শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

সময়ের সাফ কথা…. ভোট বলে কথা!

সময়ের সাফ কথা…. 

ভোট বলে কথা!

সংলাপ ॥ আবার অশান্তি শুরু হয়েছে বাংলাদেশের কিছু এলাকায়। উপলক্ষ্য মেয়র ভোট। ভোটের ঢাকে কাঠি পড়তেই শুরু হয়ে গেছে অশান্তি। সাময়িকভাবে অগ্নিগর্ভ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকা। বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন। এসব অশান্তির জন্য সরকারের দিকেই আঙুল তুলছেন বিরোধীরা, কারণ এটাই আমাদের দেশের রাজনীতির রেওয়াজ। বিরোধীরা সব ধোয়া তুলসীপাতা আর সরকার মানেই দোষের ভান্ড। সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। তবে বিরোধীরা বিশেষ করে এখন এ দেশের রাজনীতিতে দ্বিতীয় এবং বিরোধী শিবিরে প্রথম স্থানের দাবিদাররা ঠিক কতটা ধোয়া তুলসী তা ভুক্তভোগী মানুষজন ভালোই জানেন। অবশ্য, ভোট এলে এমন অশান্তি দেশে কম-বেশি হয়ে থাকে। কোন ব্যতিক্রম নেই। ভোটের আগে-পরে এমনকী ভোটের দিন আমাদের দেশে এর আগেও অনেক গন্ডগোল হয়েছে, রাজনৈতিক কর্মী সমর্থক থেকে সাধারণ নিরীহ অনেক মানুষের প্রাণও গিয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি জমানায় ক্যাডারদের সৌজন্যে এই ভোটের অশান্তির চেহারা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছিল তা বোধকরি আজও দেশের মানুষ ভোলেননি।
বিশেষ করে গাজীপুর মেয়র ভোট নিয়ে এবার ভাবনা হচ্ছে, হয়তো রাজনৈতিক ময়দান একটু বেশিই গরম হতে পারে। একটু বেশিই মারদাঙ্গাপ্রবণ। ভোট ঘোষণার পর থেকেই যুযুধান পক্ষগুলোর মধ্যে রেষারেষির রাজনৈতিক উত্তাপ চিরাচরিত পথেই বাড়ছে এবং তার আভাস গণমাধ্যমেও মিলছে। স্পর্শকাতর বিষয়ে উত্তেজক মন্তব্যও শোনা যাচ্ছে। পুলিশ ও প্রশাসন সময়মতো কঠোর এবং কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ওইসব এলাকার পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কেউ আন্দাজ করতে পারছেন না! সবকিছু ঘটে যাওয়ার পর বলা হয়, বহিরাগত দুষ্কৃতীকারীরাই ওইসব এলাকায় তান্ডব চালাচ্ছে! হতেই পারে। খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি বহিরাগত দুষ্কৃতীকারিরা তান্ডব চালাতে পারে, তবে ওইসব এলাকায় তাদের ভূতের নৃত্য হলে অবাক হওয়ার কী আছে? অবশ্য এই বহিরাগত দুষ্কৃতীকারী আসে কোথা থেকে এবং কারা তাদের ডেকে এনে গোলমাল পাকায় এবং গোলমাল পাকানোর পিছনে উদ্দেশ্যটাই বা কী তা কিন্তু আজও পরিষ্কার নয়। এক্ষেত্রেও অবশ্য বিরোধীদের অভিযোগের তীর শাসকদলের দিকেই ধেয়ে আসে। শাসকদলও অনিবার্যভাবেই সেই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেয়। তাতেও বিরোধী শিবিরে অনুযোগের বহর কমেনা। বরং, আসন্ন ভোটে সেনাবাহিনী নিয়োগের জন্য তারা এর মধ্যেই সরব হচ্ছেন।
কিন্তু, প্রশ্ন হল ভোটের মুখে এত হিংসা হানাহানি কেন? জয় নিয়ে শাসকদলের সামান্যতম মাথাব্যথা নেই, ঐতিহ্যগতভাবে বিরোধী শিবিরের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও তাদের সহযোগীরা রাজনৈতিকভাবে অতি দুর্বল, প্রায় জনবিচ্ছিন্ন, সাম্প্রতিককালে তেড়েফুঁড়ে ওঠায় সংখ্যা’র নিরিখে বিরোধী শিবিরের শিরোমণি হলেও প্রভাব প্রতিপত্তি ও জনসমর্থনের হিসেবে এই বাংলাদেশে রাজনীতিকরা এখনও শেখ হাসিনার থেকে লক্ষ যোজন দূরে এবং সর্বোপরি যে দেশের শাসকদলের নেত্রী তথা প্রধানমন্ত্রী অদ্বিতীয় শেখ হাসিনা সেই দেশে গ্রামের ভোটে আগ বাড়িয়ে অশান্তি পাকিয়ে পরিবেশ ঘোলাটে করে তুলবে শাসকবাহিনী আর তার জেরে বাড়তি অক্সিজেন পেয়ে যাবে বিরোধী শিবির এটা হয়! শেখ হাসিনার মতো অমন দূরদর্শী, পোড়খাওয়া নেত্রীর কথা না হয় বাদই দিলাম, কোনও রাজনৈতিক বুদ্ধিই কি নিশ্চিত জয়ের ময়দানে এমন আত্মঘাতী কাজ কারবারে সায় দিতে পারে!
কিন্তু, বাস্তবে দেখছি কী? কিছু এলাকায় যেন রীতিমতো খন্ডযুদ্ধ হচ্ছে। কিন্তু, একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে ঘটনার গুরুত্বে প্রায় প্রতিদিনই সামনের সারিতে উঠে আসছে বিরোধী শিবিরের নেতাকর্মীদের লাঞ্ছনা! জনতার চোখের সামনে উঠে আসছে এযাবৎ অপরিচিত মুখগুলো! এসবে প্রাথমিকভাবে কিছুটা রাজনৈতিক ফায়দা কার হচ্ছে তা বোধকরি বলার অপেক্ষা রাখে না।
জনতার সহানুভূতি দেশের রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য এককথায় নস্যাৎ করে দেয়া যায় কি? কেউ একবারও বলছে না আওয়ামী লীগ একেবারে পূতপবিত্র, কোনও ঝামেলা ঝঞ্ঝাটে তাদের কণামাত্র যোগসাজশ নেই। সেটা হতেই পারে না। শাসকদলের নেতা-কর্মীরা সবসময়ই নিজেদের অধিকার ধরে রাখতে চাইবে, সে অধিকারে কেউ ভাগ বসাতে এলে সঙ্গতভাবেই একটা সংঘাতের পরিবেশও তৈরি হবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, ভোট নিয়ে বা অন্যকিছু নিয়ে যত হাঙ্গামা তার সব দায় তাদের বইতে হবে। বিরোধীরা অভিযোগ করলেই তাকে চূড়ান্ত সত্য বলে ধরে নিতে হবে। সত্যি বলতে কী, এসবের মানেটা কী? দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুখ-শান্তির মধ্যে একটা অস্থিরতা তৈরি করে লাভটা কী? শক্তিক্ষমতা থাকলে ভোটে অশান্তি করাই যায় কিন্তু অশান্তি দিয়ে কি মানুষের মন জেতা যায়? আর মানুষের মন জিততে না পারলে শেখ হাসিনার মতো মহাশক্তিকে কি ভোটযুদ্ধে হারানো যায়?
আসলে সমস্যাটা এখানেই। এই বাংলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে এখন কিছুতেই এঁটে ওঠা যাবে না এটা বিরোধী রাজনীতিকরা বুঝে গিয়েছেন। তাই, বলের সঙ্গে ছল কৌশলের পথ তো নিতেই হবে। ভোট বলে কথা। সরকারকেও তাই কোমর বাঁধতে হচ্ছে এখন থেকেই। এমন পরিস্থিতিতে কেবল অপকৌশল দিয়ে বিরোধী রাজনীতিকরা ভোটে কতটা কী করতে পারে সেটাই এখন দেখার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন