শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন জরুরি

সময়ের সাফ কথা…. 

রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন জরুরি


নজরুল ইশতিয়াক ॥ আপাতদৃষ্টিতে যে কেউ মনে করতে পারেন ‘দেশে রাজনৈতিক আন্দোলনের ধরন পাল্টেছে। অতীতের জ্বালাও-পোড়াও ভাঙচুর হত্যা-ক্যু বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দল করতে চান না। চলন্ত বাসে আর কোন নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হবে না, রেল লাইন উপড়ে ফেলা হবে না। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পিটিয়ে হত্যা করা হবে না। রাজনীতিকরা জনগণকে জিম্মি করে, বাধ্য করে বিভিন্ন দাবী দাওয়ার রুগ্ন ভয়ানক পন্থা থেকে সরে এসেছেন। জনগণকে আস্থায় নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনের পক্ষপাতি’। এমনটা ভাবলে বলতে হবে এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। ভুলের পাহাড় বেয়ে উপরে উঠার মতো ঘটনা। ভুলপথে খুব উপরে উঠার বিপদও বড় হয়। মগডালে বসে সবকিছু নিজের মতো দেখা একটা ভয়াবহ রোগ বটে। বিভ্রান্তির বেড়াজালে বসে যে কেউ ভাবতেই পারেন দেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটেছে। মনে হবে বিএনপি-জামায়াত অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদেরকে শুধরে নিয়েছে। আর উগ্রপন্থিদের সুদিন নেই। কিন্তু পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ বলছে অন্য কথা।
সময় বাস্তবতা অনেক কিছু করতে বাধ্য করে বটে! সুযোগ পেলেই কালো চেহারা নিয়ে ঘাতকেরা বের হয়ে পড়ে। শুধু মোক্ষম সময়ের অপেক্ষা করে। সরল পর্যবেক্ষণে এই সত্য ধরা পড়বে সচেতন সকলের নিকট। এটা সত্য যে দেশে উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন চলছে সারাদেশে। উন্নয়নের মহাসড়কে জোর কদমে হাঁটছে সরকার। বহমাত্রিক উন্নয়নের উন্নয়ন কর্মসূচীর সুফলও দেশের মানুষ পেতে শুরু করেছে। এই সত্যকে কেউ অস্বীকার করলেই তা মিথ্যা হয়ে যাবে না। গোটা বিশ্বেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সুনাম সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বের অনন্য নেতা হিসেবে দেখা হচ্ছে তাঁকে। বিভিন্ন ফোরামে তাঁর দিক্-নির্দেশনা, পরামর্শকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। দেশে তিনি দলমত নির্বিশেষে রাজনীতিবিদ হিসেবে, গণমানুষের বন্ধু হিসেবে, জনগণের আশ্রয়স্থল হিসেবে সবার উর্দ্ধে অনন্য ব্যক্তিত্ব। কিন্তু জনগণের কাছে তিনি প্রিয়পাত্র হলেও ষড়যন্ত্রকারী মতলবি ঘাতকের কাছে তিনি সবসময় পথের কাঁটা। গুটিকয়েক ঘাতকের প্রতিদিনের কাজই হলো কখন কিভাবে কোন প্রক্রিয়ায় তাঁর এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেয়া যায়! এসব বর্ণচোরা ঘাতকেরা ভোল-বোল পাল্টে মুখোশের অন্তরালে সব সময় তৎপর। দেশ ও মানবতার শত্রুদের কাছে শেখ হাসিনা কোনদিনই বন্ধু হতে পারবেন না। এখানেই চোখ মেলে দেখতে হবে সত্যকে। তাহলেই উপলব্ধি করা যাবে কতদূর, কোন্ পথে আমাদেরকে এগুতে হবে। কোন্ ধরনের নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে। কোন্ সংস্কৃতির জাগরণ ঘটাতে হবে। জাতীয়তাবোধের জাগরণে কি কি করতে হবে। নিজেদেরকে কোথায় কতটুকু পাল্টাতে হবে। কারা বন্ধু হবে। কাদের সাথে সখ্যতা, ঐক্য স্থাপন করতে হবে। বৃহত্তর যুগপৎ ঐক্য, সংহতি, কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করতে হবে। নিজেদের ঐক্যের মধ্যে বিভেদ বিভাজন দূর করে সহনশীলতার চাষ শুরু করতে হবে। যে নেতৃত্ব সামনে এগুতে চাইছে তারমধ্যে ত্যাগ, মহানুভবতা থাকতে হবে। নিজেরা না পাল্টালে অন্যদের পাল্টানো যায় না। ঐতিহ্যবাহী আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগী সব সংগঠনই বর্তমানে নেতৃত্ব মানের খরায় ভুগছে। অনেকেই আছেন বিভ্রান্তিতে, তারা নিজেরা কখন কি বলেন-কি করেন তা নিজেরাও উপলব্ধি করেন না। রাজনৈতিক সচেতনতা তাদের মধ্যে দারুণভাবে অনুপস্থিত। তাদের চলন-বলনে-কথনে, কর্মে রুক্ষতা ও রুগ্নতা-ই সবকিছু ছাপিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে। তারা যেন ভুলেই যাচ্ছেন এদেশের সাধারণ মানুষের সাথে তাদের ঐক্যের যোগসূত্র !
কেন এদেশের মানুষ শত শত অভিযোগের পরও তাদেরকেই বন্ধু মনে করে। শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা উগ্র, ধর্মান্ধ শক্তি সমূহ সত্যমানুষের কৃতকর্মের দৃষ্টান্তের কাছে ধরাশায়ী হয়ে আছে। এসব সরল অংক আওয়ামীলীগকে বুঝতেই হবে। তবেই সত্যিকারের উন্নয়নের পথে  বাঙালির এই যাত্রা সূচিত হবে। ঘাতক শক্তি থেমে নেই। এটি শক্তির লড়াই। এটি মনুষ্যত্বের লড়াই। এ লড়াই চিরন্তন । দেশে-দেশে, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে শুধু ভিন্ন দেখা যায়। দেশপ্রেমিক প্রতিটি শক্তির মধ্যে সমন্বয়ই বলে দেবে প্রকৃতপক্ষে দেশে বাস্তবতা কোন্ পর্যায়ে রয়েছে। পর্যবেক্ষণ করলেই দেখা যাবে পথের বাঁকে বাঁকে বর্ণচোরা ঘাতক কারা, তাদের অবস্থান, তাদের নেটওয়ার্ক সব শনাক্ত করা যাবে। বাঙালি চেতনার প্রাণপুঁরুষ সাধক লালন ফকিরের এক বাণীতে আছে-
‘এত পিরিত দন্তে জীহ্বায়,
কায়দা পেলে সেও সাজা দেয়
স্বল্পেতে সব জানিতে হয় ভাবনগরে’।
সচেতন নেতৃত্ব সহজেই বুঝবে আর অজ্ঞরা চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ার মতো করে বুঝে। আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে অধিকাংশ নেতৃত্বের উপলব্ধি ও বাস্তবতাজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন জনমানুষের মনে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়। ফলে ঐতিহ্যবাহী এই দলের হাল হকিকতই প্রকাশ পায়। দেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের জন্য যেসব উদ্যোগ দরকার বাস্তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা গ্রহণ করা হচ্ছে না। কোন্ প্রক্রিয়ায়, কিভাবে এ দেশের মানুষের বিকাশ ত্বরাম্বিত হবে, বহির্বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের সাথে যোগসূত্র স্থাপিত হবে, এশিয়া তথা দক্ষিণ এশিয়ায় মানবিক সৃজনশীল ঐক্য ও শান্তি প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হওয়া যাবে তার অগ্রগতিই কাঙ্খিত উন্নয়নের যাত্রাকে নির্দেশ করে। কোথায় দাঁড়িয়ে আছে এদেশের মানুষ, কোন্ সত্য, কোন্ সক্ষমতা, কোন্ চরিত্র, কোন্ রূপ ধারণ করে আছে তা আমলে নিয়ে কাজ করলে উন্নয়নের ভিত্তি মজবুত হবে। নিকট অতীতে হলি আর্টিজেনে হামলা হয়েছে, এদেশের উন্নয়নে সহযোগী হতে এসে প্রাণ দিয়েছে বিদেশী অতিথিরা – এই ঘটনাকে সহজভাবে দেখলে চলবে না। জাপানী, ইতালী নিরীহ নাগরিককে কেন হত্যা করা হয়েছে তার কারণ অনুসন্ধান করে সেখানে কাজ করতে হবে সরকারকে। খুঁজে দেখতে হবে সমাজে নারী, শিশু, বয়স্কদের উপর নির্যাতনের মাত্রা কেন বেড়ে যাচ্ছে? শিক্ষাঙ্গনে কিসের চাষবাস হচ্ছে? বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা শেষ পর্যন্ত কোন জিনিষ তৈরী করছে? কেন ধর্মান্ধতা মোকাবেলার জন্য ধর্মান্ধ কর্মসূচী গ্রহণ করা হচ্ছে? এসব আমলে নিলেই পাওয়া যাবে কাঙ্খিত পরিবর্তনের পথরেখা। অনুসন্ধান বলছে জনগণের সামনে আরো পরিস্কারভাবে মুখোশ উন্মোচিত হয়ে পড়ে এই ভয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা খুব সতর্কতার সাথে কাজ করছে। দৃশ্যত তারা চুপচাপ। জনগণকে বিভ্রান্ত করে, অন্ধকারে রেখে প্রতারিত করার কাজ থেমে নেই। বরং তা আরো সম্প্রসারিত হয়েছে। রঙ বদলে ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাজনীতির প্রতিটি স্থানে এরা আরো সক্রিয় হয়েছে। চিন্তাশীল কোন মানুষই সরকারের উন্নয়ন জোয়ারে সন্তুষ্ট হয়ে বসে থাকতে পারেন না। যারা সমাজ বিশ্লেষক, যারা অনুসন্ধানী তারা বর্তমান সময়কে কোনভাবেই নিরাপদ ভাবতে পারেন না। খন্দকার মোশতাক একক কোন ব্যক্তি নন। একক কোন ব্যক্তি নন গোলাম আযম। এগুলো সর্বকালের ঘাতক মানুষেরই নাম চরিত্র। ৭৫-এর ১৫ আগষ্ট কেবল একটি দিন নয়, একটি দিনের ঘটনা নয়, ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলা কেবল একটি দিনের আঘাত নয়। প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত এই সত্যকে অনুধাবন করে পথ চলাকেই রাজনৈতিক সচেতনতা বলা যাবে। আর সেই পথরেখাকে বাস্তবে রূপদানের মধ্যেই কেবল রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আসবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন