বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০১৩

জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা


জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা

 

দিগন্ত ॥ বাংলার হাটে-বাজারে বর্তমানে যে ক্যাসেট বাজছে তা শুনার পর  শফিকে আর আল্লামা বলা যায় কি না তা ইসলামী চিন্তাবিদরা নিশ্চই ভেবে দেখা আরম্ভ করেছেন। জনগণের ধারণা  তিনি হয় কুরআন সম্পর্কে নিতান্ত মূর্খ না হয় উদ্দেশ্যমূলকভাবে নারী নির্র্যাতন করে আইয়ামে জাহেলিয়াত কায়েম করতে চাইছেন। কুরআন আদেশ করছে - “তোমরা নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন যাপন করো।' (সুরা নিসা : ১৯)।  ইসলাম প্রত্যেক নর-নারীর  জন্য জ্ঞান অর্জন করাকে ফরজ বলে ঘোষণা করেছে। সম্পত্তির মালিকানায়, অর্থোপার্জন, এবং অন্যান্য সকল নাগরিক অধিকার সমূহে নারী-পুরুষের সমান অধিকার দিয়েছে। অর্থোপার্জনের ক্ষেত্রে নারীর অধিকার সম্পর্কে কুরআনের নির্দেশ - “পুরুষ যা উপার্জন করেছে, তাতে তাদের অধিকার রয়েছে এবং নারীরা যা উপার্জন করেছে তাতে তাদের অধিকার রয়েছে। (সুরা নিসা ঃ ৩২)। কুরআন নারীদের যুদ্ধে যাবার অধিকার দিয়েছে। কুরআন বলছেন - “তারাই বিশ্বাসী যারা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার পর সন্দেহ রাখে না এবং ধনপ্রাণ দিয়ে আল্লাহ্‌র পথে সংগ্রাম করে, তারাই সত্যনিষ্ঠ। (সুরা হুজুরাত ঃ ১৫)। কুরআন শুধুমাত্র নারীকে পর্দা পালনের নির্দেশ দেয়নি। বরঞ্চ এ নির্দেশ প্রথম দেয়া হয়েছে পুরুষকে। (দ্রষ্টব্য - সুরা আন নূর ঃ ৩০)। ব্যভিচারের উৎস নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ নয়, পুরুষের 'চোখ।

শফি সাহেব এবং তার অনুগামীরা চোখে মা, বোন, মেয়ে দেখেন না তিনি দেখেন কেবল নারী। নারী দেখলে নিশ্চয়ই এখনও তার জীবে পানি আসে কিংবা আগে আসতো। তা না হলে তিনি জানলেন কি করে যে নারীদের দিকে তাকালে পুরুষের জীবে পানি আসে? 

জনাব শফির বক্তব্য কুরআন বিরোধী, ইসলাম বিরোধী। শফির মাথায় যে টুপিটি রয়েছে তা-ও নারীদের তৈরি। নারীদের ঘরের কোনে বসে থাকার দিন শেষ। বিশ্বজুড়ে নারী এখন অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। অনেক সংগ্রাম ও বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে নারী জেগে উঠেছে নিজেদের কর্মস্পৃহা ও যোগ্যতায়। পর্দার কারাগার থেকে বের হয়ে সমাজের সকল ক্ষেত্রে নারী তার মেধা ও প্রতিভার পরিচয় দিচ্ছেন। তবে নারীর জীবন চলার পথ কখনও মসৃন ছিল না। বারবার তাদের চলার পথ রুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। পুরুষের স্বার্থে যুগে যুগে নারী অধিকার হরণ করা হয়েছে ধর্মকে ব্যবহার করে। নারী যখন এগিয়ে যায় তখন দেশ এগিয়ে যায়, এগিয়ে যায় দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক সম্প্রীতি। কিন্তু কিছু ধর্মান্ধ মানুষ মনে করে নারী এগিয়ে গেলে ধর্ম পিছিয়ে যায়, ধর্মনাশ হয়।

ভারতবর্ষে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় সমাজ সংস্কারকদের দীর্ঘ লড়াই করতে হয়েছে পুরোহিতদের সাথে। হিন্দুধর্র্মের নামে ধর্মান্ধগোষ্ঠী সতীদাহ প্রথা চালু করেছিল, নিষিদ্ধ করেছিল বিধবাবিবাহ। ধর্মের নামে এদেশে প্রচলিত ছিল বহুবিবাহ ও  বাল্যবিবাহ। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে এসব ধর্মান্ধতা এখন দূর হয়েছে।

আবার সময় এসেছে প্রতিরোধের। জাগো নারী, জাগো বহ্নিশিখা! গড়ে তোল ঐক্যবদ্ধ সামাজিক আন্দোলন। প্রতিরোধ ও বিতাড়িত করো সত্যের অপলাপকারীদের। তারা ইসলামের শত্রু, নারীদের শত্রু, মানবতার শত্রু। দল-মত, ধর্ম-বর্ণ, নির্বিশেষে নারীর অধিকার বলবদ্ধ রাখার জন্য ঐক্যবদ্ধ হও। বাংলাদেশ হাক্কানী খানকা শরীফ, হক্কানী ওলামা-মাসায়েখ এবং মুহাম্মদী ইসলাম প্রেমিকরা নিশ্চয়ই নারীদের অধিকার রক্ষায় নারীদের সাথে একাত্ম হয়ে যুক্ত থাকবে  এই দৃঢ় প্রত্যয় নেয়ার সময় এসেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন