বুধবার, ২৫ মার্চ, ২০১৫

বাঙালি শান্তি ও সত্যের পথ ধরে চলতে চায়



বাঙালি শান্তি ও সত্যের পথ ধরে চলতে চায়

·        তিনি সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং মিথ্যাকে ব্যর্থ করেন - যদিও অপরাধীরা ইহা অপছন্দ করুক না কেন। (৮ঃ৮)
·        আল্লাহ্‌ নিজ কালাম সমূহ দ্বারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন যদিও অপরাধীগণ ইহাকে অপছন্দ করে। (১০ঃ৮৩)
·        আমরা তাহাদিগকে কর্ণ, চক্ষু এবং হৃদয় দান করিয়াছিলাম। কিন্তু তাহাদের কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় কোন কিছুই তাহাদের উপকারে আসিল না; কারণ তাহারা অস্বীকার করিত এবং যে আযাব লইয়া তাহারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করিত উহাই তাহাদিগকে পরিবেষ্টন করিয়া ফেলিল। (৪৬ঃ২৭)
·        সত্যকে মিথ্যা বলিয়া প্রত্যাখ্যানকারীদের জন্য দুর্ভোগ। (৮৩ঃ১১)
সংলাপ ॥ একরৈখিকভাবে লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে চিন্তাপ্রবাহের মাঝে ভ্রাম্যমান থাকলে বিবেকের অবস্থান খুঁজে পাওয়া যায়। আর বিবেক থেকে উদ্ভব হয় চেতনা। চেতনাকে সুদৃঢ় করে যুক্তি। চেতনা স্থান-কাল-পাত্রের উপর নির্ভরশীল। বস্তুবাদী দর্শনের বিষয়বস্তুর মতো ধর্মীয় দর্শনের বিষয়বস্তু সমূহ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ও নির্ভরশীল। বস্তু যেমন গতিশীল ও প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল ঠিক তেমনি মানুষের ধর্ম ও ধর্মচিন্তা ছিল-আছে-থাকবে গতিশীল ও পরিবর্তনশীল। অর্থাৎ সদা সর্বদাই পুরাতন থেকে নতুনের উত্তরণ এবং সম্মুখমুখী। তাই ধর্ম সর্ব সময়ে বর্তমান।
মানব সমাজে ধর্ম কোন বিচ্ছিন্ন ব্যবস্থা নয়। প্রাকৃতিক দেহ সম্পদের উপর আধিপত্য বিস্তার, সংস্কার ও সংকীর্ণতার মূল খুঁজতে গেলেই ধর্মের উৎপত্তি পাওয়া সহজ হবে। ধর্ম যখন আধিপত্যবাদীদের (তা সমাজের যে অঙ্গনে বা স্তরেই হোক না কেন) হাতিয়ার হয়ে যায় তখন ধর্মের ভয়াবহ রূপ ধরা পড়ে মানবসমাজে উগ্র ধর্মান্ধতা হয়ে।
আধিপত্যবাদীরা সব সময়েই ধর্মকে ছলে-বলে-কলে কৌশলে এমনভাবে মোড়ক দিয়ে রেখে আসছে যাতে সাধারণ মানুষের কাছে ধর্মের আসল রূপ ‘শান্তি’ ও ‘সত্য’ না বেরিয়ে পড়ে। তাই ধর্মের প্রগতিশীলতা এবং মেহনতী মানুষের হাতিয়ার হতে পারেনি এখনও পারছে না আর এজন্য প্রয়োজন সর্বাগ্রে ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে একনিষ্ঠ, শান্তিপ্রিয়, সত্যবাদী, নির্ভীক, দেশপ্রেমিক রাজনীতিকদের দল  ও সরকার।
শ্রমজীবী মানুষ ধর্মভীরু, পরিশ্রমী বিশেষ করে বাংলাদেশে। সমাজ কাঠামো পরিবর্তন করে প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন ধর্ম যে স্বভাব, শান্তি ও সত্যের আঁধার তা ব্যাপকভাবে প্রচার করা। শুধু তাই নয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে ধর্মের বা জীবন চলার পথে মানুষের প্রগতির পথে পরিবর্তনের সহায়ক, এটা পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে যারা সত্যকার দেশ ও জাতির জন্য নিবেদিত প্রাণ হতে চায় তাদের প্রথমে শান্তি ধর্মকে ধারণ-লালন-পালন করতে হবে। ধর্মীয় শাস্ত্র থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে সার্বিক শক্তি দিয়ে মোকাবেলা করতে হবে আধিপত্যবাদীদের - এটাই প্রকৃত ধার্মিকের কাজ।
বাংলাদেশের বড়ো বড়ো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সৌদি ইসলামের ধর্ম-ব্যবসায়ী, ধর্মবেত্তারা এমনভাবে ঢুকে পড়ে মিথ্যাচারের প্রভাব বিস্তার করে বসে আছে যাতে মনে হয় রাজনীতিকরা আফিমের নেশায় বুঁদ হয়ে আছে। দীর্ঘ ৪৪ বছরে শ্রমজীবী মানুষকে তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে, বেহেস্তের প্রলোভন দেখিয়ে, ভবিষ্যতের কথা বলে মিথ্যাচারের মাধ্যমে ধর্মের নামে ব্যবসার জাল বিছিয়ে শোষণ এবং শাসন করে যাচ্ছে। এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে উঠতি রাজনীতিক লুটেরা শ্রেণী। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আজ বাংলাদেশের রাজনীতিকদের উপর থেকে আস্থা হারাতে হারাতে এমন এক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যে, যে কোন সময়ে যে কোন অঙ্গনে কোন ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চললে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এটাই বাংলাদেশের বাস্তবতা।
তাই মিথ্যাচার ছেড়ে দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য রাজনীতিকরা রাজনীতি করুন, ধর্ম-ব্যবসায়ী ধর্মবেত্তারাও ধর্মজীবী না হয়ে ধর্মের সত্যকে তুলে ধরুন, নচেৎ সময় আসছে আপনাদের কথাও কেউ কানে নেবে না।
বাংলাদেশে আপনাদের চেহারা জনসম্মুখে প্রকাশ হয়ে পড়েছে। আপনারা নবী মুহাম্মদ (সঃ) এঁর ধর্ম ইসলাম (শান্তি) প্রতিষ্ঠার জন্য কোন কর্মকান্ড করছেন না বরং ওহাবী-এজিদি-মওদুদী পন্থা অনুসরণ করে মুখে মুহাম্মদী ইসলামের কথা বলে সম্পদের পাহাড় বানানোয় ব্যসৱ।  দেশবাসী আপনাদের সব সম্পদের খবর পেয়ে গেছে। জনগণ রুখে দাঁড়ালে মধ্যপ্রাচ্যের পোশাক ও সংস্কৃতি আপনাদের জন্য কাজে লাগবে না। অদূর ভবিষ্যতের জন্য রাজনীতিক সহ পেশাজীবীরা সজাগ হোন। সময় ও পরিস্থিতি কাউকে ছাড় দেয় না। কেহই আল্লাহ্‌র আইনের বাইরে নয়। এটাই স্মরণ রাখার চেষ্টা করলে জাতির জন্য শ্রেয় এবং দেশের উন্নতির জন্য চলার পথের সহায়ক হবে।

জাতি জানতে চায় - ৭ মার্চ স্বাধীনতা দিবস নয় কেন?



জাতি জানতে চায়
৭ মার্চস্বাধীনতা দিবস নয় কেন?

সংলাপ ॥ ৭ মার্চ বাঙালি জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। বাঙালি জাতির মহাক্রান্তিলগ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দিনে গোটা জাতিকে দেখিয়েছিলেন মুক্তির পথ, স্বাধীনতার দিশা  আর  গেরিলা যুদ্ধের দিকনির্দেশনা। গেয়েছিলেন শিকল ভাঙার গান। ১৯ মিনিটের ভাষণে ১১০৮টি  শব্দে  মুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু বাঙালির চেতনায়  স্বাধীনতার যে বীজ বপন করেছিলেন, ৯ মাসে  রক্তস্নাত হয়ে সে বীজই ফলবান হয়েছে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব  পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসন লাভ করে। ’৭১-এর ৩ জানুয়ারি জনপ্রতিনিধিদের শপথ অনুষ্ঠিত হয় এবং বঙ্গবন্ধু সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হন। ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের বৈঠক আহ্বান করা হয়। এ প্রেক্ষিতে  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৭ ফেব্রুয়ারি  ঢাকার পূর্বাণী হোটেলে পার্লামেন্টারি পার্টির সভা  ডাকলেন। আলোচ্য বিষয় - পাকিস্তানের খসড়া সংবিধান।  সভা চলে ১ মার্চ পর্যন্ত। বুঝা যায়, নিয়মতান্ত্রিকভাবে স্বাধিকার অর্জনের আশা তখনও  ছিল।  কন' ১ মার্চ, ৩ মার্চে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদের অধিবেশন স'গিত করা হলো। ফলে  বাঙালিদের রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের দাবি যে শাসকরা মানবেন না, তা স্পষ্ট হলো। মানুষ প্রতিবাদে রাজপথে বিক্ষোভ করতে থাকে - এবার আর ছয় দফা নয়, ‘এক দফা’ অর্থাৎ বাংলার স্বাধীনতা আদায় করতে হবে।  জনতা স্রোতের মতো ছুটে যায় পূর্বাণী হোটেলে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিস্থিতি উপলব্ধি করে সেদিনই ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারা বাংলাদেশে হরতাল আহ্বান করেন ও পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার জন্য ৭ মার্চ রমনা রেসকোর্স ময়দানে জনসভা ডাকেন। ১ মার্চ  বিক্ষুব্ধ জনতার সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সরকার কারফিউ জারি করে। কিন্তু জনগণ কারফিউ ভঙ্গ করে বিক্ষোভ করে।
২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ডাকা গণজমায়েতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন সেই সময়কার ডাকসুর ভিপি আসম আবদুর রব। পরদিন ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে জনসভায়  বঙ্গবন্ধুর  উপস্থিতিতে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ।  জনসভায় উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত হরতাল চলতে থাকে।  ৬ মার্চ ইয়াহিয়া ঢাকায় ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন প্রস্তাব করেন। আওয়ামী লীগ থেকে ঘোষণা করা হয়, পূর্ব পাকিস্তানে জনগণের ওপর সেনাবাহিনী যে গুলি চালিয়েছে তার তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত কোন আলোচনা নয়। এদিকে ৬ মার্চ, ১৯৭১ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ভেঙে কিছু রাজবন্দিসহ ৩২৫ জন কয়েদি পালিয়ে যান। সে সময় গুলিতে নিহত হন ৭ কয়েদি। সারাদেশে চলতে থাকে বিক্ষোভ মিছিল, লাঠিমিছিল।
পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী ৭ মার্চ বেলা ২টায় সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও রেসকোর্স ময়দানে সকাল থেকেই বাঁধভাঙা স্রোতের মতো বিক্ষুব্ধ বাংলার সংগ্রামী জনতার উত্তাল তরঙ্গ আসতে থাকে। লাখ লাখ মানুষের সমাগমে জনসমুদ্রে পরিণত হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। আকারের বিশালত্ব আর সংগ্রামী চেতনার বৈভবে এই জনসমুদ্র ছিল এক অভূতপূর্ব গণজাগরণ! জনতার চেতনায় হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন - ‘স্বাধীনতা’, আর কন্ঠে সেস্নাগান -  ‘জাগো জাগো, বাঙালি জাগো’; ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, সোনার বাংলা মুক্ত করো’; ‘স্বাধীন করো স্বাধীন করো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’।
রেসকোর্স ময়দানে যাতে বঙ্গবন্ধু আসতে না পারেন সেজন্য সর্বত্র নজরদারি ছিল। তাই সবার চোখে মুখে প্রশ্ন ছিল কখন আসবেন শেখ মুজিব? প্রিয় মাতৃভূমির এ ক্রান্তিলগ্নে কী  তিনি? বিকেল  ৩টা ১৫ মিনিটে  সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি, কালো কোট পরিহিত বঙ্গবন্ধু দাঁড়ালেন মঞ্চে, বাংলার মানুষ করতালি ও স্লোগানের মাধ্যমে অভিনন্দন জানালেন তাদের প্রিয় নেতাকে। নেতার চোখে-মুখে সংগ্রামী শপথের দীপ্তি। জনতার চেতনায় যেন আকাশ ছোঁয়ার আনন্দ। ভেতরে বিপ্লব ও দ্রোহের আগুন কিন্তু বাহিরে প্রশান্ত গাম্ভীর্য নিয়ে পিনপতন নিস্তব্ধতার মধ্যে ডুবে জনতা শোনছে সমূদ্রের গর্জন। ঐশী বাণীর মতো এক দিকনির্দেশনা নিয়ে এলেন তিনি। খুব কম কথায়, সহজ ভাষায় তুলে ধরলেন বঞ্চনার ইতিহাস - ‘১৯৫২ সালে আমরা রক্ত দিয়েছি। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও গদিতে বসতে পারিনি। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান মার্শাল ল’ জারি করে ১০ বছর আমাদের গোলাম করে রেখেছে।’ সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দেয়ার অনুরোধ যে ইয়াহিয়া খান রাখলেন না, তা-ও মনে করিয়ে দিলেন বঙ্গবন্ধু।
তিনি মানুষের ভাষা বুঝতেন। তাই বললেন - ‘বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ অধিকার চায়।’ বঙ্গবন্ধু সেদিন উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, দেশের মানুষের অধিকার চাই’। অন্যায়, অবিচার ও অত্যাচারের বর্ণনা দিতে দিতে অসহযোগ আন্দোলনের নির্দেশ দিয়ে বললেন - ‘আজ থেকে বাংলাদেশে কোর্টকাছারি, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।’ তিনি বললেন, ‘আটাইশ তারিখে কর্মচারীরা গিয়ে বেতন নিয়ে আসবেন’। ‘এরপর যদি বেতন দেয়া না হয়, এরপর যদি একটি গুলি চলে, এরপর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয় - তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।’ এটাই  স্বাধীনতার ডাক, ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ অভুদ্যয়ের ঘোষণা। তিনি  জানতেন এ ঘোষণার ফলে পাকিস্তান সরকার তাকে গ্রেফতার করবে, তাই তার অবর্তমানে কী করতে হবে তার নির্দেশনা দিয়ে  তিনি বলে দিয়েছিলেন-‘রাস্তা-ঘাট যা যা আছে সবকিছু, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে। আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব।’
সবশেষে এলো চূড়ান্ত ঘোষণা, বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন ধ্বনিত হলো শ্রেষ্ঠ বাঙালির মুখে - ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের  সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এ বজ্র নিনাদ ঘোষণায়  বিদ্রোহের আগুন লেগে যায় মুক্তি পাগল বাঙালির রক্তে। বাংলার আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে লাখো  কণ্ঠে ধ্বনিত হয় - ‘জয় বাংলা’, ফুঁসে উঠে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা,  মুক্তির  সংগ্রামে জীবন দিতে দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়ে  উঠে  বাংলার মানুষ।
মুক্তিসংগ্রামের অগ্নিশপথে ভাস্বর, ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত নিরস্ত্র মানুষ সেদিন থেকে সশস্ত্র হয়ে ওঠে; তাদের চোখ-মুখে ফোটে উঠে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের দৃঢ় শপথ। ৮ মার্চ দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত দাবানলের মতো ছড়িয়ে যায় যুদ্ধের ডাক। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলার জন্য প্রস'ত হতে থাকে বাঙালি। কোথাও কোথাও শুরু হয় প্রতিরোধ ও সরাসরি আক্রমণ। মুক্তিপাগল তরুণ-যুবকরা থানা আক্রমণ করে অস্ত্র সংগ্রহ শুরু করে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তরুণ ও যুবকরা সাবেক সেনা সদস্যদের নেতৃত্বে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু করে এ সময় থেকেই। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন বেগম মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বে ৮মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে সামরিক প্রশিক্ষণ শুরু করে। ছাত্রছাত্রীরা ডামি রাইফেল কাঁধে নিয়ে মার্চপাস্ট করে নগরীর রাজপথে।
এদিনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রকাশিত ১০ দফা ঘোষণায় বলা হয়, চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত খাজনা-ট্যাক্স, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ সব বন্ধ থাকবে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, হাইকোর্ট, সচিবালয়, বেতার, টেলিভিশন কেন্দ্রসহ সব স্থানেই হরতাল পালিত হবে এবং ঘরে ঘরে উড়বে কালো পতাকা। বেতার, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা ও নির্দেশ যথাযথভাবে প্রচার ও প্রকাশিত হবে। বিমান, রেল ও সমুদ্রবন্দর খোলা থাকবে। টেলিফোন যোগাযোগ চালু থাকবে। স্টেট ব্যাংক বা অন্য কোন ব্যাংক থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে কোন অর্থ পাচার করা যাবে না।
৭ মার্চের ভাষণ বেতারে সরাসরি প্রচারিত না হওয়ায় বেতারের বাঙালি কর্মী, কলাকুশলী ও শিল্পীদের বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রচন্ড  বিক্ষোভে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয় ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ পরদিন বেতারে প্রচারের অনুমতি দিতে। বেতারে ভাষণটি প্রচার হওয়ার পর স্বাধীনতার ঢেউ উঠে সারা দেশে। প্রতিটি জেলা, থানা, ইউনিয়ন ও গ্রামে গঠিত হতে থাকে সংগ্রাম পরিষদ। ৮ মার্চ পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষ ‘কোন অরাজকতা বরদাশত করা হবে না’ বলে এক দীর্ঘ প্রেসনোট জারি করে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে সামরিক বাহিনীর প্রেসনোটের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘অভূতপূর্ব ঐক্যে বলীয়ান বীর বাঙালিকে কোন হুমকি-ধামকি দিয়ে স্বাধিকার আন্দোলন থেকে বিচ্যুত করা যাবে না। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ও ডাকে দেশব্যাপী যে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে, চূড়ান্ত বিজয়ের আগ পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।’
মোদ্দা কথা, ৭ মার্চের ভাষণে ছিল অসহযোগ আন্দোলন ও গেরিলা যুদ্ধের নির্দেশনা। এ ঘোষণা থেকেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। তাই ৭ মার্চের ভাষণ শুধু একটি ঐতিহাসিক ভাষণই নয়, এ ভাষণই স্বাধীনতার ঘোষণা।  ভাষণের প্রতিটি শব্দ স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত। প্রতিটি শব্দ তেজস্বী ও যুক্তিপূর্ণ, তীক্ষ্ণ ও বলিষ্ঠ। এ ঘোষণার পরই পাকিস্তান সরকারের প্রশাসন অচল হয়ে যায়, পূর্ববাংলা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে। গোটা জাতি যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং স্বাধীনতা অবিচ্ছেদ্য। তবু, কেন স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে অর্থহীন এবং অনাবশ্যক বিতর্ক সৃষ্টি করা হলো! স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিগুলোকে তা গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে বিশেষ করে আওয়ামী লীগকে সংকীর্ণতা ও মিথ্যাচারের উর্ধ্বে উঠে দূরদর্শিতার পথ ধরে।
রেসকোর্স ময়দানেই এ দেশের মানুষ সত্তরের ৭ জুনে ৬ দফার জয় নিনাদ শুনেছে, একাত্তরের  ৩ জানুয়ারি শুনেছে ৬ দফা ও ১১  দফা বাসৱবায়নে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অগ্নিশপথ, আর একাত্তরেরের ৭ মার্চে দশ লক্ষ বাঙালি প্রতক্ষ্যভাবে শুনেছে স্বাধীনতার ঘোষণা। এ ধ্রুব সত্যকে আর বেশিদিন দাবায়ে রাখা যাবে না।
‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল’, ‘আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব’, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের  সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এসব আহ্বানেও যদি স্বাধীনতার ঘোষণা না থাকে তাহলে আর কোন্‌ বার্তায় এর চেয়ে স্পষ্ট স্বাধীনতার ঘোষণা আছে তা জাতির সামনে তুলে ধরা হোক। তা না হলে জনগণকে জানিয়ে দেয়া হোক - ৭ মার্চকে স্বাধীনতা দিবস ঘোষণা করা হয় না কেন?

বঙ্গতাজ তাজউদ্দিনের দৃষ্টিতেঃ স্বাধীনতা



সময়ের সাফকথা ....
বঙ্গতাজ তাজউদ্দিনের দৃষ্টিতেঃ স্বাধীনতা

সংলাপ ॥ স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর আজো দেশের প্রধান সমস্যা দারিদ্র্য, ধর্মান্ধতা, ধর্মব্যবসা সন্ত্রাস ও সহিংসতা। শিক্ষা, রাজনীতি, চিকিৎসা, ধর্ম ইত্যাদি সেবামূলক ক্ষেত্রগুলো অনেক ক্ষেত্রেই বাণিজ্যিক ও স্বার্থান্বেষী মহলের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পরিণতিতে দেশে আজ সৃষ্টি হয়েছে বিরাট অর্থনৈতিকবৈষম্য। গুটি কয়েক গোষ্ঠী ও মহলের আয়ত্তে চলে গেছে দেশের সিংহভাগ সম্পদ। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন-একটি শোষণমুক্ত ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন একটি বাংলাদেশ এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
অথচ ১৯৭১ সালে বাংলার মানুষ আত্মত্যাগই করেছিল একটি সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় যা প্রতিফলিত হয়েছিল প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের বিভিন্ন ভাষণে। যেমন-১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর এক বেতার ভাষণে তিনি বলেছিলেন-স্বাধীনতা প্রত্যয়টির কোন সীমা-পরিসীমা নেই। যুদ্ধে ও শান্তিতে উভয় পর্যায়েই এর প্রাসঙ্গিকতা অপরিহার্য। শত্রুকে চিরদিনের জন্য ধ্বংস করে দেয়ার পাশাপাশি আমাদের শহীদের রক্তের উপযুক্ত সম্মান দিতে পারে এমন সমাজ গড়ার অঙ্গীকারও করতে হবে। বাংলাদেশের গ্রামে ও নগরে যেসব তরুণ এখন যুদ্ধ করছে তারা শুধু বিদেশী হানাদারদের নিশ্চিহ্ন করার জন্যই লড়ছে না বিশেষ সুবিধা ও অবিচারমূলক ব্যবস্থা নির্মূল করার জন্যও তারা লড়ছে।
আমরা এমন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি সেখানে রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি সংগঠিত হবে সকল নাগরিক সমান-এই মৌলনীতির ভিত্তিতে।

আমলা ও অযোগ্য রাজনীতিকরাই উন্নয়নের প্রতিবন্ধক



আমলা ও অযোগ্য রাজনীতিকরাই
উন্নয়নের প্রতিবন্ধক

সংলাপ ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের স্বপৰ শক্তি ক্ষমতায়, সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী - কথাগুলো সত্য হলেও সচেতন মহলে বহুল প্রচলিত বাক্যটা হচ্ছে- ‘প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে আছে জামাত-বিএনপি, যারা সরকারের সকল ভাল ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে’।
সরকার দলীয় কোনো কোনো নেতার আঞ্চলিকতা ও জামাত-বিএনপির সঙ্গে আত্মীয়তার সূত্রে দুর্নীতিপরায়ণতা, অদূরদর্শিতা, জনবিচ্ছিন্নতা আবার কখনো বা তাদের অযোগ্যতার সুযোগ নিচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও তাদের এজেন্টরা। অত্যন্ত চতুরতা ও দৰতার সাথেই স্বাধীনতাবিরোধীর এজেন্টরা এ কাজগুলো করে যাচ্ছে। দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য হচ্ছে, যে সব অসাম্প্রদায়িক ও আদর্শবান মানুষদের আন্দোলন-সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধ তথা জনযুদ্ধে এদেশের যেসব পরিবারের মানুষেরা সেই সংগ্রামে অংশ নিয়েছিল তাঁরা বা তাঁদের উত্তরসূরিরা এদেশে সঠিকভাবে পুনর্বাসিত হয়নি। পক্ষান্তরে, স্বাধীনতার সুফল ও সুযোগ-সুবিধা যেমন-চাকুরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল ৰেত্রে অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি সুবিধা ভোগ করছে স্বাধীনতা-বিরোধী অথবা সুযোগ-সন্ধানী তথা দুর্বল-চিত্তের লোকেরা এবং তাদের বংশধরেরা। ৭১’এ এদেশের দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীদের আত্মাহুতির কারণে সার্বিক অঙ্গণে যে শূণ্যতা সৃষ্টি হয়েছিল তা আজও পূরণ হয়নি, ৭৫-পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দেশত্যাগ সাম্প্রদায়িক ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি অনেক বেশি পুষ্ট হয়েছে। অপরদিকে, হিসেব করলে দেখা যায় যে, স্বাধীনতার ৪৩ বছরের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়  থেকেছে ১৬ বছরের কিছু বেশি সময়। বাকী ২৮ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, তাদের মধ্যে ২০০৭-এর ওয়ান-ইলেভেনের সরকারটি ছাড়া অন্যদের সময়ে দেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামটিই নিষিদ্ধ রাখা হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদেরকে রাখা হয় অচ্ছুৎ করে। বঙ্গবন্ধু হত্যার সুফলভোগী জিয়াউর রহমানের আমলে দেশের হাজারো মুক্তিযোদ্ধা এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সমর নায়কদেরকে ফাঁসিসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছিল। যুদ্ধের পর থেকে শুরু করে অধিকাংশ সময় পাকিস্তানফেরত সামরিক অফিসার এবং যুদ্ধে না যাওয়া বেসামরিক আমলারাই ছিল এদেশের প্রশাসনের প্রধান কর্তাব্যক্তি। এসব কারণে ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে এবং পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ৰমতায় আসলেও বিভিন্ন সৱরে তাদের সমর্থক কর্মকর্তা-কর্মচারির সংখ্যা এখনো অনেক কম। আবার, তাদের সময়ে নগদ অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন সময়ে জামাত-বিএনপির লোদেরকে চাকুরি দেয়া হয়েছে-এমন ঘটনাও কম নয়। কেননা, আওয়ামী লীগকে যারা ভোট দেয় তাদের অনেকরই অর্থের বিনিময়ে চাকুরি নেয়ার সঙ্গতি বা মানসিকতা-কোননোটাই অনেকের থাকে না।
বর্তমান সময়ে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লৰাধিক পদ শূন্য পড়ে থাকলেও সেখানে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না, এমনকি বিভিন্ন সময়ে খোদ্‌ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাসমূহের বাস্তবায়নের গতিও নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অতীব মন্থর করে রাখা হয়েছে। অবস্থাটা অনেক ক্ষেত্রে এ রকম, কোনো মতে শেখ হাসিনা-নেতৃত্বাধীন সরকারের কার্যক্রম স'বির করে রাখা, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে কোনো মতে সরকারের পতন ঘটাতে পারলেই হলো, তখন ওইসব পদে রাতারাতি জামাত-বিএনপির সমর্থকদেরকে নিয়োগ দেয়া হবে। উদাহরণস্বরূপ- ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের এই সময়ে জনগণের কাছে সরকারের ভাবমূর্তি ধরে রাখার জন্য সরকারি যে প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি- যে প্রতিষ্ঠানটির পর্দায় ফুটে উঠতে পারে প্রশাসনের সকল কর্মকাণ্ডের প্রতিচ্ছবি, সারা দেশে জনগণের সাথে স্থাপন করতে পারে সেতুবন্ধন, সে প্রতিষ্ঠানটিতে এখনো কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি সরকার। প্রশাসনে এখনো সকল ৰমতার মালিক বিএনপি-জামাতের আমলের নিয়োগপ্রাপ্তরাই-যারা সরকার ও প্রশাসনের ভেতরে থেকে সরকারের বিরোধীশক্তির এজেণ্ডাই বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে, নানাভাবে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে নিজেদের আখের গুছাচ্ছে।  বিটিভি সম্পর্কে দৈনিক জনকন্ঠ গত ১৩ই মার্চ ‘অস্তাচলে বিটিভি’ শিরোনামে লিখেছে, ‘দীর্ঘ দিন এখানে কোনো নতুন নিয়োগ নেই। সরকারের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর চেয়ে অনেকাংশে পিছিয়ে রয়েছে বিটিভি। ...২০০৭ সালে জামায়াতের ঘনিষ্ঠ জন হিসেবে পরিচিত একজন মহাপরিচালক (যিনি এর আগে দীর্ঘদিন বার্তা বিভাগে কর্মরত ছিলেন) দলীয় বিবেচনায় ১১ জন প্রযোজককে বার্তা বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়। কোন সংবাদ যাবে, আর কোনটি যাবে না-এটি থাকে তাদেরই নিয়ন্ত্রণে। এই নিয়োগপ্রাপ্তরা এখন কৌশলে সরকারি দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে কর্মকা- পরিচালনা করছেন। বিএনপি-জামায়াতের আদর্শের অনুসারী এক নির্বাহী প্রযোজক সবাইকে ম্যানেজ করে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে।...  বার্তা বিভাগে আধিপত্য ভোল পাল্টানো জামায়াত-বিএনপি আমলের লোকজনের। খোদ তথ্যমন্ত্রীও কবুল করলেন নৈরাজ্যের কথা। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, এটা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটিতে এমন আবর্জনা জমেছে। নতুনভাবে প্রতিষ্ঠানটিকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা চলছে। সেই অভাব মেটাতে নতুন করে প্রায় দেড়শ’ জনশক্তি বিটিভিতে নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত কর্মতৎপরতা চলছে’। নিয়োগ-প্রক্রিয়া নিয়ে এমন ধীরগতি ও অচলাবস্থা অনেক প্রতিষ্ঠানেই বিরাজ করছে। এসব অপতৎপরতার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে দূরদশির্তার পরিচয় দিতে না পারলে দেশের অগ্রগতির চাকা ধীর-সি'র হয়ে যেতে পারে।
সরকারের উদ্যোগেএখন প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে সূক্ষ্মভাবে গবেষণা করে দেখা দরকার, কারা সরকার ও সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে মন্ত্রণালয়ের কাজে কারা বাধা সৃষ্টি করছে। ভুলে গেলে চলবে না যে বর্তমান সরকারকে অচল করে দেয়ার জন্য স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্র গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। স্বাধীনতার পর মার্কিন-সৌদি-পাকিস্তানী এজেন্ট হিসেবে মোশতাক-চাষী-ঠাকুর চক্র বঙ্গবন্ধুর সকল পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে উঠে পড়ে লেগেছিল। সরকারের ভেতরে বসে তাদের এজেন্ট হিসেবে এখনো কেউ কেউ ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে বলে যে কথা বাংলার-আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে তার বিরুদ্ধে যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।