জাতির কাছে আজ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের
বিকল্প নেই
রাজনৈতিক
ইসলামপন্থীদের ধর্মীয় উগ্রতা প্রসারের মূল কারণ হচ্ছে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক
দলগুলোর সীমাহীন ব্যর্থতা এবং কাপুরুষতা। স্বাধীনতার দীর্ঘ চার দশক পরেও আমাদের দেশে
যেমন রাজনীতিকদের দিয়ে একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিকশিত হয়নি, তেমনি দেশের
অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানেও তারা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতিকে
উন্নয়নের মডেল হিসাবে গ্রহণ করা হলেও বস্তুতঃ দেশে কাঙ্খিত শিল্পায়ন ঘটেনি। ফলতঃ সমাজে
যেমন শ্রেণী বৈষম্য তীব্র হচ্ছে তেমনি বৃদ্ধি পাচ্ছে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য। উৎপাদন
ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কহীন এক শ্রেণীর শহুরে লুঠেরা ধনীদের সীমাহীন জৌলুস-আধুনিক জীবনযাপন
আর অন্যদিকে গ্রামের বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার প্রাণান্তকর আদি সংগ্রাম
- এ স্ববিরোধী কোনো সমাজ কখনো স্থিতিশীল হতে পারে না। বেকারের সংখ্যা তিন কোটির উপরে।
ফি বছর ২১/২২ লক্ষ শিক্ষিত বেকার শ্রমের বাজারে প্রবেশ করছে। দুর্নীতি সর্বগ্রাসী রূপ
পরিগ্রহ করে পুরো সমাজকে গিলে ফেলেছে। স্বাধীনতার পর হতে আমাদের দেশের শাসকগোষ্ঠীর
ধারাবাহিক ব্যর্থতার ফলশ্রুতিতে আজ গ্রামীণ ও শহরে নিম্ন-মধ্যবিত্ত দরিদ্র যুবশ্রেণীর
মনে যে হতাশা দানা বেঁধেছে তাকেই সুপরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাবার প্রয়াস পাচ্ছে ধর্মীয়
উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো। আলজেরিয়া, মিশর ও তুরস্কের ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করলেও আমরা একই
রকম চিত্র দেখতে পাবো যে, সে সব দেশেও সামাজিক বৈষম্য ও দারিদ্র্য দূরীকরণে মূল রাজনৈতিক
শক্তিগুলোর ব্যর্থতা ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসের উদ্ভব ও বিকাশের উর্বর ক্ষেত্র তৈরি
করে দিয়েছে। এহেন একটি আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীন চক্র রাজনৈতিক ইসলামকে মোকাবেলার
পরিবর্তে তাদের কর্মসূচীকেই গোপনে এবং প্রকাশ্যে সহযোগীতা ও আত্মীকরণ
করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দুঃখের বিষয় এ ক্ষেত্রে বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো কে কতটুকু
বক-ধার্মিক, তা প্রমাণের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।
বিভিন্ন
ইসলামপন্থীদের এবং রাজনৈতিক ইসলামকে কেবল রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করে রোখা যাবে না। চূড়ান্তভাবে
ঠেকাতে হলে সত্য মুহম্মদী ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদেরকে রুখতে হবে আদর্শিকভাবে।
সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা মসজিদ ও মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার নামে যা ছড়ানো
হচ্ছে তা মূলত ধর্মাশ্রয়ী কূপমন্ডুকতা ও অজ্ঞতা। ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসের প্রধান
আশ্রয় হলো এই অজ্ঞতা। যুগোপযোগী বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ও নারী শিক্ষার বিস্তার সে অজ্ঞতা
রোধে প্রধান ভূমিকা নিতে পারে। বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক শিক্ষা অসামপ্রদায়িক গণতান্ত্রিক
চেতনার প্রসার ঘটাবে ও তার লালন রাজনৈতিক ইসলামের অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে বর্ম হিসাবে
কাজ করবে। বিভিন্ন ইসলামীদের বা রাজনৈতিক ইসলামপন্থীদের সন্তুষ্ট করার জন্য সরকার একের
পর এক ধর্মীয় মূল্যবোধ বিবর্জিত আনুষ্ঠানিক ধর্ম পালনের দায়িত্ব যদি নিজের কাঁধে তুলে
নেয়, তাতে ধর্মের নামে মিথ্যাচারিতার ভিত্তি কেবল শক্তই হবে। তাই যুক্তি ও সত্যের মাধ্যমে
সর্বাগ্রে আমাদের মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণার অসারতা, অপ্রাসঙ্গিকতা-পশ্চাদপদতা ও গণবিমুখতা
তুলে ধরতে হবে আম জনগণের কাছে - বিশেষভাবে বর্তমান প্রজন্মের কাছে। সেজন্য বর্তমানে
একটি দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন