বুধবার, ২৫ জুন, ২০১৪

হাক্কানী কথা - ৩



হাক্কানী কথা - ৩



 সংলাপ ॥ এখন মোবাইলের যুগ। একটা সময় সূফী সাধকরা বসে বসে চিন্তা করতেন, কাউকে দরকার হলে তিনি তার দরবারে এসে হাজির হতেন। প্রশ্ন হলো যে, কত সময় লেগেছে? এখন পৃথিবীতে সময়ের কতটুকু মূল্য? এখন তো মোবাইল এসে গেছে, মোবাইল পর্যন্ত তো আপনাকে সংস্কার করতে হবে। ঐটাকেতো মেনে নিতে হবে, আপনি ব্যবহার করছেন, আপনার কেনার মতো সামর্থ হয়েছে। সেখানে অন্যের নাম্বারগুলো রাখতে পারছেন, যখনই চিন্তায় আসছে টিপ দিচ্ছেন আর যোগাযোগ করে আপনারা কথাবার্তা বলছেন। হাক্কানী থটের এখান থেকে আরম্ভ। মোবাইলের ঊর্ধ্বে যাও, গিয়ে দেখো যে, সত্য তোমাকে কোন্‌ জায়গায় নিয়ে যেতে পারে। সাধনা সেখান থেকে আরম্ভ করতে হবে। এবং এই জায়গা থেকে আরম্ভ করার জন্যে দুটো পদ্ধতিই প্রয়োগ করতে হবে। একটি প্রাতিষ্ঠানিক আরেকটি হচ্ছে আধ্যাত্মিক জগতের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়ে।
আমরা সবাই এই পৃথিবীতে এসেছি একা, চলে যাব একা। পৃথিবীতে আমি এসে মোহের বশে, লোভের বশে, ভোগের স্পৃহায় অনেককিছুর মধ্যে আটকা পড়ে গেলাম। কিন্তু দেখা যাবে কিছুই আমার থাকবে না। আমি যখন চলে যাব তখন এইগুলোকে আমি পৃথিবীতেই রেখে যাব। আমরা পৃথিবীতে সম্পত্তি রেখে চলে যাই ছেলেমেয়েদের জন্য। এইভাবে ছেলেমেয়েদের আরো ভোগের মধ্যে রেখে সমাজকে নষ্টের দিকে নিয়ে যাচ্ছি আমরা। তার মধ্যে ভোগের স্পৃহা তো বাড়বেই। এটা চিরন্তন। একটা ব্যক্তি যে ভোগ করল তাতে কোন অসুবিধা নাই, যেই মুহূর্তে তার জায়গা আসছে সেই মুহূর্তেই তিনি তার ছেলেমেয়ে বা তার গোষ্ঠীর আল্লাহ হয়ে গেলেন। আমার ছেলের জন্য এটা করে যেতে হবে, আমার মেয়ের জন্য ওটা করে যেতে হবে, তিনি তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করছেন অথচ ইসলাম মানছেন, মোহাম্মদকে নবী মানছেন, চলে যাচ্ছেন মক্কা-মদীনাতে, গিয়ে ঘুরে আসছেন আর ক্ষণিকের তৃপ্তি নিয়ে মনে করছেন যে আমি অনেক কিছু করে ফেললাম।
মুসলমান আর মুসলিম এক কথা না, কুরআনিক মুসলিম অর্থ হচ্ছে ভদ্র, শান্ত। কুরআন অর্থ - বার বার পাঠ করা। আমি প্রতিনিয়ত কি পাঠ করছি আমার চিন্তা জগতে? সেখানে কি একটা লক্ষ্য আছে? আল্লাহ এক সুতরাং আমি চিন্তাও করবো এই একের মধ্য দিয়ে। প্রতিদিনের চিন্তার মধ্যে এবং কর্মের মধ্যে ঐ এক-কে আমি প্রতিষ্ঠিত করছি কি-না, যেই সূত্র ধরে আমি এগিয়ে যাবো। - এটা যার যার নিজের, এটা কেউ কোনদিন করে দিতে পারবে না। হাজারটা ধর্মপুস্তক দিয়ে দিলেও হবে না এবং আল্লাহর কোন ঠেকা নাই। আল্লাহ একমাত্র ব্যস্ত তার পাগলদের জন্য। যারা এক আল্লাহকে কেন্দ্র করে পাগল হয়েছে সারা বিশ্বে, সে যেখানে, যে প্রান্তে যে ধর্মেই থাকুক না কেন তার জন্যে আল্লাহ পাগল। না জানি কোন্‌টা কি চেয়ে বসে। চাইলে তো দিতেই হবে। যেমনভাবে পৃথিবীর বুকে আপনারা যে সন্তান নিয়ে আসেন সে সন্তান যখন এগিয়ে যায়, যখন আপনাদের কাছে আবদার করে, কিছু সময় তার আবদারের মাত্রাটা তার বয়স এবং পরিবেশের উপরে থাকে তখন আপনারা যেমন ব্যস্ত হয়ে পড়েন - এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে যেমনভাবে আপনারা তার আল্লাহ হয়ে যান, তার সবকিছু আপনারা ঠিক করে দেন, তখন মনে থাকে না যে আল্লাহ আছে। আমি তার বাবা হিসেবে, মা হিসেবে আল্লাহর রূপ ধরলে কতটা সত্যের উপর থাকতে হবে? কতটা সহনশীল হলে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো? আমি তো বিচার করবো দুনিয়াদারী দিয়ে। সত্য তো দুনিয়াদারীতেই আসছে, মানুষের মধ্যেই আসছে। মানুষ উপলব্ধি করতে পারছে, তাই প্রত্যেকটা ধর্মে প্রত্যেকটা শাস্ত্রে রিয়ালাইজেসনের উপর জোর দেয়া হয়েছে। তোমার কনসাসনেছের উপর নির্ভর করবে তুমি কতটা রিয়ালাইজ করেছো। তুমি নিজেকে বিচার করে দেখেছো কি না যে, আনকনসাস আছি, না সাবকনসাস আছি, না প্রিকনসাস আছি, না কনসাস আছি, না ডুয়েল কনসাসে আছি, আমি কি হাইয়ার কনসাসে আছি দুটোকে নিয়ে, না একটা কম বেশি আছে? আমি কি আমার অন্তরের মধ্যে, আমার আপাদমস্তক এবং বাইরে বস্তুজগতের সঙ্গে প্রতিটি বিষয়ের সমন্বয় সাধন করে দুটোকেই আমি নিয়ে যেতে পারছি হাইয়ার কনসাসে? তারপর আসবে সুপার কনসাস। সেখানে এক ছাড়া আর কোন কিছু দেখি না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন