বৃহস্পতিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৫

মায়েদেরকে এগিয়ে আসতে হবে সংস্কার ও সংকীর্ণতার বাঁধ ভেঙ্গে



মায়েদেরকে এগিয়ে আসতে হবে সংস্কার ও সংকীর্ণতার বাঁধ ভেঙ্গে

·        বিশ্বাসী নর-নারী একে অপরের বন্ধু। এরা সৎকর্মের নির্দেশ দেয় ও অসৎকর্মে নিষেধ করে। (৯:৭১)
·        তুমি মিথ্যা আরোপকারীদের আনুগত্য করিও না। তুমি অনুসরণ কোরো না তাকে যে কথায় কথায় শপথ করে, যে পিছনে নিন্দা করে, যে একের কথা অপরের কাছে লাগায়, যে ভালো কাজে বাধা দেয়, যে অত্যাচারী, পাপী, বদমেজাজী ও অজ্ঞাতকুলশীল। সে ধনসম্পদে ও সন্তান-সন্ততিতে ধনী বলেই তার অনুসরণ করো না। (৬৮:৯-১৪) - আল কুরআন।
শাহ্‌ নাসরিন ॥ ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি নারীদের গায়ে হাত দেয়া গুরুতর অপরাধ। হাজার অপরাধী হলেও নারীদের গায়ে হাত দেয়া যেত না। এমন কি পুলিশও এ ব্যাপারে সাবধান থাকতো ভয়ে। নারীর গায়ে হাত দেয়ার অপরাধে না আবার ফেঁসে যায়। আর আজ আমরা কি দেখছি। এ দেশের নারী নির্যাতনের অবস্তুা কমবেশি সবাই অবগত। কিন্তু হত্যা-পাশবিক অত্যাচার, তাও দেশের প্রথম শ্রেণীর ব্যক্তিত্বদের! দেশে নারীরা কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারপরও এ দেশে নারী নির্যাতন কমেনি বরং দিনে দিনে বাড়ছে। নারীদের সম্মান বর্তমানে বাড়ছে না। ক্ষমতায় যাওয়ার হীন প্রচেষ্টায় স্বাধীনতার পর হতে স্ব-রচিত ইসলামকে অস্ত্র হিসেবে গ্রহণ করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ব্যবহার করছে যে সমস্ত দল, তাদের তথাকথিত  ঈমানের প্রথম শর্ত নারীদের বোরখা পরাও, হিজাব লাগাও। হিজাব দেখলে দেশবাসীর এখন দম বন্ধ হয়ে যায়। শানিৱ উবে যায় কারণ তারা বিশ্বজুড়ে জঙ্গীদলের সদস্য হচ্ছে। হিজাবওয়ালাদের সাথে কথা বলতে বাংলার মা-বোনদের এখন অস্বস্তি লাগে এবং তারা সবসময় ভীত থাকে।
নারীদের বোরখা পরানো। এই নারী জাতিকে বোরখার মধ্যে আটকে রাখার এবং তাদের দিয়ে জঙ্গী হামলার ষড়যন্ত্র কার্যক্রমের পিছনে এখনো লেগে আছে ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদলের মহিলা কর্মীরা। তারা এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্কুল-কলেজে যেখানেই মহিলাদের সমাবেশ ঘটে, সেখানেই বোরখা পরে ঢুকে পড়ে দোয়া খায়ের,  তসবীহ গণনা আর মোনাজাতের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চায় তারা ধর্মের পায়রবী করছে। যার প্রতি অশিক্ষিত মহিলারা অত্যন্ত দুর্বল।
তারা তাদের রাজনৈতিক দলের নাম মুখে নেয় না। সুকৌশলে তাদের মনগড়া ইসলামের নামে করণীয় বিভিন্ন কথা বলে ঢুকে পড়ছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। যুদ্ধাপরাধী দলের কিছু অশিক্ষিত পুরুষ চামচা হাটে-ঘাটে ওয়াজের মাধ্যমে এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এরাই বিজ্ঞানের আবিষ্কারের বিরুদ্ধে যুগে যুগে অবস্তুান নিয়েছে বিভিন্ন সময়ে। আবার বিধর্মীদের আবিষ্কারের বাহনে সওয়ার হয়ে হজ্ব করছে, দুনিয়া ভোগ করছে, টাকা বানাচ্ছে, দুনিয়ায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সারা বিশ্বে তথাকথিত ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছড়াচ্ছে। বিশ্বে ইসলামকে একটা সন্ত্রাসী ধর্ম রূপে পরিচিত করার পিছনে রাজনৈতিক ইসলামপন্তুী ধর্মান্ধদের এবং বিশ্বব্যাপী তাদের দোসরদের অবদান কতটা তা বিভিন্ন তত্ত্ব এবং তথ্য থেকে বেরিয়ে আসছে। তার সঙ্গে আছে পশ্চিমা আধিপত্যবাদী শক্তি আর তার দোসররা বিশেষ করে সৌদী বাদশাহী যারা মুহম্মদী ইসলামকে ভয় পায়।
বর্তমানে তাই সারা বিশ্বে মুসলমানদের চরম দুর্দশা। ’৭১-এ মসজিদে মসজিদে হাত তুলে এরাই মোনাজাত করেছিলো সোয়ালাখ করে খতম দিয়েছিলো আবার মা-বোনদের ইজ্জত নষ্ট করেছিলো। কিন্তু আল্লাহ তাদের কথা শোনেননি। এখনো শুনছেন না। তারপরও তাদের বোধোদয় হয়নি। তারা জেনেশুনে সত্য গোপন করছে ক্ষমতা, শোষণ ও শাসনের জন্য। ধর্মান্ধ ও ধর্মজীবী ক্ষমতালোভীদের সমর্থকদের মধ্যে ধর্মভীরু অনেকেই ভালো মানুষ আছেন, তারা বুঝতে পারছেন কিন্তু বলতে পারছেন না নেতাদের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সত্য কথা। বর্তমান যুগের ইয়াজিদরা এবং তাদের সঙ্গী রাজনৈতিক ইসলামপন্থীরা যতই নামাজ পড়ুক, রোজা রাখুক, দাঁড়ি রাখুক আর মহিলাদের বোরখা-হিজাব পরাক তাদেরকে তো সমর্থন করতে পারে না বাংলার শানিৱপ্রিয় মায়েরা যারা মনেপ্রাণে কুরআনিক মুসলিম। আল্লাহর ওলী, আল্লাহওয়ালা, দরবেশ এক কথায় সাধক শ্রেণীর রাজত্ব কোনো ভৌগলিক সীমায় সীমাবদ্ধ নয়। তাঁদের রাজত্ব বিশ্বজুড়ে। ধর্মান্ধ, ধর্মব্যবসায়ী আর রাজনৈতিক ইসলামপন্তুী অন্ধরা তাদের জানে না, চেনে না।  এমনকি খবরও রাখে না, ধর্মান্ধদের নিজস্ব কোনো আধ্যাত্মিক ক্ষমতা নেই, চর্চা এবং চর্যা করে না। তাদের হাতিয়ার অপব্যাখ্যা ও ফতোয়া, এবং গোপনে অস্ত্র ব্যবহার যা দ্বারা ধর্মভীরু জনগণকে সহজে বিভ্রান্ত করা যায়, দুর্বল করা যায় সর্বোপরি দেশকে অশান্ত রাখা যায়। তারা পার্থিব কালো ধন-সম্পদের পাহাড় গড়ে সারা বিশ্বময় সম্পদের নেটওয়ার্ক তৈরি করে ফেলেছে সন্ত্রাসী তৈরি করার জন্য এবং তাদের মনগড়া ইসলাম কায়েম শুধুমাত্র দেশের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। কিন্তু আজও বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রে সফল হতে পারেনি। পারবেও না কোনোদিন! শুধুমাত্র বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা ও রক্তপাত ঘটানো ছাড়া।
ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার যুগে সারা বিশ্ব ছোট হয়ে আসছে। ধর্মের সত্যটা জানা মানুষের নাগালের মধ্যে চলে আসছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুক্তচিন্তার মানুষের ধর্মীয় গবেষণা আলোর পথ দেখাতে দিনকে দিন তীব্রতর হয়ে উঠছে। পিপাসিত মানুষ তা চর্চা ও চর্যা করছে। আর ধর্মান্ধরা প্রচার করছে ধর্মের নামে মিথ্যাচার। আজকাল বেশির ভাগ টিভি চ্যানেলগুলো খুললেই দেখা যায়, শোনা যায় তাদের মিথ্যাচারের কথা, সুর পাল্টানো কথা। বুঝে ফেলেছে এ দেশের জনগণ। জনগণ আর তাদেরকে গ্রহণ করছে না। বস্তাপঁচা কথা দিয়ে আর জনগণকে ভুলানো যাচ্ছে না।
সামাজিক মূল্যবোধগুলো সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। বাসে উঠলেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়। বর্তমান প্রজন্মের কাছেও মহিলাদের সম্মান নেই। মায়ের জাতকে যারা সম্মান দেখায় না বা সম্মান দেখাতে শেখায় না তারা কোন্‌ পন্থী! এতটুকু প্রতিবাদ নেই। সার্বিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার কারণে মায়েরা এখন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ মুখর। সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্মের লেবাসধারীদের কালো হাত মুচড়ে ভেঙ্গে দিতে বাংলার মা-বোনদের একত্রিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার সময় এসেছে। গুমরে গুমরে কাঁদার সময় নেই। নারী দ্বারা নারী নির্যাতিত হচ্ছে। কে কাকে বলবে সে কথা! বাংলার বুকে নারীরা শান্তির সাগরে অবগাহন করতে চায়। কিন্তু কেন তা হচ্ছে না? জবাব চায় বাংলার মা-বোনেরা। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন