সময়ের সাফ
কথা ....
সাম্প্রদায়িকতা ধর্মের নয়, রাজনীতির ব্যাপার
সাদি ॥ ধর্ম বলতে সদাচার, সততা, ন্যায়পরায়ণতা,
কল্যাণকামিতা, আধ্যাত্মিকতা বোঝায়। সব মানুষেরই ধর্ম আছে। আনুষ্ঠানিকতা
করতে গিয়ে ধর্ম ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও আচার-আচরণের ব্যাপার থাকে না, সমাজের
ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ধর্মের ভিত্তিতে সমাজে বিভাজনও দেখা দেয়, ধর্ম প্রবেশ
করে রাজনীতিতে। রাজনীতির মূল বিষয়টি হচ্ছে ক্ষমতা। যখন ক্ষমতার জন্য ধর্মকে
ব্যবহার করা হয় তখন উদ্ভব ঘটে সামপ্রদায়িকতার। সামপ্রদায়িকতা ধর্মের নয়,
রাজনীতির ব্যাপার। সামপ্রদায়িকতায় ধর্ম চলে যায় রাজনীতির অধীনে, তখন
হানাহানি অনিবার্য হয়ে পড়ে। আমাদের এই উপমহাদেশে সামপ্রদায়িকতার অনাচার
আমরা অতীতে দেখেছি, এখনো দেখছি। কেবল উপমহাদেশে কেন, বিশ্বের প্রায়
সর্বত্রই তো এখন সামপ্রদায়িকতার তাণ্ডব চলছে। ক্রুসেড ও জিহাদের ঘটনা
অতীতের মতো একালেও বিদ্যমান। ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে
ফিলিস্তিনবাসীকে উচ্ছেদ করে ধর্মরাজ্য কায়েম করা হয়েছে।
রাজনীতিতে তাই ধর্ম আসে; ধর্মের স্বার্থে নয়,
রাজনীতিকদের বস্তুগত স্বার্থে। নিষ্পেষিত মানুষকে শান্ত রাখার উদ্দেশ্যেও
তারা ধর্মকে ব্যবহার করে। উপাসনার মধ্য দিয়ে সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সম্পর্ক
স্থাপনের যে অনুভূতি তৈরি হয়, তা ব্যক্তির বিচ্ছিন্নতা তো অবশ্যই, সেই
সঙ্গে ক্ষমতাহীনতা ও হতাশার ভাব কাটতেও সাহায্য করে। শাসনকর্তারা এভাবেই
ধর্ম ব্যবহার করাটিকে অত্যন্ত সুবিধাজনক হিসেবে দেখেন।
সমপ্রদায়ে-সমপ্রদায়ে বিরোধের মূল কারণটি রাজনৈতিক, যার
সঙ্গে রাষ্ট্র জড়িত থাকে। সে জন্যই রাষ্ট্রের পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া
আবশ্যক। রাষ্ট্র হচ্ছে নাগরিকদের স্বার্থরক্ষার প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্র সব
নাগরিককে সমান চোখে দেখবে - এটিই প্রত্যাশিত। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সব
নাগরিকের ভেতর অধিকার ও সুযোগের সাম্য প্রতিষ্ঠা করবে - এমন অঙ্গীকার বেশ
জোর গলায় ব্যক্ত করা হয়ে থাকে। কিন্তু রাষ্ট্র তা মান্য করে না।
রাষ্ট্রমাত্রেই রাষ্ট্রশাসকদের স্বার্থ দেখে।
সমাজ ইহজাগতিকতার প্রয়োজন। ইহজাগতিকতার অর্থ দাঁড়াবে এটা
যে সমাজে সামপ্রদায়িকতা থাকবে না, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কটি হবে
পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও মৈত্রীর। ধর্ম হবে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার, তা
নিয়ে বিরোধ দেখা দেবে না, কেউ কারো ওপর নিজের ধর্মমত চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা
করবে না। লক্ষ্য দাঁড়াবে সহযোগিতার মধ্য দিয়ে উন্নতি ও অগ্রগতি। বিনিয়োগ
বাড়বে, বৃদ্ধি পাবে উৎপাদন, সহজ ও সুষ্ঠু হবে বিতরণ ব্যবস্থা। বাড়বে
কর্মসংস্থান। সাংস্কৃতিক জীবন হবে সৃষ্টিমুখর। জীবনে আনন্দ ও স্বস্তি
থাকবে। মানুষ মানুষের ওপর নিপীড়ন চালাবে না, প্রবল দুর্বলকে নিগৃহীত করবে
না। নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। যে কোনো গণতান্ত্রিক সমাজের এটিই
সাধারণ রূপরেখা। আমাদের সমাজ এ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ এখানে
প্রকৃতঅর্থে গণতন্ত্র নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন