মানবাধিকার!
বর্ষা
॥ আভিধানিক অর্থে মানবাধিকার হচ্ছে মানব + অধিকার, অর্থাৎ, মানুষের অধিকার সংক্রান্ত।
বিশেষ করে বিভিন্ন বিদেশী সংস্থার দাসত্ব করার অঙ্গীকারে সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে মানবাধিকারের
নামে এখন এদেশে সংগঠনেরও অভাব নেই। কিন্তু এসব সংগঠন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কতটুকু
অবদান রাখছে, নাকি মানবাধিকারের নামে নিজের ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক কোন দলের স্বার্থ
উদ্ধারে বেশি জড়িত হয়ে পড়েছে তা খতিয়ে দেখা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব এবং জরুরি হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি ‘অধিকার' নামের একটি সংগঠন এদেশে মানবাধিকারের পক্ষে অস্বচ্ছ প্রতিচ্ছবি তুলে
ধরে দেশে অসুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি করার যে প্রয়াস চালিয়েছে তাতে দেশের ধর্মীয় চিন্তাবিদরা
হতবাক এবং দেশবাসী মানবাধিকার নিয়ে বিভ্রান্ত। যারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে দেশের নারী
সমাজের অধিকারকে প্রত্যাখ্যান করে ধর্মের নামে এদেশকে আদিম-বর্বর সমাজে ফিরিয়ে নিতে
চাইছে সেই কথিত হেফাজতে ইসলামকে সমর্থন দিয়ে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য সমাজে বিশৃঙ্খলা
সৃষ্টির পায়তারা করছে বিভিন্ন সংগঠন। যেখানে শান্তির ধর্ম ইসলামে নারী-পুরুষের সমান
অধিকার নিশ্চিত করেছে সেখানে এই কথিত হেফাজতীরা নারী সমাজকে সরাসরি অধিকার-বঞ্চিত করতে
চাইছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদশের সংবিধানের ১১ নং অনুচ্ছেদে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার
সম্পর্কে বলা হয়েছে-প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকারও স্বাধীনতা
নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং
প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত
হইবে। অপরদিকে, মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সংবিধানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে
নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন (২৮ নং অনুচ্ছেদ, ধারা নং ২)। গত ৫ই মে ঢাকার
মতিঝিলে পবিত্র ইসলাম ধর্মের নামে হেফাজতীরা যে তাগুত প্রদর্শন করেছে এবং সুযোগ পেলে
আরও যে প্রদর্শন করবে তাতে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়ার যে আশংকা
সৃষ্টি হবে সে ব্যাপারে মানবাধিকারের নামের সংগঠনগুলোর কর্তাব্যক্তিরা একটি কথাও এ
পর্যন্ত বললেন না। আর এ থেকেই বোঝা যায়, এই সংগঠনগুলো মানবাধিকারের নামে এদেশে ধর্মান্ধতা
প্রতিষ্ঠার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। মানুষ এবং অধিকার-এ দুটিই বাংলা ভাষার অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ
নিজস্ব শব্দ। মান সম্পর্কে যার হুঁশ আছে, সেই মানুষ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে।
বাংলা প্রবাদে আছে ‘তরুলতা সহজেই তরুলতা, পশুপক্ষী সহজেই পশুপক্ষী, তবে প্রাণপণ প্রচেষ্টায়
তবে মানুষ'। একবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪২ বছর পরেও যখন ৭১-এর মানবতাবিরোধী
অপরাধীদের বিচার কার্য সম্পন্ন হয়নি, নারী নির্যাতকদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো
যায়নি, যে দেশে কোটি কোটি মানুষ এখনো কঠিন দারিদ্রের মধ্যে দিনাতিপাত করে, বস্তিতে
মানবেতর জীবনযাপন করে, ন্যায্যমূল্য পায় না দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করা গার্মেন্টস
শ্রমিকরা, তখন মানবাধিকার নিয়ে কথা বলতে দেখা যায় না মানবাধিকারের নামের সংগঠনগুলোর
। নিজেদের ব্যক্তিগত ভোগবিলাস, আর্থিক প্রতিপত্তি বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থেকে
এদেশে মানবাধিকারের কথা বলা ভুতের মুখে রামনাম ছাড়া আর কি হতে পারে? এই সব কাজে যারা
লিপ্ত তারা সমাজের প্রকৃত সত্যটি ঢেকে দিয়ে মিথ্যা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকাই শুধু রেখে যাচ্ছেন।
দেশ ও জাতির স্বার্থে যত তাড়াতাড়ি তারা এই মিথ্যাচার থেকে নিজেদেরকে নিবৃত করবেন ততই
মঙ্গল। মানবতার মহান ব্রতে নিয়োজিত হয়ে যারা সকল প্রকার ভোগবিলাসকে জলাঞ্জলি দিয়ে,
সর্বাঙ্গীন ত্যাগের পথে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পেরেছেন বা পারছেন তাদের মুখেই কেবল মানবাধিকারের
কথা শোভা পায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন