শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

আসছে ফাগুন - নিয়ে আহ্বান সত্যের পথে যুব সমাজ হও আগুয়ান

আসছে ফাগুন - নিয়ে আহ্বান
সত্যের পথে যুব সমাজ হও আগুয়ান

সংলাপ জাগো যুব সম্প্রদায় জাগো ঘুমিয়ে থাকার দিন শেষ হয়ে গেছে আর কত ঘুমাবে! বাংলার আকাশে আজ দূর্যোগের ঘনঘটা ধর্মের নামে অধর্ম, রাজনীতির নামে রাজনীতিকদের ব্যক্তি গোষ্ঠী স্বার্থে উন্মাদনা, বিদেশীদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে বাংলাকে বাঁচাতে - সামাজিক পরিবর্তনে মূল কাণ্ডারি যুব সম্প্রদায় - আগামী প্রজন্মের আলোর দিশারীদেরকে নেশাগ্রস্ত রাজনীতির ঘুম ভাঙিয়ে বাংলা মায়ের আহ্বানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে মুক্তির জয়গান গেয়ে সত্যের জয়গান গেয়ে সময় আজ দ্বারপ্রান্তে
যুব সমাজের সার্বিক উন্নতি ছাড়া এদেশে উন্নতি হতে পারে না যুব সমাজের উত্থান সময়ের দাবি দারিদ্র, অজ্ঞতা আর রাজনীতিকদের নিপীড়নে হতবিহ্বল গণমানুষকে বাঁচাতে যুব সমাজের হৃদয় প্রসারিত হোক, মুক্তির চিন্তায় বিভোর হোক - সহানুভূতির ডালা নিয়েসমাজের প্রতিটি স্তরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়ুক সব বাধা অতিক্রম করে - এটাই সময়ের আহ্বান
ভাবতে অবাক লাগে, যে যুব শক্তিকে জাতি সালাম জানিয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে আরম্ভ করে সাংস্কৃতিক আন্দোলন সমূহের জন্য, যে যুব শক্তি জাতির জন্যে জীবন দিয়ে শহীদ হয়েছে - সেই যুব শক্তি নেতিবাচক ব্যর্থ কাজে জড়িয়ে পড়েছে এবং পড়ছে অল্প বয়সে জীবন চলার পথে লক্ষ্য ব্রতকে পদদলিত করে কিভাবে নিজের এবং দেশের অমঙ্গল ডেকে আনছে রাজনৈতিক প্ররোচনায় হঠাৎ বড়লোক হওয়ার নেশায়
রাজনীতিকরা বিপ্লব, পরিবর্তন, বিবর্তন, ধর্মযুদ্ধের কথা বলছে বাংলার মাটিতে - কিন্তু মুক্তির কথা বলছে না সব রকমের মুক্তি পেতে হলে যুব সমাজের চিন্তা জগতের চিন্তাগুলোর পরিবর্তন কার্যক্রম প্রণয়ন করে মুক্তির পথে উত্তরণ ঘটাতে হবে এরজন্য অধ্যাত্মবিদ্যায় স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে কারণ বাংলার মাটি-পানি-বাতাস আধ্যাত্মিকতায়ভরপুর
রাজনীতিকরা নিজ দলীয় স্বার্থে যুব সমাজকে বাধ্য করেছে এবং করছে বিদেশী সাংস্কৃতির মধ্যে হাবুডুবু খেতে জীবন চলার পথে ওই বিদেশী সংস্কৃতি প্রবাহিত করতে গিয়ে আজ যুব সমাজ দূষিত বাংলার মাটির ঐতিহ্য হলো কর্মের মাঝে আধ্যাত্মিকতা সেই আধ্যাত্মিকতা যুব সমাজ ভুলতে বসেছে এবং নিজস্ব সংস্কৃতিহীন জীবন ধারায় জীবন চলার পথ বেছে নিয়েছে সময় এসেছে, বর্তমান সরকারের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব যুব সমাজকে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে জাগ্রত করে ঐতিহ্যবাহী বাংলার সহজ-সরল পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য প্রেরণা দেয়া যুব শক্তিই পরিবর্তন ঘটাবে দূষিত পরিবেশকে যুব শক্তিকে অনুপ্রাণিত করতে হবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে শপথ নেয়ার জন্য এবং সমাজ পরিবর্তনে জনগণকে সাথে নিয়ে পথ চলার জন্য
অনেক দেরী হয়ে গেছে এসেছে আর একটি ফাল্গুন রাজনৈতিক দলগুলোকে সব ভুল শুধরিয়ে যুব শক্তির পিছনে অতন্দ্র প্রহরীর মতো দাঁড়াতে হবে যাতে সত্যের পথ ধরে যুবশক্তি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে, চিন্তাজগতে চেতনার প্রসারতা বাড়িয়ে, দেশের সামগ্রিক উন্নতি সাধন করতে পারে
যুব সমাজের এক অংশ বিভিন্নরকম নেশায় মোহাচ্ছন্ন হয়ে জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে নেতিবাচকতায় আবদ্ধ হয়ে গেছে সুস্থ চিন্তা স্বাস্থ্যকে হারিয়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক ধর্মীয় মিথ্যাচার যুব শক্তির অন্য এক অংশকে সন্ত্রাস, হিংসা, লোভ ক্রোধের  বন্ধু হতে সহায়তা করছে তাদের মধ্যে নতুন করে মনুষ্যত্ববোধকে জাগ্রত করতে রাজনীতিকদেরকে শপথ নিতে হবে, যুব সমাজকে লক্ষ্য অর্জনে কাণ্ডারি করতে হবে সার্বিক সহযোগিতায় উন্নয়নের পথে

সময় এসেছে, জাতীয় সব মহৎকাজে যুব শক্তিকে ফিরিয়ে আনতে দৃঢ় হবার যুব সমাজ এক জলন্ত মোমবাতি বাংলার মানুষ ওই শক্তিকে আজও অনুস্মরণ করে-অনেক কিছু আশা করে রাজনীতিকরা তাদের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য পালন করলে অধিকার পাওয়া যাবেই যুব সমাজের আলোতেই আছে অগ্রগতি উন্নতি - দেশ জাতির উন্নয়নের পরিবর্তনের মূল কথা কর্মের মাঝে আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়াচ লাগলে ঘরে ঘরে আবার সত্যের জয়ধ্বনি উঠবে এবং সেই জয়গানে বাংলার আকাশ বাতাস মোহিত হয়ে শান্তির পরশ আনবে

সংকীর্ণতায় জর্জরিত !!

সময়ের সাফ কথা....
সংকীর্ণতায় জর্জরিত !!

শেখ উল্লাস ফেব্রুয়ারি মাস, ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার মাস আমাদের পত্র-পত্রিকা ইলেক্ট্রনিক টিভি মাধ্যমগুলোতে নিয়ে কত অনুষ্ঠান, টক শো, সাক্ষাৎকার, নাটকই না প্রচারিত হয় মাতৃভাষা বাংলার গুরুত্ব তাৎপর্য নিয়ে কত কথাই না বের হয় পত্রিকার পৃষ্ঠায় আর টিভির পর্দায়
কিন্তু স্বাধীনতার ৪৬ বছর এবং বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ৬৫ বছর পর আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতা হচ্ছে মাতৃভাষা বাংলা আজ অতীতের যে কোনো সময়ের চাইতে অনেক বেশি অবহেলিত পারতপক্ষে আজকের দিনের শিক্ষিত সমাজের কথিত উপরতলার মানুষেরা বাংলা মাধ্যমে তাদের ছেলেমেয়েদেরকে পড়ান না এইসব ভদ্রলোক তাদের বড়ত্ব, পান্ডিত্য শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে ইংরেজি শব্দ বাক্য উচ্চারণে দক্ষতার পরিচয়টি দিতে ভুল করেন না খুব সচেতনভাবেই কথায় কথায় ইংরেজি বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন অথচ তাদেরই কেউ কেউ আবার সরকারী বা বেসরকারী টাকা খরচ করে পুষ্পস্তবক নিয়ে একদিনের জন্য মাতৃভাষা প্রেমিক সেজে শহীদ মিনারে যান কিন্তু প্রায় ষোল কোটি মানুষের এই দেশে এইসব ভদ্রলোকের সংখ্যা কত আর হবে!
ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে দেশকে, দেশের মানুষ মাতৃভাষাকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসেন, জনগণের কল্যাণ কামনা করেন এমন শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা কম হলেও তারাই আবার অন্ধকারে আলোকবর্তিকা হিসেবে সমাজে ভূমিকা পালন করে চলেছেন কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষদের কাছে সে আলো পৌঁছুতে পারছে না একদিকে বিশ্বায়ন, অপরদিকে অনিয়ন্ত্রিত উৎস থেকে আসা অঢেল পুঁজির জোয়ারে, মিডিয়ার ঝলমলে রঙিন কৃত্রিম আলোর কাছে ফিকে হয়ে উঠেছে সত্যানুসন্ধানীদের অকৃত্রিম আলোকবর্তিকা অধিকাংশ সাধারণ মানুষেরই আজ ধারণা এমন হয়েছে যে, ‘ইংলিশ মিডিয়াম- না পড়ালে সন্তানকে আর মানুষ করা যাবে না শিক্ষাকে বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে ব্যবহার করার এমন দূরাবস্থা বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনো কেউ দেখেছে কিনা জানা নেই
লাখো শহীদের তাজা রক্তে কেনা পলাশ-শিমুলের এই দেশে আজ একটু চিন্তাশীল দৃষ্টি নিয়ে তাকালেই দেখা যায় যে কোনো উপায়ে যার কাছেই কিছু নগদ পয়সা এসেছে তারা তাদের সন্তানকেশিক্ষিতকরে তোলার স্বপ্ন নিয়েইংলিশ মিডিয়ামস্কুলে পাঠিয়ে দিচ্ছে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে কোনো কোনো মা-বাবা এমনও আছেন যাদের ইংরেজি ভাষা কেন বাংলা ভাষাতেই কোনো দক্ষতা নেই, শুদ্ধ করে বাংলা বলার কোনো চর্চা তাদের পারিবারিক সামাজিক পরিবেশে নেই তারা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পাঠিয়ে দিয়ে ভাবছেন মা-বাবা হিসেবে নিজেদের সঠিক পূর্ণ দায়িত্ব শেষ করে ফেলেছেন কিন্তু পরিণামে দেখা যাচ্ছে তার সন্তানের বাংলাও শেখা হচ্ছে না, ইংরেজি শেখা তো দূরের কথা উপরন্তু শৈশবের আনন্দ-উচ্ছ্বাস থেকে তাকে বঞ্চিত করে বাংলাদেশেই তাকেনিজ দেশে পরবাসীকরে তোলার একটি মহড়া দিয়ে চলেছে অপরদিকে যে পরিবারের ছেলেমেয়েরা অপেক্ষাকৃত বেশি সুবিধাভোগী তারা ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করে বাংলাদেশের সুনাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠতে পারছে না সময়-সুযোগ বুঝে তারা ইউরোপ-আমেরিকায় পাড়ি জমাতে নিজেদের সর্বশক্তি নিয়োগ করছে বাংলা মাধ্যম থেকে পাস করে আসা স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের তুলনায় তারা নিজেদেরকে উন্নত অগ্রসর প্রজন্ম হিসেবে গণ্য করতে শিখছে দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, জনসেবাসহ যাবতীয় মানবীয় মূল্যবোধ যা আমাদের আবহমানকালের শিক্ষা-সংস্কৃতির উৎস, ক্ষেত্রে উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে সমাজ দেশকে শান্তি, সাম্য সত্য ধর্মের পথে চালিত করার ক্ষেত্রে ধারার পরিবর্তন অবশ্যই করা উচিত বলে মনে করে সত্যানুসন্ধানীরা ঔপনিবেশিক ইংরেজ আমলে শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি লক্ষ্য করে বিগত শতাব্দীর ত্রিশের দশকে ব্রতচারী আন্দোলনের প্রবর্তক মহীয়ান বাঙালি গুরু সদয় দত্ত লিখেছিলেন -
মোরা শিক্ষা বলি কাকে?
পরীক্ষা দিয়ে ভিক্ষা করা,
চাকরি ঝাঁকে ঝাঁকে
এই পরের উপর হুকুম ঝেড়ে
নবাবী করাটাকে
আর ওই ঘি-ভাত খেয়ে ভুঁড়ি
গজিয়ে ভদ্র বনাটাকে
এই গতর খাটে যারা তাদের ঘেন্না করাটাকে

একটি স্বাধীন দেশের, যে দেশের অভ্যুদয়ের পেছনে আপামর জনগণের সমান সমান অবদান, সেখানে কেউই কাউকে ঘেন্না করতে শিক্ষা গ্রহণ করবে এমনটা কোনো বিবেকবান মানুষ কখনো কামনা করতে পারে না যারা দেশ-জাতিকে পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন তারা বিষয়টি যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করতে পারবেন ততই দেশের মঙ্গল আর তা না হলে ভাষার মাসের জন্য যাবতীয় আয়োজনই হবে মায়াকান্নার শামিল সত্যানুসন্ধানীদের জিজ্ঞাসা তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের এই সংকীর্ণতা দূর হবে কবে