বাঙালি শান্তি-সাম্য-মানবতাবাদী জাতি
সংলাপ ॥ বাঙালি স্বভাবে মানবতাবাদী। বাঙালি চরিত্রে শান্তিবাদী। বাঙালি ঐতিহ্যে সাম্যবাদী। মানবতার শত্রুদের দ্বারা তাই যুগে যুগে বাঙালি আক্রান্ত হয়েছে - আক্রান্ত হয়েছে বাঙালিত্ব। চক্রান্ত ষড়যন্ত্রের জাল বুনে বার বার বাঙালিকে আত্মবিস্মৃতির দিকে ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে নানান কৌশলে, বিশেষ করে ধর্মের নামে।
১৯৪৭ সালে ধর্মের নামে ভারত ভাগ করে, বাংলা ভাগ করে বাঙালিকে বানানো হয়েছিল কেবলি ‘মুসলমান’; কখনও বা
‘মুসলমান-বাঙালি’ কিংবা ‘বাঙালি মুসলমান’, ‘বাঙালি হিন্দু’। সাম্প্রদায়িকতার বিষ-বাষ্পে বিভ্রান্ত বাঙালি গত শতকের চল্লিশের দশকের শেষে এসে স্লোগান দিয়েছিল ‘লড়কে লেংগে পাকিস্তান’। বানিয়েছিল সাম্প্রদায়িক উদ্ভট রাষ্ট্র ‘পাকিস্তান’। ১৯৫২-তেই মোহ কেটে যায় বাঙালির; বুঝে যায় ওটা ছিল ‘ফাঁকিস্থান’। ১৯৫৪, ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬ পার হয়ে বাঙালি আরও বুঝে যায় ওটা
‘পাক-ই-স্থান’ নয়, ছিল ‘নাপাক-ই-স্থান’। ঊনসত্তরে বাঙালি তাই স্লোগান দিয়েছিলো ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’/‘পিন্ডি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’।
১৯৭৫-এর রক্তাক্ত পট পরিবর্তনের পর স্বাধীন বাংলাদেশকে পাকিস্তানের আদলে ‘বাঙলাস্থান’-এ পরিণত করার সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের নামে বাংলাদেশ-বিরোধী বাঙালি-বিরোধী একাত্তরের পরাজিত শত্রু হায়েনার দল। টেনে আনে বাঙালিত্বে সাম্প্রদায়িকতা। ‘হিন্দু বাঙালি’, ‘মুসলমান বাঙালি’, ‘খ্রিস্টান বাঙালি’ ‘বৌদ্ধ বাঙালি’ এর সাম্প্রদায়িক মোড়কে পাঁচ হাজার বছরের বাঙালিত্বকে ঢেকে দেয়ার জন্য চালায় ঘৃণ্য অপপ্রয়াস। ‘বিসমিল্লাহ্’ সংযোজন করে পবিত্র সংবিধানকে দেয়া হয় সাম্প্রদায়িক রূপ,
ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূলে হানে আঘাত সাম্প্রদায়িক-কুঠারে। প্রশ্ন জাগে ধর্মীয় মূল্যবোধ কোথায়? জেগে উঠছে বাঙালি সাহসী তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্ব। গগনবিদারী আওয়াজ উঠছে আবারও, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’ / ‘তুমি কে আমি কে - বাঙালি, বাঙালি’। সাম্প্রদায়িকতার আবরণ ছিঁড়ে বাঙালি কেবলই ‘বাঙালি’ হয়ে ওঠার সময় হাতছানি দিচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন