বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০১৭

বাস্তবতার নিরিখে কর্মই ধর্ম হোক

বাস্তবতার নিরিখে
কর্মই ধর্ম হোক

একবিংশের পুনর্জাগরণ। জীবন চলার পথ যখন কণ্টকাকীর্ন তখন সংস্কারের প্রয়োজন। দেশবাসীর জীবনাভিমুখ এখন সেদিকেই অগ্রসরমান। একবিংশে লক্ষ্যবিমুখ রাজনীতির ঢালাও সংস্কার সময়ের দাবী, আদর্শহীন রাজনীতিকদের বহিষ্কার এবং দলকে তরুণ উদীয়মান নেতাদের দিয়ে ঢেলে সাজানো। পারবেন কি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এ পথে হাঁটতে? মানুষকে হাঁটাতে? পারলে ইতিহাসও তাঁর পাশাপাশি হাঁটবে এবং  সেইসঙ্গে মানুষও।
সংলাপ ॥ বাংলার মানুষ থাকতে চায় চিন্তাজগতে মুক্ত। মিথ্যাচারের বাঁধন থেকে মুক্তি। সবধরনের বন্ধন অবসান। রাজনীতিতে দুর্বত্তের - দুশ্চরিত্রের-দুঃশাসনের - দুর্নীতির কালো মেঘের অবরোধ দূর হোক - এই হচ্ছে বাংলার মানুষের প্রত্যাশা।
একপ্রকার প্রবল অনিশ্চয়তা, ব্যাখ্যাতীত ভীতির ছায়া ক্রমশই  গ্রাস করে চলেছে সমাজজীবন, নাগরিক, এমনকী ব্যক্তি-জীবনকেও। এখন বাংলাদেশের চল-চ্চিত্রায়ণে এমনই এক ইঙ্গিত। ইশারায় নয়, স্পষ্ট অভিব্যক্তিতে। হয়তো এ ভাবনার সমীচীনতা সকলে স্বীকার না করতেও পারেন, তবুও সন্দেহ নেই যে, বিপন্নতা বাড়ছে। না; এ কোনও বিষাদের বিলাপ নয়, বরং রাজনৈতিক সংকটের পূর্বাভাসে আগাম সতর্কতা।
সরকার আছে। শুধু তাকে দুষে কোন লাভ নেই। কারণ অনেক কিছুরই যে অভাব সেখানে। প্রাজ্ঞতা, অভিজ্ঞতা, অধ্যবসায়, সাংগঠনিক পরম্পরা-দলীয় এবং প্রশাসনিক সব প্রয়োজনীয় উপাদানে পুষ্ট হওয়ার পূর্বেই ভূমিষ্ট হয়ে বাংলাদেশ আজ ৪৬ বছরের কীর্তিমান। কারও চেষ্টায় নয়, পরিকল্পিত পন্থাতেও নয়, কেবল পূর্বতন অজ্ঞ শাসকদের ভুলের ফলে ঘটেছে পরিবর্তন। সরকার পরিচালনার দায়িত্ব চেপেছে মহাজোট সরকারের কাঁধে। কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই। কারণ মানুষ এমনটাই চেয়েছিলেন। পরিবর্তনের হাওয়া দিন বদলের পালা।
এখন কর্মই ধর্ম হোক। অক্ষমতা স্বাভাবিক, তাকে দূর করে স্ব-নির্ভর হতে হবে। নিছক আবেগের বশে           একটি অনৈতিহাসিক ঘটনাকে ঐতিহাসিক বলে চালানো নয়। সংসদীয় গণতন্ত্রে সরকারের পরিবর্তন বিরাট কিছু নয়। এমনকী ওই পরিবর্তনের পিছনে যন্ত্রণার বিস্তৃত বিবরণ থাকলেও নয়। অতীতে এ দেশেও তো এমন ঘটনা কম ঘটেনি! দুর্ঘটনা, লোভ বা অজ্ঞাত এমন একটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে হইহই করাটা বিরোধী রাজনীতিকদের নেহাত বাড়াবাড়ি। সংবাদমাধ্যমের একটি অংশের অতিশয়োক্তির প্রতি অতিবিশ্বাসও শাসকদলের বা বিরোধীদলের পক্ষে বাস্তবতার নিরিখে হচ্ছে না। যতটা বিবৃত হলো ততটা রূপায়িত হলো না। এ সুযোগ চতুরেরা ছাড়ে না। কোমরে গামছা বেঁধে তারাও এখন আসছে। বিতর্ক-বিবাদে ক্রমশ অশান্ত হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গন। মন্ত্রিসভা, কিংবা সরকারি বা বিরোধীদলের কাজের পক্ষে এমন পরিবেশ মোটেই শুভ নয়! দুষ্টজনের মুখেও মিষ্ট কথা আরম্ভ হয়েছে। শাসক-নেতৃত্বকেই এটা প্রাধান্য দিয়ে ভাবতে হবে।
কেবলবৈষয়িক উন্নতিই নয়, উন্মুক্ত হোক মুক্তির চেতনার আকাশ। শহরে-গ্রামে-গঞ্জে, গণমানুষ গণতন্ত্র ফিরে পাক। পথঘাট-কলকারখানা-চাষবাস-বিদ্যালয়-শুশ্রুষাকেন্দ্র; এ-সব তো থাকছেই, তবে তার চেয়েও যা জরুরি তা হল অধিকার-যা কিনা ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল চারদলীয় জোটের হাতে। তাই শান্তি-শৃঙ্খলা-সন্তোষ-স্নিগ্ধতা জীবনে; এগুলোই চায় মানুষ। এ চাওয়ার বোধ সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় চাহিদা। অথচ এ চাওয়া, এ প্রাপ্তি এখনও অধরা। যত ছোটই হোক, অশান্তির চরিত্র যে অশনির দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করে তা সরকারকে স্মরণ রাখতে হবে।
বাংলাদেশে মানুষের কাছে উন্নয়ন মানে দু’বেলার দু’মুঠো ভাত। আর এরই সঙ্গে অন্যসব প্রয়োজনের কিছুটাও মেটে তাহলে তো সোনায় সোহাগা। উন্নয়নের বান ডাকালেই যে সার্থকনামা, এ সিদ্ধান্তও সঠিক নয়। যেটুকু যা, তার সবটুকুই তো বড়লোকের ভাগে। গরিবের ভরসা কী?
গোলমালটা মূলেই রয়েছে। একদিকে বিশ্বায়ন এবং আর্থিক সংস্কারের জেরে সাধারণ মানুষ জেরবার। অন্যদিকে ধনবৈষম্যের বাড়বাড়ন্তে ঈর্ষার বৃদ্ধি। সমাজে আর্থিকভাবে ভারাক্রান্ত শ্রীহীন অংশটি ক্রমেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে, সংখ্যাগুরু মানুষের মরিয়াভাব বাড়ছে। ফলে সামাজিক ভারসাম্যের স্তরচ্যুতি, মূল্যবোধের ক্রম-অবলুপ্তি, শৃঙ্খল ভাঙার আওয়াজ তুলে শৃঙ্খলাতেই আঘাত। সমাজের প্রায় সব ঘটনাতেই এই প্রবণতার প্রাদুর্ভাব। আপাতদৃষ্টে একেই এখন আইনশৃঙ্খলার সমস্যা বলা হচ্ছে। কিন্তু তা নয়। আসলে এটি সর্বনাশা ঝোঁক, ক্রোধের অনর্থ, ভাঙনের ভীষন্নতা। এ প্রবণতার প্রাবল্য গোটা দেশ জুড়ে। বিশ্বায়নের হাত ধরে পুঁজিবাদী উন্নয়নই আর্থিক অগ্রগতির একমাত্র পথ, এতেই অশান্তির অবসান, সব সমস্যার সমাধান; এই বিশ্বাসই অনর্থের জন্য দায়ী। সবই অনৈতিক রাজনীতির কুফল। প্রশাসনিকভাবে কোনও সরকারের পক্ষেই এ অঘটনের স্থায়ী নিরসন করা অসম্ভব। এমনকী আয়ত্তে রাখাও আয়াসসাধ্য ব্যাপার। আবার প্রথাগত পুঁজিবাদী উন্নয়নও এর সমাধান নয়।
বৈষম্যের সঙ্গে বিরতিহীন বিরোধ এবং দুই সমাজের শিক্ষাগত সংস্কার-ভাবনায়-ভাষণে-লেখনীতে-শিল্পে-সাহিত্যে সর্বত্র, অশান্তির মূল কারণ পর্যবেক্ষণের, বিশ্লেষণে। আদর্শহীন রাজনীতিকদের বহিষ্কার। দলকে ঢেলে সাজানো। পারবেন কি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এ পথে হাঁটতে? মানুষকে হাঁটাতে? পারলে ইতিহাসও তাঁর পাশাপাশি হাঁটবে এবং সেই সঙ্গে মানুষও।

সম্মানিত প্রধানমন্ত্রী! মানুষ আপনাকে বিশ্বাস করেছে। এখনও সে বিশ্বাস অটুট। তাই ডাক দিন। ঘরে ঘরে ডাক পাঠান। দলতন্ত্র নিকেশ হোক, দলবাজি নিপাত যাক, ধর্মের নামে বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতি দূর হোক, ধর্মান্ধতা দূর হোক প্রশাসন নিরপেক্ষ হোক-কঠোরতম নিরপেক্ষতা শাসনের ধর্ম হোক, স্বচ্ছতা সর্বাঙ্গের ভূষণ হোক। প্রমাণ করুন কেবল একটি দেশের-একটি দলের মামুলি প্রধানমন্ত্রীই নন, আপনি তার চেয়ে অনেক বড়; মহৎ কোনও উদ্দেশ্যের অভিযাত্রী! দল আছে, থাকবেও; কিন্তু প্রমাণ করুন দলের চেয়ে দেশ বড়, মা হিসাবে মানুষের প্রতি দায় আরও বড়। সময়ও লাগবে অনেক। তা লাগে তো লাগুক। কত সময়ই তো নষ্ট করেছি আমরা। আমাদের মতো সাধারণ যারা তারা তো অপেক্ষাতেই আছে। সেই কতকাল, কতযুগ ধরে। 

প্রতিরোধে চাই যুবসমাজ নেতৃত্ব

সময়ের সাফকথা....
প্রতিরোধে চাই যুবসমাজ নেতৃত্ব

সংলাপ ॥ সাংস্কৃতিক আন্দোলন দিয়েই রুখতে হবে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে। মানুষের জীবনধারণের সংগ্রামকে এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া লাগবে, যাতে সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়। সেই লড়াই করার জায়গায় কি আছে রাজনীতিকরা? আন্দোলন আছে? এমন আন্দোলন, যা উগ্র ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদী  আগ্রাসনকে রুখে দিতে পারে? রাজনীতিকরা এটুকুও বলে উঠতে পারল না যে, এখন ধর্মের নামে সন্ত্রাস দেশের বড় শত্রু। আমরা বাংলার কথা ভাবি। বাংলায় সর্বনাশা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে, অগ্রাধিকার এখানেই।
ধর্মীয় অনুভূতির আওয়াজ নিজেদের গলায় তুলে নিয়ে ভয়ঙ্কর শক্তিকে প্রতিহত করা যাবে না। ধর্মাচরণের অধিকার সংবিধানে স্বীকৃত। যে যার ধর্মাচরণ করবেন, অন্য ধর্মাবলম্বীদের শত্রু ভাববেন না, ঠিক কথা। ব্যক্তিগতভাবে ধর্মাচরণ করি না, কিন্তু কেউ হিন্দু বা মুসলমান বা বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান হিসেবে ধর্মাচরণ করেন সেখানে নাস্তিকতার বড়াই করব না। এটাও এক রকমের সহিষ্ণুতা।
আসছে আগ্রাসন বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধেই। ধর্মাচরণ ছিল, হিন্দু-মুসলমান ছিলেন, আছেন, কিন্তু হিংস্রতা ছিল না। বাংলার গর্বকে তছনছ করে দেয়ার বক্তব্যও ছিল না। এসে যখন গেছে, প্রতিহত করতে হবে। বাংলার বৈশিষ্ট্য সহজিয়া ধর্মের চলন। প্রথম ও প্রধান পরিচয় ‘বাঙালি’, এই ভাবনায় উদ্ভাসিত আমরা একসঙ্গে থেকেছি, এতটাই মসৃণভাবে মিশেছি যে, খুচরো সঙ্ঘর্ষও ফণা তুলতে পারেনি।
ধর্মীয় সন্ত্রাস মাথাচাড়া দিতে চাইছে। সাধারণ বাঙালিরা এর মধ্যে থাকছেন না। বিরল ব্যতিক্রম থাকতে পারে। ভয়ঙ্কর ভাবনা ও বিপুল অর্থ ছড়িয়ে ধর্মজীবীরা সন্ত্রাসের শিবির গড়ার চেষ্টা করছে। সাধারণ বাঙালি মুসলমান সাড়া দিচ্ছেনা। মদতদাতা অবাঙালি দেশের বাহিরের শক্তি। বাঙালি রাজনীতিকরা ‘বহিরাগত’ আগ্রাসীদের সহায়ক। তলে তলে রাজনৈতিক ইসলাম অর্থাৎ সাম্প্রদায়িকতা প্রসারিত করার চেষ্টা চলছে বহু বছর ধরেই। এখন ব্যাপারটা যে জায়গায় এসেছে, প্রতিরোধের দেয়াল তুলতেই হবে। যে দেয়ালে মাথা ঠুকে পশ্চাদপসরণ করতে হবে ওদের। কোথাকার ওহাবী ইসলামপন্থীরা এসে আমাদের বাংলাকে বিষাক্ত করে দিয়ে যাবেন, বাঙালি তা মানবে না এবং স্রেফ ‘মানব না’ বলে বসেও থাকবে না। বাঙালির হাতে আছে প্রতিরোধের সহিষ্ণু ও শক্তিশালী অস্ত্র।
রাজনৈতিক লড়াই চলছে, চলুক। সাধারণ বাঙালি হিসেবে আমাদের অস্ত্রের নাম বাঙালিয়ানা। বাঙালিত্ব। সহজিয়া ধর্মের চলন আমাদের ঐতিহ্য। সাহিত্য, সঙ্গীত, নাটক, সিনেমায় আন্তরিক সহিষ্ণুতা আমাদের উত্তরাধিকার। বাংলাদেশের  উগ্রবাদী মুসলমানরা হুমকি দিয়েছিল, নববর্ষের মিছিল উৎসব করতে দেবে না। কিন্তু হয়েছে-হবে। নববর্ষ হয়ে উঠুক বড় উৎসব, যেখানে অস্ত্রের আস্ফালন নেই, আছে চিরকালের বাঙালিয়ানার উজ্জ্বল উদ্যাপন। কেউ হিন্দু, কেউ মুসলমান, কেউ বৌদ্ধ, কেউ খ্রিস্টান, কিন্তু আমরা বাঙালি। এই বাঙালিয়ানার স্নিগ্ধ অস্ত্র দিয়েই প্রতিরোধ।
এতদিন ছিল গণতন্ত্র ধ্বংসকারী, স্বৈরতান্ত্রিক ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকরা। এবার তার দোসর হয়েছে সাম্প্রদায়িকতা। রাজনীতিকদের হাতে সত্য যেমন বিপন্ন তেমনি সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার রাস্তাও অবরুদ্ধ। আবার সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের মাধ্যমে রাজনৈতিক মেরুকরণ জোরদার করার ষড়যন্ত্র চলছে।
বিপন্ন হয়ে পড়েছে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সাম্প্রদায়িক ঐক্য-সম্প্রীতি। বাংলায় আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে এই বিপন্নতা এক ভয়াবহ ধ্বংসের বার্তা দিচ্ছে।
বাংলাকে, বাংলার মানুষকে এবং বাংলার সামাজিক ও রাজনৈতিক মূল্যবোধকে রক্ষা করতে হলে আর কালক্ষেপনের সুযোগ নেই। যুব সমাজকে এখন ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে সর্বশক্তি নিয়ে। সব ধরনের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও খেটে খাওয়া মানুষকে জোটবদ্ধ করে নামতে হবে সাংস্কৃতিক সংগ্রামের ময়দানে। একাজ যুবসাজ ছাড়া আর কেউ করবে না। তাই বিপন্ন বাংলার ঐতিহ্য ও মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে যুবসাজকেই। যুবসমাজই পারবে বাংলার মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর ক্রমবর্ধমান আক্রমণের মোকাবিলা করতে। আসন্ন এই লড়াইয়ের মহড়া শুরু হয়ে গেছে গ্রামে গ্রামে, পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায়।
বাংলার রাজনৈতিক পরিসরকে ভাগাভাগি করে নিতে চায় অসাধু রাজনীতিকরা। অর্থাৎ বাংলার মানুষের জীবনে বিপন্নতাকে স্থায়ী রূপ দিতে চায়। তারা চাইছে ধর্মীয়, সম্প্রদায় ও জাত-পাতের ভিত্তিতে সমাজকে ভাগ করে দিতে। তারপর সেই বিদ্বেষ, বিচ্ছিন্নতাকে রাজনৈতিক মেরুকরণে রূপান্তরিত করতে। একাজটাকেই আশ্চর্যজনকভাবে সহজ করে দিচ্ছে আমলারা। তারা সাহায্য করছে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষবিষ ছড়াতে। অপরাধীদের আড়াল করতেই  সাজানো হচ্ছে তদন্তের অভিমুখ। স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে গোপন বোঝাপড়া।
ধর্মীয় উগ্রবাদী শক্তিকে রুখতে না পারলে বাংলার সর্বনাশ অনিবার্য। গণতন্ত্র এমনিতেই ধ্বংসের পথে। সাম্প্রদায়িক হিংসায় নিত্য জ্বলছে বাংলার মাটি। লড়াই চলবে ধর্ম নিয়ে। রুজির প্রশ্ন উবে যাবে। জীবিকা নির্বাহ করাই অসম্ভব হয়ে উঠবে। শিক্ষা ব্যবস্থা রসাতলে যাবে। দুর্নীতি ছাড়া চাকরি নেই। শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে। দারিদ্র্য আরও বেশি গ্রাস করবে। ক্রমশ বাড়বে  সরকারের ঋণনির্ভরতা। মানুষের মজুরি বাড়বে না। আয় কমবে। অন্যদিকে বাড়বে জীবনযাত্রার ব্যয়। বাড়বে সব সাধারণ জিনিসের দাম। মানুষের এই জীবন-জীবিকার লড়াইয়ে কোথাও নেই রাজনীতিকরা। থাকবেও না। তারা শুধু ক্ষমতা চায়। লুটপাট চায়। এই লড়াই একমাত্র যুবসমাজের কাজ। বাংলাকে, বাংলার মানুষকে রক্ষার লড়াই এখন যুবসমাজের কাজ। তার জন্যই ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে সাংস্কৃতিক অভিযানের ডাক। সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে বিপদের কথা। তাদের শামিল করতে হবে এই অভিযানে।
অপরদিকে, যে কোনও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতির মূল কথা জনসমর্থন। সব ক্ষেত্রেই জনমত অর্থাৎ সংখ্যা গরিষ্ঠের মতই যথার্থ কি না, সে নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু গণতন্ত্রে সংখ্যা গরিষ্ঠের মতই যে চূড়ান্ত, তা নিয়ে কোনও তর্ক চলে না। তাই দখলদারির রাজনীতিতে মেতে জনাদেশকে অস্বীকার করার প্রবণতা গণতন্ত্রের পক্ষে মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। কিন্তু তেমনই ঘটছে।
অভিযোগ অস্বীকার করলেই দায়মুক্ত হওয়া যায় না। প্রথমত, দেশের শাসক দল, তাদের দায় অনেক বেশি। দ্বিতীয়ত, সঙ্ঘাত বার বার সেখানেই তীব্র হচ্ছে, যেখানে বিরোধী দলগুলোর প্রতি মানুষের সমর্থন বাড়ছে। তাই শাসক দলের দিকে আঙুল ওঠা খুব স্বাভাবিক নয় কি?   
সব ‘আমাদের’ হবে, ‘আমরা’ সবাই জিতব, ‘আমরা’ সর্বত্র জিতব, সব কিছু ‘আমাদের’ দখলেই থাকবে এই মানসিকতা থেকেই জন্ম নেয় সঙ্ঘাত। আর এই মানসিকতার জন্ম হয় গণতন্ত্রের সম্পূর্ণ বিপ্রতীপে অবস্থিত এক রাজনৈতিক কানাগলি থেকে। এই সব কানাগলির মালিক রাজনীতিকের মুখোশ পরা কিছু দখলদার। এই দখলদাররা শুধু সরকারের দখল নিয়ে সন্তুষ্ট হয় না, সমগ্র গণতান্ত্রিক পরিসরকেই এরা গ্রাস করতে চায়। সেই কারণেই রাজনীতিকরা আক্রান্ত হন, বিরোধী রাজনীতিকদেরকে পথে নামতে দেখলেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, কোন রাজনীতিক দল বদলে রাজি না হওয়ার পরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়।

বিপুল জনাদেশ নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে শাসক দল। এ দেশের প্রতিটি জনাদেশের মর্যাদা রক্ষা করার দায় তাদেরই। সে দায়িত্ব যদি পালন করতে পারেন, তাদেরও মঙ্গল, গণতন্ত্রেরও মঙ্গল। আর জনাদেশের প্রতি নিজেদের দায়বদ্ধতা যদি বিস্মৃত হন, তা হলে কিন্তু দলও এক দিন কানাগলির মালিকদের ষড়যন্ত্রে দখল হয়ে যেতে পারে। এটাই বাস্তবতা। 

শ্রমিক সমাজে আদর্শিক নেতৃত্বের অভাব!

শ্রমিক সমাজে
আদর্শিক নেতৃত্বের অভাব!

সংলাপ ॥ প্রতিবছরই পালিত হচ্ছে মে দিবস। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠায় রাজনীতিজীবীরা সোচ্চার বক্তব্যও দিচ্ছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া কি কখনই সম্মানিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বা হচ্ছে?
আদর্শহীন শ্রমিক রাজনীতিক শ্রেণীর হাতে শ্রমিকেরা চিরকালই নিগৃহীত। অথচ এদের শ্রমের বিনিময়েই আজ বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নয়নের ডানা মেলেছে। বর্তমানে দেশের উন্নতিতে অংশীদারিত্ব থাকলেও শ্রমিক শ্রেণী আজ আর তাদের শ্রেণী স্বার্থে সোচ্চার হতে পারছে না। জোরদার কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না মালিক তথা রাজনীতিক শোষকদের বিরুদ্ধে। কিন্তু কেন? কেন আজ তারা বিচ্ছিন্ন? নিজেদের দাবি তো নিজেদেরই আদায় করে নিতে হবে। রাজনীতিকরা বা আদর্শহীন শ্রমিক নেতারা কখনই স্বেচ্ছায় চাইবে না তাদের একচ্ছত্র প্রভুত্বকে বিসর্জন দিতে।
এ দেশে শ্রমিক শ্রেণী কখনই শ্রেণী স্বার্থ চেতনায় ঘটাতে পারেনি যথার্থ পরিবর্তন। শ্রমিকদের স্বার্থে গঠিত ট্রেড ইউনিয়ন পরিণত হয়েছে শ্রমিকদের দাবিয়ে রাখার যাঁতাকলে। নেতৃবৃন্দের কোন্দল, দলীয় ও ব্যক্তিক স্বার্থ, শ্রমিকদের কখনই মাথা তুলে দাঁড়াতে দেয়নি। দেশ স্বাধীনের পর যখন রাজনীতির ভূত চেপে বসল শ্রমিকদের ঘাড়ে তখন তারা হারিয়ে ফেললো স্বাধীন সত্তা। রাজনৈতিক ক্ষমতার দলগুলোর লেজুড়বৃত্তি করে চললো তারা। রাজনৈতিক স্বার্থই তখন তাদের কাছে প্রধান হয়ে গেল। সাধারণ শ্রমিকেরা তাদের আদর্শহীন রাজনীতির খেলার পুতুলে পরিণত হলো। নিত্যদিন যাদের শ্রম ব্যবহার হচ্ছে তাদের মূল্যায়ন নেই, নেই ন্যায্য পারিশ্রমিক। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে বহন করতে হচ্ছে দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতার চরম অভিশাপ। বর্তমান নিরক্ষরতার হার প্রায় ৬০.৯%। আর শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে এই নিরক্ষরতার হার সবচেয়ে বেশি। অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন না হওয়ায় সত্য ও আদর্শের পথে তারা সচেতন হতে পারছে না নিজের অধিকার সম্পর্কে। ফলে খুব সহজেই তারা প্রতারিত হচ্ছে রাজনৈতিক দলের দালাল শ্রেণীর হাতে।
দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আজ শ্রমিকেরা নিষ্পেষিত। দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় এবং প্রধান ক্ষেত্র কৃষিতে কর্মরত শ্রমিক শ্রেণী চরম অবহেলিত। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৩% লোক এই কৃষি কর্মের সাথে জড়িত। কিন্তু কোন সরকারই এই কৃষিকে উন্নত করতে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ ও সার ব্যবহারকে নিশ্চিত করেনি। বরঞ্চ প্রাকৃতিকভাবে এবং মহাজন, ফড়িয়া ও ব্যবসায়ীদের দ্বারা তারা বঞ্চিত হচ্ছে ফসলের ন্যায্য পাওনা ও দাম থেকে। কৃষিখাত থেকে বঞ্চিত শ্রমিকেরাই একদিন পা বাড়ায় শহরে। কাজ নেয় বিভিন্ন শিল্প, কল-কারখানায়। কিন্তু সেখানেও তারা শোষণের শিকার। শিল্প-কারখানার মালিকেরা ধার ধারে না শ্রম আইনের। অধিক শ্রম খাটিয়ে অধিক মুনাফা অর্জন থাকে তাদের একমাত্র লক্ষ্য। তারা কখনই শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থকে প্রাধান্য দেয় না।
দেশের বর্তমান সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হচ্ছে পোশাক শিল্প। প্রায় ৬০% বৈদেশিক মুদ্রা আসে এই খাত থেকে। এই খাতে দেশের প্রায় ২০ লক্ষ শ্রমিক কাজ করে। এইসব শ্রমিকদেরও নানাভাবে বঞ্চিত করা হয় ন্যায্য মজুরি থেকে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার নির্ধারিত মজুরি ব্যবস্থা কোথাও মেনে চলা হয় না। অথচ দেশে রয়েছে শ্রম অধিদপ্তর। শ্রমঅধিদপ্তর দেশ ও শ্রমিকশ্রেণীরনৈতিক স্বার্থে কাজ করে না। টাকার লোভে মুনাফাখোর মালিক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষার্থেই তারা নিবেদিত। শ্রমআইন ও আদালত থাকা সত্ত্বেও শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থ আজ উপেক্ষিত।

সবক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়নের দ্বারা শ্রমিকেরা প্রতারিত হয়েও প্রতিকারের কোন পথ তারা আজও সৃষ্টি করতে পারেনি। রাজনৈতিক স্বার্থেই তারা বন্দি। মে দিবসে শ্রমিকদের নিজস্ব শ্রেণীগত অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং তা প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকার একান্ত প্রয়োজন থাকলেও তারা তা করতে পারছে না কারণ ওই দিনটাতেও দারিদ্র্যের কষাঘাতে ও সাময়িক লাভের জন্য নিজেদের বিক্রি করে দিয়ে আদর্শহীন রাজনীতিকদের সভায় হাজির হয়ে স্লোগান দিচ্ছে - ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’। মে দিবস উদযাপন সভায় হাজির হওয়ার জন্য তারা ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। তাদের ভয় দেখানো হয় যদি হাজির না হয় তাহলে রাজনৈতিক চক্রের হাত থেকে মুক্তির সনদ তারা কোনদিনই অর্জন করতে পারবে না। রাজনৈতিক স্বার্থের তল্পিবাহক মিথ্যাচারের ট্রেড ইউনিয়নের কবল থেকে এখনই বের করে আনতে হবে শ্রমিক শ্রেণীকে এবং তার জন্য চাই সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত আদর্শিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব। 

দিন বদলে শ্রমিক আন্দোলন

দিন বদলে শ্রমিক আন্দোলন

সংলাপ ॥ সঙ্কটের আবর্তে নিমজ্জমান বিশ্ব আধিপত্যবাদের ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া প্রয়াসে ক্রমাগত প্রান্তসীমার দিকে অপসারিত শ্রমজীবী মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের জ্বলন্ত বাস্তবতার মধ্যে উদ্যাপিত হলো এবারের মে দিবস। পুঁজিবাদ তার সর্বগ্রাসী থাবা নিয়ে গোটা বিশ্বকে যত শুষে খেতে চাইছে ততোই দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া শ্রমিকশ্রেণীর মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাভাবিক ক্ষোভ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে প্রচলিত অসাম্যের ও বিভেদের সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। ফলে সামাজিক অসন্তোষ বাড়ছে। উদ্ভব হচ্ছে বিস্ফোরক পরিস্থিতি। প্রতিনিয়ত বিশ্বের কোনা না কোনো দেশে ঘটছে তার তেজোদীপ্ত বহিঃপ্রকাশ। আধুনিক পুঁজিবাদীদের উচ্চমার্গীয় কলাকৌশল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শ্রমিকশ্রেণীর সংগঠিত হবার ক্ষেত্রে এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
শ্রম দিতে দিতে নিঃস্বপ্রায় শ্রমিকের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা প্রতিবাদী মানসিকতাকে ওই বাধা-প্রতিবন্ধকতা আটকে রাখতে পারছে না। তাই যেখানে যেমন বাস্তব অবস্থা সেখানে তেমনভাবেই শ্রমিকশ্রেণীর ক্ষোভের, প্রতিবাদের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। আর সেই স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ আন্দোলনের গর্ভ থেকে জেগে উঠছে নতুন চেতনা যা তাদের সংগঠিত হবার এবং ঐক্যবদ্ধ হবার প্রেরণা জোগাচ্ছে। এটাই শ্রমিকশ্রেণীর বৈশিষ্ট্য। তারা সৃষ্টি করে, উৎপাদন করে, শ্রমদান করে কিন্তু তাদের তৈরি সম্পদে তাদের অধিকার থাকে না। এই ব্যবস্থাকে বদলিয়ে নতুন কিছুর স্বপ্ন দেখা শ্রমিকশ্রেণীর সহজাত।
শ্রমিকশ্রেণীর এই সহজাত প্রত্যাশারই বাস্তব রূপ সাংস্কৃতিক বিপ্লব দিন বদলের পালায়। শ্রমিকশ্রেণীর স্বাভাবিক প্রবণতাই হলো সামাজিক ন্যায়, সম্পদের সুষম বণ্টন। শ্রমের উপযুক্ত মূল্যদান ও মর্যাদা, সংখ্যাগরিষ্ঠের শ্রম শোষণের ওপর দাঁড়িয়ে সংখ্যালঘুর মুনাফা সৃষ্টির ব্যবস্থাকে বদলানো। এই প্রবণতাই শ্রমিকশ্রেণীর ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলে। শ্রমিকশ্রেণীর আশু দাবির মধ্যে সাধারণভাবে ট্রেড ইউনিয়ন এবং শ্রমিক আন্দোলন সীমাবদ্ধ থাকলেও এই আন্দোলনের বিকাশের মধ্যে দিয়ে শ্রমিকশ্রেণীর রাজনৈতিক চেতনার বীজ অঙ্কুরিত হয়। তারা রাষ্ট্রকে, রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে চিনতে শুরু করেন। আধিপাত্যবাদীরা এটা জানে, তাই তারা পদে পদে শ্রমিকদের সংগঠিত হবার আন্দোলন করার চেষ্টাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। মালিকশ্রেণীর এইসব ষড়যন্ত্র সম্পর্কে শ্রমিকদের সচেতন থেকে সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ হবার বার্তা দেয় মে দিবস। বিশ্বে শোষিত মানুষের সৌভাতৃত্ববোধ এবং সংহতির চেতনাই পারে শ্রমিকশ্রেণীর প্রত্যাশা পূরণের পথ সুগম করতে। শ্রমিকশ্রেণীর জীবনসংগ্রামে মে দিবস প্রতিবছরই জোট বাঁধার নতুন প্রেরণা জুগিয়ে যায়। আজ দেশজুড়ে উদারনীতির নামে পুঁজিবাদ মেহনতী মানুষের প্রান্তিকীকরণ দ্রুততর করছে। বিচ্ছিন্নতাবাদ,নৈরাজ্যবাদ, ধর্মীয় উগ্রতা ও হিংস্রতার শক্তি খেটে খাওয়া মানুষের ঐক্য ভাঙার চেষ্টা করছে। সমাজ বদলের দীর্ঘমেয়াদী সংগ্রামের সঙ্গে সঙ্গে এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে আশু সংগ্রামও জরুরি হয়ে পড়েছে। এবারের মে দিবস শ্রমিকশ্রেণীর আন্দোলনকে বৃহত্তর সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে সংহত করার পথ কি প্রশস্ত করতে পারবে?