মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০১৩

বিশ্ব মা দিবসে আহবান - আসুন আমরা ‘মা’ শব্দটি ঘরে ঘরে চালু করি


বিশ্ব মা দিবসে আহবান -
আসুন আমরা মাশব্দটি ঘরে ঘরে চালু করি

 
ফাতেমা আফরোজ ॥ মাকে সম্মান দেখানোর আনুষ্ঠানিক ঘটনা ঘটে সর্বপ্রথম প্রাচীনকালে গ্রীস দেশে। দেবতা জননী হিসাবে কথিত সম্রাজ্ঞী করোনাসের স্ত্রী রিয়ার সম্মানে বসন্তকালীন উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে মাকে জানানো হয়েছিলো অভিনন্দন। ১৬৮০ খৃষ্টাব্দে ইংল্যান্ডে পালিত হয়েছে মায়ের রোববার

ওই সময় ইংল্যান্ডের দরিদ্র মানুষ ভৃত্য হিসাবে কাজ করতো ধনীদের গৃহে। মাদারিং সানডে’-তে তাদের ছুটি থাকতো। তাদের উৎসাহ দেয়া হতো বাড়ি যেতে। মায়ের সঙ্গে সময় কাটাতে। ওরা নিয়ে যেত মায়ের জন্য কেক, যে কেককে বলা হতো মাদারিং কেক। কাজেই ইংল্যান্ডে পুরো ব্যাপারটিই হয়ে উঠতো উৎসবের মতো।

ধীরে ধীরে পুরো আনুষ্ঠানিকতা সমগ্র ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে মাদারিং সানডের নামকরণ করা হয় মাদার চার্চ। মানুষ চার্চের মতোই সম্মান দেখাতে শুরু করলো মাকে।

যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৭২ সালে মা দিবস পালনের কথা ওঠে। লেখক জুলিয়া ওয়ার্ড হো শান্তির জন্য মা দিবসের কথা লেখেন এবং প্রথমে বোস্টনে আয়োজন করেন মা দিবস উপলক্ষে সভা। পরে প্রতি বছরই তিনি তা করতেন।

১৯৭০ সালে মিস আনা জারডিস ফিলাডেলফিয়া থেকে জাতীয়ভাবে মা দিবসের প্রচার শুরু করেন। মিস জারডিস তার মায়ের ২য় মৃত্যুবার্ষিকীর দিনকে মা দিবস পালনের জন্য গির্জাকে রাজি করান। দিনটি ছিলো মে মাসের দ্বিতীয় রোববার।

মিস জারডিস এবং তার সমর্থকরা সমাজের সবাইকে আবেদন জানালেন জাতীয় মা দিবস ঘোষণার জন্য। এ আবেদনের ভিত্তিতে ১৯১১ মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস হিসাবে গৃহীত হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র পালিত হয়। প্রেসিডেন্ট ইউড্রো উইলসন ১৯১৪ সালে মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস এবং ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা দেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের সুবিধা মতো মা দিবস পালন করলেও ওই দিনটিই (মে মাসের ২য় রোববার) পেয়েছে মা দিবস হিসাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ইতালি, তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া এবং বেলজিয়াম মে মাসের ২য় রোববারেই মা দিবস পালন করে।

মা বঞ্চিত লাঞ্ছিত অবহেলিত বলেই সচেতন মানুষের চিন্তার ফলশ্রুতি হিসাবে আজ বিশ্বময় পালিত হচ্ছে মা দিবস। সচেতন মানুষের চিন্তার অনেক ফসলই আজ আনুষ্ঠানিকতার ডামাডোলে হারিয়ে যাচ্ছে। শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে প্রয়োজন প্রকৃত মূল্যবোধকে ধারণ, লালন ও পালন করা।

পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ ও সুরক্ষা স্থল হচ্ছে মায়ের কোল। পরম নির্ভরতার জায়গা এটি। পৃথিবীর সমস্ত মানুষই কোনো না কোনো মায়ের সন্তান, তারপরও প্রতিটি দেশে মায়ের জাতি পাচ্ছে না তাদের যোগ্য সম্মান। তাই মায়ের প্রতি সীমাহীন শ্রদ্ধা দেখানো এবং সন্তানের চিরন্তন অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা ভালোবাসায় অবনত হওয়া এবং সর্বোপরি স্মরণ করার জন্যই এই মা দিবস।

মা, মায়ের জাতি চরম ভাবে অবহেলিত ও লাঞ্ছিত হচ্ছে বলেই আজ প্রয়োজন পড়েছে বিশ্বমানবকে মায়ের মর্যাদা অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার, নাড়া দেয়ার। আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারে মাতৃভক্তির একটা অভ্যাস করে ফেলা দরকার। অভ্যাসই একসময় স্বভাবে পরিণত হয়ে সুফল আনবে।

যেখান থেকেই যাত্রা শুরু হোক মা শব্দটি সার্বজনীন। নিন্দুকেরা যাই বলুক, উন্নত বিশ্বের সংস্কৃতি আর সামপ্রদায়িকতার চিন্তা-ভাবনায় যেভাবেই দেখা হোক, মা ভক্তিকে, মায়ের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা নিবেদনের এই দিনটিকে বিশ্বব্যাপী আন্দোলনে রূপ দেয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে আমাদের দেশের ঘরে ঘরে এর ঢেউ ছড়িয়ে দেয়া অতীব জরুরি।

মা ভুল করতে পারেন না। এই মানসিকতাই থাকা উচিত প্রতিটি সন্তানের। তার মধ্যেই নিহিত আছে  সন্তানের মঙ্গল, পরিত্রাণ। মহামানবদের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে তারা প্রত্যেকেই ছিলেন মাতৃভক্ত।

মা দিবস উপলক্ষে আমাদের আন্দোলন একটাই। সারা দেশে মা ভক্তির-শ্রদ্ধার একটা আন্দোলন একটা সংস্কৃতি গড়ে তোলা। প্রথমে তা শুরু করতে হবে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমেই। এই উদ্দেশ্যে বাবা-মায়ের জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী এই তারিখগুলোকে স্মরণে রেখে শুভেচ্ছা বিনিময়ের রীতি গড়ে তোলা যেতে পারে।

বিদেশী সংস্কৃতি ছেড়ে খাঁটি বাংলা শব্দ মাকথাটিও এ সমাজে পুনঃচালু করার দাবি রাখে। আজ বস্তিবাসী যাদের মধ্যে মা শব্দটি চালু ছিলো, তারাও নিজেদেরকে ধার করা মানসিকতায় মাছেড়ে আম্মাধরেছে। আসুন আমরা মা শব্দটি ঘরে ঘরে চালু করি। হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে মা উচ্চারণ করি।

বিশ্ব মাতৃ দিবস মানে শুধু মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি ও অধিকারের প্রশ্ন নয়। পাশাপাশি মাকেও তার দায়িত্ব, কর্তব্য এবং ভবিষ্যৎ মা তৈরিতে সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছি। জাতিকে একজন ত্যাগী, মানবতাবাদী সুসন্তান দান করাও একজন মায়ের প্রধান দায়িত্ব।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন