তিমির, এই জড়ত্বই অবিদ্যা। অবিদ্যা কেবল অন্ধকার পথে ভ্রান্তির পথে নিয়ে যায়; দিব্যশক্তিকে নিস্তেজ, মৃতপ্রায় করে রাখে। যারা যত সাত্ত্বিক ভাবাপন্ন, এই অবিদ্যা তাদেরই ততো বাধা দেয় বিঘ্ন আনে। এই জড়তা মানবকে মৃত্যুর পথে নিয়ে যায়। কিছুতেই অমৃতের পানে আনন্দের পথে যেতে দেয় না। এই তমকে শাসন করতে পারে একমাত্র রজগুণ, অর্থাৎ ক্ষাত্র-শক্তি। এই ক্ষাত্রশক্তিকে না জাগালে মানুষের মাঝে যে বিশ্ব-বিজয়ী ব্রহ্মশক্তি আছে তা তাকে তমগুণের নরকে টেনে এনে প্রায় সংহার করে ফেলে। বাঙালি আজন্ম দিব্যশক্তি সম্পন্ন। তাদের ক্ষাত্রশক্তি জাগলো না বলে দিব্যশক্তি কোন কাজে লাগলো না - বাঙালির চন্দ্রনাথের আগ্নেয়গিরি অগ্নি উদ্‌গিরণ করলো না। এই ক্ষাত্রশক্তিই দিব্য তেজ। প্রত্যেক মানুষেই ত্রিগুণান্বিত। সত্ব, রজ ও তম এই তিন গুণ। সত্বগুণ, ঐশীশক্তি অর্থাৎ সৎশক্তি সর্ব অসৎ শক্তিকে পরাজিত করে পূর্ণতার পথে নিয়ে যায়। এই সত্ব গুণের প্রধান শত্রু তম গুণকে প্রবল ক্ষাত্রশক্তি দমন করে। অর্থাৎ আলস্য, কর্মবিমুখতা, পঙ্গুত্ব আসতে দেয় না। দেহ ও মনকে কর্মসুন্দর করে। জীবনশক্তিকে চিরজাগ্রত রাখে, যৌবনকে নিত্য তেজ-প্রদীপ্ত করে রাখে। নৈরাশ্য অবিশ্বাস, জরা ও ক্লৈব্যকে আসতে দেয় না। বাঙালির মস্তিষ্ক ও হৃদয় ব্রহ্মময় কিন্তু দেহ ও মন পাষাণময়। কাজেই এই বাংলার অন্তরে-বাহিরে যে ঐশ্বর্য পরম দাতা আমাদের দিয়েছেন, আমরা তাকে অবহেলা করে ঋণে, ব্যাধিতে, অভাবে, দৈণ্যে, দুর্দশায় জড়িয়ে পড়েছি। বাংলার শিয়রে প্রহরীর মতো জেগে আছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম গিরি হিমালয়। এই হিমালয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মুনি-ঋষি-যোগীরা সাধনা করেছেন। এই হিমালয়কে তাঁরা সর্ব দৈবশক্তির লীলা-নিকেতন বলেছেন। এই হিমালয়ের গভীর হৃদ-গুহার অনন্ত স্নেহধারা বাংলার শত শত নদ-নদী রূপে আমাদের মাঠে-ঘাটে ঝরে পড়েছে। বাংলার সূর্য অতি তীব্র দহনে দাহন করে না। বাংলার চাঁদ নিত্য স্নিগ্ধ। বাংলার আকাশ নিত্য প্রসন্ন, বাংলার বায়ুতে চিরবসন্ত ও শরতের নিত্য মাধুর্য ও শ্রী। বাংলার জল নিত্য প্রাচুর্যে ও শুদ্ধতায় পূর্ণ। বাংলার মাটি নিত্য উর্বর। এই মাটিতে সোনা ফলে। এত ধার আর কোন দেশে ফলে না। পাট শুধু একা বাংলার। পৃথিবীর আর কোন দেশে পাট উৎপন্ন হয় না। এত ফুল, এত পাখি, এত গান, এত সুর, এত কুঞ্জ, এত ছায়া, এত মায়া আর কোথাও নেই। এত আনন্দ, এত হুল্লোড়, আত্মীয়তাবোধ পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এত ধর্মবোধ - আল্লাহ্‌, ভগবানের উপাসনা, উপবাস-উৎসব পৃথিবীর আর কোথাও নেই। বাংলার কয়লা অপরিমাণ, তা কখনো ফুরাবে না। বাংলার সুবর্ণ-রেখার বালিতে পানিতে স্বর্ণরেণু। বাংলার অভাব কোথায়? বাংলার মাঠে মাঠে ধেনু, ছাগ, মহিষ। নদীতে ঝিলে বিলে পুকুরে ডোবায় প্রয়োজনের অধিক মাছ। আমাদের মাতৃভূমি পৃথিবীর স্বর্গ, নিত্য সবৈশ্বর্যময়ী। আমাদের অভাব কোথায়? অতি প্রাচুর্য আমাদের বিলাসী, ভোগী করে শেষে অলস, কর্মবিমুখ জাতিতে পরিণত করেছে। আমাদের মাছ, ধান, পাট, আমাদের ঐশ্বর্য শত বিদেশী লুটে নিয়ে যায়, আমরা তার প্রতিবাদ তো করি না, উল্টো তাদের দাসত্ব করি; এ লুন্ঠনে তাদের সাহায্য করি। বাঙালি শুধু লাঠি দিয়েই দেড়শত বছর আগেও তার স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ন রাখতে চেষ্টা করেছে। আজো বাংলার ছেলেরা স্বাধীনতার জন্য যে আত্মদান করেছে, যে অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে, ইতিহাসে তা থাকবে স্বর্ণ-লিখায় লিখিত। বাংলা সর্ব ঐশীশক্তির পীঠস্থান। হেথায় লক্ষ লক্ষ যোগী মুনি ঋষি তপস্বীর পীঠস্থান, সমাধি; সহস্র সহস্র ফকির-দরবেশ ওলী-গাজীর দর্গা পরম পবিত্র।
হেথায় গ্রামে হয় আজানের সাথে শঙ্খ ঘন্টার ধ্বনি। এখানে যে শাসনকর্তা হয়ে এসেছে সেই স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। বাংলার আবহাওয়ায় আছে স্বাধীনতা মন্ত্রের সঞ্জীবনী শক্তি। আমাদের বাংলা নিত্য মহিমাময়ী, নিত্য সুন্দর, নিত্য পবিত্র। আজ আমাদের আলস্যের, কর্মবিমুখতার পৌরুষের অভাবেই আমরা হয়ে আছি সকলের চেয়ে দীন। যে বাঙালি সারা পৃথিবীর লোককে দিনের পর দিন নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতে পারে তারাই আজ হচ্ছে সকলের দ্বারে ভিখারি। যারা ঘরের পাশে পাহাড়ের অজগর বনের বাঘ নিয়ে বাস করে তারা আজ নিরক্ষর বিদেশীর দাসত্ব করে। শুনে ভীষন ক্রোধে হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে ওঠে, সারা দেহমনে আসে প্রলয়ের কম্পন, সারা বক্ষ মন'ন করে আসে অশ্রুজল। যাদের মাথায় নিত্য স্নিগ্ধ মেঘ ছায়া হয়ে সঞ্চরণ করে ফিরে, ঐশী আশীর্বাদ অজস্র বৃষ্টিধারায় ঝরে পড়ে, শ্যামায়মান অরণ্য যাকে দেয়  শান্তশ্রী, বজ্রের বিদ্যুৎ দেখে যারা নেচে ওঠে - হায় তারা এই অপমান এই দাসত্ব বিদেশী দস্যুদের এই উপদ্রব নির্যাতনকে কি করে সহ্য করে? ঐশী ঐশ্বর্য - যা আমাদের পথে ঘাটে মাঠে ছড়িয়ে পড়ে আছে তাকে বিসর্জন করে অর্জন করেছি এই দৈন্য, দারিদ্র্য, অভাব, লাঞ্চনা। বাঙালি সৈনিক হতে পারলো না। ক্ষাত্রশক্তিকে অবহেলা করলো বলে তার এই দুর্গতি তার অভিশপ্তের জীবন। তার মাঠের ধান পাট রবি ফসল তার সোনা তামা লোহা কয়লা - তার সর্ব ঐশ্বর্য বিদেশী দস্যু বাটপাড়ি করে ডাকাতি করে নিয়ে যায়, সে বসে বসে দেখে। বলতে পারে না ‘এ আমাদের ভগবানের দান, এ আমাদের মাতৃ-ঐশ্বর্য! খবরদার, যে রাক্ষস একে গ্রাস করতে আসবে, যে দস্যু এ ঐশ্বর্য স্পর্শ করবে - তাকে ‘প্রহারেণ ধনঞ্জয়' দিয়ে বিনাশ করবো, সংহার করবো।'
বাঙলা বাঙালির হোক! বাঙলার জয় হোক! বাঙালির জয় হোক।

- সাধক কাজী নজরুল ইসলাম

আল্লাহর আরশ কোথায়?

আল্লাহর আরশ কোথায়?

সাদিকুল হক ॥ পশ্চিমা রাজনৈতিক শক্তির সৃষ্ট তথাকথিত এক সমপ্রদায় প্রচার করে থাকে, আল্লাহ তায়ালা সর্বত্র বিরাজমান নন, আরশে সমাসীন। তারা নিজেদের এই দাবির পক্ষে সুরা হাদীদের ৩ নং আয়াত দলিল হিসেবে পেশ করেন। না বুঝে কুরআনের একটি আয়াত দিয়ে কুরআনের মৌল চেতনাকেই অস্বীকার করা আল্লাহদ্রোহীতা!
কোন নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ থাকা দেহধারী সত্তার বৈশিষ্ট্য। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, সকল সৃষ্টির স্রষ্টা কোন নির্দিষ্ট দেহে অবস্থান করেন না। সকল দেহই তার দেহ। কুরআনের অনেক আয়াতে সর্বব্যাপী আল্লাহর অস্তিত্বের ঘোষণা রয়েছে।  যেমন - “আর যখন আমার বান্দা আমাকে ডাকে, তখন নিশ্চয়ই আমি তার পাশেই থাকি। আমি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দেই যখন সে ডাকে। (সুরা বাকারাঃ ১৮৬)। “আর আমি বান্দার প্রাণরগের চেয়েও বেশি নিকটবর্তী। (সুরা কাফঃ ১৬)। “অতপর এমন কেন হয় না যে, যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত হয় এবং তোমরা তাকিয়ে থাক। এবং তোমাদের চেয়ে আমিই তার বেশি কাছে থাকি। কিন্তু তোমরা দেখতে পাওনা। (সুরা ওয়াকিয়াঃ ৮৩-৮৫)। “পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। সুতরাং যেদিকেই মুখ ফিরাও, সেদিকেই রয়েছেন আল্লাহ। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞাত। (সুরা বাকারাঃ ১১৫)। “তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তিনি তোমাদের সাথে আছেন। (সুরা হাদীদঃ ৪)। “যখন তিনি তার সাথীকে বললেন ভয় পেয়ো না, নিশ্চয় আমাদের সাথে আল্লাহ আছেন। (সুরা হাদীদঃ ৪০)। “তিনজনের মাঝে এমন কোন কথা হয় না যাতে চতুর্থ জন হিসেবে তিনি উপস্থিত না থাকেন এবং কখনও পাঁচজনের মধ্যে কোনও গোপন কথা হয় না, যাতে ষষ্ঠজন হিসেবে তিনি উপস্থিত না থাকেন। এমনিভাবে তারা এর চেয়ে কম হোক বা বেশি, তারা যেখানেই থাকুক, আল্লাহ তাদের সঙ্গে থাকেন। (সুরা মুজাদালাঃ ৭)। আল্লাহর কুরসী আসমান ও জমিন ব্যাপৃত। (সুরা বাকারাঃ ২৫৫)।
যদিও আল্লাহ তায়ালা সর্বত্রই বিরাজমান তবুও আল্লাহর উদ্দেশ্যে আমরা আকাশের দিকে তাকাই কিংবা বলে থাকি “উপরে একজন আছেন। ডান, বাম, উপর, নিচ সবদিকেই তিনি আছেন তবুও আমরা উপরের কথা বলি কারণ তাঁর মর্যাদা সকলের উপরে। জিব্রাইল উপর থেকে নিচে নেমে আসেন এর অর্থও এটা নয় যে জিব্রাইল উপরের কোন স্থানে থাকেন। পুলিশ আসে উপরের নির্দেশে, এর অর্থ এই নয় যে, পুলিশ উপরে থাকে। সম্মান ও মর্যাদার দিক থেকে যিনি উপরে তার নির্দেশকেই বলা হয় উপরের নির্দেশ।
আল্লাহ তায়ালা সর্বত্রই বিরাজমান। তিনি আকাশে আছেন জমিনেও আছেন, বাহিরেও আছেন ভিতরেও আছেন, নিচেও আছেন উপরেও আছেন। এক সমপ্রদায় প্রশ্ন করে তবে কি তিনি নোংরা স্থানেও থাকেন? কুরআনের আয়াত মাথায় নিয়ে কি মানুষ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে পারে না? নিশ্চয়ই পারে। কুরআন নিয়ে মানুষ সর্বত্রই যেতে পারে, যায়ও। চিন্তাজগতে কুরআন নিয়ে যেমন টয়লেটে গেলে কুরআনের কোন অসম্মান হয় না তেমনি আল্লাহও সর্বত্র বিরাজমান থাকলে তাঁর কোন বেইজ্জতি হয় না। জগতে যা কিছু নোংরা এবং অপবিত্র বলা হয় তাও আল্লাহরই সৃষ্টি এবং তাতেও তিনি আছেন।
সুরা হাদীদের ৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে  - “অতঃপর তিনি আরশে সমাসিন হলেন।নিশ্চয়ই তাই। তবে আল্লাহ তায়ালার এই আরশ হচ্ছে বিশ্বাসীর চিন্তাজগত।

ব্যক্তির সামাজিক মূল্যবোধ বাড়াতে দুর্নীতির সংজ্ঞা জরুরী

ব্যক্তির সামাজিক মূল্যবোধ বাড়াতে দুর্নীতির সংজ্ঞা জরুরী

সংলাপ ॥ যারা ভালো কাজ করে তাদের জন্য আছে মঙ্গল ও আরো অধিক আশীর্বাদ। আর যারা মন্দ কাজ করে তাদের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ, আর তাদেরকে হীনতা আচ্ছন্ন করবে, আল্লাহর কাছ থেকে কেউ ওদেরকে রক্ষা করার থাকবে না। (আল-কুরআন   - ১০: ২৬-২৭)
বহুল আলোচিত ১/১১-এর দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলা হয়েছিল যে, তারা দেশ থেকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির মূলোৎপাটন করবেন। কিন্তু কোন সরকারের পক্ষে  কখনো সন্ত্রাস ও দুর্নীতির সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দেয়া সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে যথারীতি মিথ্যাচার চলছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে স্ব-ঘোষিত বুদ্ধিজীবী মহল মত প্রকাশ করছেন।
কিন্তু দুর্নীতি কমছে না। মানবজাতি ও মানব সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই মানুষ যখন ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও সুযোগ সুবিধার দিকে মনোনিবেশ করেছে তখন থেকেই সমাজে শুরু হয়েছে হত্যা-মারামারি, কলহ-বিবাদ। আজকের দিনে বিশেষ করে আজকের পুঁজিবাদী সমাজে প্রতিটি মানুষ যখন নিজস্ব সহায়-সম্পদ বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, সেখানে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের মতো অপরাধকে মূলোৎপাটন করা সম্ভব, একথা কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারবে না। তাই সন্ত্রাস ও দুর্নীতির মতো অপরাধকে কিভাবে কমিয়ে আনা যায় এবং সমাজকে স্থিতিশীল রাখা যায় তার একটি রূপরেখা তৈরি করে রাষ্ট্রীয় কার্র্যক্রম পরিচালনা করা আজ সময়ের দাবি।
অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যে সর্বাত্মক ও সাহসী অভিযান পরিচালনা করতে দেখে সাধারণ জনগণের মধ্যে বিরাট আস্থা ও আশা ফিরে এসেছিল। কেননা, স্বাধীনতার পর থেকে গত ৪০ বছরে দেখা গেছে যতই দিন যাচ্ছে রাজনীতিক ও আমলাদের নানারকমের দুর্নীতির কবলে পড়ে সাধারণ মানুষ ততই বেশি অসহায় হয়ে পড়ছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিচালিত ওই অভিযানে তাই মানুষ বড় বেশি আশান্বিত ও উৎফুল্লিত হয়েছিল।
বাংলাদেশে বর্তমানে যে প্রশাসনিক ও সমাজ কাঠামো বিদ্যমান তাতে দুর্নীতির মূলোৎপাটন সম্ভব বলে একজন মানুষও বিশ্বাস করবে না। তবে এর মাত্রা কমিয়ে আনা যাবে অবশ্যই। সমাজ ও দেশের বাস্তবতায় দেখা যায়, এক একজন মানুষের কাছে দুর্নীতির স্বরূপ এক এক ধরনের। বাংলা একাডেমীর সহজ বাংলা অভিধানে দেখা যায়, এতে দুর্নীতি শব্দটির অর্থ হিসেবে কুনীতি, অসৎ ও অন্যায় আচরণ এবং নৈতিক অবনতিকে দেখানো হয়েছে। আর দুর্নীতি-পরায়ণ অর্থ - নীতিবিরুদ্ধ আচরণ করে এমন, দুরাত্মা ও দুঃশীল দেখানো হয়েছে। তাই সমাজে দুর্নীতি দমন করার আগে সাধারণ মানুষের কাছে দুর্নীতির সংজ্ঞা স্পষ্ট করে দেয়া দরকার। পবিত্র ইসলাম ধর্মে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এঁর জীবনাদর্শে যেখানে ব্যক্তিগত সম্পত্তি অর্জনের কোনো নজির তৈরি হয়নি সেখানে বর্তমানে আমাদের দেশের প্রতিটি মুসলমান ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিক হওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে এবং এই প্রতিযোগিতাই সমাজে নানা অস্থিরতা, অরাজকতার জন্ম দিচ্ছে এবং দুর্নীতিবাজদের আধিপত্য কায়েম হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার অঙ্গীকার করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছিলেন এবং ক্ষমতায় এসেছিলেন। তাই মহাজোট সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল দুর্নীতির সংজ্ঞা নির্ধারণ করে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে এর মাত্রা কমিয়ে আনার জন্য বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। দারিদ্র্য, অশিক্ষা-কুশিক্ষা ও ধর্মান্ধতার মতো অভিশাপ থেকে দেশকে পদ্ধতিগতভাবে মুক্ত  করে  দুর্নীতি কমিয়ে আনলেও তা কাঙ্খিত লক্ষ্য ছুঁতে পারেনি ‘বাংলার কৃষক, বাংলার শ্রমিক, বাংলার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ দুর্নীতি করে না। দুর্নীতি করেন  যারা শিক্ষিত মানুষ। এই শিক্ষিত মানুষদের দুর্নীতির কারণে বাংলার কৃষক, শ্রমিক তথা সাধারণ মানুষের মধ্যেও দুর্নীতির বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়ছে। মানুষ ক্রমেই জটিল হয়ে পড়ছে। তাই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য দুর্নীতির একটি সংজ্ঞা নির্ধারণ করে পরিমাণ কমিয়ে  এনে জনগণের মধ্যে ব্যক্তির সামাজিক মূল্যবোধ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়াই এখন সবার আগে দরকার।

মানবাধিকার!

মানবাধিকার!

বর্ষা ॥ আভিধানিক অর্থে মানবাধিকার হচ্ছে মানব + অধিকার, অর্থাৎ, মানুষের অধিকার সংক্রান্ত। বিশেষ করে বিভিন্ন বিদেশী সংস্থার দাসত্ব করার অঙ্গীকারে সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে মানবাধিকারের নামে এখন এদেশে সংগঠনেরও অভাব নেই। কিন্তু এসব সংগঠন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কতটুকু অবদান রাখছে, নাকি মানবাধিকারের নামে নিজের ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক কোন দলের স্বার্থ উদ্ধারে বেশি জড়িত হয়ে পড়েছে তা খতিয়ে দেখা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব এবং জরুরি হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি ‘অধিকার' নামের একটি সংগঠন এদেশে মানবাধিকারের পক্ষে অস্বচ্ছ প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে দেশে অসুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি করার যে প্রয়াস চালিয়েছে তাতে দেশের ধর্মীয় চিন্তাবিদরা হতবাক এবং দেশবাসী মানবাধিকার নিয়ে বিভ্রান্ত। যারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে দেশের নারী সমাজের অধিকারকে প্রত্যাখ্যান করে ধর্মের নামে এদেশকে আদিম-বর্বর সমাজে ফিরিয়ে নিতে চাইছে সেই কথিত হেফাজতে ইসলামকে সমর্থন দিয়ে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা করছে বিভিন্ন সংগঠন। যেখানে শান্তির ধর্ম ইসলামে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছে সেখানে এই কথিত হেফাজতীরা নারী সমাজকে সরাসরি অধিকার-বঞ্চিত করতে চাইছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদশের সংবিধানের ১১ নং অনুচ্ছেদে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে-প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকারও স্বাধীনতা নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে। অপরদিকে, মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সংবিধানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন (২৮ নং অনুচ্ছেদ, ধারা নং ২)। গত ৫ই মে ঢাকার মতিঝিলে পবিত্র ইসলাম ধর্মের নামে হেফাজতীরা যে তাগুত প্রদর্শন করেছে এবং সুযোগ পেলে আরও যে প্রদর্শন করবে তাতে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়ার যে আশংকা সৃষ্টি হবে সে ব্যাপারে মানবাধিকারের নামের সংগঠনগুলোর কর্তাব্যক্তিরা একটি কথাও এ পর্যন্ত বললেন না। আর এ থেকেই বোঝা যায়, এই সংগঠনগুলো মানবাধিকারের নামে এদেশে ধর্মান্ধতা প্রতিষ্ঠার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। মানুষ এবং অধিকার-এ দুটিই বাংলা ভাষার অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ নিজস্ব শব্দ। মান সম্পর্কে যার হুঁশ আছে, সেই মানুষ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। বাংলা প্রবাদে আছে ‘তরুলতা সহজেই তরুলতা, পশুপক্ষী সহজেই পশুপক্ষী, তবে প্রাণপণ প্রচেষ্টায় তবে মানুষ'। একবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪২ বছর পরেও যখন ৭১-এর মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কার্য সম্পন্ন হয়নি, নারী নির্যাতকদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়নি, যে দেশে কোটি কোটি মানুষ এখনো কঠিন দারিদ্রের মধ্যে দিনাতিপাত করে, বস্তিতে মানবেতর জীবনযাপন করে, ন্যায্যমূল্য পায় না দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করা গার্মেন্টস শ্রমিকরা, তখন মানবাধিকার নিয়ে কথা বলতে দেখা যায় না মানবাধিকারের নামের সংগঠনগুলোর । নিজেদের ব্যক্তিগত ভোগবিলাস, আর্থিক প্রতিপত্তি বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থেকে এদেশে মানবাধিকারের কথা বলা ভুতের মুখে রামনাম ছাড়া আর কি হতে পারে? এই সব কাজে যারা লিপ্ত তারা সমাজের প্রকৃত সত্যটি ঢেকে দিয়ে মিথ্যা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকাই শুধু রেখে যাচ্ছেন। দেশ ও জাতির স্বার্থে যত তাড়াতাড়ি তারা এই মিথ্যাচার থেকে নিজেদেরকে নিবৃত করবেন ততই মঙ্গল। মানবতার মহান ব্রতে নিয়োজিত হয়ে যারা সকল প্রকার ভোগবিলাসকে জলাঞ্জলি দিয়ে, সর্বাঙ্গীন ত্যাগের পথে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পেরেছেন বা পারছেন তাদের মুখেই কেবল মানবাধিকারের কথা  শোভা পায়।

নারী দুর্বল নয় -নারীকেই প্রমাণ করতে হবে




নারী দুর্বল নয় -
নারীকেই প্রমাণ করতে হবে

সংলাপ ॥ বাংলাদেশের একজন মহিলা প্রধানমন্ত্রী পুরো দেশের সমস্ত মানুষের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করলেও সাধারণ নারীর অধিকার আদায়ে তা যথেষ্ট ছিল না। একজন নারীকে শুধু উঁচু পদে বসালেই হবে না, অনেকগুলো নারীকে রাষ্ট্রের বড় বড় পদগুলিতে অধিষ্ঠিত করলেই হবে না' পুরো বিষয়টির সমাধান অন্য জায়গায়। বাংলাদেশের সাধারণ নারীরা জন্মলগ্ন থেকেই মার খাচ্ছে প্রতি পদে পদে। নারী অসহায় তার পারিবারিক জীবনে, তার সামাজিক জীবনে এবং সর্বোপরি তার রাষ্ট্রীয় জীবনে। পরিবারে নারীর অবস্থা বিশ্লেষণ করতে হবে সবার আগে। সাধারণভাবে দেখলে কিন্তু ভিন্ন চিত্র মিলবে। কেননা একটি পরিবারে মায়ের ভূমিকা কিন্তু অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে বিদ্যমান। শিক্ষিত সমাজের একটি পরিবারে গৃহকর্ত্রীর অবস্থান খুব দৃঢ়, অনেক সময় গৃহকর্তার থেকেও শক্তিশালী তার অবস্থান। বাংলাদেশের অনেক পরিবারেই দেখবেন গৃহকর্তার শ্যালক-শ্যালিকাদের আধিপত্য বেশি; সেখানে গৃহকর্তার ভাই-বোনের আধিপত্য অনেক ক্ষেত্রেই কম বা একেবারেই  নেই। এই অবস্থাটা সেই পরিবারেই হয় যেখানে গৃহকর্ত্রীর অবস্থান শক্ত। অপরদিকে পরিবারের সিদ্ধান্তের  ক্ষেত্রেও গৃহকর্ত্রীর ভূমিকা বিশেষ করে সন্তানদের ক্ষেত্রে গৃহকর্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনেক পরিবারেই প্রাধান্য লাভ করে। কিন্তু তারপরও বাস্তব বাংলাদেশ বলছে নারী এখানে অসহায়। এখানে গরীব নারীদের নিরাপত্তা নেই।
সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা নারীদের উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়। গরিব কাজের মহিলা ধুঁকে ধুঁকে মার খাচ্ছে। অতি অলতেই এবং সামান্য কারণেই শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই বলৎকারের মতো?পৈশাচিক আচরণের শিকার হচ্ছে। যদি সঠিক পরিসংখ্যান করা দেখা যায় তবে দেখা যাবে, বলৎকার বাদ দিয়ে অন্যান্য সামাজিক অত্যাচারের শিকার হয় যেসব গরীব গৃহ কাজে নিয়োজিত নারী তাদের অধিকাংশের জন্যেই দায়ী সেই পরিবারের গৃহকর্ত্রী। গৃহকর্ত্রীদের হাতেই শারীরিকভাবে বেশি নির্যাতিত হচ্ছে গরীব, অসহায়, সামান্য বেতনে কর্মজীবী এই সকল গৃহভৃত্য নারী। সামাজিক অন্ধ বিধানের সুযোগে একটি পরিবারের মা'ই অন্যায় অবিচার করছে তার কন্যা সন্তানের উপর। কন্যা সন্তানকে বাইরে যেতে অথবা শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বড় বাঁধা হিসেবে দাঁড় হচ্ছে তার মা'ই। বলৎকারের শিকার কন্যা সন্তানকে বুকে নিয়ে মা সারাক্ষণ কাঁদলেও সমাজে বদনাম হবে এই অজুহাতে মা সেই বলৎকারের সংবাদ বাইরে প্রকাশ করছে না। এমন নানা অঙ্গনে আমাদের দেশের নারীরাই অন্য নারীদের পিছিয়ে রাখতে সাহায্য করছে। ধর্মীয় গোঁড়ামির সুযোগে নারীদের সুযোগ-সুবিধা বর্জিত পরিবেশ সৃষ্টিতে অন্য নারীরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বিষয়টি একান্তই নারী সমাজের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়। তাই তাকেই এগিয়ে আসতে হবে এর উন্নয়নে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হবে নারী শিক্ষা। নারী এবং পুরুষ উভয়কে আলাদাভাবে না দেখে বরং একসাথে মানুষ হিসেবে দেখতে হবে। এখানে পুরুষ শাসিত সমাজের দোষ দিয়ে লাভ হবে না। এখানে পুরুষকে নারীর অনগ্রসরতার জন্যে দায়ী করলে ভুল হবে।
একটি জাতি অন্য জাতিকে যেমন দাবিয়ে রাখতে পারে না তেমনি নারীর জাগরণ ঘটলে পুরুষ তা ঠেকাতে পারবে না। নারীকে ঘরের চার দেয়ালে আটকে রাখবেন, ধর্মের দোহাই দিয়ে তাকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করবেন, আবার নারীর পশ্চাৎপদের জন্যে পুরুষকে দায়ী করবেন তা হতে পারে না। নারীকে স্বীকার করতে হবে তার পশ্চাৎপদ ভূমিকার জন্যে সেই দায়ী। প্রতিযোগিতা করে তাকে পুরুষের কাছাকাছি আসতে হবে। চাকরির প্রতিযোগিতা করেই তাকে ভাল চাকরি পেতে হবে। নারীর বিশেষ কোটায় নয় বরং তাকে প্রতিযোগিতা করে রাজনীতি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় সমস্ত কাজে এগিয়ে আসতে হবে। এখানে নারীকে আলাদা করে দেখলেই নারীর উন্নয়নে বাঁধা দেয়ার শামিল হবে। বিশেষ  কোটায় নয়, নারীকে মূল ধারায় সকলের সাথে সমান প্রতিযোগিতা করেই এগোতে হবে। নারীর জন্যে সংসদে আলাদা আসন বিলুপ্ত হয়ে যেদিন নারী সাধারণ প্রতিযোগিতায় তার যোগ্যতা দিয়েই সংসদে সাংসদ হিসেবে আসতে পারবে সেদিনই নারী তাদের মুক্তির জন্যে সঠিক আইন করার প্রয়াসে মনোনিবেশ করতে পারবে। নারী দুর্বল নয় এটা প্রমাণের দায় নারীর উপরই বর্তায়।
ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডাসহ উন্নত দেশের নারীরা এখন দৃঢ় অবস্থানে দাঁড় হয়েছে। তাদের দেশে নারীকে আর আলাদা করে দেখার উপায় নেই। নারীও মানুষ এটা এখন আর কারও বুঝার অপেক্ষা রাখে না সেখানে। এই অবস্থানের জন্যে সেই দেশগুলোর নারী সমাজই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। নারীর প্রতি অবহেলা ও অসম্মান করার কোনো সুযোগ বা আইন সেই দেশগুলোতে বিদ্যমান নেই। বরং আইনের কড়াকড়ি এমন অবস্থায় রূপ নিয়েছে যে সেখানকার আইনকে অনেকেই নারী সমর্থিত আইন বলে প্রচার করে। বলৎকার করা দূরে থাকুক সামান্য অসম্মানজনক আচরণ যদি কোনো পুরুষ কোনো নারীর প্রতি করে তাহলে সেই পুরুষকে সেখানে কঠিন আইনের সম্মুখীন হতে হয়। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে নারী স্বাধীনতার রূপটি পুরোপুরিভাবে গ্রহণযোগ্য না হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের আইন নারীদের পক্ষে যাওয়ার ফলে সেই দেশের নারীরা অনেকাংশেই স্বাধীনতা ভোগ করছে। ভারতের নারীরা ঘরের বাইরে আসার মতো একটি সুস্থ পরিবেশ আদায় করে নিতে সমর্থ হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এতো কাছের হয়েও সম্পূর্ণভাবে বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। এখানে পুরুষ বলৎকার করে সমাজে মুখ উঁচু করে হাঁটছে আর বলাৎকারের শিকার নারী মুখ লুকিয়ে থাকছে। বলাৎকারকারীর বিচার হচ্ছে না আর হলেও কঠিন  শাস্তির বিধান না থাকাতে বলাৎকারকারী পুরুষ বারবার এই জঘণ্য অন্যায় করার সাহস পাচ্ছে। বলাৎকারকারী পুরুষ কোনোভাবেই পুরুষ হতে পারে না - পুরুষ সাজে একটি দানব। আমাদের এই লজ্জা, আমাদের এই গ্লানি কোথায় লুকানো যায় আমি তা জানি না। কিন্তু আমি সমস্ত নারীকে আহবান করতে চাই অগ্রসর হতে। বাংলাদেশের অসহায় নারী সমাজকে জাগরণের বাণী শুনাতে চাই। আপনাদের জাগরণ ব্যতীত আপনাদের মুক্তি নেই। আপনাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা ছাড়া আপনারা আপনাদের অধিকার বুঝে নিতে সমর্থ হবেন না। তাই সকল নারীই শিক্ষা গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করুন। তারপর যেসব আইন ও সামাজিক প্রথা তা বুঝার যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করতে হবে সকল নারীকেই। সেজন্যে নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করার দিকটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। নারীকেই বুঝতে হবে কোন ক্ষেত্রে কিভাবে তাদের ছোট করে দেখানো হচ্ছে। অন্ধ ধর্মের অজুহাতে অথবা প্রচলিত হয়ে আসছে বলে সকল অন্যায় গ্রহণ করার মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে নারীকেই সর্বাগ্রে।
বাংলাদেশের নারীদের জাগতেই হবে এবং তাহলেই বাংলাদেশ একদিন জাগবে। বাংলাদেশ একদিন উন্নত  দেশ হিসেবে অন্যান্য উন্নত দেশের পাশাপাশি হাঁটবে। বাংলাদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী সমাজকে পশ্চাতে ফেলে রেখে কিছুতেই উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা সম্ভব নয়। তাই নারী জাগরণ শুধু নারীর জন্যেই নয় -  নারী জাগরণ দেশের জাগরণের সাথে জড়িত বিষয়। সময় বহমান নারীর শিক্ষার প্রসার ও মান উন্নত করার। নারীকে সকল কর্মস্থলে সম্মানের সাথে দেখার। নারীকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী দেখতে নারীর জাগরণ আনন্দের সাথে মেনে নিতেই হবে।