মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৪

মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগুতে হবে দৃঢ় চিত্তে



মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নে
এগুতে হবে দৃঢ় চিত্তে

সংলাপ ॥ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত মন্ত্রিসভার সদস্যরা ১২ জানুয়ারি রোববার বিকেলে বঙ্গভবনের জনাকীর্ণ দরবার হলে শপথ নিলেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদের কাছে। শুরু হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকারের যাত্রা। দেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাছে এদেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়া স্বাভাবিক কারণেই বেশি। দেশি-বিদেশি নিন্দুক ও সমালোচকেরা যে যাই বলুক বাংলাদেশকে যারা নিজের দেশ বলে জানে, মায়ের মতো ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে তাদের কাছে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি অনেক কাঙ্খিত ছিলো এবং এই সফল অনুষ্ঠানটি বিভিন্ন বৈদ্যুতিন মাধ্যমে দেখে স্বস্তিও বোধ করেছেন। সংবিধান অনুযায়ী গত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনটি যদি না হতো, এদেশের সাধারণ মানুষের জীবনে এবং রাজনীতির অঙ্গণে যে আরো কত দুর্ভোগ, অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হতো তা ভাবতে গেলেও আতঙ্কিত হতে হয়। আপাতত সেই আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা থেকে জাতি মুক্তি পেয়েছে - সেটাই এই মূহুর্তের সবচেয়ে বড় আনন্দ। বাংলাদেশের ইতিহাসের এ যেন আরেক মাহেন্দ্রক্ষণ। মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের সাথে সাথে বিরোধী দলের লাগাতার অবরোধ হরতালেরও আপাত অবসান হয়েছে। তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন এবং তারই হাতের এই মন্ত্রিসভা যথেষ্ট ঝকঝকে-তকতকেও। বিতর্কিত কোনো নেতাকেই স্থান দেয়া হয়নি এ মন্ত্রিসভায়। শপথ গ্রহণের পর সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো ধরনের চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। বঙ্গভবনের খোলা মাঠে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'শেখ হাসিনা কোনো চাপের কাছে কোনোদিন মাথা নত করেনি। আগামীতেও করবে না। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখন সরকার গঠিত হলো। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করাই হবে নতুন সরকারের লক্ষ্য।'  দেশি-বিদেশি যেসব শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি এবং এখনো পর্যন্ত ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে এদেশের বিরুদ্ধে এবং এদেশের মানুষের বিরুদ্ধে, কেবল তারাই একেক সময় একেক অজুহাত দেখিয়ে এদেশের মানুষকে অস্বস্তিতে রাখতে চায়। দুঃখজনক হলেও একথা সত্যি যে, বাংলাদেশ বিরোধী দেশি-বিদেশি চক্রটি বেশ শক্তিশালী। এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেই দেশটি ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয়েছিল এবং বাংলাদেশ আজও বিশ্বের বুকে টিকে আছে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে।
১৯৭১-এ ৭ই মার্চের ভাষণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, 'আমাদের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বসবে, আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈরি করবো এবং এদেশকে আমরা গড়ে তুলবো। এদেশের মানুষ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে।' আর বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি যখন সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত তৎকালীন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ২৩ সেপ্টেম্বর এক বেতার ভাষণে বলেছিলেন, 'স্বাধীনতা প্রত্যয়টির কোন সীমা পরিসীমা নেই। যুদ্ধে ও শান্তিতে উভয় পর্যায়েই এর প্রাসঙ্গিকতা অপরিহার্য। শত্রুকে চিরদিনের জন্য ধ্বংস করে দেয়ার পাশাপাশি তাই আমাদের শহীদদের রক্তের উপযুক্ত সম্মান দিতে পারে এমন সমাজ গড়ার অঙ্গীকারও করতে হবে। বাংলাদেশের গ্রামে ও নগরে যেসব তরুণ এখন যুদ্ধ করছে তারা শুধু বিদেশী হানাদারদের নিশ্চিহ্ন করার জন্যই লড়ছে না, বিশেষ সুবিধা ও অবিচারমূলক ব্যবস্থা নির্মূল করার জন্যও তারা লড়ছে। আমরা এমন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি যেখানে রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি সংগঠিত হবে 'সকল নাগরিক সমান-এই মৌলনীতির ভিত্তিতে।'   (তথ্যসূত্র:তাজউদ্দিন আহমদ স্মারক বক্তৃতা, জুলাই ১৯৯০- আতিউর রহমান)।
মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন বলতে যা বোঝায় তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও বঙ্গতাজ তাজউদ্দিনের ১৯৭১ সালের ভাষণসমূহ থেকে সহজেই স্পষ্ট। এদেশের মানুষ অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে যে এখনো স্বাধীন হতে পারেনি তার সর্বশেষ উদাহরণ ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন। স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি বিভিন্ন শক্তি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন স্থানে শক্তিশালী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী গড়ে তুলে প্রগতিশীল, ধার্মিক ও ধর্মপ্রাণ মানুষদের ওপর হামলা-নির্যাতন চালিয়ে আসছে। দেশের এই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতত্বাধীন সরকারের সংবিধান সমুন্নত রাখার শপথ অত্যন্ত তাৎপর্যবহ। মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদদের স্বপ্নের মতো একটি দেশ গঠনে এই সরকারকে অবশ্যই সফল হতে হবে অতীতের সকল ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে। এই নতুন সরকারের পথ চলার শুরুতে তথা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থায় আরও একটি শুভ দিক হচ্ছে, যেসব বিদেশি শক্তি এদেশের অভ্যুদয়ে সরাসরি সহযোগিতা ও সমর্থন দিয়েছিল তারা আবারো নতুন উদ্যমে সমর্থন ও প্রেরণা যোগাচ্ছে। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের পরম বন্ধু রাশিয়া এবার ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বিজয়কে অভিনন্দন জানিয়েছিল। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে এসেছিল ভুটান ও ভারতীয় প্রতিনিধি এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় তারা স্বস্তি প্রকাশ করে গেছেন। গত রোববার শপথ গ্রহণের পর পরই নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং। শপথ শেষে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে ফেরার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাকে টেলিফোন করে ১০ মিনিট কথা বলেছেন বলে সাংবাদিকদের জানান প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী দু'দেশের মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি এবং অমীমাংসিত দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলো দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'ভারতের সরকার ও জনগণ যে কোনো পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পাশে থাকবে।'  এদিকে গত সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শপথ গ্রহণ করার পর শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী (গণমাধ্যম) মাহবুবুল হক শাকিল জানান, 'ফোনে প্রণব মুখার্জি বলেছেন, 'দুই দেশের সম্পর্ক জোরদার হবে। পারস্পরিক সুসম্পর্কের ভিত্তিতে দুই দেশ সামনে এগিয়ে যাবে।' উল্লেখ্য ভারতের প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জ্যেষ্ঠ নেতা লাল কৃষ্ণ আদভানিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান।
তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় ভারতের পর চীন, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছে। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং অভিনন্দন বার্তায় শেখ হাসিনাকে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় চীনের জনগণ ও আমার পক্ষ থেকে আপনাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।' চীনের প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশ-চীন ঘনিষ্ঠ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। সামপ্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন  ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও বেড়েছে। আমি আপনার প্রতি এ সহযোগিতার হাত বাড়াতে চাই, যাতে বাংলাদেশ-চীন ব্যাপক এবং সমবায় অংশীদারির ভিত্তিতে ধারাবাহিকভাবে একটি নতুন জায়গায় পৌঁছাতে পারে।'
'বিপদেই বন্ধুর পরিচয়'-বাংলা ভাষার এই প্রবাদ বাক্যটি স্বাধীনতার ৪২ বছর পরেও এদেশের রাষ্ট্রীয় জীবনে আবারো সত্য হয়ে দেখা দিয়েছে। যারা দেশ ও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেন তারা এই সত্যটি ধারণ করে এগিয়ে গেলে অবশ্যই দেশ এগিয়ে যাবে, লাখো শহীদের স্বপ্নের মতো একটি অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা অবশ্যই সফল হবে।

নতুন দিনের ভাবনা .... জঙ্গিবাদ দমনে চাই গণপ্রতিরোধ



নতুন দিনের ভাবনা ....
জঙ্গিবাদ দমনে চাই গণপ্রতিরোধ

মাসুম ॥ সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষসহ আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন খাতের উপর আসছে বড় আঘাত। হরতাল-অবরোধের নামে যে তাণ্ডব চলেছে তা কখনোই গণতান্ত্রিক হতে পারে না। এখন অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে বড় প্রতিবন্ধক হলো জঙ্গিবাদ। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে এখনই ঐক্যবদ্ধভাবে বাধা দেয়া না গেলে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। জঙ্গিবাদ ও রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধে এখন জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গণপ্রতিরোধের বিকল্প নেই।
মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল এমন একটি সমাজ গঠিত হবে যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি মানব মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হবে। বঞ্চিত মানুষদের মুক্তি পেতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনর্জীবিত করতে হবে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না তাদেরকে  এদেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে। তা না হলে এ সমাজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে প্রতিষ্ঠিত হবে না। মুক্তিযুদ্ধের সব শক্তিকে একত্রিত করতে হবে। দেশের রাজনীতি হতে হবে জনকল্যাণমুখী।
বাংলাদেশ কারও একার পেশীশক্তির দেশ নয়, সকল ধর্ম, বর্ণ, জাতিগোষ্ঠীর মানুষের। এদেশ যতটুকুই মুসলমানদের ততটুকুই হিন্দুর, বৌদ্ধের, খ্রীস্টানের।
সামপ্রদায়িক হামলার পেছনে মূল কারণ দুটি- ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আর বহুমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা। যতদিন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ না হবে ততদিন এ ধরনের হামলা বন্ধ হবে না। এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বাংলা মাধ্যম, ইংরেজী মাধ্যম আর আরবী মাধ্যমে তিন ধরনের চিন্তার মানুষ সৃষ্টি হচ্ছে। অসামপ্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন অপরিহার্য।
এবার আন্দোলনের নামে দেশব্যাপী যে দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছে তাতে দেশবাসী হতবাক ও মর্মাহত। এ ধরনের ঘটনা বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের পরিপন্থী। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না। এদের মোকাবেলা করতে হলে দেশের তরুণ সমাজকে সংগঠিত করে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সকল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন মিলে যদি প্রতিরোধ গড়া না যায় তবে সামনে আরও বড় ধরনের বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। এক হিংস্র সমাজ অপেক্ষা করছে আমাদের সামনে। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমেই সামপ্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করতে হবে।
যশোরের অভয়নগরে হামলার ঘটনায় মূল কারণ সম্পদ লুণ্ঠন নয়, মূল কারণ রাজনৈতিক। কেননা, যারা ভোট দিতে যাচ্ছিল তাদের বার বার নিষেধ করা হচ্ছিল, বাধা দেয়া হচ্ছিল যাতে তারা ভোট দিতে না যায়। ভোটের পর সে গ্রামে দু'দিক থেকে হামলা চালানো হয়েছে। যারা আক্রমণভাগে ছিল তাদের মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। যাদের মুখ ঢাকা ছিল না তারা স্থানীয় ছিল না। বহিরাগতদের দিয়ে এ আক্রমণ করানো হয়েছে, এমনকি হামলাকারীদের মধ্যে নারীও ছিল। যারা এ সামপ্রদায়িক হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে যাতে তারা আর কখনও এ ধরনের কাজ করতে সাহস না পায়। তবেই আক্রান্তরা সাহস ফিরে পাবে, আবার বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা পাবে।
পুলিশ দিয়ে ৫৬ হাজার বর্গমাইল নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয়, গণমানুষকে এগিয়ে আসতে হবে নিজ থেকে। যারা   অভয়নগর, দিনাজপুর, সাতক্ষীরার সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা অচেনা নয়। আমাদের সমাজেরই লোক। আমরা যদি তাদের নিবৃত্ত করতে না পারি তাহলে দুর্বৃত্তদের রাজত্বই কায়েম হবে। তাই আসুন, সবাই মিলে এই দুর্বৃত্তদের মোকাবিলা করি। সব অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলি।

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়াল গণজাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ হাক্কানী খানকা শরীফ



ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়াল গণজাগরণ মঞ্চ
ও বাংলাদেশ হাক্কানী খানকা শরীফ

সংলাপ ॥ গত ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সারাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা এক বিভৎস আকার ধারণ করে। দেশের আনাচে কানাচে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা একশ্রেণীর ধর্মান্ধ দুর্বৃত্তদের রাজনৈতিক লক্ষ্যবস'তে পরিণত হয়। যশোর, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, ঠাকুরগাঁওসহ সারাদেশে অসংখ্য সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের বসতবাড়িতে হামলা, তাদের সহায় সম্পত্তি ধ্বংস ও লুটপাট করা হয়েছে। তাদের সারাজীবনের অর্জিত সম্পত্তি ধ্বংস করা হয়েছে, তাদের গবাদি পশু ও ফসল লুট করা হয়েছে, নারীদের গায়ের গহনা থেকে শুরু করে মাছ ধরার জাল, বাচ্চাদের পড়ার বই এমনকি রান্না করা খাবার পর্যন্ত কোনো কিছুই ধর্মান্ধ জঙ্গীদের তাণ্ডব থেকে রেহাই পায়নি। তাদের ঘরগুলোকে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রাণভয়ে অসংখ্য মানুষ আজ ঘরছাড়া। নিরাপত্তাহীনতার কারণে নিজেদের বাড়িঘরে ফিরতেও তারা ভয় পাচ্ছেন। এমনই এক পরিসি'তিতে ‘ঢাকা-মালোপাড়া রোডমার্চ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় গণজাগরণ মঞ্চ। গণজাগরণ মঞ্চের এই কর্মসূচির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বাংলাদেশে সূফীতত্ত্বের ধারক-বাহক তরুণ প্রজন্মের বাংলাদেশ  হাক্কানী খানকা  শরীফ।
গত ১০ জানুয়ারি শুক্রবার সকাল ১০টায় বাংলাদেশ হাক্কানী খানকা শরীফের সম্মানিত সভাপতি শাহ্‌ সূফী ড. এমদাদুল হক এঁর নেতৃত্বে শাহ্‌ উপাধিধারী আলিম ও সহযোগী সদস্যগণ শীতবস্ত্র, শাড়ি, লুঙ্গি, ও অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে শাহবাগ থেকে মালোপাড়ার উদ্দেশ্যে রোডমার্চ শুরু করেন। রোডমার্চ চলাকালে প্রথম পথসভাটি হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেটে বেলা সাড়ে ১২ টায়। এরপর মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, ফরিদপুর শহরের জনতা ব্যাংকের মোড়, মধুখালীতে মধুবন মার্কেটের সামনে এবং মাগুড়া খানপাড়া বটতলায় পথসভা শেষে রাত ১১টায় যশোর শহরে পৌঁছে প্রথমদিনের মতো  রোড মার্চ মুলতবি করা হয়।
শনিবার সকাল ৯টায় অভয়নগর উপজেলার সামপ্রদায়িক সন্ত্রাস কবলিত এলাকা মালোপাড়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু হয়। সেখানে পৌঁছে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন, আক্রান্ত মানুষদের সঙ্গে মতবিনিময়, সামপ্রদায়িক সন্ত্রাস  রোধে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে স্থানীয় জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধকরণ এবং দুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ  করে বাংলাদেশ হাক্কানী খানকা শরীফ।
মালোপাড়ায় জনাকীর্ণ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার এবং বাংলাদেশ হাক্কানী খানকা শরীফের সভাপতি শাহ্‌ সূফী ড. এমদাদুল হক। সমাবেশে ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, জামাত-শিবিরের রাজনীতি বহাল রেখে অসামপ্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণ হবে না। এখন জামাত শিবির নিষিদ্ধ করে প্রতিশ্রুতি পূরণের সময় হয়েছে।
বাংলাদেশ হাক্কানী খানকা শরীফকে কাছে পেয়ে ধর্মীয় সন্ত্রাসে বিপন্ন যশোরের মালোপাড়া রূপ নেয় হিন্দু-মুসলমানের মিলনমেলায়। মালোপাড়ার সমাবেশে বাংলাদেশ হাক্কানী খানকা শরীফের সভাপতি শাহ্‌ সূফী ড. এমদাদুল হক বলেন, ইসলাম দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছে, নিশ্চয়ই অমুসলমানদের রক্ত আমাদের রক্তের মত। তাদের মাল আমাদের মালের মত এবং তাদের ইজ্জত-আবরু আমাদের ইজ্জত-আবরুর মত। বাংলাদেশে অমুসলিমদের ইজ্জত, জান-মাল মুসলিমদের কাছে আমানতস্বরূপ। তাদের সেই আমানত আমরা রক্ষা করতে পারিনি। তিনি বলেন, অবস্থার প্রেক্ষিতে মনে  হয় বাংলাদেশে প্রকৃতপক্ষে সংখ্যালঘু সমপ্রদায় হচ্ছে মুসলমান! কোন মুসলমান অমুসলমানের ইজ্জত ও জান-মালের ক্ষতি করতে পারে না। ক্ষতিগ্রস্ত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যারা আপনাদের বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়েছে, আপনাদের সম্পদ লুন্ঠন করেছে তারা মুসলমান না। নীল নদের পানি যেমন নীল নয় তেমনি জামাতে ইসলাম, ইসলাম নয়। জ্যৈষ্ঠমধুতে যেমন মধু নাই তেমনি জামাতে ইসলামে ইসলাম নাই। কোন ধর্মই সন্ত্রাসের অনুমোদন দেয় না। সুতরাং সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম নাই। গণজাগরণ মঞ্চের সাথে জামাতমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন - অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের যুগপৎ আন্দোলন চলবে।
সমাবেশ শেষে হাক্কানী খানকা শরীফের নির্বাহী সদস্যবৃন্দ ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে কথা বলেন এবং প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি ঘুরে দেখেন। হাক্কানী খানকা শরীফকে কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন মালোপাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুরা, অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বাংলাদেশ হাক্কানী খানকা শরীফ বিপন্ন মানুষের সহায়তায় সবসময় পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর বাংলাদেশ হাক্কানী খানকা শরীফের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। অবশিষ্ট ত্রাণসামগ্রী মন্দির ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয় যা ঐদিনই সন্ধ্যার পূর্বে বিতরণের প্রতিশ্রুতি দেন মন্দির ব্যবসস্থাপনা কমিটি।
ঢাকা ফেরার পথে শনিবার সন্ধ্যায় যশোর চিত্রামোড়ে জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। চিত্রা মোড়ে গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশে মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার রোডমার্চের ৩ দফা দাবি তুলে ধরে বলেন, সামপ্রদায়িক সন্ত্রাস বন্ধে কঠোর আইন করতে হবে, সন্ত্রাসী ঘটনার জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে এবং একইসঙ্গে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রত্যেক পাড়া মহল্লায় সামপ্রদায়িক সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠনের তাগিদ দেন ইমরান এইচ সরকার। একইসঙ্গে তিনি অভয় নগরের মালোপাড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন, বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি পরিবার প্রতি ২০ হাজার ও বাকী ১০০ পরিবার প্রতি ১০ হাজার টাকা করে দেয়ার  ঘোষণা দেন। এছাড়াও মণিরামপুরের ধর্ষণের ঘটনার নিন্দা জানান তিনি। গত শনিবার সন্ধ্যার পর যাত্রা করে রোববার ভোর ২টায় শাহবাগে এসে সামপ্রদায়িক সন্ত্রাস প্রতিরোধে রোডমার্চ মুলতবি হয়।

এমন যদি হতো!



এমন যদি হতো!

সাদি ॥ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। শপথ নেয়ার আগে তিনি ঘোষণা করেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি সরকারি ভবনে বাস করবেন না এবং নেবেন না সরকারি কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এমনকি তিনি বা তার মন্ত্রিরা কোনো সরকারি যানবাহন ব্যবহার করবেন না। ট্রেনে চড়ে তারা সাধারণ মানুষের মতো অফিসে যাবেন-আসবেন।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল শপথ নেয়ার আগে যেসব কথা বলেছিলেন, তিনি তা বাস্তবায়িত করেছেন - বিনা মূল্যে ৭০০ লিটার পানি দিয়েছেন, কমিয়েছেন বিদ্যুতের দাম। অরবিন্দ কেজরিওয়াল সবচেয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন নয় হাজার বর্গফুটের সরকারি বাসভবন প্রত্যাখ্যান করে। অরবিন্দের পথেই পা বাড়িয়েছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া। তিনি নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা কমানোর জন্য রাজ্য পুলিশকে অনুরোধ করেছেন। ক্ষমতা গ্রহণের পরেই অরবিন্দ দুর্নীতি দমনের জন্য নিয়েছেন এক বিশেষ  পদক্ষেপ।  খুলেছেন আট ডিজিটের বিশেষ হেল্পলাইন। কোনো সরকারি কর্মচারি বা সংস্থা ঘুষ চাইলে যে কেউ দিল্লি সরকারের দুর্নীতি দমন শাখায় ফোন করে তা জানাতে পারেন । ফোন করার পর দুর্নীতি দমন শাখার অফিসার ওই ঘুষখোর কর্মচারিকে কিভাবে হাতেনাতে ধরতে হবে  তা  অভিযোগকারীকে বুঝিয়ে দেবেন। ঘুষখোর কর্মচারিকে গ্রেপ্তার করবে সরকারের দুর্নীতি দমন শাখা।  অভিযোগকারীকে নিরাপত্তা দেবে সরকার।
এমন যদি হতো! আমাদের দেশের একজন মন্ত্রীও যদি এমন পরিবর্তনের আবহ সৃষ্টি করতেন? কারোর মাথায় কি কিছু নেই! দেখেও তো মানুষ কিছু শিখে। একজনও কি ভাবেন না যে, তিনি তার কর্মের মাধ্যমে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন?

জামাত-হেফাজত নির্ভরতায় বিএনপি ডুবেছে



জামাত-হেফাজত নির্ভরতায়
বিএনপি ডুবেছে

সংলাপ॥ রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এখন মহাসংকটে। বিএনপির আন্দোলন কেবল ভুল পথে পরিচালিত হয়নি, রাজনীতির মূলধারা থেকেও দলটি প্রায় ছিটকে  পড়েছে। ডান দিকে ঝুঁকতে ঝুঁকতে ডানদিকের ডোবাতেই পতিত হয়েছে বিএনপি। এখন বিএনপিকে সাধারণ মানুষ জামাত-হেফাজতের সহযোগী দল হিসেবে গণ্য করে। গত পাঁচ বছরে জনগণের কোন সমস্যা নিয়ে তারা কথা বলেনি। উগ্রবাদী জামাত ও ধর্মান্ধ হেফাজতের ওপর ভরসা রেখে তারা কেবল সরকার পতনের আন্দোলন ও ষড়যন্ত্র করেছে। নিজস্ব শক্তি-সামর্থ্য নয়, দুই চরম প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির কাঁধে ভর করে গণ-অভ্যুত্থানের প্রয়াস ছিল বিএনপির জন্য আত্মঘাতি। বিএনপি একদিকে গণজাগরণ মঞ্চকে 'নাস্তিক' বলে দূরে ঠেলে দিয়েছে অন্যদিকে হেফাজতের ১৩ দফা কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি ঘোষণা করেছে। সমপ্রতি তারেক রহমান লন্ডনে বসে '৭২ সালে প্রণীত সংবিধানকে জন-আকাঙ্খার বিরোধী বলে অভিহিত করেছেন। তারেক রহমান এই বিবৃতির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মূল লক্ষ্য রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। এইসব কারণে বিএনপির উপর থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থানকারী সাধারণ মানুষের সমর্থন ওঠে গেছে।
জামাতের কারণে আন্তর্জাতিক বিশ্বের কূটনৈতিক সমর্থন লাভের ক্ষেত্রেও বিএনপিকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে আজ যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে বা হচ্ছে তার অন্যতম প্রধান কারণও এই জামাত। ভারত জামাতকে শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধীই নয়, বরং আপদমস্তক একটি জঙ্গি সংগঠন হিসেবেই মনে করে। তারপরও ২০১২ সালের ২৭ অক্টোবর ভারত সফরকালে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সে দেশের সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা ও সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি ব্যাপক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ, দেশটির জাতীয় প্রধান নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শংকর মেনন, বিরোধীদলীয় নেতা সুষমা স্বরাজ থেকে শুরু করে বিজেপি প্রধানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বৈঠক করে তার এবং তার দলের সঙ্গে আবারও কাজ করার ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছিলেন। সফরের শেষ দিন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ৩ নভেম্বর ঢাকায় ফেরার প্রাক্কালে বেগম জিয়া তাকে বাংলাদেশ সফরের জন্য তার দল ও জনগণের পক্ষ থেকে উষ্ণ আমন্ত্রণও জানিয়ে আসেন। কিন্তু পরবর্তীতে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফরে এলে হরতালের অজুহাতে তিনি ঢাকায় থেকেও তার সঙ্গে সাক্ষাৎ পর্যন্ত করতে যাননি। আর সেক্ষেত্রে জামাতকে খুশি করার জন্যই এটি করেছেন বলে জানা যায়। এসব মিলে জঙ্গিবাদী এ সংগঠনটির কারণেই ভারতের সঙ্গে বিএনপি প্রধানসহ তার দলের সম্পর্কটি আরও নেতিবাচক ও তিক্ত হয়েছে।
রাজনৈতিক যুদ্ধে কৌশল ও মিত্রের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আন্দোলন ও নির্বাচনবিরোধী রণকৌশলে বিএনপি হেরে গেছে, এটা স্বীকার করেই তাকে নতুন পথচলার কথা ভাবতে হবে। অবরোধ-হরতালের নামে গাড়ি পোড়ানো কিংবা মানুষ মারার আন্দোলন করে যে জনসমর্থন পাওয়া যায় না, সে কথা বিএনপির নেতৃত্ব যত দ্রুত অনুধাবন করবে, ততই বিএনপির মঙ্গল। বিএনপি নেতৃত্বকে সিদ্ধান্ত নিতেই হবে - তারা রাজনীতির গণতান্ত্রিক ধারায় আসবে না কি জামাতের ফাঁদে পা দিয়ে ধর্মভিত্তিক জঙ্গী সংগঠনে রূপান্তরিত হবে।