আদর্শিক জননীতি হোক রাজনীতি
সংলাপ
॥ রাজনীতি একটি আদর্শিক বিষয় যার মধ্যে আছে জননীতি প্রত্যেকে আমরা পরের তরে এবং সুষ্ঠু
রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা, শুধু ক্ষমতা ভোগ আর শোষণের জন্য নয়। তার জন্য স্বশিক্ষা এবং
উপযুক্ত প্রশিক্ষণ আর উচ্চ পর্যায়ের জনজীবন নিয়ে সাধনার প্রয়োজন হয়। ক্ষমতাপ্রাপ্ত
কোন উচ্চ পর্যায়ের রাজনীতিকের ছেলে-মেয়েরা যখন ওই পথ ধরে রাজনীতি অঙ্গনে আসেন তখন বলার
কিছু থাকে না। কিন্তু এখন যারা আসছেন বা আসতে চাচ্ছেন তাদের ভেতর রক্তের উত্তরাধিকার ব্যতীত আর কোনো সারাংশ
নেই। এই প্রক্রিয়ায় দেশ জুড়ে রাজনৈতিক শক্তির আধার তারুণ্যের জন্য আশার কিছু নেই ।
যারা একান্তই নিজের জীবন, শক্তি আর মেধার ওপর ভর দিয়ে বাঙালির জন্য একটি স্বতন্ত্র
দেশের জন্ম দিয়ে গেছেন, তাদের রক্তের উত্তরাধিকাররাই যোগ্যতা অর্জন করে দলের একজন সাধারণ
কর্মী হয়ে সর্বত্র বিপুল প্রতাপে বিরাজ করবে এটাই দেশবাসী দেখতে চায়। একই সঙ্গে দলের
কর্মীদের যোগ্যতা অর্জন করতে দিয়ে যথাস্থানে নিয়োজিত না করলে কোন দলের ক্ষমতায়ন হবে
সাময়িক যা বাঙালি জাতির জন্য ধারাবাহিক কোন মঙ্গল আনবে না।
অনেকেই
শুধুমাত্র রক্তিয় সংযোগের পথ ধরে যোগ্যতা অর্জন না করে দেশ শাসনের দ্বারপ্রান্তে উপনীত
হয়েছিলেন। তারা নিজেরাতো ডুবলেনই, দেশ ও দল সব ডুবিয়ে এখন মামলার আসামি এবং তাদের মধ্যে
অনেকেই দেশ ছাড়া। এতকিছুর পরও আমাদের দেশের এক শ্রেণির বুদ্ধিবৃত্তিক দূর্নীতিবাজ মানুষ
এদের পৃষ্ঠপোষক। এই শ্রেণীর রাজনীতিকরা এই যুবকদের ধামা ধরে নৈতিকতা আবর্জনা স্তুপে
ফেলে দিয়ে মন্ত্রিত্ব বা পদ পেতে সদা আগ্রহী। এতে গণতন্ত্রের ‘গ’-ও অবশিষ্ট থাকছে না। বাংলার মানুষ চায় প্রতিযোগিতামূলক
নেতৃত্ব। সে জায়গায় যে বিজয়ী হবেন তাকেই আগামী দিনের নেতা বানাতে তারা প্রস্তত তা সে
যেই হোন না কেন ।
রাস্তায়
রাস্তায় মাথা কুটে মরছে গণতন্ত্র ও বাঙালি জাতির আশা ভরসা। রক্তের সূত্র ধরে এসে রাজনৈতিক
অঙ্গনে হঠা? এসে কেউ মিথ্যাচারের রাজনীতির পথ ধরে বাংলাকে লুঠ করে বিদেশে পাচার করবেন
তাতে বাঙালি জাতি আপ্লুত হয়ে তাদের মাথায় তুলে নাচবেন তা আর এখন বাংলার মাটিতে হবে
না। ওই রাজনীতি প্রগতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী
দেশের জন্য খারাপ খবর। সময়ের সাথে সাথে তাদেরকে সামলানো না গেলে এদেশে মানুষ মানুষের
মত থাকতে পারবে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। বাঙালি
হিসেবে টিকে থাকাটাই দায় হয়ে পড়বে-এজন্য দেশের মানুষ আতংকিত ও চিন্তিত। অথচ সেটাই রাজনীতিকরা জানেন না বা ব্যক্তি স্বার্থে দলের মধ্যে জানান
দেন না। সেজন্যই বাংলার মাটির কাছাকাছি কান পেতে থাকতে হয় সত্যের পথে তৃনমূল পর্যায়ের
রাজনীতিকদের মধ্যে নতুন কারো পদধ্বনি শোনার আকাঙ্খায়। দলত্যাগী আর বহিষ্কৃত - বাংলাদেশের
রাজনীতিতে এই শব্দদ্বয়ের ব্যবহার যথেষ্ট না থাকলেও ২০০৫-০৬ এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলোতে বেশ চালু হয়ে গিয়েছিল। আলোচনায়
আসতো - ভাই, দল আপনাকে ছেড়ে দিয়েছে, না আপনি দলকে ছেড়ে দিয়েছেন।
সমাজ-প্রগতি
নিয়ে যারা ভাবেন, তারা নিশ্চয়ই এ নিয়ে গবেষণা করবেন। তবে বাংলাদেশ ভূখন্ডের সংগ্রামী
মানুষের দীর্ঘ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে ন্যায়ের পক্ষে, সত্যের পক্ষে জনমানুষের ফুঁসে
উঠার বহু অবিস্মরণীয় গৌরবগাথা আমরা খুঁজে পাব। ভারত উপমহাদেশে একমাত্র বাংলাদেশের মানুষই সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সূচনা
শুধু করেনি, তাতে জয়ী হয়ে স্বাধীন মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।
একদিকে
উর্বর খনিজ ভূমি, উত্তাল নদী, গভীর সবুজ বনভূমি, প্রাণময় প্রকৃতি অন্যদিকে বন্যা, সাইক্লোন,
টর্নেডোর বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত যুদ্ধে অবতীর্ণ এ ভূখন্ডের মানুষজন দীর্ঘ সংগ্রামী শক্তি
অনুশীলনের মধ্য দিয়ে এক অবিনাশী চেতনা ও অন্যায়ের
বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠার জাতিগত বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে। তাই প্রগতিবিরোধী ধর্মান্ধ মিথ্যাচারী
রাজনৈতিক শক্তি ও সমাজের কর্তৃত্বকারী রাজনীতিজীবী শ্রেণী তাদের স্বার্থরক্ষায় রাষ্ট্রের আনুকূল্যে সত্য চাপা দেয়ার এবং অন্যায়কে
ন্যায় হিসেবে চালিয়ে দেয়ার যতবার চেষ্টা করেছে ততবারই সংগ্রামী মানুষের সম্মিলিত প্রতিরোধে
তা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। এটাই বাংলাদেশ এবং বিবর্তনবাদী বাঙালি চিন্তার চারিত্রীক
বৈশিষ্ট।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন