মিথ্যা সত্যের জন্ম দেয় না
সংলাপ
॥ একটা মিথ্যা আরেকটা মিথ্যার জন্ম দেয়। একটা ভুল আরেকটা ভুলের জন্ম দেয়। রাষ্ট্র পরিচালনায়
আমলারা যে ভুল করছেন, তা সংশোধনের উপায় নেই। তারা দোষী হন না, হন মন্ত্রীরা। সব সরকারের
সময়?প্রচার করা হয় মন্ত্রীসভার সবাই সৎ ও দুর্নীতি থেকে তারা মুক্ত। অবশ্য অতীত ও বর্তমান মন্ত্রীরা আমাদের থেকে ভালো জানেন,
তারা সৎ কিনা এবং আগামী নির্বাচনে তাদের জয়ী হতে হবে কি না।
পদ্ধতিগত
ভাবে জনগণ তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আবার ভোট দেবে এবং আবার আশাহত হবে। সাধারণ মানুষের
এই চিত্রটি রাজনৈতিক দলের রাজনীতিজীবীদের অজানা নেই। জনগণ তাদের ক্ষমতারোহণের সিঁড়ি।
তাই
ক্ষমতায় গেলে নির্বিচারে নিজের অযোগ্যতায় আমলাদের সহযোগিতায় কখনও বা ষড়যন্ত্রে দেশের
সম্পদ শোষণ করে। এটা এমনভাবে বাংলাদেশে প্রকট যে, আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার প্রয়োজন
হয় না। যারা দূর্বল, গরিব তারাই মার খাচ্ছে, অনাহারে-অর্ধাহারে শীতে মারা যাচ্ছে। সবসময়
সরকারি দলের লোকগুলো স্বাধীনতার পর থেকে জলদস্যু, বনদস্যু প্রভৃতি দস্যুবৃত্তিতে পারদর্শী
হয়ে সন্ত্রাসী রাজনীতিক হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। তারা চাঁদাবাজি করছে। ভর্তি বাণিজ্য
করছে। টেন্ডারবাজি করছে। সব সরকার থাকে নির্বিকার। সরকার ও দল মিলেমিশে যায়। সরকারের
ওপর দলের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না, আবার দলের ওপর সরকারেরও নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
বর্তমান
সরকারের গতিশীলতার অভাব। আবেগ আছে গতি নেই। ফলে মন্ত্রিসভায় এজেন্ডাবহির্ভূত বিষয় প্রধান্য
পাচ্ছে। সমস্যার অন্ত নেই বাংলাদেশে। এর ওপর আবার ঈর্ষা ও মিথ্যাচারিতা সমন্বয়ে আরেকটা
সমস্যা?তৈরি করা হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতি এবং নেতৃত্ব যে বিভ্রান্ত, বিকলাঙ্গ ও ঈর্ষাকাতর
তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই ঈর্ষা ও মিথ্যাচারিতা রাজনৈতিক নেতৃত্বের একটি কঠিন সমস্যা।
এর চিকিৎসা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের
আরো সমস্যা দারিদ্র্য, অসম বন্টন, শ্রেণীবৈষম্য এবং রাজনৈতিক ইসলামের উগ্রবাদীতা। আছে
অস্বাভাবিক বেকারত্ব। বিচারব্যবস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলোর অদক্ষতা
ও আধুনীকরণ না করা। দারিদ্র্য দূরীকরণে সেসব কর্মপন্থা নেয়া অপরিহার্য তা কোন সরকার
পর্যাপ্ত নেয় না। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকা অকার্যকর। মধ্যবিত্ত ছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণ
কেউ করে না। ধনীদের কম সন্তান হয় অপরদিকে গরিবদের বেশী। গরিব এই মানব সন্তানগুলো গরিব,
নিরক্ষর, বেকার বা আধা-বেকার। দেশের অগ্রগতিতে ওদের ভূমিকা নেই কারণ ডাক্তার, অধ্যাপক,
প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী তারা হতে পারে না। দারিদ্র্যের জন্য লেখাপড়া করতে পারে না। এরাই
রাজনৈতিক দলের শিকার। মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে তারা তাদের ব্যবহার করে।
বাংলার
আরেকটি দুর্ভাগ্য, পেশাদার ভ্রষ্টচরিত্রের ব্যবসায়ীরা সব রাজনীতিতে এসে গেছে। এরাই
দলের শক্তি আর্থিক ও মুগুরের দিক থেকে। এরা যে কোনো অছিলায় ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থে
নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। যেমন এবার দিয়েছে চিনি, আলু, ডাল, আদা,
চাল, রসুন, পেঁয়াজ প্রভৃতি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের। এই ভয়ঙ্কর চোরাদের সব সরকার চেনে
এবং তোয়াজ করে। তাই কোটি কোটি টাকা লুণ্ঠন করেও তাদের শাস্তি হয় না। এমন অবস্থা বিরাজ
করছে বলেই সামাজিক স্থিতিশীলতা থাকছে না। মানুষ হচ্ছে অশান্ত। সমাজ হচ্ছে অস্থির। এই
অসহায় চিত্র সরকারের চোখে ধরা পড়লেও তারা দুষ্টের দমন করতে পারছে না। ফলে এই অন্যায়
সয়ে যাওয়ার প্রবণতা সরকারের বুমেরাং হয়। সেটা দেখা যায় যখন হয় নির্বাচন!
নেতৃত্ব-প্রকৃত
সত্য। নেতৃত্ব আদর্শ, গতিশীল ও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত না হলে দেশের শ্রীবৃদ্ধির আশা-দুরূহ।
দারিদ্র্য বাড়ছে, বেকারত্ব বাড়ছে, শোষণ বাড়ছে, দখল বাড়ছে এবং আরো বাড়বে। মানুষ অত্যাচারিত
হবে। সমাজের একটাই শ্রেণী ছড়ি ঘোরাবে। আর বাকি কোটি কোটি মানুষ নিষ্ঠুর দারিদ্র্যের
কষাঘাতে মরণদশায় পৌঁছবে। মারা যাবে। তারপর একদিন ইতিহাস হয়ে থাকবে বইয়ের পাতায় পাতায়।
এখনই সময় নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জনের। ভুল নেতৃত্ব দেশকে ভুল পথে, অনুন্নয়নের পথে নিয়েছে
বারবার। সরকারের নীতিনির্ধারকদের তথা সব রাজনীতিকদের আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক পথে
যাওয়ার সময় এসেছে। সময়ের যথাযথ ব্যবহার না জানলে বারবার রাজনৈতিক অঙ্গনে সুনামি দেখা
দেবে এটাই বাস্তবতা। তাই মিথ্যাকে সত্য দিয়ে প্রতিহত করতে হবে এবং সত্য দিয়ে সত্য প্রতিষ্ঠিত
করতে হবে। বাংলার আকাশ থেকে মেঘ সরে যেতে বাধ্য হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলার মানুষের সত্যকে ধারণ-লালন-পালন করুক এটাই প্রত্যাশা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন