মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০১৩

সংবিধানে রাষ্ট্রের ধর্ম ইসলাম অথচ ধর্মের নামে সন্ত্রাস দুর্নীতি মিথ্যাচার চলছেই !


সংবিধানে রাষ্ট্রের ধর্ম ইসলাম

অথচ ধর্মের নামে সন্ত্রাস দুর্নীতি মিথ্যাচার চলছেই !

 

শাহ্‌ আব্দুল বাতেন ॥ বিশ্বের কোন ভূ-খন্ড বা রাষ্ট্র নামক ভৌগলিক সীমারেখার নামে নিজস্ব কোন ধর্ম থাকতে হবে, ধর্ম সচেতন গুণীজনের কাছে এটা শুধু বিস্ময়কর নয়, হাস্যকরও বটে। অথচ এধরনের অদ্ভুত বিষয় ভিত্তিক অবস্থার মধ্যে আমাদের রাষ্ট্র ও আমরা দিব্যি অবস্থান করছি। ধর্ম কেবল মানুষের জন্য। আর সকল ধর্মাবলম্বী মানুষের জন্য  রাষ্ট্র। রাষ্ট্র এমন কোন প্রাণ-প্রজাতি নয় যে, তার আহার-বিহার ধর্মকর্ম, চাকুরী, ব্যবসা-বাণিজ্য, ভ্রমন বিলাস ইত্যাদির প্রয়োজন বা বাধ্যবাধকতা থাকতে পারে। এই সহজ সরল বিষয়টি জানে না, বুঝে না বা বুঝতে পারে না, এমন একজন মানুষও এদেশে

খুঁজে পাওয়া যাবে কি? তারপরও ক্ষমতা লোভীদের ক্ষমতার জন্য ধর্মের কৌশলগত ব্যবহার, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রবাসীকে দুঃখজনকভাবে ধর্মের নামে আবদ্ধ করে রেখেছে। তাও আবার ইসলাম ধর্মের নামে। বলাবাহুল্য যে, অবশ্যই 'ইসলাম' শান্তির ধর্ম। মানবতার ধর্ম।

নীতি নৈতিকতার ধর্ম। 'সত্য'কে ধারন, লালন ও পালনের ধর্ম। অর্থবিত্ত ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ভোগী-লোভী, আত্ম-প্রবঞ্চক, ঘুমন্ত চিত্তের শ্রেণী ব্যতিরেখে কোন শান্তিকামী-শান্তিপ্রিয়, আত্মসচেতন, সৎসাহসী, মানবতাবাদী, দেশ প্রেমিক মানুষ ইসলামের এই বিশ্বজনীনতাকে অস্বীকার করতে পারে না। কারণ এসবের মধ্যেই প্রকৃত অর্থে ইসলাম বা শান্তি নিহিত রয়েছে। যা কিনা মানুষ ব্যতিত কোন সীমারেখা বেষ্টিত রাষ্ট্র বা ভূখন্ড কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। কেননা, রাষ্ট্র বা ভূখন্ড প্রাণশীল নয়। তারপরও সীমারেখা নামক একটি রাষ্ট্রের কপালে যারা মনগড়া 'ইসলাম' এর নামফলক লাগিয়ে সস্তা দামে রাষ্ট্রের ধর্মজীবী ও ধর্মান্ধদের নিয়ে ধর্মভীরু গণমানুষের সন্তুষ্টি অর্জনের অপচেষ্টা করেছে এবং পরবর্তীতেও যারা নানা বাহানায় করে আসছে, তারা আর যা-ই হোক না কেন শান্তির ধর্ম ইসলামের ধারক-বাহক হতে পারে না। এবং মোহাম্মদী ইসলাম তাদের দ্বারা নিরাপদও নয়। 'ইসলাম' অনুসারী তারাই যারা শান্তির মূল উৎস সাম্য ও মৈত্রীময় পরম 'সত্য'কে ধারন, লালন ও পালন করতে জানে। তারাই দেশ প্রেমিক ও পরার্থে পরমেশ্বরের বন্ধু।

এ পর্যায়ে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগতেই পারে যে, বহু ধর্মাবলম্বী মানুষের সহাবস্থান এই স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নামকরনের প্রবর্তক বা কারিগর কে? উত্তরে উল্লেখ্য যে, ১৯৮০’র দশকের কথা। সেনা ছাউনী থেকে বেরিয়ে আসা দেশের স্বঘোষিত স্বৈরশাসকদের ক্ষমতা দখল। জাতির ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। এই সামরিক স্বৈরশাসকদের অজানা-অপরিচিত নেতৃত্বের ভয়ভীতি ও নানা অপকৌশল মিশ্রিত তথাকথিত জনপ্রিয়তা যখন শূন্যের কোঠায়, তখনও ক্ষমতায় টিকে থাকার লালসায় তাদের সর্বশেষ ধুর্ততার হাতিয়ার 'ইসলাম'কে রাষ্ট্রধর্ম করার ঘোষণা দিয়ে জনমত সৃষ্টির অপচেষ্টা। তাদের ধারণা ছিল, দেশের শতকরা প্রায় নব্বইভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী বিধায় ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সহজ পন্থায় ধর্মজীবী ও ধর্মান্ধদের নিয়ে জনমত সৃষ্টির ক্ষেত্রে দেশবাসীর  আনুকূল্য পাবেন। কিন্তু সত্যের সাথে প্রহসন ও সময়ের কঠিন বিচারে শেষ রক্ষা আর হয়নি। ক্ষমতা ছেড়ে বিদায় তাদের নিতেই হল। অসাম্প্রদায়িক দেশের সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করে গেল বিকৃত চিন্তার ফসল রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। এখন প্রশ্ন হল, ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম প্রবর্তনকারী অগণতান্ত্রিক ঐ?স্বৈরশাসকদের শাসনামল কি ইসলাম পরিপন্থী সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মিথ্যাচার ও নৈরাজ্যমুক্ত ছিল? নিঃসন্দেহে বলতে হবে, ছিল না। তার পরবর্তীতে আরও বিস্ময়কর বিষয় হল যে, আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক সব মিলিয়ে পাঁচ সরকারের শাসনামল জুড়ে কি এই ইসলামী রাষ্ট্রে ইসলাম তথা শান্তি বিরোধী সন্ত্রাস, দুর্নীতি, লুটপাট, মিথ্যাচার, সুদ-ঘুষ, জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর, মানুষ হত্যা, মানুষ গুম ইত্যাদি নির্মূল করা তো দূরের কথা ন্যূনতম হারে নিয়ন্ত্রন করাও কি সম্ভব হয়েছে বা হচ্ছে? হয়নি! বরং আনুপাতিক হারে বেড়েই চলেছে। তাহলে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকারী ও তা অনুসরণকারীরা কেমন ইসলাম প্রেমিক? বর্তমান মহাজোট সরকার, বিগত নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন সংখ্যা অর্জন করেও '৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাবার কথা বলেও তা করতে পারেনি। বরং এই সরকারের আমলেই ইসলামের নামে ধর্মান্ধ, ধর্ম ব্যবসায়ী, ধর্মজীবী ও রাজনৈতিক ইসলাম পন্থীদের ইসলাম ধর্ম হেফাজতকারী (!) নামক বিভিন্ন দল সৃষ্টি হয়ে 'ইসলাম ভান্ডার' পবিত্র কুরআন পোড়ানোর মহোৎসবের দৃশ্য দেখালো গোটা জাতি ও বিশ্ববাসীকে। কুরআন পোড়ানো, গাছকাটা, মানুষ হত্যা, দোকান-পাট, সরকারী-বেসরকারী সম্পদ ধ্বংস কি ইসলাম সম্মত? বর্তমান সরকারের শেষ বছরে এখনও সময় আছে যে, এসবের মূলউৎস রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাজনীতি, ধর্মান্ধতা, হরতাল, অবরোধ সংসদের মাধ্যমে আইনী পন্থায় বন্ধ করে রাষ্ট্রের কাঁধ থেকে ক্ষমতালোভী সংস্কৃতির বোঝা নামিয়ে শান্তির পথকে মসৃণ করার সুযোগ করে দিক এই সরকার, এটাই জাতির প্রত্যাশা। সময়ের ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে এবং স্মরণ করবে চিরকাল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন