বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০১৫

ভোগের রাজনীতির অবসান সময়ের দাবী


ভোগের রাজনীতির অবসান সময়ের দাবী

সংলাপ ॥ জনগণের বিরাট প্রত্যাশা ও সমর্থনে গঠিত বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ একারণে যে, তিনি স্বীকার করেছেন বাংলাদেশে রাজনীতি দুই ধরনের- একটি ভোগের রাজনীতি আর অন্যটি হলো ত্যাগের রাজনীতি। তিনি বলেছেন, ভোগের রাজনীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া, পদ-পদবি নেয়া, সামাজিক স্ট্যাটাস নেয়া। এটা এক ধরনের রাজনীতি। কিন্তু যে রাজনীতি আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি, শিখে এসেছি, যে আদর্শ ধারণ করেছি সেটা হলো ত্যাগের রাজনীতি। এর অর্থ হলো, মানুষের জন্য কাজ করা নিজের ভোগের জন্য সে রাজনীতি নয়।
এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে যখনই দেশে মিলিটারী ডিক্টেটররা শাসন করেছে, ক্ষমতা দখল করে তারা চাকচিক্য দিয়ে নিজেদেরদৈন্যতাকে ঢাকতে চেষ্টা করেছে আর কিছু মানুষকে দুর্নীতিগ্রস্ত করেছে। চাকচিক্য, জৌলুশ, ও ভোগবিলাসী জীবন সামনে নিয়ে এসে তারা মানুষকে আকর্ষণ করল এবং ক্ষমতায় টিকে থাকল। এমন রাজনীতিই তারা করে গেছে। কিন্তু সত্যিকার রাজনীতির মধ্যে জনগণকে সেবা করার মনোভাব থাকতে হবে।
নেতা-কর্মী ও দেশের সবার কাছে একটাই চাওয়া - তারা যেন ভোগের নয়, ত্যাগের মনোভাব নিয়ে রাজনীতি করে, যেখানে মানুষের জন্য কিছু করা যায়। এটাই রাজনীতিকদের আদর্শ হওয়া সময়ের দাবী।
চলমান রাজনীতিকে এসবের প্রভাবমুক্ত রাখতে সাধারণ নেতা-কর্মীদের জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই চলতে হবে। কাজেই সবার রাজনীতি হতে হবে জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ ও কর্তৃত্ববোধ। মানুষের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ থাকতে হবে। জনগণের ভালবাসা নিয়ে, জনগণের জন্য কাজ করে, তাদের কী দিতে পারলাম-এই চিন্তা মাথায় নিয়েই রাজনীতি করতে হবে। কী পেলাম আর কী পেলাম না, সেটা বড় কথা নয়।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা। বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সংগ্রাম করতে গিয়ে অমরত্ব পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্যাগের রাজনীতি কত প্রকার ও কি কি সেটা ভাল করেই জানতেন তিনি। কিন্তু আজ সমস্যা হচ্ছে তার দলের অনেক নেতা-কর্মী ও সুবিধাভোগী বিভিন্ন লোকদের নিয়ে। এদেশের স্বাধীকার ও স্বাধীনতার আন্দোলন থেকে শুরু করে আজও আওয়ামী লীগকে বাঁচিয়ে রেখেছে সারা দেশের বিভিন্ন স্তরের ত্যাগী নেতা-কর্মী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত বাঙালি সমাজ। কিন্তু নিজেদের ভোগ-বিলাসের জন্য এবং ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ আদায়ে তৎপর একটি চক্র আজো যেভাবে আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিভিন্ন স্তরে ঘাপটি মেরে বসে আছে তা সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলছে। ত্যাগী রাজনীতিবিদ বা নেতা-কর্মী হিসাবে গড়ে উঠার জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বান-অনুরোধ কোনো কাজেই যেন আসছে না। আমলাতন্ত্র আর প্রশাসনের অনেক স্তরে অনেকভাবে যেসব ভোগী চাটুকার ও ধড়িবাজরা নিয়ন্ত্রকের আসনে বসে আছে তাদের তো পোয়াবারো। সরকারি দল ও তার বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী সেজে যখন প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে স্বার্থ আদায়ে অন্যায় আবদারে লিপ্ত হয় তখন আমলাদেরই বেশি সুবিধা। জনগণের জন্য কোন কাজ তখন আর করার দরকার হয় না। জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সাথে তখন আমলাদের গড়ে উঠে ভাগবাটোয়ারার সম্পর্ক। জনস্বার্থ তখন হয়ে উঠে গৌণ। ভোগ-বিলাসের জন্য অর্থ কামাই হয়ে উঠেছে মুখ্য কাজ। দেশের সর্বত্রই এখন এ পরিস্থিতির কবলে পড়ে ধুঁকছে । এই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্যাগের রাজনীতি সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সরকারের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারকদের আরো বেশি সতর্ক ও আন্তরিক হওয়ার সময় বয়ে যাচ্ছে। দেশ এখন ভোগ-বিলাস নির্ভর রাজনীতির অবসান চায়। সামরিক ডিক্টেটররা এখন দেশের ক্ষমতার মালিক নয়, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি সরকারের হাতেই দেশের নিয়ন্ত্রণভার অর্পিত আছে। আর স্মরণেও রাখা দরকার আমাদের দেশটাও ত্যাগী রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, ছাত্র-শিক্ষক-সৈনিক-কৃষক-শ্রমিক তথা জীবনকে উৎসর্গকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কর্মের ফসল। ভোগের রাজনীতি শুধুমাত্র ৭১-এর রাজাকার-আলবদর-শান্তি কমিটির দোসররা ও তাদের উত্তরসূরীরাই করতে পারে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি ভিক্ষা করে নিয়ে আসি আর চ্যাটার দলেরা সব খেয়ে ফেলে।’ এ চ্যাটার দলকে, এই ভোগের রাজনীতির ধারক-বাহকদেরকে বাংলার মেহনতী তথা সংগ্রামী জনতা আর দেখতে চায় না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন