বুধবার, ২৪ জুন, ২০১৫

আমি চিনেছি আমারে, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ

আমি চিনেছি আমারে, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ

সংলাপ ॥ মুসলমান - ‘পোষা জানেয়ার, বুনো জানোয়ার, যে বলে সে মুসলিম জিভ ধরে টানো তার’ ....... এই শব্দগুলো মোটেও ইসলাম বিদ্বেষী কোনো বিধর্মীর মুখের কথা নয়। নয় উগ্র কোনো ধর্মান্ধ ইহুদি-খ্রীষ্টান বা হিন্দুর কলমের লেখা। গত শতাব্দির গোঁড়ার দিকে অগ্নি-বীণার আনোয়ার কবিতায় এই কথাগুলো বলেছিলেন সাধক কাজী নজরুল ইসলাম। আজকে বাংলাদেশে যাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ভূষিত করা হয়েছে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে!
সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন জাগে, সাধক নজরুল কেন মুসলমানদের ‘বুনো জানোয়ার’ ও ‘পোষা জানোয়ার’ বলে আখ্যায়িত করলেন? মুসলিম বলে দাবিদারের জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলতে বললেন? নজরুল কি তবে স্বজাতি বিদ্বেষী ছিলেন? অথবা এজেন্ট ছিলেন বিধর্মীদের? নজরুলের গোটা জীবন ও তাঁর কর্ম, তাঁর প্রকৃতি, তাঁর চরিত্র সর্বোপরি সময়ে সাক্ষ্য দেয় - নজরুল ছিলেন একজন খাঁটি মুসলিম, একজন নিখাঁদ মানুষ, ছিলেন একজন মহান সাধক। তাই নজরুলের পক্ষে স্বজাতি তো বটেই কোনো জাতির প্রতিই বিদ্বেষপরায়ণ হওয়া সম্ভব ছিলো না। সত্য সাধক নজরুলের কন্ঠে তাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে সত্যেরই অমর ধ্বনি।
মুসলমানদের সম্পর্কে সাধক নজরুলের উপলব্ধি, তাঁর উচ্চারণ যে কত বড় সত্য তা অনুধাবন করার জন্য একশ’ বছর পেছনে যেতে হবে না, আজকের সমসাময়িক বিশ্ব মুসলমান পরিচয়দানকারী জনগোষ্ঠীর দিকে তাকালেই তা ধরা পড়ে একটু খুঁটিয়ে দেখলেই।
সামপ্রতিক বছরগুলোতে ঘটে যাওয়া চরম হিংসাত্মক ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করলেই ফুটে ওঠে নজরুল আখ্যায়িত ‘মুসলমান (?) চরিত্র’। ধরা পড়ে মুসলমান নামধারীদের যুগপৎ ‘বুনো’ ও ‘পোষা’ জানোয়ার চরিত্র!
উপমহাদেশের চলমান শান্তি প্রক্রিয়ার আকাশ ঢেকে দিচ্ছে সংঘাত-হানাহানির আশঙ্কার কালো মেঘ। বলার অপেক্ষা রাখে না এই হামলাকারীদের পরিচয় মিডিয়ার ভাষায়, ওরা ‘ইসলামি জঙ্গি (!)’।
এসব হামলাকারীদের চরিত্র নিয়ে বিতর্ক তুলতে গিয়ে প্রশ্ন উঠবেইঃ ইসলাম কি? কুরআনিক মুসলিম কে? মুসলমান কে? ইসলাম সন্ত্রাস সমর্থন / অনুমোদন করে কিনা? বাংলায় ‘শান্তি’ই আরবীতে ‘ইসলাম’। সেই শান্তি বা ইসলামের নামে অশান্তি-হানাহানি সৃষ্টি সম্মত কিনা? কিংবা মুসলিম তথা ভদ্র পরিচিত ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ‘বুনো’ হিংস্র পশুর মতো আচরণে মত্ত হয়ে উঠতে পারে কিনা? এসব প্রশ্ন নিয়ে ইসলাম নির্ভর ধর্মজীবীরা গভীর তাত্ত্বিক বিতর্কেও ডুবে থাকতে পারেন। পারেন ফতোয়াবাজিতে লিপ্ত হতে। কিন্তু এসব হিংসাত্মক ঘটনায় তাৎক্ষণিক ও মেয়াদী কড়া মাশুল গুনতে হয় যে কোটি কোটি ধর্মভীরু মুসলমানদের। তাত্ত্বিক বিতর্ক বা ফতোয়া কোনোই কাজে আসে না তাদের দৈনন্দিন জীবনে। ইসলাম রক্ষা বা মুসলমানদের স্বার্থ প্রতিষ্ঠার কথা বলে পরিচালিত এসব জঙ্গি হামলার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাঝেই ধর্মভীরু মুসলমানদের খুঁজতে হচ্ছে এসব তৎপরতার অন্তর্নিহীত অর্থ, অঘোষিত লক্ষ্য ও চেপে রাখা ইতিহাস ও বর্তমান উদ্দেশ্য।
এই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণে প্রথমেই দেখতে হবে এসব হামলায় লাভবান তথা ‘বেনিফিসিয়ারী’ কারা। উল্লেখ্য, গভীর রহস্যময় ক্লুবিহীন খুনের ঘটনায় তদন্তকারী দল প্রথমেই খোঁজে খুনের সম্ভাব্য বেনিফিসিয়ারী কে বা কারা। এ পথে এগোতে গিয়েই ধরা পড়ে সম্ভাব্য খুনীর পরিচয়। এ ক্ষেত্রেও গভীর বিশ্লেষণ ছাড়াই এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট এসব জঙ্গি হামলার ফসল সরাসরি ঘরে উঠছে ইসলাম বিদ্বেষীদের। সমষ্টিগত ভাবে বিশ্বে সমগ্র মুসলমানরা পরিচিত হয়ে উঠছে জঙ্গি, মধ্যযুগীয়, আদিম, বর্বর হিসেবে। নতুন প্রজন্মের বিশ্ব নাগরিক কিংবা ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে শান্তি বা ইসলামকে উপস্থাপিত করা হচ্ছে আদিম বর্বরতার প্রতীক হিসাবে। ঘৃণা, অবজ্ঞা, নিস্পৃহতা জন্ম নিচ্ছে এদের মাঝে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে।
অপরদিকে বিশ্বজুড়ে ব্যক্তিগত ভাবে ধর্মভীরু মুসলমান কিংবা জন্মসূত্রে মুসলমান পরিচয়ধারী কোটি কোটি মানুষ নিগৃহীত হচ্ছে নানাভাবে। বিশেষত ইউরোপ-আমেরিকায় ব্যক্তিগতভাবে আক্রান্ত, বঞ্চিত, নিগৃহীত হচ্ছে মুসলমানরা ব্যাপকভাবে। ব্যক্তি, গোষ্ঠী এমনকি রাষ্ট্রীয়ভাবে সমগ্র পৃথিবীতে মুসলমান পরিচয়ধারী মানুষ বৈষম্য আর অবজ্ঞা-ঘৃণার মুখোমুখি হচ্ছে প্রতিদিন। বিঘ্নিত হচ্ছে তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও পেশাগত নিরাপত্তা। ফলে ধর্মান্ধ জঙ্গিদের ‘বুনো’ চরিত্র দেখার পরও কি ধর্মভীরু মুসলমানদের মানতে হবে এরা কুরআনিক মুসলিম? সাধক নজরুলের কথা মতো জিভ ধরে টান না দিলেও এদের ইসলামি (?) ছদ্মাবরণ টেনে ছিঁড়ে ফেলাটা ধর্মভীরু বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য কি জরুরি নয়? ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলাফল দেখেও কি বুঝতে অসুবিধা হয় যে এরা কারো না কারো ‘পোষা’। আর এদের গলায় বাঁধা অদৃশ্য শেকলের ও মাথায় ধরা হাতটি কার তা বুঝার জন্যও কি অনেক গবেষণার প্রয়োজন? আল-কায়েদার জন্ম কোন ল্যাবরেটরীতে? ওসামা বিন লাদেনের জন্মদাতা কে? সাদ্দাম, আরাফাত, গাদ্দাফী, জিয়াউল হক সহ বিভিন্ন স্বৈরাচারী কারা তৈরি করছে? সমগ্র বিশ্বে মুসলমান
অধ্যুষিত দেশসমূহে কারা বাদশাহী অথবা ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার কৌশল ও অস্ত্র সরবরাহ করছে? তালেবানদের লালন-পালন আর প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রদাতা কে এর কোনটাই আজ অজানা নয়। হয়তো এখনও অপ্রমাণিত। কিন্তু পঁচিশ-ত্রিশ বছর পরে মার্কিনীরা যখন নিয়মানুযায়ী হোয়াইট হাউস আর পেন্টাগণের ‘ক্লাসিফাইড ডকুমেন্টস্তুগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করবে তখন সেসব গোপন নথিতে উঠে আসবে লাদেন, আল-কায়েদা, সাদ্দাম আর তালেবান সৃষ্টির মার্কিনী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও  বাস্তবায়নের অজানা কাহিনী। জানা যাবে তাবৎ বিভিন্ন ধর্মের ধর্মান্ধ জঙ্গিদের জন্ম জঙ্গলে (আমেরিকা!)। যেমনটি প্রকাশিত করা হয়েছে ত্রিশ বছর আগের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক হোয়াইট হাউসের বেশ কিছু ‘ক্লাসিফাইড’ দলিল। ফলে এই উপমহাদেশের মানুষ জানতে পারলো ‘সার্বভৌম’ (!) ‘মুসলিম’ (!) রাষ্ট্র পাকিস্তানের সেনাপতি ইয়াহিয়া খান দেশে সামরিক শাসন জারির আগাম অনুমতি নিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রভু নিক্সনের কাছ থেকে, ১৯৭১-এ।
মার্কিনীদের আজকের ক্লাসিফাইড দলিলের কাহিনী জানতে হলে বিশ্বকে অপেক্ষা করতে হবে হয়তো পরবর্তী পঁচিশ-ত্রিশ বছর। কিন্তু ততদিনে বিশ্বের কোটি কোটি ধর্মভীরু মুসলমানদের কি হবে? কি হবে পবিত্র ধর্ম ইসলামের, যা কিনা সাম্য-মৈত্রী-ভ্রাতৃত্ব তথা মানবতার মাধ্যমে ‘শান্তি’র মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত?
কি হবে তা নিয়েই ভাবার সময় নেই আজ বিশ্বের ধর্মভীরু মুসলমানদের সামনে। ধার্মিকদের কাছ থেকে জরুরি তাগিদ আসছেঃ জেগে ওঠো। ধর্মভীরু মুসলমানরা জেগে ওঠো। কুরআনিক মুসলিম হও। চৌদ্দশ’ বছর আগে যে কুরআনকে ধারণ-লালন-পালন করে রাসুল (সাঃ) হয়ে উঠেছিলেন জীবন্ত কুরআন সেই পবিত্র কুরআনের আলোকে সত্যিকারের মুসলিম হিসাবে নিজেদের গড়ে তোলো। চৌদ্দশ’ বছর আগের সেই দ্যূতি ছড়ানো ঝলসানো আলোর মতোই বিশ্বমানবের সামনে আবারও নিজেদের তুলে ধরো সভ্যতার কান্ডারী হিসাবে - এক একটি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হিসাবে। ধ্বনিত হোক প্রতিটি মুসলমানের কন্ঠে সাধক নজরুলেরই সেই অমর বাণী -

‘আমি চিনেছি আমারে, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!!’

সময়ের সাফ কথা.... সত্য ও শান্তির সৌন্দর্য্যের সন্ধানে বেড়ানো পথিক

সময়ের সাফকথা....
সত্যও শান্তির সৌন্দর্য্যের সন্ধানে বেড়ানো পথিক

নিজেদের সহজিয়া সত্য ও শান্তির পথের সাথে মিশিয়ে তৈরি হয়েছে বাংলার সূফীতত্ত্ব। বাংলার নদী-খালবিলের জল সিঞ্চনে মরুভূমির ইসলাম এখানে সতেজ সবুজ এক সহিষ্ণু রূপ ধারণ করেছিলো। পেট্রোডলারের টানে আর বিশ্বাসঘাতকতার রাজনীতির কল্যাণে সবই আজ বিভ্রান্তির বেড়াজালে। নদীমাতৃক সেই সূফী সহিষ্ণুতা, সর্বধর্ম সমন্বয় আজ মরিচীকা হতে যাচ্ছে।
সংলাপ ॥ ইরানে সূফী সাধনা এবং সূফীদের ওপর অত্যাচারের ইতিহাসটা নিকট প্রাচীন। কিন্তু বর্তমান ইরানে সূফীদের ওপর যে অত্যাচার শুরু হয়েছে, সেটা একমাত্র নাজি জার্মানির সাথে তুলনীয়।
কয়েক মাস আগে কোম শহরের এক সূফী গৃহে জড়ো হয়েছিলো হাজার খানেক সূফী। সূফীদের সাধনার পথ শুধু নামাজ রোজা রাখা নয়। সূফীদের আচার-আচরণ সর্বত্রই স্থানীয় সংস্কৃতির মাটি থেকে নেয়া - আরব মরুভূমির রুক্ষ, নীরস, কঠোর ইসলাম সূফীদের পথ নয়। তারা জীবন রসিক-নাচ-গান ও জীবনের প্রতিটি কর্মের মাধ্যমে চলে তাদের উপাসনা। যা সার্বজনীন অলৌকিক সাধনার অংশ - যেখানে আমার ধর্মের লোক, আমার দেশের লোকের অস্তিত্ব নেই। আছে শুধু মানুষের মধ্যে, প্রকৃতির মধ্যে সৌন্দর্য্যের সন্ধান (দরবিশ)। বাংলাদেশ, ভারত বা ইন্দোনেশিয়ায় দলে দলে লোকে ইসলামে যোগ দিয়েছিলো সূফী ধর্মের অসাধারণ সহজিয়া পথে আকৃষ্ট হয়ে। সূফীরা বিশ্বাস করে এই মহাবিশ্ব আসলেই এক সুতোয় বাধা একটিই মাত্র ঘটনা এবং পরম সত্যের বিচিত্র প্রকাশ। তাঁদের আল্লাহ্‌ বিশ্বাস ও ভাবনা সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের একটা সেতু বন্ধন। দুর্ভাগ্য ভারতীয় উপমহাদেশের ইসলামের ইতিহাসের। সূফী ধর্মে আকৃষ্ট হয়ে এক সময় যেসব অত্যাচারিত হিন্দু ইসলাম গ্রহণ করেছিলো তাদের উত্তরপুরুষ বর্তমানের তথাকথিত মুসলমানরা আরবের বর্বর অসহিষ্ণু ইসলামকেই নিজের ধর্ম বলে মনে করেন!
নিজেদের সহজিয়া সত্য ও শান্তির পথের সাথে মিশিয়ে তৈরি হয়েছে বাংলার সূফীতত্ত্ব। বাংলার নদী-খালবিলের জল সিঞ্চনে মরুভূমির ইসলাম এখানে সতেজ সবুজ এক সহিষ্ণু রূপ ধারণ করেছিলো। পেট্রোডলারের টানে আর বিশ্বাসঘাতকতার রাজনীতির কল্যাণে সবই আজ বিভ্রান্তির বেড়াজালে। নদীমাতৃক সেই সূফী সহিষ্ণুতা, সর্বধর্ম সমন্বয় আজ মরিচীকা হতে যাচ্ছে।
কোম শহরে হুলিয়া জারি হয়েছিল, সমস্ত সূফী উপাসনা বন্ধ করতে হবে, কেননা তা ইসলামের পক্ষে সাংঘাতিক ক্ষতিকর। তা তো বটেই। শিক্ষাটা যদি হয় সমস্ত মানুষকে ভালোবাসার, মানুষে মানুষে বিভেদের বিরুদ্ধে এবং আল্লাহ্‌র সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ওপর টানটা যদি থাকে বেশি, তাহলে ইসলামের ব্যবসাটা আর থাকে কি করে? সেটা তো ইরানের মোল্লাতন্ত্রের মনঃপুত হওয়ার কথা নয়।
ব্যাপক অত্যাচার শুরু হয়েছে ইরানের সূফীদের ওপর। সূফীদের জমায়েতে হামলা করে হাজার হাজার লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং হচ্ছে।
ইরানের শাসকরা এক ধর্মোন্মাদ পাগল, তারা ক্ষমতায় আসলে নিজেদেরকে মেহেদি ভাবছে! ইরানের মোল্লাতন্ত্রের মতন নাৎসি সমাজ ব্যবস্থায়, এমন পাগল আরো দুরন্ত হয়ে কখনো ইসরায়েলকে নিউক করার কথা বলে, কখনো আলাক্সায় রিলোকেট করতে বলে।

পৃথিবীতে দুষ্ট রাজনীতিকরা থাকবেন - সেটাই বাস্তব। সেটা সমস্যা হয় তখই যখন দেখা যায় তাদের পিছনে পৃথিবীর ৯৯% তথাকথিত মুসলমান, আর পশ্চিমা দেশে মুসলমান পেটানোর এজেন্ডার পেছনে অধিকাংশ অমুসলিম। পশ্চিমা দেশের ৭০% লোক চান যে, মুসলিমদের আরো পেটানো উচিৎ। মুসলমানদের ৯৯% লোক চান ইসরায়েলকে উড়িয়ে দেয়া হোক। এটাই বাস্তব। মানুষের এই সমর্থনই আসল সমস্যা - যার উৎপত্তি অস্তিত্বের সংকট থেকে। আমি মুসলমান, আমি হিন্দু এই ভেবে মানুষ গর্ব বোধ করে! দেশের সমাজ, রাজনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা সেটাই শেখায় - এটাই আসল সমস্যা! তাই সূফী সাধক রুমির মতো যতদিন মানুষ না ভাবতে পারবে, সে মুসলিম বা হিন্দু না, সে ভারতীয় বা বাংলাদেশী না, সে তার অতীত নয়, সে বর্তমান না, সে শুধুই অমৃতের সন্ধানে, সত্য ও শান্তির সৌন্দর্য্যের সন্ধানে বেড়োনো এক পথিক, ততদিন পর্যন্ত এই অস্তিত্বের সংকট থেকে মুক্তি কি হবে? 

ইসলামি নামকরণের ধারা অনৈসলামিক পথ ধরে ছুটছে ....

ইসলামি নামকরণের ধারা অনৈসলামিক পথ ধরে ছুটছে ....

সংলাপ ॥ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) প্রেরিত হয়ে ছিলেন মানব জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য বিভক্ত করার জন্য নয়। তিনি শুধু বনু কোরাইশের নবী নন, কেবল আরব ভূখন্ডের নবী নন- তিনি সমগ্র বিশ্বের বিশ্বাসীদের নবী। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার মানে সত্য-অসত্য, ন্যায়-অন্যায়, কল্যাণ-অকল্যাণ, সুন্দর-অসুন্দর সব গুলিয়ে ফেলা নয়। ইসলামের শিক্ষা হলো মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে সত্যের ওপর, ন্যায়, কল্যাণ ও সুন্দরের ভিত্তিতে। ইসলামের শিক্ষা হলো- মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্মের আগে পৃথিবীতে যতো নবী-রাসুল এসেছেন - যাদের সংখ্যা কয়েক লাখেরও বেশী, তারা সবাই ইসলামের নবী। মুসলমানকে বিশ্বাস করতে হবে যে, যারা সত্যের ওপরে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন তারা সবাই মুসলমান। ইসলামের এ মৌলিক শিক্ষা থেকেই প্রতীয়মান হয় যে, ইসলাম মানুষকে গোত্রে-গোত্রে, দেশে-দেশে বা ধর্মে-ধর্মে বিভক্ত করতে আসেনি। ইসলাম এসেছে মানুষকে সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের পথে ঐক্যবদ্ধ করতে। আমরা অনেকেই এখন মুখে মুখে বলি বা লিখি, ইসলাম সামপ্রদায়িক ধর্ম নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো ইসলামও অন্যান্য ধর্মের মতো সামপ্রদায়িক ধর্মে পরিণত হয়ে গেছে। ইসলাম ধর্মও এখন অন্যান্য ধর্মের মতো অনেকের কাছে জন্মসূত্রে পাওয়া ধর্মে পরিণত হয়েছে। জন্মসূত্রে ইসলামের তথাকথিত অধিকারী মুসলমান সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের পথ অনুসরণ করুক আর না করুক সে মুসলমান এটাই বড় হয়ে উঠেছে। এটা অন্তঃসারশূন্য অথবা বিভ্রান্তিকর এক পরিচিতি। কিন্তু সত্য তো এ রকম নয়। আল্লাহ্‌তায়ালাও এ রকম নয়। কোরেশরা আল্লাহ্‌র প্রিয় নবীদের বংশধর এবং আল্লাহ্‌র নামের পূজারি ছিলেন বলেই তারা মুসলমান হিসেবে স্বীকৃতি পাননি যতক্ষণ না তারা সত্য ও ন্যায়ের পথে আত্মসমর্পন করেছেন। আর সত্য, ন্যায়, কল্যাণ, সুন্দর ইত্যাদি বিষয় অলৌকিক কিছু নয়, আল্লাহ্‌র নামের দোহাইয়ের ওপর নির্ভরশীলও নয়। এগুলো মানুষের চলমান জীবন ও বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থার মানদন্ডে বিচারযোগ্য বিষয়। ইসলাম সামপ্রদায়িকতার ধর্ম নয় একথা যেমন সত্য, এর চেয়েও বাস্তব মুসলমানরা ইসলামকে নিতান্ত সামপ্রদায়িকতার ধর্মেই পরিণত করে যাচ্ছে। জগতের সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) প্রচারিত ধর্মের নাম হতে পারতো ‘দীন-ই-মুহম্মদী’ বা ‘মুহম্মদী ধর্ম’। কিন্তু মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তার সাহাবারা তা করেননি। ইসলামের মতে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ প্রচারিত ধর্মের কোনো নামই নেই। বলা হয়েছে নাম ইসলাম। ইসলাম হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে ২ লাখ ২৪ হাজার পয়গম্বরের প্রত্যেকের প্রচারিত ধর্মের নাম। আসলে ‘ইসলাম’ ধর্মের নাম নয়, নীতি-অবস্থানের নাম। ইতিহাসের প্রেক্ষাপট দেখলে আমরা বুঝতে পারব ইসলাম নামটি সর্বজনীন ও অসামপ্রদায়িক। আর মহানবী (সাঃ) প্রচারিত ধর্মের এ অবস্থানটি শুধু ইতিহাস বা অতীতের বেলায় প্রযোজ্য নয়, ভবিষ্যতের বেলায়ও। যেখানে সত্য, ন্যায় ও কল্যাণ আছে সেখানেই ইসলাম আছে, যেখানে তা নেই সেখানে ইসলাম নেই- এটাই ইসলামের শিক্ষা।
এখন মুসলিম সমাজ সামষ্টিক সমাজ হিসেবে এবং মুসলমান নামধারী মানুষরা অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে ইসলামের শিক্ষা থেকে ব্যাপকভাবে বিচ্যুত হচ্ছে- সত্য, ন্যায়, কল্যাণ ও সুন্দরের পথ থেকে নানাভাবে দূরে সরে যাচ্ছে। চিন্তাবিদরা বলে থাকেন মানবসমাজ অনেক সময়ই একেবারে নিখুঁত আদর্শের ওপর থাকে না। ব্যক্তি জীবনেও মানুষ পুরোপুরি নিখুঁত চরিত্রের অধিকারী বা সত্যের অনুসারী থাকে না। মানুষ ভুল করে, সমাজ কলুষ-কালিমাযুক্ত হয়। এটা কিছুটা স্বাভাবিক। এ কারণে ইসলামের শিক্ষায় সর্বত্র আল্লাহতায়ালার ক্ষমা ও অনুগ্রহের কথা বলা হয়েছে। মানুষ ভুল করলে আবার সুপথে ফিরে আসার চেষ্টা করতে পারে- এটাই মহান সত্যের সদয় নীতি। কিন্তু আজকের যুগে মুসলিম সমাজ অধঃপতন ও বিভ্রান্তির দিকে চলে গেছে অনেক বেশী এবং মৌলিকভাবে। সত্য, ন্যায় ও কল্যাণের সন্ধান করাই এখন হয়ে পড়েছে কঠিন। এ অবস্থায় মুসলমান অধ্যুষিত রাষ্ট্রে এবং সমাজের মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ইসলামিকরণের এক বিভ্রান্ত প্রবণতা। মুসলমানরা এখন নিজেদের অপকর্ম ও অক্ষমতা আড়াল করার জন্য ‘ইসলামি’ নামের পেছনে লুকাতে চেষ্টা করছে। এভাবে সভ্যতার সব অর্জনে ইসলামি ভাগ বসানোর মাধ্যমে নিজেদের দৈন্যতা তুলে ধরা হচ্ছে। ইসলাম এখন চলে এসেছে সামপ্রদায়িকতার গন্ডির মধ্যে।
আর বিশেষ কিছু পোশাক-আশাক, অগত্যা কিছু আচার-আনুষ্ঠানিকতা এবং ‘ইসলামি’ শব্দ সহযোগে নামকরণের মাধ্যমে ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে ইসলামকে। সবচেয়ে মারাত্মক যেটি করা হচ্ছে তা হলো, ইসলামি নামকরণের মাধ্যমে সভ্যতার সবকিছু বিভক্ত করা, এমনকি মুসলমান সমাজকেও বিভক্তির ঘেরাটোপের মধ্যে ফেলে দেয়া।
ইসলামি অর্থনীতি, ইসলামি রাজনীতি, ইসলামি ব্যাংক, ইসলামি ইন্স্যুরেন্স, ইসলামি বাণিজ্য, ইসলামি প্রযুক্তি, ইসলামি চিকিৎসা, ইসলামি হাসপাতাল, ইসলামি শাসনতন্ত্র, ইসলামি শাসন, ইসলামি সাংবাদিকতা, ইসলামি প্রচার মাধ্যম, ইসলামি লেবাস, ইসলামি জীবন, ইসলামি জগৎ - এভাবে সব কিছুকে ইসলাম দিয়ে বিভক্ত করা হচ্ছে। এভাবে বিভক্ত করে মুসলিম সমাজ কি কিছু অর্জন করছে, নাকি সবকিছুই হারাচ্ছে? আসলে সবকিছুই হারাচ্ছে। ইসলাম এসব কিছুকে বিভক্ত করতে বলেনি বরং এসবকেই সত্য, ন্যায় ও কল্যাণের অনুগামী করে তুলতে নির্দেশ দিয়েছে। ইসলামি ব্যাংক যদি সত্যিই ইসলামি হয় তবে মুসলমানরা অন্য যে ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে কাজ করে তা কি অনৈসলামিক? ইসলামি প্রযুক্তি বলে যদি কিছু থাকে তবে অমুসলিমদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি কি অনৈসলামিক? অনুরূপভাবে বিভক্ত করা সব বিষয়ের ক্ষেত্রে একই প্রশ্ন প্রযোজ্য। মুসলমানরা কি পারবে এ পৃথিবীতে মুসলমানদের জন্য আলাদা এক জগৎ ও জীবন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে? ইসলাম কি এরকম একটা বিচ্ছিন্ন জীবন ব্যবস্থা গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছে? ইসলাম তা দেয়নি। ইসলাম মুসলমানদের বলেছে, এমন উত্তম ব্যবস্থার নিদর্শন স্থাপন করতে, যাতে অনুপ্রাণিত হয়ে জগতের সব মানুষ সত্য, ন্যায় ও কল্যাণের সন্ধান পায়। মুসলমানরা এ মহৎ প্রতিযোগিতা থেকে বিচ্যুত হয়ে চলে যাচ্ছে একেবারে প্রান্তিক অবস্থানে। অন্যদিকে আমরা ইসলামি নামকরণে একান্ত নিজেদের সামপ্রদায়িক খোলস হিসেবে আঁকড়ে ধরতে চাইছি এমন কিছু যা প্রকৃত বিচারে উত্তম নয় বরং নিম্নমানের। আমরা কি বলতে পারবো ইসলামি নামকরণ করা কোনো জিনিসটা সভ্যতার বিচারে মানোত্তীর্ণ বা উত্তম? বলতে হবে প্রচলিত কোনোটাই নয়। ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা নয়। ইসলামি অর্থনীতির বাস্তব কোনো নৈতিক উৎকর্ষের নজির নেই, ইসলামি ব্যাংক আসলে নামের ভাঁওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। ‘ইসলামি শাসন’ অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি শব্দ হিসেবে নিজের পরিচয় তুলে ধরছে বারবার। ইসলামি বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-চিকিৎসা ইত্যাদির কথা যদি বলা হয়, লজ্জাজনক প্রতারণাই বলতে হবে।

আমাদের সমাজের এ ধরনের নিজস্ব কিছু এ যুগে আর নেই। আমাদের সমাজ নানা ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার ফলে যতটা না খারাপ অবস্থায় ছিলাম এর চেয়ে অনেক বেশি খারাপ অবস্থায় যাচ্ছি ইসলামি নামকরণের অনৈসলামিক ধারার পেছনে ছুটে। 

এশিয়া হতে পারে বিশ্ব অর্থনীতির বাতিঘর

এশিয়া হতে পারে বিশ্ব অর্থনীতির বাতিঘর

সংলাপ ॥ ইউরোপসহ উন্নত বিশ্বের আর্থিক সংকটের অন্ধকার কাটাতে আলো দেখাতে পারে এশিয়াই। হয়ে উঠতে পারে দিক হারানো বিশ্ব অর্থনীতির বাতিঘর।
টাকার দাম দ্রুত পড়তে থাকা কিংবা আর্থিক বৃদ্ধির হার থমকে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলো মিটিয়ে অদূর ভবিষ্যতেই ছন্দে ফিরবে উপমহাদেশীয় অর্থনীতি। বিশ্ব অর্থনীতিকে ফের চাঙা করতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের ক্ষমতা রয়েছে এশিয়ার। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে এশিয়াই চালকের আসনে থাকবে। এক দিকে ইউরোপীয় দেশগুলোতে ক্রমে জোরালো হওয়া আর্থিক সংকট, অন্য দিকে বিশ্ববাজারে তেলের চড়া দাম - এই দুয়ের যাঁতাকলে নাভিশ্বাস বিশ্ব অর্থনীতির। এ পরিস্থিতিতে উন্নত বিশ্বকে ‘উদ্ধারের’ প্রশ্নে এশিয়ার দেশগুলোকে আরও নিয়ন্ত্রক শক্তি হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে। সাম্প্রতিক অতীতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্ব অর্থনীতি যখন প্রায় তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে, তখন বাতিঘরের ভূমিকায় থাকতে পেরেছে এশিয়া। এখনও তার পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে আজকের বিশ্বায়িত অর্থনীতির দুনিয়ায় একা ঘুরে দাঁড়ানো যে কোন দেশের পক্ষেই সম্ভব নয়, ইউরোপের আর্থিক সংকট মিটলে আখেরে লাভবান হবে উন্নয়নশীল দুনিয়াও।

বিশ্ব অর্থনীতির লেখচিত্রকে ঊর্ধ্বগামী ও সুস্থির করা যায় তা ভেবে দেখার সময় আসছে এশিয়ার সকল রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য। 

শহীদ মৃত্যুবার্ষিকী শাহাদতবার্ষিকী রূহের মাগফেরাত!!!!

শহীদ মৃত্যুবার্ষিকী শাহাদতবার্ষিকী
রূহের মাগফেরাত!!!!

এই শব্দগুলোর ব্যবহার আমাদের সমাজে অহরহ হচ্ছে। ধর্মব্যবসায়ী, ধর্মবেত্তারাও এর সত্যটাও তুলে ধরছেন না। এমনকি যারা ইসলামী চিন্তাবিদ তারাও মুখে কলুপ এঁটে বসে আছেন। মসজিদের ইমাম সাহেবরাও জুম্মার নামাজের খোতবার আগে বক্তৃতায় এ সবের ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন আছে চিন্তা করছেন না যেহেতু তারা ঘোলা পানিতে মাছ ধরায় ব্যস্ত সুযোগটা নিচ্ছে ধর্মের নামে যারা রাজনীতি করছেন তারা। উপর মহলের নেতাদের খুশি করার জন্য করে যাচ্ছেন মিথ্যাচার। তাহলে আমাদের কুরআনিক মুসলিম হওয়ার সকল পথ কি রুদ্ধ হয়ে আসছে? শান্তিময় দেশ আমরা দেখতে পাবো না?

সংলাপ ॥ ৩০ মে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। বিএনপি মহাআড়ম্বরে পালন করলেন দিবসটি। মহাআড়ম্বরে বলছি এই কারণে যে, জিয়া’র ‘মৃত্যুবার্ষিকী’ নামক সত্যকে বিভিন্ন বিশেষণে বিশেষিত করে এইরকম অতিরঞ্জিত উৎসাহ উদ্দীপক যজ্ঞকীর্তির প্রকাশ জাতির কাছে করার কি প্রয়োজন ছিল?
দেশের সমগ্র মিডিয়া ও স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে শহীদ, মৃত্যুবার্ষিকী, শাহাদাতবার্ষিকী, রুহের-মাগফেরাত, আত্মার মাগফেরাত ইত্যাদি শব্দযোগে তার জীবনী ও কর্মকান্ড প্রকাশ ও প্রচার করা হয়। এর সঙ্গে প্রচার করা হয় এবং দেখানো হয় তার বিধবা পত্নী খালেদা জিয়ার মাধ্যমে খাবার প্যাকেট বিতরণ। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল ও আছে ফাতেহা পাঠ, কুরআনখানি, তবারক বিতরণ এবং তার রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত (!) কোথাওবা তার বিদেহী রূহের মাগফেরাত চেয়ে দেশের মসজিদ, মন্দির ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ আরাধনার ব্যবস্থা। কিন্তু প্রশ্ন হল - যিনি শহীদ (?) তার আবার রুহের মাগফেরাত কামনা করা কেন?? আবার রূহের কি মাগফেরাত হয়? শহীদ মানে তো সোজা বেহেশত, নিষ্পাপ, নিষ্কলুষ জীবিত। মহান আল্লাহ্‌ পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে শহীদদের তরে এই বিশেষ পুরস্কার প্রদানের ওয়াদা করেছেন। তাহলে কি জামাতি ইসলামের প্রচারণায়  বিএনপি শহীদ ও নিহত উভয় শব্দকে এক করে দেখছেন তাদের মনগড়া ঘোষণায়!! নাকি রাজনীতির নামে তাদের রচিত ইসলামের নতুন কোনো ব্যাখ্যায় বিভ্রান্ত করতে চাইছেন জাতিকে!! এ থেকে দেশবাসী কি ধরে নিতে পারে না, এজিদী-ওহাবী-মওদুদপন্থী ইসলামি শাসনের চাইতেও বিকৃত ইসলামি ব্যবস্থা এদেশে কায়েমের ইঙ্গিত দিচ্ছিল নিকট অতীত।
আজ থেকে প্রায় পনের বৎসর পূর্বে বিএনপি দেশের জনগণের আবেগকে মিথ্যাচারের মাধ্যমে নির্বাচনী হাতিয়ার করেছিল নির্বাচনে জেতার জন্য। কিন্তু আজ জামাত নামক তথাকথিত ইসলামপন্থী দল কি করছে? এরা তো ধর্মের নামে সন্ত্রাসকে লালন-পালন করছে এবং পাকিস্তানী শকুনদের এক নম্বর চামচাগিরি করে যাচ্ছে। এখন বিএনপি তাদের এক নম্বর চামচায় পরিণত হয়েছে। কেন চামচামি করছে তা দেশবাসীর ভাববার সময় এসেছে।
এই বিশ্বে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জন. এফ. কেনেডি থেকে শুরু করে বহু রাষ্ট্রনায়ক এ যাবৎ আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে বাংলাদেশে জিয়াউর রহমানই একমাত্র রাষ্ট্রপতি যাকে নিহত নয়, বরং শহীদ বলে দেদারসে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশে এর চাইতে ইসলামের নগ্ন বিকৃতি আর কি হতে পারে!! এমতাবস্তায় ইসলামের অপব্যাখ্যাকারী কায়েমী স্বার্থবাদী এই দলকে জনগণ ও  ইসলামি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সময় এসেছে। ইসলামে বর্ণিত-পবিত্র ধর্মযুদ্ধে কিংবা দেশ মাতৃকার সম্ভ্রম ও স্বাধীনতা রক্ষার তরে  জীবনদানকারী শহীদের পবিত্র রক্তও আজ টগবগিয়ে ফুঁসে উঠছে এর প্রতিবাদ জানাতে।
১৬ কোটি বাঙালি আজ নিশ্চুপ কেন? তারা কি বোঝে না বছরে বছরে দেশের সমগ্র স্কুল কলেজের বই পুস্তকে কিভাবে ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। বিচিত্র এ দেশ এবং এদেশের তথাকথিত শিক্ষিত ও সুশীল সমাজ।
চারিদিকে তাকিয়ে দেখুন, জামাতপন্থী ইসলামি দলগুলো সমাজ ব্যবস্থায় চিড় ধরাবার জন্য অতি সূক্ষ্মভাবে আজ ঘরে ঘরে কুরআন, হাদীসের বিকৃত ব্যাখ্যা পৌঁছে দিচ্ছে। ছোট ছোট চটি হাদিস কিংবা তালিম ও ধর্ম সভার নামে একশ্রেণীর বেতনভোগী মহিলাদের দ্বারা মা, বোনদেরকে এমনকি স্কুল-কলেজে গোঁড়ামিতে ভরা কুসংস্কারপূর্ণ ইসলামি রীতি, নীতি শিক্ষা দেয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তাইতো আজকাল প্রায়ই দেখা যায় - গ্রীষ্মের তপ্ত রোদের গরমে বসে বাসে করে যাচ্ছে এমন অনেক কোমলমতি স্কুল-কলেজ পড়-য়া মেয়ে যাদের হাত-পাগুলো গরমকালে কালো রংয়ের মোজায় আবৃত এবং পরনে এমন কালো পোশাক যা থেকে শুধু চোখ দুটো দেখা যায়।
সচেতন পাঠকগণকে বলছি সকাল বেলা একটু ঘুরে বেড়িয়ে আসুন না, ঢাকার অভিজাত গুলশানে অবস্থিত ‘ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও কলেজ’ থেকে। দেখবেন কিরূপ কিম্ভুতকিমাকার পোশাকে শিক্ষিকাদের সামনে আপনার সন্তানেরা কি শিখছে আর কিরূপেই বা তারা শিক্ষিকাগণকে চিনে রাখছে। প্রথমেই যদি না হল দর্শনদারি কিভাবে হবে গুণবিচারি!
এমনিভাবে চির উন্নত ও শ্বাশত সদা বর্তমান মোহাম্মদী ইসলামকে তারা আজ অন্ধ ও গোঁড়ামির মোড়কে আবৃত করে চৌদ্দশ বছর ধরে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যাঁতাকলের মধ্যে ফেলে রেখেছে রাজনীতির হাতিয়ার করে। জোট সরকারের কুচক্রী মহল আর কতকাল জাতিকে এভাবে প্রতারণা করে যাবে, আর কতকাল তথাকথিত মাদ্রাসাপন্থী প্রাচীন গোঁড়ামি ও অন্ধ শিক্ষাব্যবস্থা কায়েমের মাধ্যমে জামাত ও ইসলামের নামাবলী গায়ে জড়ানো ধর্মব্যবসায়ী ও ধর্মবেত্তাদের এই সবুজ সোনালী দেশকে পশ্চাদপথে অন্ধকারে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।

সময় অতি নিকটবর্তী। বিশ্বাসঘাতক বিকৃত ইসলামপন্থীদের রুখে দিতে প্রয়োজনে আরেকটি ৭১’ এর জন্ম  দেয়ার জন্য ঘরে ঘরে প্রস্তুতি নেয়ার সময় এসেছে। আরেকটি কারবালায় নিজেদেরকে উৎসর্গ করার জন্য জাতিকে প্রস্তুত থাকতে হবে। তাতে করে আপনার পরিবার বাঁচবে, বাঁচবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও দেশ। প্রতিষ্ঠিত হবে নবী মুহাম্মদ (সঃ) প্রচারিত ইসলামি মূল্যবোধ নিয়ে বাংলার ইসলাম। 

বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০১৫

জাতি চায় প্রতিবেশী দেশের সাথে নিবিড় সম্পর্ক


জাতি চায় প্রতিবেশী দেশের সাথে নিবিড় সম্পর্ক

সংলাপ ॥ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকায় সাম্প্রতিক ঝটিকা সফর এবং এসময় সম্পাদিত চুক্তিসমূহ সাম্প্রতিককালে দেশের কুটনৈতিক ক্ষেত্রে এক বিরাট তাৎপর্যবহ ঘটনা। যে কোন বিপদ ও সমস্যায় প্রতিবেশীই একজন মানুষের প্রথম ভরসা ও আশ্রয়স্থল। স্বাধীনতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের সবাই না হোক, একটি বিশেষ শ্রেণী আজ যে পার্থিব উন্নতি লাভ করেছে তা কি কেউ অস্বীকার করতে পারবে? কিন্তু দুঃখজনক হলেও একথা সত্য যে, স্বাধীনতার সুফল সবার ঘরে উঠেনি এবং ১৯৭৫ সালের পর ভারতের সাথে আমাদের দেশের ভুল বোঝাবুঝির কারণে এ দু’দেশ ও তার জনগণের মধ্যে দুরত্ব তৈরি হয়। কিন্তু এ দুরত্ব ও ভুল বোঝাবুঝিকে কাজে লাগিয়েছে দু’দেশের কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী। বিভিন্ন সময়ে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে চোরাচালানী তৎপরতা যার মাধ্যমে দু’দেশেই পাচার হয়েছে নিষিদ্ধ ও অবৈধ পণ্য ও অস্ত্র। দাগী আসামী, খুনী চক্র একদেশে যাবতীয় অপরাধ ও অপকর্ম করে অপর দেশে গিয়ে আস্তানা গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়েছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তারা সফলও হয়েছে। অর্থাৎ, দু’দেশের অশুভ চক্রের মধ্যে  সংযোগ যেভাবে হয়েছে, সাধারণ জনগণ ও শুভ-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের মধ্যে যোগাযোগ সেভাবে গড়ে উঠেনি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দক্ষিণ এশিয়ার এ দু’টি দেশের বিশেষ করে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভারতের কয়েকটি রাজ্যের বিশাল জনগোষ্ঠি আজও পিছিয়ে আছে নানা দিক দিয়ে। দু’দেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার দীর্ঘদিন পরে হলেও এ বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পেরেছে শান্তিকামী মানুষদের কাছে এটাই আজ সবচেয়ে আনন্দ ও স্বস্তির খবর। গত শনিবার ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দু’টি রুটে বাস সার্ভিসের উদ্বোধন হলো। কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা এবং ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি রুটে এই বাস চলবে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসময় উপস্থিত ছিলেন।  এসময় দু্‌ই প্রধানমন্ত্রী ও মমতা বাসে ওঠেন। উদ্বোধনের পর তিনটে বাসের একটি শিলং, একটি কলকাতা ও অপরটি আগতলার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। পশ্চিমবঙ্গের পরিবহন দপ্তরের সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে শীর্ষ বৈঠকে সামরিক উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। এদিকে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে শীর্ষ বৈঠকের পর ২২ টি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।  শেখ হাসিনা বলেন, ‘উপকূলীয় নৌ-চলাচল চুক্তি, অভ্যন্তরীণ নৌ-ট্রানজিট ও বাণিজ্য প্রটোকল স্বাক্ষর এবং এর সঙ্গে নতুন বাস সার্ভিস উদ্বোধন এই অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ প্রতিষ্ঠা করবে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দু’দেশ ‘জিরো টলারেন্স্থ নীতিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। দু্‌ই দেশের ৫৪টি অভিন্ন নদী নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ও আলোচনা হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ একটা বড় সমস্যা। বিদ্যুৎ সমস্যা মেটাতে রিলায়েন্স পাওয়ার বাংলাদেশে বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করতে চলেছে।  ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাননীয় প্রধানন্ত্রী, আপনার সফর আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন আশা ও গতির সঞ্চার করেছে।
ঔপনিবেশিক শক্তি বাংলাকে রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত করলেও আত্মিক ও সাংস্কৃতিভাবে ভাগ করতে পারেনি। একদিকে গঙ্গা, অন্যদিকে পদ্মারতীরের মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি, রুচি, খাদ্যাভ্যাস, প্রায় অভিন্ন। ১লা বৈশাখে, ঈদ, কিংবা দুর্গোৎসবে দু’দেশের মানুষ কাঁটাতারের বেড়া ডেঙ্গিয়ে আজও স্বজনদের কাছে ছুটে যায়। সেনাবাহিনীর বাধা পেলে কাঁটাতারের ভিতর থেকে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানায়। এই আবেগ ও ভালোবাসা কোনও কিছুতেই রুদ্ধ করা যায় না। মোদির ঢাকা সফর অতীতের সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও রাজনৈতিক টানাপোড়েন পিছনে ফেলে সময়ের দাবি মেটাতে সক্ষম হবে বলে বাংলাদেশের প্রত্যাশা। সেই সুরই দিনভর শোনা গেল গোটা ঢাকা শহর জুড়ে।
ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাইট ‘রাজদূত’ গত শনিবার সকাল ১০টা ১০ মিনিট নাগাদ ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানের সামনে দু’পাশে উড়ছিল বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় পতাকা। সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি ও ছাইরঙা ওয়েষ্ট কোট পরা মোদি বিমান থেকে বেরিয়ে এসে হাত নাড়েন, নমস্কার জানান। বিমানের সিঁড়ি থেকে নেমে লাল গালিচায় পা রাখেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। লাল গালিচায় অপেক্ষা করছিলেন বাংলাদেশের প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফুল দিয়ে মোদিকে বরণ করা হয়। ১৯ বার তোপধ্বনি হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী সম্মানে। লাল শাড়ি পড়া একটি শিশু ভারতের প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন শুভেচ্ছার ফুল। শিশুটিকে আদর করে তার সঙ্গে কথাও বলেন মোদি। তিনি নাম জানতে চাইলে শিশুটি জানায়, তার নাম কাজি কার্পিতা হোসেন। পড়ে প্রথম শ্রেণিতে। এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া হয় গার্ড অব অনার। বেজে ওঠে দুই দেশের জাতীয় সংগীত। গার্ড পরিদর্শনের পর শেখ হাসিনা তার মন্ত্রিসভার সদস্যসহ শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে মোদির পরিচয় করিয়ে দেন। পরে মোদি তার সফরসঙ্গীদের সঙ্গে শেখ হাসিনাকে পরিচয় করিয়ে দেন। বিমান বন্দরে এই সময় উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরি, পররাষ্টমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহম্মদ নাসিম, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভি ও মসিউর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ। তিন বাহিনীর প্রধানসহ সামরিক ও অসামরিক উচ্চপদস্থ কর্তারাও ছিলেন বিমান বন্দরে। উপস্থিত ছিলেন হাইকমিশনার পঙ্কজ সরণসহ ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারাও।
দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে মোদি প্রথমবার বাংলাদেশে এসেছেন। বাংলাদেশে নরেন্দ্র মোদির এই সফর ‘ঐতিহাসিক’। মোদির সফর ঘিরে অভূতপূর্ব নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছিল গোটা ঢাকা শহরকে। আকাশপথে নজরদারি চালাতে দিনভর চক্কর দিয়েছে হেলিকপ্টার।
বিমানবন্দরে আনুষ্ঠিকতা শেষে ‘৭১-এর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান মোদি। সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানান গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী একে এম মোজাম্মেল হক, সাভারের সংসদ সদস্য এনামুর রহমান। সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, ঢাকার জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন মিঁঞা ও পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানও সেখানে ছিলেন। ১১টা ২৫ মিনিটে নরেন্দ্র মোদি শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। শহীদ বেদির সামনে এক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। ফুল দিতে স্মৃতি সৌধের পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষরের পর মোদি বৃক্ষরোপণ এলাকায় একটি ‘উদয়পদ্ম’ গাছের চারা রোপণ করেন। সেখান থেকে বেরিয়ে মোদিবহর ঢাকার ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের উদ্দেশে রওনা হয়। বেলা ১২ টা ০৫ মিনিটে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে পৌঁছালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর বহমান স্মৃতি ট্রাস্টের সদস্য সচিব ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। পরে জাদুঘরের বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখেন এবং পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি পরিদর্শনের পর মোদি এক ট্যুইটে লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, গণতন্ত্রের প্রতিমূর্তি, এক বিশাল ব্যক্তিত্ব এবং ভারতের এক মহান বন্ধুকে শ্রদ্ধা।’
দিনের প্রথম ভাগের কর্মব্যস্ত সময় পার করার পর বেলা ১টা নাগাদ হোটেল সোনারগাঁওয়ে যান মোদি। সেখানে বিশ্রাম এবং মধ্যাহ্নভোজ শেষে ৩টে নাগাদ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর হোটেল সোনারগাঁওয়ের সুরমা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে দিনের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে শীর্ষ বৈঠক করেন মোদি। তার আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি বাস সার্ভিস ও কলকাতা -ঢাকা-আগরতলা বাস পরিষেবার উদ্বোধন করেন।
দুই প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রী একান্তে কথা বলেন। তাঁদের আলোচনা শেষে সীমান্ত চুক্তির অনুসমর্থনের দলিল বিনিময় হয়। পরে দুই প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। আনুষ্ঠানিক আলোচনার পর বিভিন্ন প্রকল্পের ফলক উন্মোচন শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে চুক্তি, সমঝোতা স্মারক, প্রোটোকল ও সম্মতপত্র সই হয়।
খুলনা-মংলা রেললাইন, শিলিগুড়ির রবীন্দ্র ভবন, ফেনী নদীর উপরে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১. কুলাউড়া-শাহজিবাজার রেলপথ, সারদা পুলিশ অ্যাকাডেমিতে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী ভবনের ফলক উন্মোচন করেন মোদি। এছাড়া বিএসটিআইয়ের আধুনিকীকরণ করা ল্যাবরেটরি ও ব্রাক্ষণবাড়িয়া-ত্রিপুরা সীমান্ত হাটের উদ্বোধন করেন মোদি-হাসিনা। রাতে হোটেল সোনারগাঁওয়ে তাঁর সম্মানে শেখ হাসিনার দেয়া নৈশভোজে যোগ দেন নরেন্দ্র মোদি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মমতাও।
ঢাকা সফরে রামকৃষ্ণ মিশন ও ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রামকৃষ্ণ মিশনে মোদি আসছেন, এই খবর পৌঁছাতেই বেলুড় মঠ এবং রামকৃষ্ণ মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ ঢাকায় এসেছেন। মোদির আগে সুষমা স্বরাজও ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে পুজো দেন। তবে, এই প্রথম ভারতের কোনও প্রধানমন্ত্রী এই মন্দিরে পা রাখছেন। কথিত আছে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের নাম থেকেই ঢাকার নাম হয়। রবিবার সকালে মন্দিরে পুজো দিয়েছেন। এরপর তিনি বারিধারায় ভারতীয় হাই কমিশনের নতুন চ্যান্সেরির উদ্বোধন করেছেন। দুপুরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে তার সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে অটল বিহারী বাজপেয়ির পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্মাননা গ্রহণ করেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।
কূটনৈতিক দৌরাত্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যমকে দরাজ কন্ঠে সমর্থন করল আমেরিকা। শুধু সমর্থনই নয়, তাঁর বিদেশ সফরে তিনি যে কুটনৈতিক সাফল্যও পেয়েছেন, তাও মনে করেন আমেরিকার শীর্ষ কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ রিচার্ড রাহুল ভার্মা। তিনি এখন ভারতে নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূত। ওয়াশিংটনে সেন্টার ফর ষ্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’-এর এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, কূটনৈতিক পর্যায়ে মোদির প্রতিটি পদক্ষেপ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তাঁর এই উদ্যম ভারতকে বিশ্ব-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক শক্তি হিসাবে ক্রমশ তুলে ধরার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সেই সঙ্গে ভারত তার বৈদেশিক নীতি-নির্ধারণে গতি পেয়েছে। আমরা (আমেরিকা) বিশ্ব রাজনীতি এবং অর্থনীতির আঙ্গিনায় ভারতের নেতৃত্ব দেওয়ার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। ভারত-মার্কিন সম্পর্কের নতুন বাতাবরণ তৈরি নিয়েও মোদির উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ভার্মা।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়নে মোদির উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন ভার্মা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ঐতিহাসিক স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়নে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সফলভাবেই হেঁটেছেন। ভারতের প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভুটানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। নেপালের ভূমিকম্পে ভারত যেভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
মোদির  মার্কিন সফরকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন ভার্মা। তিনি বলেছেন, গত জানুয়ারি মাসে ওবামা-মোদি বৈঠকে আমরা ৭৭টি ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রকে বাছাই করেছি। যেগুলোকে কেন্দ্র করে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক আবর্তিত হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সৌরশক্তি। ভারত উপ-মহাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়া কিংবা শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে ইন্দো-মার্কিন যৌথ নীতি নির্ধারণেও একটা রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি বলেছিলেন, ভারত-আমেরিকার সম্পর্ক শুধু একে অপরের জন্য নয়। গোটা বিশ্বের জন্য আমাদের কাজ কতে হবে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত সেই প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন, বিশ্বের দু’টি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিশ্বের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যেই কাজ করবে।
বাংলাদেশের বিকাশের যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়িত করতে ভারত আপনাদের সঙ্গে রয়েছে, পাশেও রয়েছে। ভারতের মতোই উন্নতি ঘটুক সোনার বাংলার। গত রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এই আবেগ-ভাষণ মন জয় করে নিল বাংলাদেশের মানুষের।  বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকক্ষে উপস্থিত কয়েক হাজার পড়ুয়া, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদের সামনে তাঁর আবেগঘন বক্তৃতায় উঠে এসেছে প্রতিবেশী এই দেশের সন্ত্রাসবাদ রোধ, শিশু ও নারীশিক্ষা, শিল্পে এগিয়ে চলার কাহিনী। কুর্নিশ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসকে। বলেছেন, একজন মহিলা যেভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, তা দেখে সত্যিই অভিভূত। দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে ভারত যে সবসময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে থাকবে, তাও জানিয়ে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। বললেন, প্রতিবেশীদের মধ্যে একজন দুর্বল হলে আরেকজন উন্নতি করতে পারে না। ভারত-বাংলাদেশকে উন্নতি করতে একে অপরের পরিপূরক হতে হবে। গরিবের উন্নয়নে, দরিদ্রদের ঘরে বিদ্যুৎ দিতে বাংলাদেশকে সাহায্য করবে ভারত। স্থল সীমান্ত চুক্তির প্রসঙ্গ তুলে এনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া এবং বাংলাদেশের বিশিষ্টদের বললেন, যাওয়ার সময় হলো। কিন্তু মনে হচ্ছে এই সবে যাত্রা শুরু হলো। উন্নয়নের লক্ষ্যে একসঙ্গে অনেক পথ চলতে হবে। ফেরার পর অনেক কাটাছেঁড়া হবে কী পেলাম, কী হারালাম তা নিয়ে। কিন্তু দুনিয়াকে দেখিয়ে দিতে হবে আমরা পাশাপাশি আছি, আবার একসঙ্গেও আছি। বাংলাদেশের জন্য আমার আবেগ রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে জনসমর্থন বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে ভারত জুড়ে যখন প্রচার চলছে তখন জনসমর্থন আরও বাড়াতে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে স্বেচ্ছাসেবক হয়ে আমার রাজনীতিতে প্রবেশ। মোদি বলেন, বাংলাদেশকে যত দেখি গর্ব হয়। নানান প্রতিকূলতা, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেও এগিয়ে চলেছে। মোদি বলেন, চীনে গিয়ে শুনলাম বাংলাদেশ বস্ত্রশিল্পে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। শুনে প্রতিবেশী হিসেবে গর্বিত হয়েছিলাম। পড়শি উন্নতি করলে কার না ভাল লাগে। প্রতিবেশীর উন্নতির আলো তো ভারতেও পড়বে। বাংলাদেশের যত বিকাশ হবে, আমরাও ততো বিকশিত হবো। শিশু ও নারী শিক্ষা, শিল্প, জঙ্গিদমনে বাংলাদেশ এগিয়েই চলেছে। এদেশের আতিথেয়তা মুগ্ধ করেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই তো সেদিন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে আসার আগে আমায় বললেন, যান না, গিয়ে দেখবেন সেখানকার মানুষ কেমন আবগপ্রবণ। ওখানকার মানুষের আতিথেয়তা ভোলার নয়। যাওয়ার আগে বলে যাচ্ছি, ফের আসব। তারপরই সকলকে অবাক করে দিয়ে মোদি কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতা উদ্ধৃত করে খাঁটি বাংলায় বলে ওঠেন - ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে এই বাংলায়’।
বাংলাদেশকে পাশে চাই। আবার আমাদের রাজ্যগুলোকে নিয়েও চলতে হবে। বাংলাদেশে এসেছি, তিস্তা প্রসঙ্গ আসবে, এটাই স্বাভাবিক। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্রর সমাধান আমরা করেছি। পাখি, হাওয়া, জল - সীমানা দিয়ে আটকানো যায় না। সমাধানের পথ বের করতে হবে। চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বিশ্বাস রাখতে হবে। তবেই সমাধান আসবে। দায়িত্ব আমরা পালন করব। সীমান্তে হত্যা মর্মান্তিক। গরিব মানুষ মরে। সীমান্তে হত্যা রুখতে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে।
জমির জন্য বহু দেশের মধ্যেই যুদ্ধ হয়। কিন্তু আমরা বিশ্বে পথপ্রদর্শক। মোদি বলেন, স্থলসীমান্ত চুক্তি করে আমরা দেখিয়ে দিয়েছি জমিকে আমরা সম্পর্কের সেতু হিসেবে ব্যবহার করেছি। কত জমি হারালাম, কী পেলাম সেটা বড় কথা নয়। কিছু জমি গেল সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, সেটাকে আমরা কতটা সম্পর্ক উন্নয়নে কাজে লাগাতে পেরেছি। এক ঘন্টারও বেশি সময় মোদি ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে দিশা দেখান। বলেন, ত্রিপুরার পালাটানায় বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়তে প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে যেতে বাংলাদেশ তাদের জমি ব্যবহার করতে দিয়েছে। না হলে এই কেন্দ্র তৈরিই হতে পারত না। তাই সেই সহযোগিতায় শরিক হওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশকে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেব। সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটান-ভারত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পেরেছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে আমরা সাহায্য করেছিলাম। চাইলেই বাংলাদেশের জমি ব্যবহার করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারতাম। তাদের ৯০ হাজার সৈন্য আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। বিনিময়ে কিছু চাইনি।
নারীশক্তিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। তাদের প্রধানমন্ত্রী, সংসদের স্পিকার, বিরোধী নেত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সকলেই মহিলা। ঢাকার রাজপথে দেখলাম বাংলাদেশের জাতীয় দলের ক্রিকেটার সালমা খাতুনের জামায় লেখা বিজ্ঞাপন - মেড ইন বাংলাদেশ। দেখে গর্ব হলো। নারীশক্তির যুগ চলছে বাংলাদেশে।
তারুণ্যের প্রশংসা করলেন নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট দলের সদস্য সালমা খাতুন, অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, দুই মহিলা এভারেস্ট জয়ী নিশাত মজুমদার ও ওয়াসফিয়া নাজরিনের নাম উল্লেখ করেন বক্তৃতায়। বলেন, আপনাদের মহিলা ক্রিকেটার সালমা খাতুনের ছবি আমি দেখেছি। এটা নারী ক্ষমতায়ন আর তারুণ্যের শক্তির প্রমাণ। বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটাররা দুর্দান্ত খেলেছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ‘গ্রাফ’ টি এদেশের অর্থনীতির উন্নতির একটি ছাপ বলে মনে করেন মোদি। বলেন, ক্রিকেট-বিশ্বে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে অনেক পরে। কিন্তু আজ ভারত-সহ ক্রিকেটে সব বড় দেশ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে আর ছোট দল হিসেবে ভাবার সাহস পায় না। আপনারা অনেক দেরিতে শুরু করেও, এরই মধ্যে বিশ্বে জায়গা করে নিয়েছেন। এটা বাংলাদেশের কৃতিত্ব। মোদি বলেন, নিশাত ও ওয়াসফিয়া দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসে এভারেস্টের উচ্চতা ছুঁয়েছে। এটাই এদেশের শক্তি। আর এ নিয়ে আমিও গর্ববোধ করি। দেশ উন্নয়নে তারুণ্যের প্রসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত-বাংলাদেশ এই দু’দেশের ৬৫ শতাংশ মানুষের গড় বয়স ৩৫ বছরের নিচে। তারুণ্যে টগবগ করছে, এটাই দু’দেশের চরম উন্নতি এবং এগিয়ে যাওয়ার সময়।
কেউ করছে আর জাল নোট নিয়ে দোষ হচ্ছে বাংলাদেশের। এটা হতে দেয়া যায় না। জাল নোট রুখতে তাই বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে একজোট হয়েছে। জঙ্গি-হামলায় কত নিরীহ মানুষের প্রাণ যায়। ভারতে ৪০ বছর ধরে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। সন্ত্রাসবাদ দমনে ভারত কঠোর হয়েছে। বাংলাদেশও একই অবস্থান নিয়েছে।
‘আমার বাংলাদেশের ভাইবোনেরা সমস্কার। কেমন আছো। আমরা তোমার সাথে আছি। আমরা তোমাকে সঙ্গে নিয়ে চলবো। আমার বাংলা কেমন বলো তো।’ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজিত অনুষ্ঠানে মোদির মুখে বাংলা শুনে উচ্ছ্বসিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। উচ্ছ্বসিত শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে অনুষ্ঠানে হাজির বুদ্ধিজীবীরা। তাদের প্রাণের ভাষায় মোদি কথা বলায় উল্লাস বাংলাদেশ জুড়ে। টিভিতে মোদিকে বাংলায় কথা বলতে শুনে আনন্দিত বাংলাদেশের মানুষ। বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির রক্ত ঝরেছে। ভারতীয় সৈন্যরাও রক্ত ঝরিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময়। সেই সব রক্ত কি আলাদা করা যায়। হাজার হাজার বাঙালি রক্ত ঝরাতে তৈরি ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের আমার প্রণাম।
এবার যাওয়ার পালা। কিন্তু বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে মন চাইছে না। কত কিছু দেখা হয়নি। মোদি বলেন, নোয়াখালির গান্ধীজির আশ্রম দেখা হয়নি। যেতে চাই কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহে। খুব ইচ্ছে রয়েছে পরের বার ঢাকায় এসে পদ্মানদীর বুকে নৌকোয় করে ভেসে বেড়ানোর। পদ্মার বুকে ভেসে বেড়াতে বেড়াতে এখানকার তরুণ বন্ধুদের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা মারবো। জয় বাংলা,  জয় হিন্দ।

সময়ের সাফ কথা.... সহকর্মীদের পারস্পারিক কর্তব্য


সময়ের সাফকথা....
সহকর্মীদের পারস্পারিক কর্তব্য

আল্লামা মোঃ সাদেক নূরী ॥ সহকর্মী মানে কাজের সাথী। শিক্ষা, সাধনা ও কৃষিক্ষেত্র, কলকারখানা, অফিস-আদালত, সমাজসেবা অথবা রাজনীতি প্রভৃতি কর্মক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য যারা একসাথে কাজ করেন, তারা প্রত্যেকেই একে অন্যের সহকর্মী ও সহযোগী।
সহকর্মী বা সহযোগী ছাড়া মানুষের পক্ষে কোন কাজই করা সম্ভব নয়। অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় ব্যক্তিগতভাবে মানুষ নিতান্তই অসহায়। একটি গরুর বাছুর জন্মগ্রহণ করে অল্প সময়ের ব্যবধানেই কারো সাহায্য ছাড়া তার মায়ের দুধ খেতে পারে। এ জন্য তার কারো সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। কিন' একটি মানব সন্তান অন্যের সাহায্য ছাড়া তা পারে না। তাই জন্মগতভাবেই মানুষ পরস্পর নির্ভরশীল। বর্তমানে এ নির্ভরশীলতা আরো ব্যাপক। কারণ, আদিম মানুষের তুলনায় আধুনিক মানুষের জীবনের অনেক জটিল-প্রয়োজন সীমাহীন। এখানেই সহকর্মীর গুরুত্ব ও মর্যাদা। আর এরই নিরিখে সহকর্মীর অধিকার ও কর্তব্য সুনির্দিষ্ট।
মানুষ কেবল স্বার্থপরই নয়, সে পরার্থপরও বটে। যে শিশুটিকে এক সময় দেখা যায় অন্যের চকলেটটি ছিনিয়েনিতে অথবা ছিনিয়ে নিতে না পেরে কাঁদতে, তাকেই অন্য সময়ে দেখা যায়, নিজের চকলেটগুলো আনন্দের সাথে অন্যকে বিলিয়ে দিতে। সুতরাং দেয়া-নেয়া দুটোই মানুষের অভ্যাস এবং স্বার্থ দিয়ে, স্বার্থ অর্জন নীতির মধ্যেই এ অভ্যাসের  সঠিক রূপায়ন নিহিত। আর এ নীতিই পারস্পারিক সহযোগিতার ভিত্তি এবং সহকর্মীর হক বা অধিকারের ভিত্তিও এটাই।
সহকর্মী জীবন-সাথী, উন্নতি ও সাফল্যের সহায়ক এবং সভ্যতার নির্মাণসঙ্গী। তাই সহকর্মীর হক রক্তের আত্মীয়ের চেয়েও বেশি। তাইতো মহানবী ভালবাসতেন ক্রীতদাস বেলালকে, আপন চাচা আবু জেহেলকে নয়। সকল সহকর্মীর অধিকার সমান। কারণ, এ অধিকারসমূহ মৌলিক ও মানবিক। আর মৌলিক ও মানবিক হক বা অধিকার সকলের সমান। কারণ মানুষ হিসাবে সকলেই সমান, একে অন্যের ভাই। আল-কুরআনের দাবি হলো, আল্লাহর নিদর্শনসমূহের একটি ‘তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, এখন তোমরা মানুষ, সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছ’। আরো বলা হচ্ছে- ‘তোমাদের প্রতি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহকে স্মরণ কর, তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, তিনি তোমাদের অন্তরে প্রীতির সঞ্চার করেছেন, তোমরা পরস্পর ভাই হলে’। এ জন্যই প্রত্যেক মানুষের মানবিক মর্যাদা ও মৌলিক অধিকার সমান। তাই পদমর্যাদা ও কাজের গুরুত্বের আনুপাতিক তারতম্যের জন্য সহকর্মীর নিকট সহকর্মীর হক বা অধিকারের তারতম্য হবে না। তা ছাড়া, একজন সহকর্মী সমগ্র কাজের যত ক্ষুদ্র অংশই সম্পাদন করুন, তা বাদ দিলে গোটা কাজটাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তদুপরি, মৌলিক ও মানবিক পাওনার বিচার কাজের পরিমাণ বা প্রকৃতিক দ্বারা নিরূপিত হয় না।
আপনি যতই উচ্চপদে থাকুন, কোন কাজের যত গুরুত্বপূর্ণ বা অংশই সম্পাদন করুন, আপনি আপনার সহকর্মীর কাছে সহকর্মী হিসাবে যা আশা করেন, যে হক দাবি করেন, আপনার সহকর্মীও আপনার কাছে ঠিক তাই প্রত্যাশা করেন। আর এ উভয়ের পারস্পারিক প্রত্যাশিত বস্থই সকল সহকর্মীর হক ও অধিকার এবং পারস্পারিক কর্তব্য। যেমন আপনি আশা করেন-আপনার সহকর্মী আপনার পদমর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন, আপনার কাজের স্বীকৃতি দেবেন, যৌথকাজে আপনার পরামর্শ গ্রহণ করবেন। আপনার মত সহকর্মীর থেকে ভিন্ন হলেও তিনি তা’ সম্মানের সাথে গ্রহণ করবেন। আপনার সাথে ন্যায়াচারণ করবেন, আপনার প্রতি সৌহার্দ্য ও সহমর্মিতা দেখাবেন। কোন ভুল বুঝাবুঝি হলে আপোষে মিটাবার চেষ্টা করবেন, আপনার সুখে সুখী হবেন এবং আপনার দুঃখে দুঃখী হবেন, আপদে বিপদে আপনাকে সাহায্য করবেন ইত্যাদি। শুধু তাই নয়।  আপনি আরো আশা করেন, আপনার সহকর্মী আপনার বিশ্বাস নষ্ট করবেন না, আপনার কাজে তিনি বাধা হবেন না, আপনাকে ঠকাবেন না, আপনার সম্পর্কে বিরূপ ধারণা করবেন না, আপনার দুর্নাম করবেন না, আপনার বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরি করবেন না এবং আপনার কোনো গোপন ফাঁস করবেন না ইত্যাদি।
অতএব, আপনার সহকর্মীও আপনার কাছে সে সবই আশা করেন। এগুলো সহকর্মীর হক। এ হক বা অধিকারগুলো মৌলিক ও মানবিক এবং পারস্পারিক সহযোগিতার ভিত্তি। এগুলোকে অমান্য করে সুখী জীবন, স্বচ্ছ জীবন, উন্নত মনুষ্যত্বের জীবন, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি সমাজ সম্ভব নয়। এ জন্যেই রাসূল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন ‘যে ব্যক্তি নিজের জন্য যা ভালবাসে নিজের ভায়ের জন্য তাই ভালবাসে না, সে মু’মেন হতে পারে না’ - অর্থাৎ সে ব্যক্তি পরম সত্য ও সার্বিক মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী নয়।
সুতরাং সহকর্মীর হক পূরণ করে ‘তোমরা আমায় স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করব’- এই কুরআনিক নীতির অনুসরণে সহকর্মীর কাছে নিজের হক দাবি করতে হবে। অর্থাৎ অন্যের পাওনা আদায় করে নিজের পাওনা চাইতে হবে। তা’হলে তা পাওয়া যাবে, অন্যথায় নয়। বস্থতঃ শান্তি ও সাফল্যের জন্য সহকর্মীদের মধ্যে পারস্পারিক কর্তব্যবোধের কার্যকর অনুশীলন অপরিহার্য।
আল্লাহ্‌ আমাদের সকলকে সহকর্মীর হক সম্পর্কে সচেতন করুন।

ভোগের রাজনীতির অবসান সময়ের দাবী


ভোগের রাজনীতির অবসান সময়ের দাবী

সংলাপ ॥ জনগণের বিরাট প্রত্যাশা ও সমর্থনে গঠিত বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ একারণে যে, তিনি স্বীকার করেছেন বাংলাদেশে রাজনীতি দুই ধরনের- একটি ভোগের রাজনীতি আর অন্যটি হলো ত্যাগের রাজনীতি। তিনি বলেছেন, ভোগের রাজনীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া, পদ-পদবি নেয়া, সামাজিক স্ট্যাটাস নেয়া। এটা এক ধরনের রাজনীতি। কিন্তু যে রাজনীতি আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি, শিখে এসেছি, যে আদর্শ ধারণ করেছি সেটা হলো ত্যাগের রাজনীতি। এর অর্থ হলো, মানুষের জন্য কাজ করা নিজের ভোগের জন্য সে রাজনীতি নয়।
এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে যখনই দেশে মিলিটারী ডিক্টেটররা শাসন করেছে, ক্ষমতা দখল করে তারা চাকচিক্য দিয়ে নিজেদেরদৈন্যতাকে ঢাকতে চেষ্টা করেছে আর কিছু মানুষকে দুর্নীতিগ্রস্ত করেছে। চাকচিক্য, জৌলুশ, ও ভোগবিলাসী জীবন সামনে নিয়ে এসে তারা মানুষকে আকর্ষণ করল এবং ক্ষমতায় টিকে থাকল। এমন রাজনীতিই তারা করে গেছে। কিন্তু সত্যিকার রাজনীতির মধ্যে জনগণকে সেবা করার মনোভাব থাকতে হবে।
নেতা-কর্মী ও দেশের সবার কাছে একটাই চাওয়া - তারা যেন ভোগের নয়, ত্যাগের মনোভাব নিয়ে রাজনীতি করে, যেখানে মানুষের জন্য কিছু করা যায়। এটাই রাজনীতিকদের আদর্শ হওয়া সময়ের দাবী।
চলমান রাজনীতিকে এসবের প্রভাবমুক্ত রাখতে সাধারণ নেতা-কর্মীদের জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই চলতে হবে। কাজেই সবার রাজনীতি হতে হবে জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ ও কর্তৃত্ববোধ। মানুষের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ থাকতে হবে। জনগণের ভালবাসা নিয়ে, জনগণের জন্য কাজ করে, তাদের কী দিতে পারলাম-এই চিন্তা মাথায় নিয়েই রাজনীতি করতে হবে। কী পেলাম আর কী পেলাম না, সেটা বড় কথা নয়।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা। বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সংগ্রাম করতে গিয়ে অমরত্ব পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্যাগের রাজনীতি কত প্রকার ও কি কি সেটা ভাল করেই জানতেন তিনি। কিন্তু আজ সমস্যা হচ্ছে তার দলের অনেক নেতা-কর্মী ও সুবিধাভোগী বিভিন্ন লোকদের নিয়ে। এদেশের স্বাধীকার ও স্বাধীনতার আন্দোলন থেকে শুরু করে আজও আওয়ামী লীগকে বাঁচিয়ে রেখেছে সারা দেশের বিভিন্ন স্তরের ত্যাগী নেতা-কর্মী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত বাঙালি সমাজ। কিন্তু নিজেদের ভোগ-বিলাসের জন্য এবং ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ আদায়ে তৎপর একটি চক্র আজো যেভাবে আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিভিন্ন স্তরে ঘাপটি মেরে বসে আছে তা সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলছে। ত্যাগী রাজনীতিবিদ বা নেতা-কর্মী হিসাবে গড়ে উঠার জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বান-অনুরোধ কোনো কাজেই যেন আসছে না। আমলাতন্ত্র আর প্রশাসনের অনেক স্তরে অনেকভাবে যেসব ভোগী চাটুকার ও ধড়িবাজরা নিয়ন্ত্রকের আসনে বসে আছে তাদের তো পোয়াবারো। সরকারি দল ও তার বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী সেজে যখন প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে স্বার্থ আদায়ে অন্যায় আবদারে লিপ্ত হয় তখন আমলাদেরই বেশি সুবিধা। জনগণের জন্য কোন কাজ তখন আর করার দরকার হয় না। জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সাথে তখন আমলাদের গড়ে উঠে ভাগবাটোয়ারার সম্পর্ক। জনস্বার্থ তখন হয়ে উঠে গৌণ। ভোগ-বিলাসের জন্য অর্থ কামাই হয়ে উঠেছে মুখ্য কাজ। দেশের সর্বত্রই এখন এ পরিস্থিতির কবলে পড়ে ধুঁকছে । এই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্যাগের রাজনীতি সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সরকারের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারকদের আরো বেশি সতর্ক ও আন্তরিক হওয়ার সময় বয়ে যাচ্ছে। দেশ এখন ভোগ-বিলাস নির্ভর রাজনীতির অবসান চায়। সামরিক ডিক্টেটররা এখন দেশের ক্ষমতার মালিক নয়, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি সরকারের হাতেই দেশের নিয়ন্ত্রণভার অর্পিত আছে। আর স্মরণেও রাখা দরকার আমাদের দেশটাও ত্যাগী রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, ছাত্র-শিক্ষক-সৈনিক-কৃষক-শ্রমিক তথা জীবনকে উৎসর্গকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কর্মের ফসল। ভোগের রাজনীতি শুধুমাত্র ৭১-এর রাজাকার-আলবদর-শান্তি কমিটির দোসররা ও তাদের উত্তরসূরীরাই করতে পারে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি ভিক্ষা করে নিয়ে আসি আর চ্যাটার দলেরা সব খেয়ে ফেলে।’ এ চ্যাটার দলকে, এই ভোগের রাজনীতির ধারক-বাহকদেরকে বাংলার মেহনতী তথা সংগ্রামী জনতা আর দেখতে চায় না।