শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

সময়ের সাফ কথা…. গড়ে ওঠা ভাবমূর্তি

সময়ের সাফ কথা…. 

গড়ে ওঠা ভাবমূর্তি

সংলাপ ॥ ২০১৯ সালে কে আমাদের গণতন্ত্রের নতুন দিশা হবেন তা এখনও কেউই হলফ করে কেউ বলতে পারছেন না। কারণ, বাংলাদেশের সিংহাসন দখলের মহাযুদ্ধটা এখনও বেশ দূরে। তবে, সেই যুদ্ধ জয়ের লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই দেশের শাসক ও বিরোধী শিবির যেভাবে কোমর বেঁধে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তাতে এটুকু বলা যায় এর উল্টোটা জোরদারই হবে। কিন্তু, সেই মহারণ শেষে কে জনগণতন্ত্রের আশীর্বাদে বাংলাদেশের সিংহাসন এবং পাঁচ বছর মেয়াদি শাসন সনদ প্রাপ্ত হবেন এখনও নানা মহলের অনুমান, জল্পনা-কল্পনা রাজনৈতিক সমীকরণ হিসেব-নিকেশের ধোঁয়াশায় রহস্যাবৃত, অস্পষ্ট। ২০১৯ মহারণের রণক্ষেত্র থেকে দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তাঁর গৈরিক বিজয় বৈজয়ন্তী উড়িয়ে ফিরবেন, জননেত্রী সিংহাসনে আসীন হয়ে বাংলাদেশের নতুন ইতিহাসের সূচনা করবেন তা নিয়ে রাজনীতির আখড়াগুলোয় বিবাদ-বিতর্ক যুক্তি-প্রতিযুক্তির লড়াই অবশ্য জারি হয়ে গেছে এবং তার প্রকোপে দেশের সাধারণ জনতায় কৌতূহলও ক্রমশ ঊর্ধ্বগামী।
ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ শিরোনামে সরকারের আর্থিক-সংস্কার কর্মসূচিতে সাধারণ গরিব-মধ্যবিত্তের ওপর যথেষ্ট চাপ পড়েছে। সেই সঙ্গে ডিজেল পেট্রোল রান্নার গ্যাস ওষুধপত্র সমেত নিত্যব্যবহার্য ও অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীর লাগাতার মূল্যবৃদ্ধি সেই চাপকে যে দিনের পর দিন দুর্বিষহ করে তুলেছে তাতেই বা সন্দেহ কী? ব্যবসায়ী মহলের একাংশ ও সরকার ভক্তদের দাবি আর্থিক সংস্কারের ফলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ কেবল অর্থনৈতিক দিক থেকে বলশালীই হবে না, দেশের মানুষের জীবনমানেরও প্রভূত উন্নতি হবে।
মুশকিলটা হল, বাংলাদেশ-এর এই ‘উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ’ নিয়ে দেশের সাধারণ মহল যত না উজ্জীবিত, তার চেয়ে বেশি বিরক্ত। তার কারণ, তাদের বক্তব্য ভবিষ্যতে কী হবে, না হবে তার জন্য বর্তমানকে বলি দেয়া কেন? আজ যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিন গুজরান করছেন সেই লক্ষ লক্ষ সাধারণ বাংলাদেশীর দুঃখ-কষ্ট লাঘবের জন্য কী কী করা হয়েছে? ভবিষ্যতের জন্য সরকারের ভাবনা ভালো হতেই পারে। কিন্তু বর্তমানের জন্য সরকারের দেয়া ভোট-প্রতিশ্রুতিগুলোর কতদূর কার্যকরী হল? কৃষক শ্রমিকের জন্য কী করলো সরকার? কৃষকের অবস্থা উন্নয়নে চলতি সরকার যদি উদ্যোগ নিয়েই থাকেন তাহলে চাষের সাজসরঞ্জাম, সার সস্তা হয়েছে কি? ফসলে ভালো দাম কি পাচ্ছেন কৃষকেরা? কালো টাকা উদ্ধার, দোষীদের ধরে ধরে শাস্তি দিয়ে দুর্নীতি এবং মাদক নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ গড়ারই বা কী হল? দুর্নীতির চূড়ামণিদের রমরমাও তো যেমন ছিল তেমনই আছে বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি কেনাই হোক কি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কোটি কোটি টাকা লুটই হোক – বদলালোটা কী! উল্টো তো দেখা যাচ্ছে, দেশের লুট হয়ে যাওয়া কোষাগার ভরতে জনগণের পকেট কাটার নানান ফিকিরফন্দি আঁটা হচ্ছে এবং সেইমতো আদায় চলছে। সবক্ষেত্রে নাজেহাল হচ্ছে জনতা-সাধারণ মানুষ। দেশের ব্যাঙ্ক লুটেরারা বহাল তবিয়তে বিদেশে বিলাসে মহার্ঘ জীবন কাটাচ্ছে! এরপর চলতি সরকারের প্রতি খেটে খাওয়া দেশজনতার ভাবনা কেমন হতে পারে তা আঁচ করা কি কঠিন?
দেশজনতার এই ক্ষোভ অভিযোগগুলোকে দেশের নীতি নির্ধারণের মঞ্চে উত্থাপন করতে পারেনি রাজনীতিকরা। মেধা বা বুদ্ধিদীপ্তির চেয়ে ব্যক্তিগত রেষারেষি ও রাজনৈতিক স্বার্থ-সংঘাতের তিক্ততায় ম্লান। কথাটা হয়তো মিথ্যা নয়। কিন্তু, আমাদের সমাজ-রাজনীতি-শিক্ষা আজ যখন মধ্যমেধা নিম্ন-মধ্যমেধা এমন কী মেধাহীনের জয়জয়কারে বিহ্বল তখন সংসদ সোনালি দিনের আভা বজায় রাখবে বা আনবে এমন আশা করা কি সঙ্গত? নগর পুড়লে মসজিদ-মন্দির রক্ষা পাবে কীভাবে?
বঙ্গবন্ধু পরিবার নিয়ে দেশের একাংশে আজও ব্যাপক নস্টালজিয়া এবং অন্তঃসলিলা পক্ষে-বিপক্ষে আবেগ বহমান। বাংলাদেশের বর্তমান পেক্ষাপটে শেখ হাসিনা ভিন্ন আর কাউকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে দেখতে চান না বাংলাদেশের মানুষ, যেহেতু দেশে ওই স্তরের দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে ওঠেনি। শেখ হাসিনা রাজনৈতিক দূরদর্শিতার দিক থেকেও অনেক অনেক পরিণত আর তার সুবাদেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এমনটাই চিন্তা করছে জনতা। তাই জোটে তিনি প্রধানমন্ত্রী-মুখ। জনতা এবং নতুন প্রজন্মও তাই চায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন