বুধবার, ২৪ জুন, ২০১৫

শহীদ মৃত্যুবার্ষিকী শাহাদতবার্ষিকী রূহের মাগফেরাত!!!!

শহীদ মৃত্যুবার্ষিকী শাহাদতবার্ষিকী
রূহের মাগফেরাত!!!!

এই শব্দগুলোর ব্যবহার আমাদের সমাজে অহরহ হচ্ছে। ধর্মব্যবসায়ী, ধর্মবেত্তারাও এর সত্যটাও তুলে ধরছেন না। এমনকি যারা ইসলামী চিন্তাবিদ তারাও মুখে কলুপ এঁটে বসে আছেন। মসজিদের ইমাম সাহেবরাও জুম্মার নামাজের খোতবার আগে বক্তৃতায় এ সবের ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন আছে চিন্তা করছেন না যেহেতু তারা ঘোলা পানিতে মাছ ধরায় ব্যস্ত সুযোগটা নিচ্ছে ধর্মের নামে যারা রাজনীতি করছেন তারা। উপর মহলের নেতাদের খুশি করার জন্য করে যাচ্ছেন মিথ্যাচার। তাহলে আমাদের কুরআনিক মুসলিম হওয়ার সকল পথ কি রুদ্ধ হয়ে আসছে? শান্তিময় দেশ আমরা দেখতে পাবো না?

সংলাপ ॥ ৩০ মে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। বিএনপি মহাআড়ম্বরে পালন করলেন দিবসটি। মহাআড়ম্বরে বলছি এই কারণে যে, জিয়া’র ‘মৃত্যুবার্ষিকী’ নামক সত্যকে বিভিন্ন বিশেষণে বিশেষিত করে এইরকম অতিরঞ্জিত উৎসাহ উদ্দীপক যজ্ঞকীর্তির প্রকাশ জাতির কাছে করার কি প্রয়োজন ছিল?
দেশের সমগ্র মিডিয়া ও স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে শহীদ, মৃত্যুবার্ষিকী, শাহাদাতবার্ষিকী, রুহের-মাগফেরাত, আত্মার মাগফেরাত ইত্যাদি শব্দযোগে তার জীবনী ও কর্মকান্ড প্রকাশ ও প্রচার করা হয়। এর সঙ্গে প্রচার করা হয় এবং দেখানো হয় তার বিধবা পত্নী খালেদা জিয়ার মাধ্যমে খাবার প্যাকেট বিতরণ। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল ও আছে ফাতেহা পাঠ, কুরআনখানি, তবারক বিতরণ এবং তার রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত (!) কোথাওবা তার বিদেহী রূহের মাগফেরাত চেয়ে দেশের মসজিদ, মন্দির ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ আরাধনার ব্যবস্থা। কিন্তু প্রশ্ন হল - যিনি শহীদ (?) তার আবার রুহের মাগফেরাত কামনা করা কেন?? আবার রূহের কি মাগফেরাত হয়? শহীদ মানে তো সোজা বেহেশত, নিষ্পাপ, নিষ্কলুষ জীবিত। মহান আল্লাহ্‌ পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে শহীদদের তরে এই বিশেষ পুরস্কার প্রদানের ওয়াদা করেছেন। তাহলে কি জামাতি ইসলামের প্রচারণায়  বিএনপি শহীদ ও নিহত উভয় শব্দকে এক করে দেখছেন তাদের মনগড়া ঘোষণায়!! নাকি রাজনীতির নামে তাদের রচিত ইসলামের নতুন কোনো ব্যাখ্যায় বিভ্রান্ত করতে চাইছেন জাতিকে!! এ থেকে দেশবাসী কি ধরে নিতে পারে না, এজিদী-ওহাবী-মওদুদপন্থী ইসলামি শাসনের চাইতেও বিকৃত ইসলামি ব্যবস্থা এদেশে কায়েমের ইঙ্গিত দিচ্ছিল নিকট অতীত।
আজ থেকে প্রায় পনের বৎসর পূর্বে বিএনপি দেশের জনগণের আবেগকে মিথ্যাচারের মাধ্যমে নির্বাচনী হাতিয়ার করেছিল নির্বাচনে জেতার জন্য। কিন্তু আজ জামাত নামক তথাকথিত ইসলামপন্থী দল কি করছে? এরা তো ধর্মের নামে সন্ত্রাসকে লালন-পালন করছে এবং পাকিস্তানী শকুনদের এক নম্বর চামচাগিরি করে যাচ্ছে। এখন বিএনপি তাদের এক নম্বর চামচায় পরিণত হয়েছে। কেন চামচামি করছে তা দেশবাসীর ভাববার সময় এসেছে।
এই বিশ্বে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জন. এফ. কেনেডি থেকে শুরু করে বহু রাষ্ট্রনায়ক এ যাবৎ আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে বাংলাদেশে জিয়াউর রহমানই একমাত্র রাষ্ট্রপতি যাকে নিহত নয়, বরং শহীদ বলে দেদারসে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশে এর চাইতে ইসলামের নগ্ন বিকৃতি আর কি হতে পারে!! এমতাবস্তায় ইসলামের অপব্যাখ্যাকারী কায়েমী স্বার্থবাদী এই দলকে জনগণ ও  ইসলামি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সময় এসেছে। ইসলামে বর্ণিত-পবিত্র ধর্মযুদ্ধে কিংবা দেশ মাতৃকার সম্ভ্রম ও স্বাধীনতা রক্ষার তরে  জীবনদানকারী শহীদের পবিত্র রক্তও আজ টগবগিয়ে ফুঁসে উঠছে এর প্রতিবাদ জানাতে।
১৬ কোটি বাঙালি আজ নিশ্চুপ কেন? তারা কি বোঝে না বছরে বছরে দেশের সমগ্র স্কুল কলেজের বই পুস্তকে কিভাবে ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। বিচিত্র এ দেশ এবং এদেশের তথাকথিত শিক্ষিত ও সুশীল সমাজ।
চারিদিকে তাকিয়ে দেখুন, জামাতপন্থী ইসলামি দলগুলো সমাজ ব্যবস্থায় চিড় ধরাবার জন্য অতি সূক্ষ্মভাবে আজ ঘরে ঘরে কুরআন, হাদীসের বিকৃত ব্যাখ্যা পৌঁছে দিচ্ছে। ছোট ছোট চটি হাদিস কিংবা তালিম ও ধর্ম সভার নামে একশ্রেণীর বেতনভোগী মহিলাদের দ্বারা মা, বোনদেরকে এমনকি স্কুল-কলেজে গোঁড়ামিতে ভরা কুসংস্কারপূর্ণ ইসলামি রীতি, নীতি শিক্ষা দেয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তাইতো আজকাল প্রায়ই দেখা যায় - গ্রীষ্মের তপ্ত রোদের গরমে বসে বাসে করে যাচ্ছে এমন অনেক কোমলমতি স্কুল-কলেজ পড়-য়া মেয়ে যাদের হাত-পাগুলো গরমকালে কালো রংয়ের মোজায় আবৃত এবং পরনে এমন কালো পোশাক যা থেকে শুধু চোখ দুটো দেখা যায়।
সচেতন পাঠকগণকে বলছি সকাল বেলা একটু ঘুরে বেড়িয়ে আসুন না, ঢাকার অভিজাত গুলশানে অবস্থিত ‘ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও কলেজ’ থেকে। দেখবেন কিরূপ কিম্ভুতকিমাকার পোশাকে শিক্ষিকাদের সামনে আপনার সন্তানেরা কি শিখছে আর কিরূপেই বা তারা শিক্ষিকাগণকে চিনে রাখছে। প্রথমেই যদি না হল দর্শনদারি কিভাবে হবে গুণবিচারি!
এমনিভাবে চির উন্নত ও শ্বাশত সদা বর্তমান মোহাম্মদী ইসলামকে তারা আজ অন্ধ ও গোঁড়ামির মোড়কে আবৃত করে চৌদ্দশ বছর ধরে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যাঁতাকলের মধ্যে ফেলে রেখেছে রাজনীতির হাতিয়ার করে। জোট সরকারের কুচক্রী মহল আর কতকাল জাতিকে এভাবে প্রতারণা করে যাবে, আর কতকাল তথাকথিত মাদ্রাসাপন্থী প্রাচীন গোঁড়ামি ও অন্ধ শিক্ষাব্যবস্থা কায়েমের মাধ্যমে জামাত ও ইসলামের নামাবলী গায়ে জড়ানো ধর্মব্যবসায়ী ও ধর্মবেত্তাদের এই সবুজ সোনালী দেশকে পশ্চাদপথে অন্ধকারে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।

সময় অতি নিকটবর্তী। বিশ্বাসঘাতক বিকৃত ইসলামপন্থীদের রুখে দিতে প্রয়োজনে আরেকটি ৭১’ এর জন্ম  দেয়ার জন্য ঘরে ঘরে প্রস্তুতি নেয়ার সময় এসেছে। আরেকটি কারবালায় নিজেদেরকে উৎসর্গ করার জন্য জাতিকে প্রস্তুত থাকতে হবে। তাতে করে আপনার পরিবার বাঁচবে, বাঁচবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও দেশ। প্রতিষ্ঠিত হবে নবী মুহাম্মদ (সঃ) প্রচারিত ইসলামি মূল্যবোধ নিয়ে বাংলার ইসলাম। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন