মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০১৩

জয় সুনিশ্চিতের দ্বারপ্রান্তে!



জয় সুনিশ্চিতের দ্বারপ্রান্তে!

সংলাপ ॥ সহজ কথাটি সহজে বলতে রাজনীতিকরা জানেন না। সরকারকে বাঁচাও বললেই সরকার বাঁচাতে পারে না। ধর্মান্ধদের হামলার মুখে নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ জনগণকে নিরাপত্তাহীন করে দিচ্ছে। অপ্রত্যাশিত অত্যাচার জনগণের প্রতিরোধ ডেকে আনছে। সেটাকে বাস্তবায়িত করতে জনগণ ও নতুন প্রজন্মকে সঙ্গে নিতে হয়। না হলে একতরফা বিরোধী মিথ্যাচার সাধারণ মানুষকে হতাশ করে দেয়। কলমবাজ, অস্ত্রধারী ও মিথ্যাচার - প্রত্যেককে তার মুদ্রাতেই ঋণ শোধ করতে হয়। তা হলেই সরকারও বাঁচে, জনগণও বাঁচে। জনগণের স্বার্থই সরকারের স্বার্থ। জনগণের জীবন-মান-সম্পত্তি রক্ষার দায় সত্যের পথে সরকারের। শুধু পুলিশ প্রশাসনের নয়। ধর্মীয় সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করতে জনগণকে উৎসাহিত করতে হবে। সন্ত্রাসীদেরকে সত্যের পথে?আনতে হবে। মানুষকে বলতে হবে, ধর্মের নামাবলী গায়ে দিয়ে মিথ্যার বেসাতি করে যারা ক্ষমতায় আসতে চায় এবং সম্পত্তি বানায় তাদের বর্জন করুন, মাঠে-ঘাটে কলেজে কলেজে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়াজ তুলতেই হবে ’৬৯ এর মতো ‘আমরা প্রস্তুত। যে ধাক্কা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিরা খেয়েছেন, তার কারণ তারা সাধারণ সত্য?ও সামাজিক মূল্যবোধের রীতি থেকে সরে গিয়েছিলেন। নিস্তরঙ্গ সমুদ্র পার হয়ে যেতে চেয়েছিলেন। যুদ্ধাপরাধীরা অনেক-অনেক গুণ বেশি অসভ্য, উদ্ধত এবং দুর্নীতিগ্রস্ত। তাদের চতুরতাই  মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিদের ধাক্কা খাওয়ার প্রধান কারণ।  মুক্তিযোদ্ধারা যথেষ্ট পরিমাণে নিজেদেরকে রাজনৈতিক সংগ্রামের যোগ্য হাতিয়ার রূপে গড়তে পারেননি। পরিবর্তন করতে রূপান্তরও করতে হয়। পরিবর্তন হচ্ছেই, হবেও। পরিবর্তন মানে একে পাল্টে ওকে বসানো নয়। বিদ্যুৎ ছিল না, বিদ্যুৎ আসছে। স্কুল ছিল না, স্কুল হচ্ছে। মানুষ বেশি বিদ্যুৎ, আহার, শিক্ষার সুযোগ ভোগ করছে। এটা পরিবর্তন। বাংলার মানুষ চায় রূপান্তর-কী সমাজের, কী ব্যক্তির! তাই উৎপাদন সম্পর্ক পাল্টাতে হবে।
বাংলাদেশে প্রয়োজন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং প্রশাসনিক অবস্থানকে নতুনভাবে নির্ধারণ করা, যেন রাজনৈতিক নেতৃত্বের আলোকে আলোকিত হয়েই প্রশাসন পথ চলতে শেখে। প্রয়োজন দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা, যেন জনগণের সার্বভৌমত্ব অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে। মিথ্যার পথে আমলাতন্ত্র ঘৃণিত। সত্যের পথে আমলাব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। প্রতিনিধিত্বমূলক নেতৃত্ব ব্যতীত গণতন্ত্র যেমন অর্থহীন, আদর্শিক প্রশিক্ষিত আমলা ছাড়াও তেমনি তা অচল। গণতন্ত্রের স্বার্থে দুইয়ের সুনির্দিষ্ট অবস্থান প্রয়োজন। বর্তমানে তা প্রধানত নির্ভর করছে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সৃজনশীল প্রত্যয় এবং প্রশাসনিক আমলাদের পেশাদারিত্বের ওপর।
বাংলাদেশে বেশকিছু সংখ্যক প্রশাসনিক অঙ্গনে অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব রয়েছেন যারা গণমুখী প্রবণতার অধিকারী, যারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাফল্য কামনা করেন। কিন্তু প্রশাসনের বিরাট অংশ এখনো রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল নন এবং অনুগত হতে শেখেননি। এখনো তাদের দায়িত্বশীলতার পাঠ সমাপ্ত হয়নি। নেই কল্যাণমূলক উন্নয়নমুখী কর্মসূচি সফল করার দৃঢ় প্রত্যয়। প্রথাগত সংকীর্ণতার দেয়াল ভেঙে জনগণের দুর্দশা লাঘবে অনীহা অধিকাংশের। সংস্কারের আবদ্ধতা ছিন্ন করছে দেশের জন্য, দশের জন্য আত্মনিয়োগে আজো তাদের অপারগতা। নীতি প্রণয়নকারী রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে সবরকম বিকল্প তুলে ধরার মানসিকতা এখনো আমলারা অর্জন করেননি। এখনো রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে আমলারা রাজনৈতিক নেতৃত্বকে চিহ্নিত করেন ‘শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, ‘তদবিরকারক, ‘গোলমাল সৃষ্টিকারী হিসেবে। এর কারণ অবশ্য সুস্পষ্ট। এসবের মূল নিহিত রয়েছে অতীতে, বিশেষ লক্ষ্যে নির্মিত প্রশাসনিক ব্যবস্থার অঙ্গীকারে, প্রশাসনিক ব্যবস্থার কাঠামো এবং কার্যক্রমে, কর্মকর্তাদের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণে। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের এক অংশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপযোগী করে নিজেদের গড়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বাংলাদেশে গণতন্ত্র  প্রাণবন্ত হয়নি কোনো সময়ে। গণতন্ত্রের প্রবাহ এখানে বারেবারে হোঁচট খাচ্ছে স্বৈরশাসনের প্রাচীরে। এখন পর্যন্ত তা লাভ করেনি দুর্বার গতি।
এ যুগ আক্রমণের যুগ। এতদিন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিরা শুধু অর্জিত অধিকার রক্ষা করতেই ব্যস্ত থেকেছে, এখন থেকে নতুন অধিকার অর্জনের জন্য কৃষক, শ্রমিক সবাইকে নিয়ে নতুন প্রজন্মের  সাথে ধর্মান্ধ সন্ত্রাসী ও সহযোগী শক্তিকে আক্রমণ করতে হবে, তবেই হবে জয় সুনিশ্চিত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন